প্রত্যাশা ডেস্ক : সুন্দরবনে অগ্নিকা-ের ঘটনা এবারই নতুন নয়। বেশ কয়েকবছর ধরেই ধারাবাহিক অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটছে। এরপর তদন্ত হয়। তদন্ত রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর বনবিভাগ দৃশ্যমান কী ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে তা কেউই জানে না। যদিও ওই রিপোর্টে জেলে-বাওয়ালীদের ফেলে দেওয়া বিড়ি-সিগারেটের আগুন থেকে সুন্দরবনে অগ্নিকা-ের সূত্রপাত বলে উল্লেখ করা হয়।
তাহলে সেই জেলে বাওয়ালীদের সুন্দরবন প্রবেশে কখনও কি কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে— এমন প্রশ্নের জবাবে বাগেরহাটের বন কর্মকর্তা মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন একটি সংবাদমাধ্যমের কাছে দাবি করেন, ইতোপূর্বে সুন্দরবনের অগ্নিকা-ের ঘটনায় বেশ কয়েকজনকে আসামি করে মামলা দেওয়া হয়েছে।
তাতেও কি এই দুর্ঘটনা কমেছে-জানতে চাইলে এই বন কর্মকর্তা বলেন, এলাকার লোকজন সচেতন না হলে আমাদের কী করার আছে বলেন?
প্রসঙ্গত, গত ২ মে সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের দাসের ভারনী এলাকার বনে আগুন লাগে। বৃহস্পতিবার (৬ মে) বিকালে সাড়ে ৫টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। গত চারদিন ধরে আগুনে এই সংরক্ষিত বনের ১০ একর জমির সুন্দরী, গেওয়া, গরান, কেওড়া গাছসহ লতাগুল্ম পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
গত সোমবারের আগুনের ঘটনায় তদন্ত কমিটির প্রধান পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের এসিএফ (সহকারী বনসংরক্ষক) জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘একই জায়গায় তিন দফায় আগুনের ঘটনা ঘটায় এখনও তদন্তের কাজ শুরু করতে পারিনি। তবে ধারণা করা হচ্ছে বনের পাতা পচে গিয়ে মিথেন গ্যাস তৈরি হয়ে আগুন লাগতে পারে।’ তবে ওই বন কর্মকর্তার ধারণা সঠিক নয় উল্লেখ করে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞানের ডিসিপ্লিন মো. আব্দুল্লাহ হারুন চৌধুরী। তিনি বলেন, মিথেন গ্যাস তৈরি হয় আবদ্ধ জায়গায়, এটা তো ওরকম নয়। বিস্তৃত জায়গা ঘিরে এটা হতে পারে না।
তিনি বলেন, ‘এখন মধু আহরণ চলছে, মৌয়ালরা মধু আহরণ শেষে তাদের ব্যবহৃত আগুনের মশাল বনের যে কোনও জায়গায় ফেলে রাখায় সেখান থেকে আগুন লাগতে পারে। আর অনাবৃষ্টির কারণে সুন্দরবনের শুকনো ডালপালা ও পাতায় সেই আগুন লাগায় এর তীব্রতা বেড়েছে বলে মনে করেন তিনি।
সুন্দরবনে ধারাবাহিক অগ্নিকা-ের ঘটনায় বনেরই ক্ষতি হচ্ছে জানিয়ে এই গবেষক বলেন, ‘বনে আগুনের ঘটনায় প্রথমত মাটির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে। এছাড়া বনে পাতার নিচে সরীসৃপ প্রাণী সাপ, ব্যাঙসহ অন্যান্য প্রাণী মরে যাচ্ছে আগুনের তাপে। এমনকি এসব প্রাণীর ডিমও নষ্টসহ মৌমাছির বাসাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আর যেসব জায়গায় আগুন লেগেছে সেসব জায়গার বীজ থেকে আর কখনো চারা জন্মাবে না’।
সেভ দ্য সুন্দরবনের চেয়ারম্যান ডক্টর শেখ ফরিদুল ইসলাম ও সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির স্টিয়ারিং সদস্য নুর আলম শেখ বলেন, সুন্দরবনের বারবার অগ্নিকা-ের ঘটনায় অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে। কিছু অসাধু মুনাফালোভী ব্যক্তি তাদের হীন স্বার্থে পরিকল্পিতভাবে আগুন দিয়ে এই বনকে ধ্বংস করছেন।
তারা বনবিভাগের কর্তাব্যক্তিদের দায়ী করে বলেন, বনের অভ্যন্তরে টাকার বিনিময়ে বনকর্তারা কিছু জেলে ও মৌয়ালদের ঢুকাচ্ছে। তারা মাছ ও মধু আহরণের নামে বনে আগুন দিচ্ছে। এটা ঠেকাতে না পারলে অগ্নিকা-ের ঘটনাও কমবেনা বলেও জানান তারা। বন বিভাগের তথ্যমতে, সুন্দরবনে ১৬ বছরে ২৮ বার আগুন লেগে পুড়ে যায় প্রায় ৮০ একর বনভূমি। ২০১৭ সালের ২৬ মে পূর্ব সুন্দরবনে চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের নাংলী ফরেস্ট ক্যাম্পের আওতাধীন আবদুল্লাহর ছিলায় বড় ধরনের অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটে। ওই আগুনে প্রায় পাঁচ একর বনভূমির ছোট গাছপালা, লতাগুল্ম পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
সুন্দরবনে আগুন লাগায় কারা?
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ