ঢাকা ০৪:১২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩০ মে ২০২৫

সুব্রত বাইন ৮, মোল্লা মাসুদসহ তিনজন ৬ দিনের রিমান্ডে

  • আপডেট সময় : ০৮:৫৮:৫৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৮ মে ২০২৫
  • ৩৭ বার পড়া হয়েছে

সেনাবাহিনীর অভিযানে গ্রেফতার চারজন (বাঁ থেকে) শ্যুটার আরাফাত, সুব্রত বাইন, মোল্লা মাসুদ ও শরীফ -ছবি আইএসপিআর

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকার হাতিরঝিল থানার অস্ত্র আইনের মামলায় শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইনের ৮ দিন, আবু রাসেল মাসুদ ওরফে মোল্লা মাসুদসহ তিন জনের ৬ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত।

রিমান্ড আবেদনের ওপর শুনানি শেষে বুধবার ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম জাকির হোসাইন বুধবার (২৮ মে) এ আদেশ দেন। প্রসিকিউশন পুলিশের এসআই মোকছেদুল ইসলাম রিমান্ডের এ তথ্য দিয়েছেন। রিমান্ডে যাওয়া অপর দুই আসামি হলেন-আরাফাত ইবনে নাসির ওরফে শ্যুটার আরাফাত ও এম এ এস শরীফ। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হাতিরঝিল থানার এসআই রিয়াদ আহমেদ তাদের ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন।
আবেদনে বলা হয়, ২০০১ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সুব্রত বাইন ও তার সহযোগী মোল্লা মাসুদসহ ২৩ জনকে শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে তালিকাভুক্ত করে এবং তাদের ধরিয়ে দেওয়ার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করে।

সুব্রত বাইন সে সময় খুন-ডাকাতি সংঘটনের মধ্য দিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করে। আসামিরা বিভিন্ন মামলায় সাজা পেয়ে সাজা ভোগ করা অবস্থায় ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর কারাগার থেকে ছাড়া পেয়ে আবারও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড শুরু করেন। এ অবস্থায় ২৭ মে সেনাবাহিনী তাদের গ্রেফতার করে। তাদের কাছ থেকে অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করা হয়। আসামিরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন, তারা অবৈধ এ অস্ত্র, গুলি ও অন্যান্য সরঞ্জাম অপরাধ ঘটানোর জন্য নিজেদের কাছে রেখেছিলেন। গ্রেফতার করা আসামিরা সংঘবদ্ধ অপরাধ চক্রের সক্রিয় সদস্য। তারা ঢাকা শহরসহ বিভিন্ন এলাকায় অপরাধ করে আসছে। প্রাথমিক তদন্তে আসামিদের মামলায় জড়িত থাকার সাক্ষ্য প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। তাদের নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তাদের আরোঅনেক সহযোগীকে গ্রেফতার এবং আরোবিপুল অস্ত্র-গুলি উদ্ধারের সম্ভবনা রয়েছে বলে মনে করেন তদন্ত কর্মকর্তা। মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাদের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদনের পাশাপাশি জামিনের বিরোধিতা করে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, আসামিরা জামিনে মুক্তি পেলে পালিয়ে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী। আসামিদের রিমান্ড আবেদন বাতিল করে জামিন প্রার্থনা করেন তাদের আইনজীবী মজিবুর রহমান। শুনানি শেষে আদালত চারজনকে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ড মঞ্জুর করে আদেশ দেয়। সুব্রত বাইন ও মোল্লা মাসুদসহ চারজনকে মঙ্গলবার ঢাকা ও কুষ্টিয়া থেকে গ্রেফতার করে সেনাবাহিনী।
মঙ্গলবার (২৭ মে) আইএসপিআরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সেনাবাহিনীর একটি বিশেষ অভিযানে কুষ্টিয়া জেলা থেকে সুব্রত বাইন ওরফে ফতেহ আলী এবং তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী মোল্লা মাসুদ ওরফে আবু রাসেল মাসুদকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় সুব্রত বাইনের দুই সহযোগী ‘শ্যুটার’ আরাফাত ও শরীফকে। অভিযানে তাদের কাছ থেকে পাঁচটি বিদেশি পিস্তল, ১০টি ম্যাগাজিন, ৫৩ রাউন্ড গুলি ও একটি স্যাটেলাইট ফোন জব্দ করার কথা জানায় আইএসপিআর। গ্রেফতারের পর বুধবার তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের করা হয়।
আইএসপিআর বলছে, এই চারজনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় হত্যা ও চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন নাশকতার অভিযোগে মামলা রয়েছে। সুব্রত বাইন ও মোল্লা মাসুদ সেভেন স্টার সন্ত্রাসী দলের নেতা এবং তালিকাভুক্ত ‘২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর’ অন্যতম।
পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, হত্যা, চাঁদাবাজিসহ অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে সুব্রত বাইনের বিরুদ্ধে। ১৯৯১ সালে ঢাকার আগারগাঁও এলাকায় জাসদ ছাত্রলীগ নেতা মুরাদ হত্যার মধ্য দিয়ে তার সন্ত্রাস জীবনের উত্থান শুরু হয়। শীর্ষ সন্ত্রাসী ও পুরস্কার ঘোষণার প্রায় দুই বছর পর ২০০৩ সালের দিকে পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর তৎপরতা বেড়ে গেলে সুব্রত ভারতে পালিয়ে যান। সেখানে যাওয়ার পর কলকাতার স্পেশাল টাস্কফোর্স কারাইয়া এলাকা থেকে ২০০৮ সালের ১৩ অক্টোবর সুব্রতকে অস্ত্রসহ গ্রেফতার করে। তার বিরুদ্ধে কলকাতায় অস্ত্র ও অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে মামলাও হয়। ওই মামলায় ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি জামিনে ছাড়া পেয়ে আবার গা ঢাকা দেন সুব্রত। এরপর ২০০৯ সালের ২২ সেপ্টেম্বর কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্কফোর্সের কর্মকর্তাদের ধাওয়া খেয়ে সুব্রত বাইন নেপাল সীমান্তের কাকরভিটা শহরে ঢুকে পড়েন। পরে নেপালের পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের প্রায় তিন বছরের মাথায় ২০১২ সালের ৮ নভেম্বর সুড়ঙ্গ খুঁড়ে নেপালের কারাগার থেকে পালিয়ে ফের ভারতে অনুপ্রবেশ করেন সুব্রত বাইন। একই বছরের ২৭ নভেম্বর কলকাতার বৌবাজারের একটি বাসা থেকে সুব্রতকে গ্রেফতার করে ভারতীয় পুলিশ। সেখানে ফতেহ আলী নাম নিয়ে ছদ্মবেশে অবস্থান করছিলেন তিনি।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

সুব্রত বাইন ৮, মোল্লা মাসুদসহ তিনজন ৬ দিনের রিমান্ডে

আপডেট সময় : ০৮:৫৮:৫৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৮ মে ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকার হাতিরঝিল থানার অস্ত্র আইনের মামলায় শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইনের ৮ দিন, আবু রাসেল মাসুদ ওরফে মোল্লা মাসুদসহ তিন জনের ৬ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত।

রিমান্ড আবেদনের ওপর শুনানি শেষে বুধবার ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম জাকির হোসাইন বুধবার (২৮ মে) এ আদেশ দেন। প্রসিকিউশন পুলিশের এসআই মোকছেদুল ইসলাম রিমান্ডের এ তথ্য দিয়েছেন। রিমান্ডে যাওয়া অপর দুই আসামি হলেন-আরাফাত ইবনে নাসির ওরফে শ্যুটার আরাফাত ও এম এ এস শরীফ। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হাতিরঝিল থানার এসআই রিয়াদ আহমেদ তাদের ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন।
আবেদনে বলা হয়, ২০০১ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সুব্রত বাইন ও তার সহযোগী মোল্লা মাসুদসহ ২৩ জনকে শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে তালিকাভুক্ত করে এবং তাদের ধরিয়ে দেওয়ার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করে।

সুব্রত বাইন সে সময় খুন-ডাকাতি সংঘটনের মধ্য দিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করে। আসামিরা বিভিন্ন মামলায় সাজা পেয়ে সাজা ভোগ করা অবস্থায় ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর কারাগার থেকে ছাড়া পেয়ে আবারও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড শুরু করেন। এ অবস্থায় ২৭ মে সেনাবাহিনী তাদের গ্রেফতার করে। তাদের কাছ থেকে অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করা হয়। আসামিরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন, তারা অবৈধ এ অস্ত্র, গুলি ও অন্যান্য সরঞ্জাম অপরাধ ঘটানোর জন্য নিজেদের কাছে রেখেছিলেন। গ্রেফতার করা আসামিরা সংঘবদ্ধ অপরাধ চক্রের সক্রিয় সদস্য। তারা ঢাকা শহরসহ বিভিন্ন এলাকায় অপরাধ করে আসছে। প্রাথমিক তদন্তে আসামিদের মামলায় জড়িত থাকার সাক্ষ্য প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। তাদের নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তাদের আরোঅনেক সহযোগীকে গ্রেফতার এবং আরোবিপুল অস্ত্র-গুলি উদ্ধারের সম্ভবনা রয়েছে বলে মনে করেন তদন্ত কর্মকর্তা। মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাদের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদনের পাশাপাশি জামিনের বিরোধিতা করে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, আসামিরা জামিনে মুক্তি পেলে পালিয়ে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী। আসামিদের রিমান্ড আবেদন বাতিল করে জামিন প্রার্থনা করেন তাদের আইনজীবী মজিবুর রহমান। শুনানি শেষে আদালত চারজনকে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ড মঞ্জুর করে আদেশ দেয়। সুব্রত বাইন ও মোল্লা মাসুদসহ চারজনকে মঙ্গলবার ঢাকা ও কুষ্টিয়া থেকে গ্রেফতার করে সেনাবাহিনী।
মঙ্গলবার (২৭ মে) আইএসপিআরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সেনাবাহিনীর একটি বিশেষ অভিযানে কুষ্টিয়া জেলা থেকে সুব্রত বাইন ওরফে ফতেহ আলী এবং তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী মোল্লা মাসুদ ওরফে আবু রাসেল মাসুদকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় সুব্রত বাইনের দুই সহযোগী ‘শ্যুটার’ আরাফাত ও শরীফকে। অভিযানে তাদের কাছ থেকে পাঁচটি বিদেশি পিস্তল, ১০টি ম্যাগাজিন, ৫৩ রাউন্ড গুলি ও একটি স্যাটেলাইট ফোন জব্দ করার কথা জানায় আইএসপিআর। গ্রেফতারের পর বুধবার তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের করা হয়।
আইএসপিআর বলছে, এই চারজনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় হত্যা ও চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন নাশকতার অভিযোগে মামলা রয়েছে। সুব্রত বাইন ও মোল্লা মাসুদ সেভেন স্টার সন্ত্রাসী দলের নেতা এবং তালিকাভুক্ত ‘২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর’ অন্যতম।
পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, হত্যা, চাঁদাবাজিসহ অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে সুব্রত বাইনের বিরুদ্ধে। ১৯৯১ সালে ঢাকার আগারগাঁও এলাকায় জাসদ ছাত্রলীগ নেতা মুরাদ হত্যার মধ্য দিয়ে তার সন্ত্রাস জীবনের উত্থান শুরু হয়। শীর্ষ সন্ত্রাসী ও পুরস্কার ঘোষণার প্রায় দুই বছর পর ২০০৩ সালের দিকে পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর তৎপরতা বেড়ে গেলে সুব্রত ভারতে পালিয়ে যান। সেখানে যাওয়ার পর কলকাতার স্পেশাল টাস্কফোর্স কারাইয়া এলাকা থেকে ২০০৮ সালের ১৩ অক্টোবর সুব্রতকে অস্ত্রসহ গ্রেফতার করে। তার বিরুদ্ধে কলকাতায় অস্ত্র ও অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে মামলাও হয়। ওই মামলায় ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি জামিনে ছাড়া পেয়ে আবার গা ঢাকা দেন সুব্রত। এরপর ২০০৯ সালের ২২ সেপ্টেম্বর কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্কফোর্সের কর্মকর্তাদের ধাওয়া খেয়ে সুব্রত বাইন নেপাল সীমান্তের কাকরভিটা শহরে ঢুকে পড়েন। পরে নেপালের পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের প্রায় তিন বছরের মাথায় ২০১২ সালের ৮ নভেম্বর সুড়ঙ্গ খুঁড়ে নেপালের কারাগার থেকে পালিয়ে ফের ভারতে অনুপ্রবেশ করেন সুব্রত বাইন। একই বছরের ২৭ নভেম্বর কলকাতার বৌবাজারের একটি বাসা থেকে সুব্রতকে গ্রেফতার করে ভারতীয় পুলিশ। সেখানে ফতেহ আলী নাম নিয়ে ছদ্মবেশে অবস্থান করছিলেন তিনি।