ঢাকা ১২:০৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫

সূর্যের আলো যেভাবে দীর্ঘজীবন পেতে সহায়তা করে

  • আপডেট সময় : ০৫:২৪:২৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ৯ মার্চ ২০২৫
  • ১৬ বার পড়া হয়েছে

প্রত্যাশা ডেস্ক: দীর্ঘায়ুর কথা বললেই পুষ্টিকর খাদ্য, নিয়মিত ব্যায়াম এবং পর্যাপ্ত ঘুমের কথা প্রথমে মনে আসে। তবে এসবের পাশাপাশি আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল- নিয়মিত সূর্যালোক গ্রহণ। তবে সূর্যের আলো কতটা উপকারী, আর কতটা ক্ষতিকর হতে পারে? এ বিষয়ে দীর্ঘায়ু বিশেষজ্ঞদের রয়েছে পরামর্শ ও মতামত।

সূর্যালোক ও দীর্ঘায়ুর মধ্যে সম্পর্ক: সূর্যালোক দীর্ঘায়ুর জন্য অন্যতম উপাদান, যা আমরা প্রায়ই অবহেলা করি ব্যাখ্যা করেন ‘নেইচুরোপ্যাথিক’ চিকিৎসক সাবরিনা সল্ট।

রিয়েলসিম্পল ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই মার্কিন চিকিৎসক আরো বলেন, শরীর প্রকৃতিগতভাবেই সূর্যালোকের সাথে মানিয়ে চলার জন্য তৈরি হয়েছে। এটি হরমোন উৎপাদন, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, মানসিক স্বাস্থ্য উন্নতকরণ এবং ‘সার্কাডিয়ান রিদম’ বা দেহঘড়ি নিয়ন্ত্রণসহ নানান গুরুত্বপূর্ণ কাজে সহায়তা করে।

যদিও অতিরিক্ত সূর্যালোক ত্বকের জন্য ক্ষতিকর। তবুও এটি নিয়ন্ত্রিত পরিমাণে গ্রহণ করা সুস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত জরুরি।

কতটুকু সূর্যালোক যথেষ্ট: লম্বা সময় ধরে বাইরে থাকার প্রবণতা আধুনিক জীবনে কমে গেছে। পাশাপাশি ওজোন স্তরের পরিবর্তনের কারণে অতিবেগুনি রশ্মির পরিমাণ বেড়ে গেছে, যা ত্বকে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই সূর্যের আলোর সুফল গ্রহণের পাশাপাশি এর ক্ষতিকর দিক সম্পর্কেও সতর্ক থাকা জরুরি।

ডা. সল্টের মতে, আদর্শ সূর্যালোক গ্রহণের পরিমাণ ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে। তবে সাধারণভাবে প্রতিদিন ১০ থেকে ৩০ মিনিট সরাসরি সূর্যালোক গ্রহণ করা স্বাস্থ্যকর। বিশেষ করে সকালে পাঁচে থেকে ১০ মিনিট চোখে (সানগ্লাস ছাড়া) সূর্যের আলো পড়লে দেহঘড়ির ছন্দ ও হরমোন উৎপাদন সঠিকভাবে পরিচালিত হয়।

দীর্ঘায়ুর জন্য সূর্যালোকের উপকারিতা: মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি: সূর্যালোকের প্রভাবে মস্তিষ্কে ‘সেরোটোনিন’ নামক নিউরোট্রান্সমিটার উৎপন্ন হয়, যা মেজাজ ভালো রাখে, মনোযোগ বাড়ায় এবং মানসিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। মানসিক চাপ, উদ্বেগ এবং বিষণ্নতার কারণে হৃদপিণ্ডের সমস্যা, ডায়াবেটিস ও স্ট্রোকের মতো রোগের ঝুঁকি বাড়ে, যা দীর্ঘায়ুর পরিপন্থী। নিয়মিত সূর্যালোক গ্রহণ মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করে এই ঝুঁকি কমায়।

ভালো ঘুম নিশ্চিতকরণ: ভালো ঘুমের জন্য শুধুমাত্র ঘুমের অভ্যাস নয়, বরং সূর্যালোকেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। সকালে সূর্যালোকের সংস্পর্শে আসলে মেলাটোনিন নামক ঘুমের হরমোন সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়, যা রাতের বেলা স্বাভাবিকভাবে ঘুমিয়ে পড়তে সাহায্য করে।

ডা. সল্ট ব্যাখ্যা করেন, যথাযথ ঘুম না হলে বয়স দ্রুত বেড়ে যায়। আর নানান ধরনের দীর্ঘমেয়াদি রোগের ঝুঁকি বাড়ে।

ভিটামিন ডি উৎপাদন: হাড়, মস্তিষ্ক এবং হৃদযন্ত্রের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন ডি। এটি রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং প্রদাহ কমানোর কাজেও সহায়ক। শরীর প্রাকৃতিকভাবে ভিটামিন ডি উৎপাদন করতে পারে, তবে এর জন্য সূর্যালোকের প্রয়োজন। পর্যাপ্ত সূর্যালোক গ্রহণ করলে ‘অস্টিওপোরোসিস’ বা হাড় ভঙ্গুর রোগ, হৃদরোগ এবং কিছু ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস পায়।

রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি: শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে কেবলমাত্র পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ বা মানসিক চাপ কমানো যথেষ্ট নয়; নিয়মিত সূর্যালোক গ্রহণও প্রয়োজন। সূর্যের আলো শরীরে ‘টি-সেল’ উৎপাদন বাড়ায়, যা বিভিন্ন সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। পাশাপাশি এটি প্রদাহ কমায়, যা হৃদরোগ ও স্নায়ুর রোগের মতো দীর্ঘমেয়াদি অসুখ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

অতিরিক্ত সূর্যালোকের ক্ষতিকর দিক: যদিও সূর্যালোক দীর্ঘায়ুর জন্য গুরুত্বপূর্ণ, তবু অতিরিক্ত সূর্যালোক গ্রহণ ত্বকের বার্ধক্য ত্বরান্বিত করতে পারে।

অতিবেগুনি রশ্মি ত্বকের ডিএনএ ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। কোলাজেন হ্রাসের ফলে ত্বক শুষ্ক ও কুঁচকানো হয়ে যেতে পারে। এ কারণে সূর্যালোক গ্রহণের সময় কিছু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা, যেমন- উচ্চ এসপিএফ যুক্ত সানস্ক্রিন ব্যবহার করা, ছায়াযুক্ত স্থানে বিশ্রাম নেওয়া, রোদ প্রতিরোধক পোশাক পরা এবং খাদ্য ও ত্বক পরিচর্যার মাধ্যমে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গ্রহণ করা জরুরি।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

সূর্যের আলো যেভাবে দীর্ঘজীবন পেতে সহায়তা করে

আপডেট সময় : ০৫:২৪:২৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ৯ মার্চ ২০২৫

প্রত্যাশা ডেস্ক: দীর্ঘায়ুর কথা বললেই পুষ্টিকর খাদ্য, নিয়মিত ব্যায়াম এবং পর্যাপ্ত ঘুমের কথা প্রথমে মনে আসে। তবে এসবের পাশাপাশি আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল- নিয়মিত সূর্যালোক গ্রহণ। তবে সূর্যের আলো কতটা উপকারী, আর কতটা ক্ষতিকর হতে পারে? এ বিষয়ে দীর্ঘায়ু বিশেষজ্ঞদের রয়েছে পরামর্শ ও মতামত।

সূর্যালোক ও দীর্ঘায়ুর মধ্যে সম্পর্ক: সূর্যালোক দীর্ঘায়ুর জন্য অন্যতম উপাদান, যা আমরা প্রায়ই অবহেলা করি ব্যাখ্যা করেন ‘নেইচুরোপ্যাথিক’ চিকিৎসক সাবরিনা সল্ট।

রিয়েলসিম্পল ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই মার্কিন চিকিৎসক আরো বলেন, শরীর প্রকৃতিগতভাবেই সূর্যালোকের সাথে মানিয়ে চলার জন্য তৈরি হয়েছে। এটি হরমোন উৎপাদন, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, মানসিক স্বাস্থ্য উন্নতকরণ এবং ‘সার্কাডিয়ান রিদম’ বা দেহঘড়ি নিয়ন্ত্রণসহ নানান গুরুত্বপূর্ণ কাজে সহায়তা করে।

যদিও অতিরিক্ত সূর্যালোক ত্বকের জন্য ক্ষতিকর। তবুও এটি নিয়ন্ত্রিত পরিমাণে গ্রহণ করা সুস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত জরুরি।

কতটুকু সূর্যালোক যথেষ্ট: লম্বা সময় ধরে বাইরে থাকার প্রবণতা আধুনিক জীবনে কমে গেছে। পাশাপাশি ওজোন স্তরের পরিবর্তনের কারণে অতিবেগুনি রশ্মির পরিমাণ বেড়ে গেছে, যা ত্বকে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই সূর্যের আলোর সুফল গ্রহণের পাশাপাশি এর ক্ষতিকর দিক সম্পর্কেও সতর্ক থাকা জরুরি।

ডা. সল্টের মতে, আদর্শ সূর্যালোক গ্রহণের পরিমাণ ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে। তবে সাধারণভাবে প্রতিদিন ১০ থেকে ৩০ মিনিট সরাসরি সূর্যালোক গ্রহণ করা স্বাস্থ্যকর। বিশেষ করে সকালে পাঁচে থেকে ১০ মিনিট চোখে (সানগ্লাস ছাড়া) সূর্যের আলো পড়লে দেহঘড়ির ছন্দ ও হরমোন উৎপাদন সঠিকভাবে পরিচালিত হয়।

দীর্ঘায়ুর জন্য সূর্যালোকের উপকারিতা: মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি: সূর্যালোকের প্রভাবে মস্তিষ্কে ‘সেরোটোনিন’ নামক নিউরোট্রান্সমিটার উৎপন্ন হয়, যা মেজাজ ভালো রাখে, মনোযোগ বাড়ায় এবং মানসিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। মানসিক চাপ, উদ্বেগ এবং বিষণ্নতার কারণে হৃদপিণ্ডের সমস্যা, ডায়াবেটিস ও স্ট্রোকের মতো রোগের ঝুঁকি বাড়ে, যা দীর্ঘায়ুর পরিপন্থী। নিয়মিত সূর্যালোক গ্রহণ মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করে এই ঝুঁকি কমায়।

ভালো ঘুম নিশ্চিতকরণ: ভালো ঘুমের জন্য শুধুমাত্র ঘুমের অভ্যাস নয়, বরং সূর্যালোকেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। সকালে সূর্যালোকের সংস্পর্শে আসলে মেলাটোনিন নামক ঘুমের হরমোন সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়, যা রাতের বেলা স্বাভাবিকভাবে ঘুমিয়ে পড়তে সাহায্য করে।

ডা. সল্ট ব্যাখ্যা করেন, যথাযথ ঘুম না হলে বয়স দ্রুত বেড়ে যায়। আর নানান ধরনের দীর্ঘমেয়াদি রোগের ঝুঁকি বাড়ে।

ভিটামিন ডি উৎপাদন: হাড়, মস্তিষ্ক এবং হৃদযন্ত্রের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন ডি। এটি রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং প্রদাহ কমানোর কাজেও সহায়ক। শরীর প্রাকৃতিকভাবে ভিটামিন ডি উৎপাদন করতে পারে, তবে এর জন্য সূর্যালোকের প্রয়োজন। পর্যাপ্ত সূর্যালোক গ্রহণ করলে ‘অস্টিওপোরোসিস’ বা হাড় ভঙ্গুর রোগ, হৃদরোগ এবং কিছু ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস পায়।

রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি: শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে কেবলমাত্র পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ বা মানসিক চাপ কমানো যথেষ্ট নয়; নিয়মিত সূর্যালোক গ্রহণও প্রয়োজন। সূর্যের আলো শরীরে ‘টি-সেল’ উৎপাদন বাড়ায়, যা বিভিন্ন সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। পাশাপাশি এটি প্রদাহ কমায়, যা হৃদরোগ ও স্নায়ুর রোগের মতো দীর্ঘমেয়াদি অসুখ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

অতিরিক্ত সূর্যালোকের ক্ষতিকর দিক: যদিও সূর্যালোক দীর্ঘায়ুর জন্য গুরুত্বপূর্ণ, তবু অতিরিক্ত সূর্যালোক গ্রহণ ত্বকের বার্ধক্য ত্বরান্বিত করতে পারে।

অতিবেগুনি রশ্মি ত্বকের ডিএনএ ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। কোলাজেন হ্রাসের ফলে ত্বক শুষ্ক ও কুঁচকানো হয়ে যেতে পারে। এ কারণে সূর্যালোক গ্রহণের সময় কিছু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা, যেমন- উচ্চ এসপিএফ যুক্ত সানস্ক্রিন ব্যবহার করা, ছায়াযুক্ত স্থানে বিশ্রাম নেওয়া, রোদ প্রতিরোধক পোশাক পরা এবং খাদ্য ও ত্বক পরিচর্যার মাধ্যমে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গ্রহণ করা জরুরি।