স্বাস্থ্য ও পরিচর্যা: সময় যেন ক্রমশ ছোট হয়ে আসছে। দিনটা কেবল ঘড়ির কাঁটায় ঘুরে যায়। সকাল থেকে রাত, একের পর এক কাজ, দায়িত্ব আর দৌড়ঝাঁপ। এই ব্যস্ত জীবনে শরীরের যত্ন নেওয়ার কথা ভাবতেই যেন ক্লান্ত লাগে। ‘সময় পাই না’ এই বাক্যটাই এখন সবচেয়ে পরিচিত অজুহাত, বিশেষ করে ব্যায়াম না করার ক্ষেত্রে। তবে কি সত্যিই শরীর চর্চা ছাড়া ফিটনেস ধরে রাখা যায় না?
আসলে যায়, তবে তার জন্য চাই কিছু সচেতনতা আর দৈনন্দিন জীবনে ছোট ছোট পরিবর্তন। যারা প্রতিদিন সকালে উঠে জিমে যাওয়ার সুযোগ তৈরি করতে পেরেছেন কিংবা নিয়ম করে দৌড়ান, তারা ভাগ্যবান। কিন্তু যারা পারেন না, তারা কি তবে একেবারেই পিছিয়ে?
বাস্তবতা হচ্ছে ফিটনেস ধরে রাখা মানেই যে ভারোত্তোলন বা ঘণ্টার পর ঘণ্টা ব্যায়াম করতে হবে, তা নয়। আমাদের প্রতিদিনকার জীবনেই এমন কিছু অভ্যাস গড়ে তোলা সম্ভব যা শরীরকে সচল ও সুস্থ রাখে। যেমন-
১. অফিসে যাওয়ার সময় বাসা থেকে কিছুটা আগে বেরিয়ে কিছুটা পথ হেঁটে যাওয়া, কিংবা বাজারে গিয়ে পণ্য কেনার সময় রিকশা না নিয়ে হেঁটে ফেরা এই অভ্যাসগুলোও শরীরের উপকারে আসে।
২. বাসার কাজেও রয়েছে ব্যায়ামের ছোঁয়া। ঝাঁট দেওয়া, কাপড় ধোয়া, বাসন মাজা সব কাজেই শরীর নড়াচড়া করে এবং ক্যালোরি খরচ হয়। অনেকে এসব কাজকে অবহেলা করেন, কিন্তু একটু সচেতন হলেই দেখা যায় এসবই একেকটা ছোট ব্যায়ামের মতো। যেমন রান্নার সময় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কিছু হালকা স্ট্রেচিং করাও শরীরের জন্য ভালো। এমনকি মোবাইলে কথা বলার সময় বসে না থেকে হাঁটাহাঁটি করলেও কাজ হয়।
৩. খাবারদাবার নিয়ন্ত্রণ করাও ফিটনেস রক্ষার বড় অংশ। প্রতিদিন একটু বাড়তি খেয়েই শরীরে মেদ জমতে শুরু করে। তাই বাইরে খাওয়ার প্রবণতা কমানো, চিনি ও তেলযুক্ত খাবার কমিয়ে ফ্রেশ ফলমূল ও শাকসবজির দিকে ঝুঁকে পড়া দরকার। অনেক সময় কাজের চাপে পানি খাওয়ার কথাও ভুলে যান অনেকে, অথচ পর্যাপ্ত পানি শরীরের বিপাকক্রিয়া ঠিক রাখে এবং ক্লান্তিভাব দূর করে।
৪. আরেকটি উপেক্ষিত দিক হলো ঘুম। শরীরকে ঠিকভাবে বিশ্রাম না দিলে, তার কর্মক্ষমতাও কমে যায়। গভীর ও টানা ঘুম শরীর ও মন দুয়োকেই চাঙ্গা করে তোলে। দিনের শেষে পর্যাপ্ত ঘুম না হলে, সকালে উঠে ক্লান্ত লাগে এবং সারাদিন ধীরগতিতে চলে।
৫. এছাড়াও ধ্যান বা শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম একান্তই প্রয়োজন। কর্মব্যস্ত জীবনে মানসিক চাপ অতি সাধারণ এক ব্যাপার। নিয়মিত মেডিটেশন মনকে শান্ত করে, দুশ্চিন্তা দূর করে এবং এক ধরনের মানসিক ফিটনেস এনে দেয়। যা শারীরিক সুস্থতার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সবচেয়ে বড় কথা হলো ব্যায়ামের সময় না পেলেও সচেতন জীবনধারা ও স্বাস্থ্যকর অভ্যাসের মাধ্যমেই ফিটনেস ধরে রাখা যায়। শরীরকে ভালবাসা মানে শুধু ব্যায়াম করা নয়, বরং প্রতিদিন তাকে সজীব ও সচল রাখার চেষ্টাই হচ্ছে আসল যত্ন। সময় না থাকলেও, ইচ্ছা থাকলে পথ মেলে। আর সে পথেই লুকিয়ে আছে সুস্থ, দীর্ঘ ও সুন্দর জীবনের গোপন রহস্য।