নিজস্ব প্রতিবেদক: ভারতের পালিয়ে থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রচারের ঘোষণার পাল্টায় ‘বুলডোজার মিছিল’ কর্মসূচি থেকে ভাঙচুরের ঘটনার প্রেক্ষাপটে সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে নিরাপত্তা জোরদার করার কথা পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশ-ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার মো. ফারুক হোসেন বলেন, সুপ্রিম কোর্টের ভেতরে শেখ মুজিবুরের মূর্তি ভেঙে ফেলবে বলে বিভিন্ন গ্রুপ থেকে প্রচার হওয়ায় পুরো সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
পুলিশ ছাড়াও র্যাব, সেনাবাহিনীর সদস্যদেরও কড়া প্রহরায় থাকতে দেখা গেছে। তবে শনিবার ছুটির দিন থাকায় লোকজনের যাতায়াত তেমন চোখে পড়েনি।
১৯৭২ সালের ১৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট উদ্বোধন করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেদিন বঙ্গবন্ধু যেখানে ভাষণ দিয়েছিলেন, সুপ্রিমের ইনার গার্ডেনের সেই স্থানটি সংরক্ষণের লক্ষ্যে নির্মিত হয়েছিল স্মারকস্তম্ভ।
২০২৩ সালের ২৮ জুলাই তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই স্মারকস্তম্ভ উদ্বোধন করেন। এতে বঙ্গবন্ধুর ছবিফলক ও ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ আইনজীবীদের নাম খোদাই করা আছে।
সুপ্রিম কোর্ট জাদুঘরে বঙ্গবন্ধুর নামে একটি কর্নার আছে। ২০২৩ সালের ২৩ মে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী এ কর্নারের উদ্বোধন করেন। সেখানে বিচারপতিদের ব্যবহার্য গাউনসহ বিভিন্ন সামগ্রী, বঙ্গবন্ধুর সংগ্রহ করা বই ইত্যাদি রয়েছে।
তুমুল আন্দোলনে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার পতনের পর সেই স্মারকস্তম্ভে থাকা ছবি বিকৃত করে দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে পুরো সেটি কাপড়ে মুড়ে রাখা হয়।
শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির দিন বুধবার রাতে ‘বুলডোজার মিছিল’ কর্মসূচির দিন ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক অনেক ঘটনার সাক্ষী বাড়িটি একটি ক্রেন ও দুটি এক্সক্যাভেটর দিয়ে বাড়ি ভাঙা শুরু হয়। আগুন দেওয়া হয় ধানমন্ডির ৫ নম্বরে শেখ হাসিনার বাড়ি সুধাসদনে।
সেদিন রাতেই খুলনায় ‘শেখ বাড়ি’ নামে পরিচিত শেখ মুজিবুর রহমানের ভাইয়ের বাড়ি, বিভিন্ন জেলায় শেখ মুজিবের ম্যুরাল, আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়ি ও দলের কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়।
পরদিন বৃহস্পতিবারও সকালে একটি এক্সক্যাভেটর দিয়ে চলে ৩২ নম্বরের বাড়ি ভাঙা। সেদিন সকাল সাড়ে ১০টার পর একমাত্র এক্সক্যাভেটরটি সরিয়ে নেওয়ার পর আর কোনো ভারী যন্ত্রপাতি আনা হয়নি।
বৃহস্পতিবার দিনভর এ ভবনে ভাঙচুর ও লুটপাটের পর বিকাল বেলায় সেখানে গরু জবাই করে বিরিয়ানি রান্নার পর রাতে জেয়াফতের আয়োজন করা হয়।
সেদিনও ভাঙচুরের পর আগুন দেওয়া হয়েছে আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়িঘরে। অনেক জেলায় দলীয় কার্যালয়ে দেওয়া হয়েছে আগুন।
এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিবারের সম্পত্তি ধ্বংস এবং আওয়ামী লীগের লোকজনের ওপর হামলা থেকে সবাইকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
শুক্রবার প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক পেইজে প্রকাশ করা এক বিবৃতিতে তিনি অবিলম্বে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে দেসবাসীকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানান।