ঢাকা ০৪:০৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ০২ অগাস্ট ২০২৫

সুন্দরবনে আগুন আর চোরাশিকারী ঠেকাতে কর্মপরিকল্পনা হচ্ছে

  • আপডেট সময় : ০৯:০১:৪৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই ২০২৫
  • ১০ বার পড়া হয়েছে

ছবি সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক: সুন্দরবনে বারবার আগুন লাগায় বাঘের নিরাপত্তা যে বিঘ্নিত হচ্ছে, সে কথা তুলে ধরে একটি ‘কর্মপরিকল্পনা’ করার কথা বলেছেন পরিবেশ ও বন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
সেই সঙ্গে চোরাশিকারী ও পাচারকারীদের ‘নির্মূল’ করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে মিলে পরিকল্পনা সাজানোর কথা বলেছেন তিনি।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) বিশ্ব বাঘ দিবস উপলক্ষে আগারগাঁওয়ের বন ভবনে এক আলোচনা সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, বারবার সুন্দরবনে কেন আগুন লাগছে, একই জায়গায় কেন বারবার আগুন লাগছে, এগুলোর কারণ উদঘাটনে অন্তর্বর্তী সরকার চিন্তা করছে এবং আমরা কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করার দিকে যাচ্ছি।

সুন্দরবনে হরিণের সাথে বাঘের উপস্থিতির একটা সম্পর্ক আছে। সুন্দরবনে আগুন লাগার সাথে বাঘের নিরাপত্তার সম্পর্ক আছে। এসব জায়গায় আমাদের কাজেকর্মে আরো অনেক উন্নতি দেখাতে হবে। রিজওয়ানা বলেন, বাঘের যে মৃত্যু সংখ্যা, সেখানে দেখলাম পাচারকারীরা রয়েছে। আর গ্রামবাসীর সঙ্গে দ্বন্দ্বের কারণে অনেক বাঘ নিহত হয়। সেই দ্বন্দের জায়গাটাকে আমাদেরকে স্বাভাবিক সুরক্ষা বলয় সৃষ্টি করে শনাক্ত করতে হবে। প্রকৃতি সংরক্ষণের পাশাপাশি সেটাও আমরা করবার চেষ্টা করছি। আমরা আশা করি খুব শীঘ্রই আপনাদের জানাতে পারব, সুন্দরবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে আমাদের ব্যবস্থাটা কী এবং পাচারকারীর বিরুদ্ধে অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বসে কী কর্মপরিকল্পনা করছি।

পাচারের ঘটনায় সরকারের দায় এড়ানোর সুযোগ নেই মন্তব্য করে উপদেষ্টা বলেন, পাচার যারা করছে, সেই পাচারকারী কে এবং পাচারকারীর রুট আমরা চিনি না; এটা বলে কিন্তু নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে পার পেয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বনে অপরাধ কমেছে দাবি করে তিনি বলেন, আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর সুন্দরবনে বন অপরাধ অনেক বেড়ে গেছিল। সাম্প্রতিক সময়ে বন অপরাধ আমরা কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। সুন্দরবন এমন একটি বন, যেটা বাঘের আশ্রয়স্থল। সেজন্য সেটার গুরুত্ব কিন্তু আরো অনেক বেশি। বহুমুখী বিপরীতধর্মীতাকে পাশাপাশি রেখে আমাদের বাঘ সংরক্ষণের কাজটাকে এগিয়ে নিতে হবে। চোরাকারবার সংক্রান্ত মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির তাগিদ দিয়ে রিজওয়ানা বলেন, বাঘের জীবনের বিরুদ্ধে যারা অপরাধ করে, সে চোরাকারবারিদের তালিকা করে আমাদের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আমি দেখলাম, নয়টি মামলা ঝুলে আছে। এই মামলাগুলো তো ঝুলে থাকার কোনো কারণ নেই। এগুলো শেষ করার উদ্যোগ নিতে হবে। যাতে কোনোভাবেই অপরাধীরা পার পেয়ে যেতে না পারে। আমরা যদি পাচারকারীর বিরুদ্ধে সত্যিকার অর্থে সর্বশক্তি দেখাতে পারি, তাহলে পাচারকারীর সংখ্যা কিন্তু এত হওয়ার কথা ছিল না। এখন তাদের বিরুদ্ধে সর্বশক্তি দিয়ে নামতে হবে।
প্রধান বন সংরক্ষক আমীর হোসাইন চৌধুরী বলেন, আমরা দেখেছি একসময় প্রায় ১৯টি জেলায় বাঘ ছিল। এখন কিন্তু সুন্দরবন অর্থাৎ খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট এই তিনটি জেলায় বাঘ আছে। আর কোনো জেলায় বাঘ নেই। পৃথিবীর যে ১৩টি দেশে বাঘ আছে, তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। বাঘের সংখ্যা বিগত ১০ বছরে কিছুটা হলেও বেড়েছে, হয়ত কমিটমেন্ট যেভাবে ছিল, সেভাবে বাড়েনি। ২০১৪ সালে ১০৬টি, ১৮ সালে এসে হল ১১৪টি এবং ২৪ সালে এসে হল ১২৫টি। প্রায় ১৮ শতাংশ বেড়েছে এই এক দশকে।
সুন্দরবন বাঘের জন্য ‘আদর্শ আবাসস্থল নয়’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, ভারতে গত এক যুগে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে বাঘের সংখ্যা। এর কতগুলো কারণও কিন্তু আছে। বাংলাদেশে বাঘ একমাত্র টিকে আছে সুন্দরবনে। এটাকে কিন্তু কোনোভাবেই বাঘের জন্য আদর্শ আবাসস্থল বলা যাবে না। কারণ মানুষই সেখানে হাঁটতে গেলে কাদায় পা ডুবে যায়, বাঘ সেখানে হরিণ শিকার করাটা বেশ কঠিন হয়ে যায়। এরকম বিরূপ পরিবেশে বাঘ যে টিকে আছে, সেটি সেখানকার সবার সমন্বয়ের ফল।

আমীর হোসেন বলেন, ২০১৩ সালের আগ পর্যন্ত প্রায় প্রতিবছরই বাঘ গ্রামে এলে একটি দুটি করে মারা পড়ত। ২০১৩ সাল থেকে ২৪ সাল পর্যন্ত শুধু ১৮ সালে মোংলা উপজেলার চাঁদপাই এলাকায় একটি বাঘ গ্রামে চলে আসার পর মারা পড়েছে। এর বাইরে এই সময়ে কোনো বাঘ মারা পড়েনি। কিন্তু অনেকগুলো কাজ এখন আমাদের সামনের দিনে করতে হবে। বাঘ যে অবস্থায় আছে, সে অবস্থায় তাকে টিকিয়ে সংরক্ষণ করার জন্য এবং সুন্দরবন কী পরিমাণ বাঘ ধারণ করতে পারে সে অনুযায়ী বাঘের সংখ্যাকে বৃদ্ধি করার জন্য।

অন্যদের মধ্যে মন্ত্রণালয়ের সচিব ফারহিনা আহমেদ, বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চলের বন সংরক্ষক ছানাউল্যা পাটওয়ারী, খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক ইমরান আহমেদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এম এ আজিজ, আইইউসিএনের বাংলাদেশ প্রতিনিধি বিপাশা হোসেন, ওয়াইল্ডটিমের প্রধান নির্বাহী আনোয়ারুল ইসলাম, বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ আলী রেজা খান আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

সুন্দরবনে আগুন আর চোরাশিকারী ঠেকাতে কর্মপরিকল্পনা হচ্ছে

আপডেট সময় : ০৯:০১:৪৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক: সুন্দরবনে বারবার আগুন লাগায় বাঘের নিরাপত্তা যে বিঘ্নিত হচ্ছে, সে কথা তুলে ধরে একটি ‘কর্মপরিকল্পনা’ করার কথা বলেছেন পরিবেশ ও বন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
সেই সঙ্গে চোরাশিকারী ও পাচারকারীদের ‘নির্মূল’ করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে মিলে পরিকল্পনা সাজানোর কথা বলেছেন তিনি।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) বিশ্ব বাঘ দিবস উপলক্ষে আগারগাঁওয়ের বন ভবনে এক আলোচনা সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, বারবার সুন্দরবনে কেন আগুন লাগছে, একই জায়গায় কেন বারবার আগুন লাগছে, এগুলোর কারণ উদঘাটনে অন্তর্বর্তী সরকার চিন্তা করছে এবং আমরা কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করার দিকে যাচ্ছি।

সুন্দরবনে হরিণের সাথে বাঘের উপস্থিতির একটা সম্পর্ক আছে। সুন্দরবনে আগুন লাগার সাথে বাঘের নিরাপত্তার সম্পর্ক আছে। এসব জায়গায় আমাদের কাজেকর্মে আরো অনেক উন্নতি দেখাতে হবে। রিজওয়ানা বলেন, বাঘের যে মৃত্যু সংখ্যা, সেখানে দেখলাম পাচারকারীরা রয়েছে। আর গ্রামবাসীর সঙ্গে দ্বন্দ্বের কারণে অনেক বাঘ নিহত হয়। সেই দ্বন্দের জায়গাটাকে আমাদেরকে স্বাভাবিক সুরক্ষা বলয় সৃষ্টি করে শনাক্ত করতে হবে। প্রকৃতি সংরক্ষণের পাশাপাশি সেটাও আমরা করবার চেষ্টা করছি। আমরা আশা করি খুব শীঘ্রই আপনাদের জানাতে পারব, সুন্দরবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে আমাদের ব্যবস্থাটা কী এবং পাচারকারীর বিরুদ্ধে অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বসে কী কর্মপরিকল্পনা করছি।

পাচারের ঘটনায় সরকারের দায় এড়ানোর সুযোগ নেই মন্তব্য করে উপদেষ্টা বলেন, পাচার যারা করছে, সেই পাচারকারী কে এবং পাচারকারীর রুট আমরা চিনি না; এটা বলে কিন্তু নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে পার পেয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বনে অপরাধ কমেছে দাবি করে তিনি বলেন, আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর সুন্দরবনে বন অপরাধ অনেক বেড়ে গেছিল। সাম্প্রতিক সময়ে বন অপরাধ আমরা কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। সুন্দরবন এমন একটি বন, যেটা বাঘের আশ্রয়স্থল। সেজন্য সেটার গুরুত্ব কিন্তু আরো অনেক বেশি। বহুমুখী বিপরীতধর্মীতাকে পাশাপাশি রেখে আমাদের বাঘ সংরক্ষণের কাজটাকে এগিয়ে নিতে হবে। চোরাকারবার সংক্রান্ত মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির তাগিদ দিয়ে রিজওয়ানা বলেন, বাঘের জীবনের বিরুদ্ধে যারা অপরাধ করে, সে চোরাকারবারিদের তালিকা করে আমাদের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আমি দেখলাম, নয়টি মামলা ঝুলে আছে। এই মামলাগুলো তো ঝুলে থাকার কোনো কারণ নেই। এগুলো শেষ করার উদ্যোগ নিতে হবে। যাতে কোনোভাবেই অপরাধীরা পার পেয়ে যেতে না পারে। আমরা যদি পাচারকারীর বিরুদ্ধে সত্যিকার অর্থে সর্বশক্তি দেখাতে পারি, তাহলে পাচারকারীর সংখ্যা কিন্তু এত হওয়ার কথা ছিল না। এখন তাদের বিরুদ্ধে সর্বশক্তি দিয়ে নামতে হবে।
প্রধান বন সংরক্ষক আমীর হোসাইন চৌধুরী বলেন, আমরা দেখেছি একসময় প্রায় ১৯টি জেলায় বাঘ ছিল। এখন কিন্তু সুন্দরবন অর্থাৎ খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট এই তিনটি জেলায় বাঘ আছে। আর কোনো জেলায় বাঘ নেই। পৃথিবীর যে ১৩টি দেশে বাঘ আছে, তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। বাঘের সংখ্যা বিগত ১০ বছরে কিছুটা হলেও বেড়েছে, হয়ত কমিটমেন্ট যেভাবে ছিল, সেভাবে বাড়েনি। ২০১৪ সালে ১০৬টি, ১৮ সালে এসে হল ১১৪টি এবং ২৪ সালে এসে হল ১২৫টি। প্রায় ১৮ শতাংশ বেড়েছে এই এক দশকে।
সুন্দরবন বাঘের জন্য ‘আদর্শ আবাসস্থল নয়’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, ভারতে গত এক যুগে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে বাঘের সংখ্যা। এর কতগুলো কারণও কিন্তু আছে। বাংলাদেশে বাঘ একমাত্র টিকে আছে সুন্দরবনে। এটাকে কিন্তু কোনোভাবেই বাঘের জন্য আদর্শ আবাসস্থল বলা যাবে না। কারণ মানুষই সেখানে হাঁটতে গেলে কাদায় পা ডুবে যায়, বাঘ সেখানে হরিণ শিকার করাটা বেশ কঠিন হয়ে যায়। এরকম বিরূপ পরিবেশে বাঘ যে টিকে আছে, সেটি সেখানকার সবার সমন্বয়ের ফল।

আমীর হোসেন বলেন, ২০১৩ সালের আগ পর্যন্ত প্রায় প্রতিবছরই বাঘ গ্রামে এলে একটি দুটি করে মারা পড়ত। ২০১৩ সাল থেকে ২৪ সাল পর্যন্ত শুধু ১৮ সালে মোংলা উপজেলার চাঁদপাই এলাকায় একটি বাঘ গ্রামে চলে আসার পর মারা পড়েছে। এর বাইরে এই সময়ে কোনো বাঘ মারা পড়েনি। কিন্তু অনেকগুলো কাজ এখন আমাদের সামনের দিনে করতে হবে। বাঘ যে অবস্থায় আছে, সে অবস্থায় তাকে টিকিয়ে সংরক্ষণ করার জন্য এবং সুন্দরবন কী পরিমাণ বাঘ ধারণ করতে পারে সে অনুযায়ী বাঘের সংখ্যাকে বৃদ্ধি করার জন্য।

অন্যদের মধ্যে মন্ত্রণালয়ের সচিব ফারহিনা আহমেদ, বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চলের বন সংরক্ষক ছানাউল্যা পাটওয়ারী, খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক ইমরান আহমেদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এম এ আজিজ, আইইউসিএনের বাংলাদেশ প্রতিনিধি বিপাশা হোসেন, ওয়াইল্ডটিমের প্রধান নির্বাহী আনোয়ারুল ইসলাম, বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ আলী রেজা খান আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন