ঢাকা ১২:৪৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৭ অগাস্ট ২০২৫

সুশাসনের অভাবে দুর্বল হচ্ছে ব্যাংকিং খাত : সিপিডি

  • আপডেট সময় : ০২:৩২:৩৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২২
  • ৯৬ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : সুশাসন ও সংস্কারের অভাবে ব্যাংকিং সেক্টর ক্রমাগত দুর্বল থেকে দুর্বলতর হয়ে যাচ্ছে বলে মনে করে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। গতকাল শনিবার মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টার ইন অডিটোরিয়ামে ‘সংকটে অর্থনীতি : কর্মপরিকল্পনা কী হতে পারে?’ শীর্ষক এক সংলাপে সিপিডির পক্ষে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন এমন কথা কথা বলেন। সংলাপে পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান প্রধান অতিথি ও আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহানের সভাপতিত্বে সেখানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান হাবিব মনসুর, বিশ্বব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন এবং বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ এমডি রূপালী হক চৌধুরী। ড. ফাহমিদা তার প্রবন্ধ উপস্থাপনায় বলেন, ব্যাংকিং সেক্টর বহু বছর ধরেই সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ঋণ খেলাপি বেড়েই চলেছে। সুশাসন ও সংস্কারের অভাবে এই খাত ক্রমাগতভাবে দুর্বল থেকে দুর্বলতর হয়ে যাচ্ছে। ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংক ও বিশেষায়িত ব্যাংকের ক্ষেত্রে বড় দুর্বলতা লক্ষ্য করা যাচ্ছ। খেলাপি ঋণের উন্নতি না হলে এ ধরনের ঘাটতি রয়েই যাবে। খেলাপি যা বলা হচ্ছে বাস্তবে এর পরিমাণ অনেক বেশি। আইএমএফসহ সংশ্লিষ্টরা এটা বারবার বলেছে। তাদের ধারণা, সব সূচক যদি বিবেচনায় নেওয়া হয়, তাহলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দ্বিগুণ হয়ে যাবে। বর্তমানে যোগ হয়েছে ব্যাংকের তারল্য সংকট। আর একটি বিষয় হচ্ছে ঋণ ও সঞ্চয়ে আরোপিত হারও ব্যাংকিং ডিপোজিটে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। প্রসঙ্গত, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য বলছে, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাস শেষে ব্যাংকিং খাতের মোট ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৪ লাখ ৩৬ হাজার ১৯৯ কোটি ৮২ লাখ টাকা। এর মধ্যে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে এক লাখ ৩৪ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা। যা মোট ঋণের ৯ দশমিক ৩৬ শতাংশ। জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর সময়ে তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৯ হাজার ১৩৯ কোটি টাকা। খাদ্য মূল্যস্ফীতি প্রসঙ্গে ফাহমিদা বলেন, মূল্যস্ফীতি যে অবস্থায় ছিল সেখান থেকে আরও ঘনীভূত হয়েছে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ বড় কারণ হলেও আগে থেকেই মূল্যস্ফীতি বেশি ছিল। আন্তর্জাতিক বাজারের কারণে পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার অনেক কারণ থাকতে পারে, কিন্তু অভ্যন্তরীণ বাজারের পণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। এক্ষেত্রে বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা বড় কারণ। এর ফলে নি¤œ মধ্যবিত্ত ও নি¤œবিত্তের ওপর ক্রমাগত চাপ বাড়ছে। আগে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি বাড়লে খাদ্য বহির্ভূত মূল্যস্ফীতি কমতো। কিন্তু এখন দুটোই সমানতালে বেড়ে চলছে। আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে তুলনা করলেও অনেক পণ্যের ক্ষেত্রেই মূল্যের ঊর্ধ্বগতি বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশেষ করে চাল, গম, ভোজ্য তেল, চিনি কিংবা গরুর মাংসের মূল্যের ক্ষেত্রে এমন প্রবণতা রয়েছে। অর্থাৎ খাদ্য মূল্যস্ফীতি অনেক বেশি হারে বাড়ছে। প্রবন্ধে বলা হয়েছে, বর্তমান বাজারে দুই একটি সেক্টর ছাড়া ৪ সদস্যের পরিবার মাছ ও মাংস ছাড়া কম্প্রোমাইজ ডায়েট নিতে পারছে না। সিপিডির হিসাবে, কম্প্রোমাইজ ডায়েটের জন্য ৯ হাজার ৫৫৭ টাকা ও মাছ-মাংসসহ রেগুলার ডায়েটের জন্য মাসে ২৩ হাজার ৬৭৬ টাকা প্রয়োজন। অন্যদিকে খাদ্য বহির্ভূত পণ্যের ক্ষেত্রে আগে একটি স্থিতিশীল অবস্থায় ছিল। কিন্তু এখন সেই জায়গায়ও অস্থিতিশীলতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এর প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে মুদ্রার বিনিময় হার, রিজার্ভ ব্যবহারের দুর্বলতা, ট্রেড ইনভয়েসিংয়ের কারণে অর্থ পাচার ইত্যাদি। এসব কারণে এক ধরনের ভঙ্গুরতা লক্ষ্য করা গেছে। রিজার্ভের বিষয়ে সিপিডি বলছে, রিজার্ভের হিসাব নিয়ে নানা জটিলতা তৈরি হয়েছে। রিজার্ভের কারণে এলসি খোলা কিংবা আমদানির ক্ষেত্রে চাপ তৈরি হয়েছে। রপ্তানি বাড়লেও কারেন্ট হিসাব ব্যালেন্স নেতিবাচক। রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে এসেছে। বিদেশে মানুষ যাওয়ার প্রবণতা বাড়লেও রেমিট্যান্স বাড়ছে না। এখানে হুন্ডি মার্কেটের বিরাটভাবে প্রভাবিত করছে, সরকারের আড়াই শতাংশ নগদ প্রণোদনা থাকা সত্ত্বেও রেমিট্যান্স বাড়ছে না। এটা একটি চিন্তার বিষয়। বিলাসবহুল ও অপ্রয়োজনীয় পণ্যের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উদ্যোগের কারণে অপ্রয়োজনীয় এলসি খোলার প্রবণতা কমেছে। ফাহমিদা বলেন, আর্থিক ব্যবস্থাপনায় দেখতে পারছি এনবিআরের রাজস্ব আয় বেড়েছে। এর মধ্যে পরোক্ষ কর অর্থাৎ আমদানি বৃদ্ধির কারণে বেড়েছে। আর একটি বিষয় হলো এডিপি বাস্তবায়নের হার গত ৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম দেখা যাচ্ছে। যা ১২.৮ শতাংশ। প্রকল্প বাস্তবায়ন না হওয়া বড় কারণ বলে দেখা যাচ্ছে। বাজেট ঘাটতি মেটাতে প্রথম চার মাসে ব্যাংকিং সেক্টর থেকে অর্থ নেওয়ার হার বেড়ে যাচ্ছে ও সঞ্চয় কমে যাচ্ছে। আগামীতে প্রথম কয়েক মাসে মূল্য বৃদ্ধির কারণে রাজস্ব আদায় যেটা বেড়েছে তা স্থিতিশীল কি না। ভর্তুকিটা কীভাবে সমন্বয় করা হবে, সেটাও বড় একটি বিষয়।
ঢাকায় চার সদস্যের পরিবারে মাসিক খাবার খরচ প্রায় ২৪ হাজার
ঢাকায় চার জন সদস্যের পরিবারে খাবার কিনতে প্রতি মাসে খরচ হয় সাড়ে ২৩ হাজার টাকা। আর খাদ্য তালিকা থেকে মাছ-মাংস বাদ দিলে এ খরচ দাঁড়ায় সাড়ে ৯ হাজার টাকায়। এমন অবস্থায় পরিবারের খাদ্যপণ্য কিনে এ শহরে টিকে থাকা নি¤œ ও মধ্যবিত্তদের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। শনিবার সকালে ‘সংকটে অর্থনীতি: কর্মপরিকল্পনা কী হতে পারে?’ শীর্ষক এক সংলাপে এ তথ্য দিয়েছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। বিশ্ববাজারের সঙ্গে স্থানীয় বাজারের পণ্যমূল্য বৃদ্ধির অনেক পার্থক্য রয়েছে জানিয়ে গবেষকরা বলেন, বিশ্ববাজারে যে হারে পণ্যের মূল্য বাড়ছে, স্থানীয় বাজারে তারচেয়ে অনেক বেশি হারে বাড়ছে। বিশেষ করে চাল, আটা, চিনি ও ভোজ্যতেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে কমলেও স্থানীয় বাজারে এর প্রভাব নেই। এছাড়া অভ্যন্তরীণ উৎপাদিত পণ্যের দামও কোনো কারণ ছাড়াই ঊর্দ্ধমুখী। এমন পরিস্থিতিতে শ্রমজীবীদের বেতন বৃদ্ধি করার তাগিদ দিয়েছে সংস্থাটি। দেশের ব্যাংকিং খাত সংস্কার ও মুদ্রা ব্যবস্থাপনায় দক্ষ পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ দিয়ে সংলাপে গবেষক ও অর্থনীতিবিদরা বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত স্থিতিশীলতার জন্য অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে। এছাড়া খেলাপি ঋণ বাড়ছে। ঋণ দেওয়ায় অনিয়ম এখনও আছে। এ বিষয়ে দক্ষতার সঙ্গে পদক্ষেপ নিতে হবে। এসময় সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, দেশে ব্যাংক খাতের যে দুর্বলতা তা (কোভিড-১৯) পরিস্থিতি কিংবা ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ফলে নয়। এ খাতে দুর্বলতা দীর্ঘদিনের। খেলাপি ঋণ প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এ থেকে উন্নতি না হলে ব্যাংকগুলোতে মূলধনের ঘাটতি থেকেই যাবে। প্রাতিষ্ঠানিক ও প্রশাসনিক, আইন এবং তথ্যগত দুর্বলতার ফলে এ খাত স্বাভাবিক হচ্ছে না। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান, বিশেষ অতিথি ছিলেন সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী। এছাড়া আরো উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, পিআরআই-এর নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান হাবিব মনসুর, বিশ্বব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন প্রমুখ।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

সুশাসনের অভাবে দুর্বল হচ্ছে ব্যাংকিং খাত : সিপিডি

আপডেট সময় : ০২:৩২:৩৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক : সুশাসন ও সংস্কারের অভাবে ব্যাংকিং সেক্টর ক্রমাগত দুর্বল থেকে দুর্বলতর হয়ে যাচ্ছে বলে মনে করে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। গতকাল শনিবার মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টার ইন অডিটোরিয়ামে ‘সংকটে অর্থনীতি : কর্মপরিকল্পনা কী হতে পারে?’ শীর্ষক এক সংলাপে সিপিডির পক্ষে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন এমন কথা কথা বলেন। সংলাপে পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান প্রধান অতিথি ও আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহানের সভাপতিত্বে সেখানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান হাবিব মনসুর, বিশ্বব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন এবং বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ এমডি রূপালী হক চৌধুরী। ড. ফাহমিদা তার প্রবন্ধ উপস্থাপনায় বলেন, ব্যাংকিং সেক্টর বহু বছর ধরেই সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ঋণ খেলাপি বেড়েই চলেছে। সুশাসন ও সংস্কারের অভাবে এই খাত ক্রমাগতভাবে দুর্বল থেকে দুর্বলতর হয়ে যাচ্ছে। ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংক ও বিশেষায়িত ব্যাংকের ক্ষেত্রে বড় দুর্বলতা লক্ষ্য করা যাচ্ছ। খেলাপি ঋণের উন্নতি না হলে এ ধরনের ঘাটতি রয়েই যাবে। খেলাপি যা বলা হচ্ছে বাস্তবে এর পরিমাণ অনেক বেশি। আইএমএফসহ সংশ্লিষ্টরা এটা বারবার বলেছে। তাদের ধারণা, সব সূচক যদি বিবেচনায় নেওয়া হয়, তাহলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দ্বিগুণ হয়ে যাবে। বর্তমানে যোগ হয়েছে ব্যাংকের তারল্য সংকট। আর একটি বিষয় হচ্ছে ঋণ ও সঞ্চয়ে আরোপিত হারও ব্যাংকিং ডিপোজিটে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। প্রসঙ্গত, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য বলছে, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাস শেষে ব্যাংকিং খাতের মোট ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৪ লাখ ৩৬ হাজার ১৯৯ কোটি ৮২ লাখ টাকা। এর মধ্যে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে এক লাখ ৩৪ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা। যা মোট ঋণের ৯ দশমিক ৩৬ শতাংশ। জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর সময়ে তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৯ হাজার ১৩৯ কোটি টাকা। খাদ্য মূল্যস্ফীতি প্রসঙ্গে ফাহমিদা বলেন, মূল্যস্ফীতি যে অবস্থায় ছিল সেখান থেকে আরও ঘনীভূত হয়েছে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ বড় কারণ হলেও আগে থেকেই মূল্যস্ফীতি বেশি ছিল। আন্তর্জাতিক বাজারের কারণে পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার অনেক কারণ থাকতে পারে, কিন্তু অভ্যন্তরীণ বাজারের পণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। এক্ষেত্রে বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা বড় কারণ। এর ফলে নি¤œ মধ্যবিত্ত ও নি¤œবিত্তের ওপর ক্রমাগত চাপ বাড়ছে। আগে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি বাড়লে খাদ্য বহির্ভূত মূল্যস্ফীতি কমতো। কিন্তু এখন দুটোই সমানতালে বেড়ে চলছে। আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে তুলনা করলেও অনেক পণ্যের ক্ষেত্রেই মূল্যের ঊর্ধ্বগতি বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশেষ করে চাল, গম, ভোজ্য তেল, চিনি কিংবা গরুর মাংসের মূল্যের ক্ষেত্রে এমন প্রবণতা রয়েছে। অর্থাৎ খাদ্য মূল্যস্ফীতি অনেক বেশি হারে বাড়ছে। প্রবন্ধে বলা হয়েছে, বর্তমান বাজারে দুই একটি সেক্টর ছাড়া ৪ সদস্যের পরিবার মাছ ও মাংস ছাড়া কম্প্রোমাইজ ডায়েট নিতে পারছে না। সিপিডির হিসাবে, কম্প্রোমাইজ ডায়েটের জন্য ৯ হাজার ৫৫৭ টাকা ও মাছ-মাংসসহ রেগুলার ডায়েটের জন্য মাসে ২৩ হাজার ৬৭৬ টাকা প্রয়োজন। অন্যদিকে খাদ্য বহির্ভূত পণ্যের ক্ষেত্রে আগে একটি স্থিতিশীল অবস্থায় ছিল। কিন্তু এখন সেই জায়গায়ও অস্থিতিশীলতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এর প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে মুদ্রার বিনিময় হার, রিজার্ভ ব্যবহারের দুর্বলতা, ট্রেড ইনভয়েসিংয়ের কারণে অর্থ পাচার ইত্যাদি। এসব কারণে এক ধরনের ভঙ্গুরতা লক্ষ্য করা গেছে। রিজার্ভের বিষয়ে সিপিডি বলছে, রিজার্ভের হিসাব নিয়ে নানা জটিলতা তৈরি হয়েছে। রিজার্ভের কারণে এলসি খোলা কিংবা আমদানির ক্ষেত্রে চাপ তৈরি হয়েছে। রপ্তানি বাড়লেও কারেন্ট হিসাব ব্যালেন্স নেতিবাচক। রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে এসেছে। বিদেশে মানুষ যাওয়ার প্রবণতা বাড়লেও রেমিট্যান্স বাড়ছে না। এখানে হুন্ডি মার্কেটের বিরাটভাবে প্রভাবিত করছে, সরকারের আড়াই শতাংশ নগদ প্রণোদনা থাকা সত্ত্বেও রেমিট্যান্স বাড়ছে না। এটা একটি চিন্তার বিষয়। বিলাসবহুল ও অপ্রয়োজনীয় পণ্যের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উদ্যোগের কারণে অপ্রয়োজনীয় এলসি খোলার প্রবণতা কমেছে। ফাহমিদা বলেন, আর্থিক ব্যবস্থাপনায় দেখতে পারছি এনবিআরের রাজস্ব আয় বেড়েছে। এর মধ্যে পরোক্ষ কর অর্থাৎ আমদানি বৃদ্ধির কারণে বেড়েছে। আর একটি বিষয় হলো এডিপি বাস্তবায়নের হার গত ৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম দেখা যাচ্ছে। যা ১২.৮ শতাংশ। প্রকল্প বাস্তবায়ন না হওয়া বড় কারণ বলে দেখা যাচ্ছে। বাজেট ঘাটতি মেটাতে প্রথম চার মাসে ব্যাংকিং সেক্টর থেকে অর্থ নেওয়ার হার বেড়ে যাচ্ছে ও সঞ্চয় কমে যাচ্ছে। আগামীতে প্রথম কয়েক মাসে মূল্য বৃদ্ধির কারণে রাজস্ব আদায় যেটা বেড়েছে তা স্থিতিশীল কি না। ভর্তুকিটা কীভাবে সমন্বয় করা হবে, সেটাও বড় একটি বিষয়।
ঢাকায় চার সদস্যের পরিবারে মাসিক খাবার খরচ প্রায় ২৪ হাজার
ঢাকায় চার জন সদস্যের পরিবারে খাবার কিনতে প্রতি মাসে খরচ হয় সাড়ে ২৩ হাজার টাকা। আর খাদ্য তালিকা থেকে মাছ-মাংস বাদ দিলে এ খরচ দাঁড়ায় সাড়ে ৯ হাজার টাকায়। এমন অবস্থায় পরিবারের খাদ্যপণ্য কিনে এ শহরে টিকে থাকা নি¤œ ও মধ্যবিত্তদের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। শনিবার সকালে ‘সংকটে অর্থনীতি: কর্মপরিকল্পনা কী হতে পারে?’ শীর্ষক এক সংলাপে এ তথ্য দিয়েছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। বিশ্ববাজারের সঙ্গে স্থানীয় বাজারের পণ্যমূল্য বৃদ্ধির অনেক পার্থক্য রয়েছে জানিয়ে গবেষকরা বলেন, বিশ্ববাজারে যে হারে পণ্যের মূল্য বাড়ছে, স্থানীয় বাজারে তারচেয়ে অনেক বেশি হারে বাড়ছে। বিশেষ করে চাল, আটা, চিনি ও ভোজ্যতেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে কমলেও স্থানীয় বাজারে এর প্রভাব নেই। এছাড়া অভ্যন্তরীণ উৎপাদিত পণ্যের দামও কোনো কারণ ছাড়াই ঊর্দ্ধমুখী। এমন পরিস্থিতিতে শ্রমজীবীদের বেতন বৃদ্ধি করার তাগিদ দিয়েছে সংস্থাটি। দেশের ব্যাংকিং খাত সংস্কার ও মুদ্রা ব্যবস্থাপনায় দক্ষ পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ দিয়ে সংলাপে গবেষক ও অর্থনীতিবিদরা বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত স্থিতিশীলতার জন্য অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে। এছাড়া খেলাপি ঋণ বাড়ছে। ঋণ দেওয়ায় অনিয়ম এখনও আছে। এ বিষয়ে দক্ষতার সঙ্গে পদক্ষেপ নিতে হবে। এসময় সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, দেশে ব্যাংক খাতের যে দুর্বলতা তা (কোভিড-১৯) পরিস্থিতি কিংবা ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ফলে নয়। এ খাতে দুর্বলতা দীর্ঘদিনের। খেলাপি ঋণ প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এ থেকে উন্নতি না হলে ব্যাংকগুলোতে মূলধনের ঘাটতি থেকেই যাবে। প্রাতিষ্ঠানিক ও প্রশাসনিক, আইন এবং তথ্যগত দুর্বলতার ফলে এ খাত স্বাভাবিক হচ্ছে না। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান, বিশেষ অতিথি ছিলেন সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী। এছাড়া আরো উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, পিআরআই-এর নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান হাবিব মনসুর, বিশ্বব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন প্রমুখ।