নিজস্ব প্রতিবেদক: রূপগঞ্জ পূর্বাচলে গৃহবধূ সুমি হত্যার বিচার চেয়ে মানববন্ধর করেছে তার পরিবার। গতকাল বুধবার (৭ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এ মানববন্ধন করেন তারা।
মানববন্ধনে সুমির ভাই বাপ্পী মিয়া বলেন, আমার মা-বাবা গরীব। আর প্রবাসী আবদুল আউয়াল প্রভাবশালী। বিয়ের পর থেকে কখনো যৌতুকের জন্য, কখনো অপবাদ দিয়ে আমার বোনকে আউয়াল ও তার পরিবারের লোকজন (শাশুড়ি, ননদ ও দেবর) শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতেন। সুমির তিন সন্তান আছে। আমরা গরীব হওয়ায় আর তিনটি সন্তানের মুখে দিকে তাকিয়ে সুমি সব অত্যাচার ও নির্যাতন সহ্য করে সংসার করেছেন। আমার বোনকে আউয়াল কখনো একটি বাটন ফোনও দেননি। অথচ অনেক আত্মীয়-স্বজনকে বিদেশ থেকে আনা দামি দামি জিনিস দিতেন আউয়াল। আউয়াল আসলে তার মা, বোন ও ভাইয়ের সহায়তায় প্রচুর মারধর করতো সুমিকে। তাদের বাড়ির পাশের লোকজন আমাদের সব বলতো। আমরা প্রতিবাদ করলে আউয়াল ও তার ভাই শফিকুল মিয়া (জমির দালালি) টাকার বিনিময়ে আমার বোন ও আমাদের পরিবারের সবাইকে মেরে ফেলার হুমকি দিতেন। তিনি বলেন, একমাস আগে আউয়াল দেশে এসেছেন। কয়েকটি মোবাইল এনেছেন আত্মীয়দের জন্য। আমার বোন কখনো তার কাছে মোবাইল চায়নি, চেয়েছে সুখ। ২৪ মার্চ সকালে আমার বোনের সঙ্গে আউয়ালের কথা কাটাকাটি হয়। মোবাইল চুরির অপবাদ দেয় সুমিকে। সুমি প্রতিবাদ করলে আউয়াল তার মা, বোন ও ভাইয়ের সহায়তায় সুমিকে কয়েক দফা বেধড়ক মারধর করেন। সুমি অজ্ঞান হয়ে গেলে তাকে রুমে রেখে আউয়াল নামাজ পড়তে যায়। এর মধ্যে পাহারায় থাকে শাশুড়ি, ননদ ও দেবর। আউয়াল নামাজ থেকে এসে দেখে সুমি মারা গেছে। তখন আউয়াল তার মা, বোন ও ভাইয়ের সহায়তায় সুমিকে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখে। এর মধ্যে বাড়ির আশপাশের লোকজন টের পেয়ে যায়। লোকজনের তোপের মুখে দেবর পালিয়ে গেলেও ননদকে লোকজন বেঁধে ও শাশুড়িকে আটকে রাখে। আর আউয়াল দ্রুত সুমিকে রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যায়। হাসপাতালে গেলে চিকিৎসক বলে কয়েকঘণ্টা আগেই সুমি মারা গেছে। এ সময় আউয়াল বেশ কিছু লোকজনকে ফোন করে হাসপাতালে জড়ো করে।
হাসপাতাল থেকে সুমিকে দ্রুত নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন আউয়াল। পরে আমরা এলাকাবাসীর সহায়তায় আউয়ালকে আটক করে তার বোন ও মাসহ পুলিশে দেই। কিন্তু দেবর শফিকুল মিয়া পালিয়ে যায়।
বাপ্পী মিয়া অভিযোগ করে বলেন, আমরা হত্যা মামলা করতে চাইলেও রূপগঞ্জ থানা পুলিশ মামলা নিতে চায়নি। উল্টো স্থানীয় প্রভাবশালী ও নামধারী কয়েকজন রাজনীতিবিদের সহায়তায় রূপগঞ্জ থানার ওসি লিয়াকত আলী আমাদের হুমকি দেয়। ওসি ও প্রভাবশালীদের অনেক টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে, স্বামী আবদুল আউয়াল। ওসি বলেন, হত্যা মামলা নেওয়া যাবে না। আপনারা দু’পক্ষ বসে কিছু টাকা নিয়ে মিটমাট করে ফেলেন। আমরা হত্যা মামলা করার জন্য লিখে নিয়ে গেছি। কিন্তু ওসির কথায় রাজি আমাদের মামলা নেয়নি। হত্যার পরদিন রাত ১২টার পর ওসি নিজে ‘আত্মহত্যা’ করেছে বলে মামলা লিখে নিয়ে আমার মাকে সই করতে বলেন।
পুলিশ তার স্বামী আবদুল আউয়াল, তার মা জাহেরা বেগম ও বোন সরু আক্তারকে গ্রেফতার করেছেন। বোন ও মা ইতোমধ্যে হাইকোর্ট থেকে জামিনে বের হয়েছেন। তবে আউয়াল জেলে রয়েছেন। তিনজনকে আটকের সময় বাড়ির আশপাশের লোকজন ও স্থানীয়রা ‘সুমিকে পিটিয়ে হত্যা’ করা হয়েছে বলে সাক্ষ্য দিয়েছেন। ২৫ মার্চ রাতে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মামলার তদন্ত করছেন রূপগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জাহাঙ্গীর। দেড়মাস পার হলেও তদন্ত কর্মকর্তা একদিনের জন্যও তদন্ত করতে আসেননি। এমনকি পুলিশ সুরতহাল রিপোর্টও দিচ্ছেন না। মামলার আসামি সুমির দেবর শফিকুল প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও তাকে গ্রেফতার করছে না। শফিকুল নিজে ও এলাকার খারাপ প্রকৃতির লোকজন দিয়ে আমি ও আমার পরিবারের লোকজনকে প্রকাশ্যে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছেন। এছাড়া আউয়ালকে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে জামিন করানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। আউয়াল জামিনে বের হয়ে দেশ থেকে পালিয়ে যাবে বলেও তার ভাই আমাদের জানিয়েছেন। আর সুমি হত্যার বিচার কখনো হবে না বলে বিভিন্ন মাধ্যমে আমাদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। সুমি হত্যার সুষ্ঠু বিচার করতে আউয়ালের মা, বোন ও দেবরকে গ্রেফতার করে স্বামীসহ রিমান্ডে নিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও পুলিশ প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি। একইসঙ্গে ন্যায় বিচারের স্বার্থে আউয়াল যেন জামিন নিয়ে বিদেশে পালিয়ে যেতে না পারে তার ব্যবস্থা করতে পুলিশ প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ করছি।
মানববন্ধনে সুমির মা বাবা সহ বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপির যুগ্ম মহাসচিব উপাধ্যক্ষ নূরুজ্জামান হীরা, সবুজ আন্দোলনের সাংগঠনিক সম্পাদক মুরসালিন বাবু, লেবার পার্টির মহাসচিব আল মামুন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ