নিজস্ব প্রতিবেদক : আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া এখন অসুস্থ, তাই বাড়িতে থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করছেন। এখন তিনি যদি সুস্থ হয়ে ওঠেন, রাজনীতি করার জন্য প্রস্তুত থাকেন; তাহলে তার প্রথম দায়িত্ব হচ্ছে দ-িত সাজা আগে ভোগ করা।’
গতকাল রোববার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে ল’ রিপোর্টাস ফোরাম কর্তৃক আয়োজিত ‘মিট দ্যা রিপোর্টার্স’ অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। ‘খালেদা জিয়া নির্বাচন করতে পারবেন কিনা’-অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। আনিসুল হক আরও বলেন, ‘সংবিধানের ৬৬নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে-নৈতিক স্খলনের দায়ে কোনও ব্যক্তির যদি দুই বছরের বেশি দ-াদেশ হয়, তাহলে তিনি নির্বাচন করতে পারবেন না।’
প্রায় ১০ বছর পর শনিবার সমাবেশের অনুমতি পেয়েছে নিবন্ধনহীন রাজনৈতিক দল জামায়াত। এই প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতের নিবন্ধন না থাকা সত্ত্বেও কেন তাদের সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হলো, সেটা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ই বলতে পারবে।’
তিনি বলেন, ‘জামায়াতের রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন নেই। উচ্চ আদালতেও এই বিষয়ে বিচার চলমান। জামায়াতকে যুদ্ধাপরাধী দল হিসেবে ঘোষণা করতে সংসদে শিগগিরই আইন পাস হবে। এর মধ্যে দলটিকে সমাবেশ করার অনুমতি কেন দেওয়া হলো, সেটা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে প্রশ্ন করেন।’
তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হবে কিনা, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘বিএনপির শাসনামলে যখন বিভিন্ন উপনির্বাচনে কারচুপি হয়, তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কনসেপ্ট তৈরি হয়। হাইকোর্টে যখন এটাকে চ্যালেঞ্জ করা হয়, তখন সেখান থেকে রায় দেওয়া হয় যে এটা সংবিধানসম্মত নয়। মামলাটি আপিল বিভাগে যাওয়ার পর সেখানেও একই রায় হয়। অর্থাৎ সর্বোচ্চ আদালত কর্তৃক কেয়ারটেকার সরকারকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। সুতরাং এমন সরকার গঠনের চিন্তা আওয়ামী লীগের নেই।’
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে আনিসুল হক বলেন, ‘মির্জা ফখরুল বলেছেন তাদের অনেক নেতাকর্মীকে হয়রানিমূলক মামলা দেওয়া হয়েছে। এমনকি মৃত ব্যক্তির নামেও নাকি মামলা রয়েছে। আমি বলতে চাই—হয়রানি নয়, অপরাধ করেছে বলেই তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। ২০০১-এ ক্ষমতায় আসার পর তারা আওয়ামী কর্মীদের ওপর যে অত্যাচার চালিয়েছে, সেগুলো অপরাধের মধ্যেই পড়ে। মির্জা ফখরুল বলেছেন—অনেককে নাকি গুম করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে যারা গুম হয়েছে তাদের আত্মীয়রা এসে রিপোর্ট করুক, আমরা তদন্ত করবো।’
ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে বেশি ব্যবহার করা হয় এবং দ্রুত কার্যকর করা হয়, এমন প্রশ্ন সাংবাদিকদের থেকে এলে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘সাংবাদিকদের মধ্যে তিনটি দল রয়েছে। এক দল চায় আইনটি বাতিল হোক, আরেক দল চায় সংশোধন করা হোক, যার সংখ্যাটাই বেশি। আরেক দল চায় যেভাবে আছে থাকুক। বিশ্বের অন্যান্য দেশ কীভাবে এই আইনটি পরিচালনা ও সংশোধন করে সেগুলো আমরা পর্যবেক্ষণ করেছি। আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনাও করেছি যে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এটা যেন হয়রানিমূলক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা না হয় সেটা নিশ্চিত করার। শুধু সাংবাদিক নয়, সাধারণ মানুষের মনেও যেন এই আইন নিয়ে কোনও ভয় কাজ না করে, সেটাও আমরা বাস্তবায়ন করবো।’
যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমেরিকার রাষ্ট্রদূতকে বলেছি আমরা এই ভিসানীতিতে অপমানিত হচ্ছি। এটি যেন শুধু একটি দলের বিপক্ষে প্রয়োগ করা না হয়। এটি যেন নিরপেক্ষভাবে হয়। এই ভিসানীতি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের একটি নীতি। এটা যদি সুষ্ঠুভাবে প্রয়োগ তারা করেন তাহলে আমাদের কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু তারা যদি এটা শুধু একটা দলের বিরুদ্ধেই ব্যবহার করেন, তাহলে অবশ্যই আমাদের এই ব্যাপারে আপত্তি আছে।’
ল’ রিপোর্টাস ফোরাম কর্তৃক আয়োজিত ‘মিট দ্যা রিপোর্টার্স’ অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন ল’ রিপোর্টার্স ফোরামের (এলআরএফের) সভাপতি আশুতোষ সরকার। সঞ্চালনায় ছিলেন এলআরএফের সাধারণ সম্পাদক আহমেদ সরোয়ার হোসেন ভুঁইয়া।