ঢাকা ০৯:০০ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৪ মে ২০২৫

সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ হলুদ তরমুজ চাষে লাভবান কৃষক

  • আপডেট সময় : ০৫:১৮:২৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ৪ মে ২০২৫
  • ২ বার পড়া হয়েছে

কৃষি ও কৃষক ডেস্ক: চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় প্রথমবারের মতো হলুদ তরমুজ চাষ করে সফলতা পেয়েছেন কৃষক সাহীন আলম। অসময়ে এই তরমুজ চাষ করে এবং কম খরচে বেশি দামে বিক্রির আশা করছেন তিনি।

গোমস্তাপুর উপজেলা কৃষি অফিস থেকে জানা গেছে, এসএসসিপি রেঞ্জ প্রকল্পের আওতায় এই সীমান্তবর্তী এলাকায় কৃষি অফিসের সার্বিক সহযোগিতায় ৬৬ শতক জমিতে হলুদ তরমুজের চাষ হচ্ছে। কৃষি অফিস থেকে কৃষক সাহিন আলমকে হলুদ তরমুজের চাষের বিষয়ে প্রশিক্ষণ, সার্বিক দিকনির্দেশনাসহ প্রকল্প থেকে সার, বীজ ও মালচিং পেপার সরবরাহ করা হয়। এছাড়া সাধারণত তরমুজের মৌসুম যখন শেষ হয় তখন অসময়ে এই তরমুজ চাষ করা যায়। এ তরমুজ দেখতে বাইরে হলুদ রঙের। কিন্তু ভেতরে লাল টুকটুকে ও রসে ভরা। খেতে অনেক সুস্বাদু এবং মিষ্টি। বাজারে এই তরমুজের চাহিদা বেশি, ভালো দাম হওয়ায় এই জাতের তরমুজ চাষ করে কৃষকের ভালো লাভবান হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের রোকনপুর সীমান্তবর্তী এলাকার নগরপাড়া গ্রামে ৬৬ শতক জমিতে এই হলুদ জাতের তরমুজ চাষ করেছেন কৃষক সাহিন আলম। কৃষি অফিসের পরামর্শে অল্প দিনের মধ্যেই জমির গাছগুলো বেড়ে উঠেছে। জমিতে বেড করে মাটির সঠিক আর্দ্রতা ধরে রাখতে মালচিং পেপার ব্যবহার করা হয়েছে। পুরো ক্ষেতে বাঁশের খুঁটির ওপরে চিকন দড়ি দিয়ে জালের মতো করে বিছিয়ে মাচা তৈরি করা হয়েছে এবং মাচার ওপরে গাছের সবুজ পাতার নিচে ছোট-বড় অনেক পরিপক্ক তরমুজ ঝুলছে।

কৃষক নূরনবী বলেন, আমি একজন সাধারণ কৃষক। প্রায় আমি এক বছর থেকে তরমুজ চাষ করছি। সাহীন মামার তরমুজের ক্ষেত দেখতে এসেছি। এখানে আসার পর দেখলাম তরমুজের ভেতর লাল ওপরে হলুদ এবং তরমুজ কেটে খেয়ে দেখলাম অনেক স্বাদ, সুস্বাদ ও মিষ্টি। তাই আমি চিন্তা ভাবনা করেছি আগামীতে এই তরমুজ চাষ করব। এছাড়া অন্যান্য তরমুজের চেয়ে এই তরমুজের দামটা বেশি। ইনশাআল্লাহ সামনে আমি এই তরমুজ চাষ করব।

তরমুজ চাষির ছেলে মেহেদী হাসান বলেন, আমি ছোটবেলা থেকেই দেখছি আমার আব্বা সবুজ তরমুজটাই চাষ করে। কিন্ত এইবার আমি প্রথম দেখলাম আমার আব্বা হলুদ তরমুজ চাষ করছে। এই তরমুজ চাষে কৃষি অফিস থেকে আমার আব্বাকে সহযোগিতা করা হয়েছে। সবুজ তরমুজের চাইতে হলুদ তরমুজের বাজার মূল্য অনেক বেশি এবং ফলনও অনেক বেশি। তাই আশা করি হলুদ জাতের তরমুজ চাষ করে আমার বাবা অনেকটাই লাভবান হবে।
হলুদ তরমুজ চাষি কৃষক সাহীন আলম বলেন, আমি এর আগে সিজনাল তরমুজ চাষ করেছিলাম কিন্ত এই ধরনের হলুদ তরমুজ চাষ করিনি। আমার পাশে একজন তরমুজ চাষ করেছিল তার তরমুজ চাষ দেখে আমার আগ্রহ জাগে। পরে কৃষি অফিসার গাণিউল স্যারের সঙ্গে যোগাযোগ করি এবং স্যারের পরামর্শেই তরমুজ চাষ শুরু করি। কৃষি অফিস থেকে বীজ, সার ও প্রদর্শনী দিয়েছিল আমাকে। এইবার ৬৬ শতক মাটিতে চাষ করছি। তবে গতবার বর্ষার সময় অল্প করে ১.৫ শতক জমিতে চাষ করেছিলাম এবং ৬৫ থেকে ৭০ টাকায় তরমুজ বিক্রি করেছিলাম। এবারও যদি সেইরকম দাম পায় তাহলে ৬৬ শতক জমিতে তরমুজ চাষ করে প্রায় তিন লাখ টাকার মতো আশা করছি। খালি যদি কাক্সিক্ষত দাম পাই তাহলে আমার আশা পূরণ হবে।

গোমস্তাপুর উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা গাণিউল ইসলাম বলেন, আমরা এসএসসিপি রেঞ্জ প্রকল্প থেকে আমাদের রেঞ্জভুক্ত চাষি সাহীন আলমকে হলুদ জাতের উচ্চ মূল্য ফসল প্রদশর্নী দিয়েছি। এই প্রকল্প থেকে সার, বীজ ও মালচিং পেপার সরবরাহ করা হয়েছে। এর পাশাপাশি সার, পানি ও বালাই ব্যবস্থাপনার বিষয়টি আমরা সরাসরি মনিটরিং করি। উনার দেখাদেখি আশপাশের অন্য কৃষক এই ফসল করতে উৎসাহী হবেন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো. ইয়াসিন আলী বলেন, আমাদের দেশে যে তরমুজগুলো চাষ হয় তার মধ্যে গোল্ডেন ক্রাউন্ট একটি নতুন জাতের তরমুজ। এটি সাধারণত মৌসুম ছাড়া চাষ করা হয়। এটি আকারে একটু ছোট হয় এবং বাইরে থেকে এটি হলুদ রঙের হলেও এর ভেতরটা গোলাপি রঙের হয়। এটি খেতেও সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ। এছাড়া এটি প্রচুর পরিমাণে ধরে এবং অমৌসুমে হয় বলে এর বাজারমূল্য বেশ ভালো পাওয়া যায়। তাই আমাদের যে সমস্ত উদ্যোগী ও ভালো কৃষক আছে তারা প্রদশর্নীর মাধ্যমে ও ব্যক্তিগতভাবেও চাষ শুরু করেছে। আমরা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক মনিটর করছি এবং পরামর্শ দিচ্ছি। এটার আবাদ ভবিষ্যৎতে যেন সম্প্রসারিত হয়।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ হলুদ তরমুজ চাষে লাভবান কৃষক

আপডেট সময় : ০৫:১৮:২৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ৪ মে ২০২৫

কৃষি ও কৃষক ডেস্ক: চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় প্রথমবারের মতো হলুদ তরমুজ চাষ করে সফলতা পেয়েছেন কৃষক সাহীন আলম। অসময়ে এই তরমুজ চাষ করে এবং কম খরচে বেশি দামে বিক্রির আশা করছেন তিনি।

গোমস্তাপুর উপজেলা কৃষি অফিস থেকে জানা গেছে, এসএসসিপি রেঞ্জ প্রকল্পের আওতায় এই সীমান্তবর্তী এলাকায় কৃষি অফিসের সার্বিক সহযোগিতায় ৬৬ শতক জমিতে হলুদ তরমুজের চাষ হচ্ছে। কৃষি অফিস থেকে কৃষক সাহিন আলমকে হলুদ তরমুজের চাষের বিষয়ে প্রশিক্ষণ, সার্বিক দিকনির্দেশনাসহ প্রকল্প থেকে সার, বীজ ও মালচিং পেপার সরবরাহ করা হয়। এছাড়া সাধারণত তরমুজের মৌসুম যখন শেষ হয় তখন অসময়ে এই তরমুজ চাষ করা যায়। এ তরমুজ দেখতে বাইরে হলুদ রঙের। কিন্তু ভেতরে লাল টুকটুকে ও রসে ভরা। খেতে অনেক সুস্বাদু এবং মিষ্টি। বাজারে এই তরমুজের চাহিদা বেশি, ভালো দাম হওয়ায় এই জাতের তরমুজ চাষ করে কৃষকের ভালো লাভবান হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের রোকনপুর সীমান্তবর্তী এলাকার নগরপাড়া গ্রামে ৬৬ শতক জমিতে এই হলুদ জাতের তরমুজ চাষ করেছেন কৃষক সাহিন আলম। কৃষি অফিসের পরামর্শে অল্প দিনের মধ্যেই জমির গাছগুলো বেড়ে উঠেছে। জমিতে বেড করে মাটির সঠিক আর্দ্রতা ধরে রাখতে মালচিং পেপার ব্যবহার করা হয়েছে। পুরো ক্ষেতে বাঁশের খুঁটির ওপরে চিকন দড়ি দিয়ে জালের মতো করে বিছিয়ে মাচা তৈরি করা হয়েছে এবং মাচার ওপরে গাছের সবুজ পাতার নিচে ছোট-বড় অনেক পরিপক্ক তরমুজ ঝুলছে।

কৃষক নূরনবী বলেন, আমি একজন সাধারণ কৃষক। প্রায় আমি এক বছর থেকে তরমুজ চাষ করছি। সাহীন মামার তরমুজের ক্ষেত দেখতে এসেছি। এখানে আসার পর দেখলাম তরমুজের ভেতর লাল ওপরে হলুদ এবং তরমুজ কেটে খেয়ে দেখলাম অনেক স্বাদ, সুস্বাদ ও মিষ্টি। তাই আমি চিন্তা ভাবনা করেছি আগামীতে এই তরমুজ চাষ করব। এছাড়া অন্যান্য তরমুজের চেয়ে এই তরমুজের দামটা বেশি। ইনশাআল্লাহ সামনে আমি এই তরমুজ চাষ করব।

তরমুজ চাষির ছেলে মেহেদী হাসান বলেন, আমি ছোটবেলা থেকেই দেখছি আমার আব্বা সবুজ তরমুজটাই চাষ করে। কিন্ত এইবার আমি প্রথম দেখলাম আমার আব্বা হলুদ তরমুজ চাষ করছে। এই তরমুজ চাষে কৃষি অফিস থেকে আমার আব্বাকে সহযোগিতা করা হয়েছে। সবুজ তরমুজের চাইতে হলুদ তরমুজের বাজার মূল্য অনেক বেশি এবং ফলনও অনেক বেশি। তাই আশা করি হলুদ জাতের তরমুজ চাষ করে আমার বাবা অনেকটাই লাভবান হবে।
হলুদ তরমুজ চাষি কৃষক সাহীন আলম বলেন, আমি এর আগে সিজনাল তরমুজ চাষ করেছিলাম কিন্ত এই ধরনের হলুদ তরমুজ চাষ করিনি। আমার পাশে একজন তরমুজ চাষ করেছিল তার তরমুজ চাষ দেখে আমার আগ্রহ জাগে। পরে কৃষি অফিসার গাণিউল স্যারের সঙ্গে যোগাযোগ করি এবং স্যারের পরামর্শেই তরমুজ চাষ শুরু করি। কৃষি অফিস থেকে বীজ, সার ও প্রদর্শনী দিয়েছিল আমাকে। এইবার ৬৬ শতক মাটিতে চাষ করছি। তবে গতবার বর্ষার সময় অল্প করে ১.৫ শতক জমিতে চাষ করেছিলাম এবং ৬৫ থেকে ৭০ টাকায় তরমুজ বিক্রি করেছিলাম। এবারও যদি সেইরকম দাম পায় তাহলে ৬৬ শতক জমিতে তরমুজ চাষ করে প্রায় তিন লাখ টাকার মতো আশা করছি। খালি যদি কাক্সিক্ষত দাম পাই তাহলে আমার আশা পূরণ হবে।

গোমস্তাপুর উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা গাণিউল ইসলাম বলেন, আমরা এসএসসিপি রেঞ্জ প্রকল্প থেকে আমাদের রেঞ্জভুক্ত চাষি সাহীন আলমকে হলুদ জাতের উচ্চ মূল্য ফসল প্রদশর্নী দিয়েছি। এই প্রকল্প থেকে সার, বীজ ও মালচিং পেপার সরবরাহ করা হয়েছে। এর পাশাপাশি সার, পানি ও বালাই ব্যবস্থাপনার বিষয়টি আমরা সরাসরি মনিটরিং করি। উনার দেখাদেখি আশপাশের অন্য কৃষক এই ফসল করতে উৎসাহী হবেন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো. ইয়াসিন আলী বলেন, আমাদের দেশে যে তরমুজগুলো চাষ হয় তার মধ্যে গোল্ডেন ক্রাউন্ট একটি নতুন জাতের তরমুজ। এটি সাধারণত মৌসুম ছাড়া চাষ করা হয়। এটি আকারে একটু ছোট হয় এবং বাইরে থেকে এটি হলুদ রঙের হলেও এর ভেতরটা গোলাপি রঙের হয়। এটি খেতেও সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ। এছাড়া এটি প্রচুর পরিমাণে ধরে এবং অমৌসুমে হয় বলে এর বাজারমূল্য বেশ ভালো পাওয়া যায়। তাই আমাদের যে সমস্ত উদ্যোগী ও ভালো কৃষক আছে তারা প্রদশর্নীর মাধ্যমে ও ব্যক্তিগতভাবেও চাষ শুরু করেছে। আমরা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক মনিটর করছি এবং পরামর্শ দিচ্ছি। এটার আবাদ ভবিষ্যৎতে যেন সম্প্রসারিত হয়।