ক্রীড়া ডেস্ক : কার্যত শেষই হয়ে গেছে ইউরোপিয়ান সুপার লিগের মাঠে গড়ানোর সব আয়োজন। তবে প্রস্তাবিত প্রতিযোগিতাটি ঘিরে আলোচনা থেমে নেই। অভিযোগ উঠেছে, পুরো বিষয়টি আগে থেকেই জানতেন বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থার সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো। জড়িত ক্লাবগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে তিনি নাকি দেখাও করেছিলেন, এমনকি সমর্থনও দিয়েছিলেন! তবে, ইউরোপীয় ক্লাব ফুটবলের প্রচলিত কাঠামোকে বুড়ো আঙুল দেখানো বিদ্রোহী প্রতিযোগিতাটিকে সমর্থন দেওয়ার বিষয়টি পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন ফিফা প্রধান।
ইনফান্তিনোর বিরুদ্ধে জনসম্মুখে অভিযোগের প্রথম তিরটা ছোড়েন লা লিগা সভাপতি হাভিয়ের তেবাস। গত বৃহস্পতিবার নিউইয়র্ক টাইমসও তাদের প্রতিবেদনে সুত্রের বরাত দিয়ে একই অভিযোগ আনে। সেখানে বলা হয়, ইনফান্তিনোর কিছু কর্মী সুপার লিগকে ফিফার সম্ভাব্য সমর্থন দেওয়ার বিষয়ে আলাপ চালিয়ে যাচ্ছিল। শুক্রবার ফিফা কংগ্রেস শেষে ইনফান্তিনোকে লা লিগা প্রধানের মন্তব্য এবং সুপার লিগে তার কিংবা ফিফার জড়িত থাকার অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা। এর সরাসরি কোনো জবাব দেননি তিনি। “আমাদের তথ্য উপাত্তের দিকে খেয়াল করা উচিত, এসব গল্প-গুজবে নয়। কয়েক দশক ধরে আমি ফুটবলের বিভিন্ন পর্যায়ে কাজ করেছি। উয়েফায় কাজ করার সময় থেকে অনেক ক্লাব সম্পর্কে আমি জানি, অনেক ক্লাবের সঙ্গে আমি কথা বলেছি।”
“ইউরোপিয়ান ক্লাবগুলোর সঙ্গে আলাপকালে সুপার লিগ একটি আলোচিত বিষয় ছিল, সবসময়। ফুটবলে জড়িত সবাই এ বিষয়ে জানত। কিছু ক্লাব এই প্রতিযোগিতা বা এমন কিছু নিয়ে অনেক গবেষণা করেছে।” ২০০০ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত উয়েফায় বিভিন্ন পদে কাজ করা ইনফান্তিনো জোর দিয়ে বলেন, নিজের দায়িত্বের প্রতি সৎ থেকে সবসময়ই তিনি ফুটবলের স্বার্থে কাজ করেছেন। “উয়েফায় যে ১৬ বছর আমি ছিলাম, সবসময় আমরা এসব সামলেছি। আমি আপনাদের নিশ্চিত করে বলতে পারি, এর আগে এই সুপার লিগের চেয়েও আরও পরিকল্পিত ও উন্নত প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হয়েছে।” “এটা আমার দায়িত্ব, ফিফার দায়িত্ব সংস্থার অংশীদারদের সঙ্গে দেখা করা ও আলোচনা করা।” ইনফান্তিনোর কথায় সত্যতা মেলে সুপার লিগ ঘিরে গত কয়েক বছর ধরে ওঠা গুঞ্জনের। এমন একটা কিছু যে আসতে যাচ্ছে অথবা এমন কোনো প্রতিযোগিতার বিষয়ে ইউরোপের শীর্ষ কয়েকটি ক্লাব ভাবছে, গণমাধ্যমে মাঝে মধ্যে চাউর হতো। তবে, এ বছরের আগে বিষয়টি কখনোই তেমন সাড়া ফেলতে পারেনি।
গত জানুয়ারিতে হঠাৎ করে ফিফা বিবৃতি দিয়ে এ বিষয়ে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করে। সরাসরি জানিয়ে দেয়, সুপার লিগে খেললেই নিষিদ্ধ হতে হবে বিশ্বকাপে। ফিফার অমন হুমকির পর আবারও বিষয়টি চাপা পড়ে যায়। এরপরই ফুটবল বিশ্বকে নাড়িয়ে দিয়ে গত মাসে আবির্ভুত হয় বিচ্ছিন্ন টুর্নামেন্টটি। তাতে ইউরোপের ১২টি শীর্ষ ক্লাব যোগ দিলে সমালোচনায় মুখর হয় ফুটবল বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে ক্লাবগুলোর সমর্থকরা। নিষেধাজ্ঞার হুমকি দেয় ফিফা ও উয়েফাসহ এর সহযোগী সংস্থাগুলো। প্রবল চাপের মুখে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সরে দাঁড়ায় ইংল্যান্ডের ৬ ক্লাব। পর দিন সেই কাতারে যোগ দেয় ইন্টার মিলান ও আতলেতিকো মাদ্রিদ। তাতে কার্যত মুখ থুবড়ে পড়ে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মাঠে নামা টুর্নামেন্টটি। পরবর্তীতে নিজেদের নাম প্রত্যাহার করে নেয় এসি মিলানও। প্রকল্পটি ঘিরে তেমন কোনো সম্ভাবনা না থাকলেও নতুন শুরুর আশায় এখনও এটি আঁকড়ে ধরে আছে রিয়াল মাদ্রিদ, বার্সেলোনা ও ইউভেন্তুস।
সুপার লিগ : ফিফা প্রধান জানতেন, কিন্তু সমর্থন দেননি
ট্যাগস :
সুপার লিগ : ফিফা প্রধান জানতেন
জনপ্রিয় সংবাদ