ঢাকা ১২:৪২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

‘সুখের বসন্ত সুখে হোক সারা’

  • আপডেট সময় : ১১:০৩:১৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২২
  • ৯৫ বার পড়া হয়েছে

সাহিত্য ডেস্ক : ‘আজি দখিন-দুয়ার খোলা-/এসো হে, এসো হে, এসো হে আমার বসন্ত এসো।/দিব হৃদয় দোলায় দোলা/এসো হে, এসো হে, এসো হে আমার বসন্ত এসো।’ কবিকণ্ঠের এ প্রণতির মাহেন্দ্র লগন এলো আজ। বাংলা বর্ষপঞ্জির সর্বশেষ ঋতু বসন্ত। ফাল্গুন ও চৈত্র মাস অর্থাৎ ফ্রেব্রুয়ারির মধ্যভাগ থেকে এপ্রিলের মধ্যভাগ নিয়ে বসন্তকাল হলেও শুধু মার্চ মাসেই ঋতুটির সংক্ষিপ্ত অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায়।
আজ পয়লা ফাল্গুন। বিপুল ঐশ্বর্যধারী ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন। পাগল হাওয়ার উত্তরীয় উড়িয়ে বনফুলের পল্লবে, দখিন-বাতাসে শিহরণ জাগানোর দিন এলো। উড়াল মৌমাছিদের ডানায় ডানায়, নিরাভরণ বৃক্ষে কচি কিশলয় জেগে উঠবার আভাসে আর বনতলে কোকিলের কুহুতানই বলে দেয় ফাগুন তথা বসন্ত হলো বাঙালির প্রেমের ঋতু। ইংরেজি মাসের তারিখ অনুযায়ী আধুনিক ‘ভ্যালেন্টাইন ডে’র দিন হাজির হলো ফাগুনের প্রথম দিনটি।
তবে এই ‘ক্লাইমেট চেঞ্জ’র যুগে ঋতু পরিবর্তন ঠিক ভালোভাবে ঠাহর হয় না বলে এত পালাবদলের মাঝে বসন্তদূত কোকিলের মনে এ নিয়ে বড় দুঃখ থাকলেও ফাগুন এসেছে ধরায়। কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের প্রবাদতুল্য পঙক্তিও সেকথাই সায় দেয়, ‘ফুল ফুটুক না ফুটুক/আজ বসন্ত…। গোলাপের সুবাস আজ না ছড়াক/কুসুমকলি আজ না হোক জীবন, তবু আজ বসন্ত…।’
মাঘের সূর্য উত্তরায়ণে পাশ হয়ে চলে আসে ঋতুশ্রেষ্ঠ বসন্ত, আসে পুষ্পারতির পরম লগ্ন। বঙ্গ-ঋতুনাট্যের অন্তিম রূপ-শিল্পী সে। মৃদু-মন্দ দখিনা বাতােেসর জাদুস্পর্শে বর্ণ-বিরল পৃথিবীর সর্বাঙ্গে লাগে অপূর্ব পুলক-প্রবাহ, বন-বীথির রিক্ত শাখায় জাগে কচি কচি কিশলয়ের অফুরন্ত উল্লাস। বাতাসের মৃদু মর্মর-ধ্বনি এবং দূর বনান্তরাল থেকে ভেসে আসা কোকিলের কুহুগীতি পৃথিবীকে মায়াময় করে তোলে। অশোক-পলাশের রঙিন বিহ্বলতায় ও শিমুল-কৃষ্ণচূড়ার বিপুল উল্লাসে, বিকশিত মধুমালতী ও মাধবী-মঞ্জুরির গন্ধমদির উচ্ছল প্রগলতায়-সারা গগনতলে বর্ণ, গন্ধ ও গানের তুমুল কোলাহলে লেগে যায় এ আশ্চর্য মাতামাতি, ‘মহুয়ার মালা গলে কে তুমি এলে/নয়ন ভুলানো রূপে কে তুমি এলে।’
বসন্তের নৈসর্গিক প্রকৃতি বর্ণচ্ছটায় বাঙ্ময় হয়ে ওঠে। কচি পাতায় আলোর নাচনের মতই বাঙালি তরুণ মনে লাগে দোলা। হৃদয় হয় উচাটন। ফুল ফুটবার পুলকিত দিন বসন্ত। বন-বনান্তে, কাননে কাননে-পরিজাতের রঙের কোলাহল, আর বর্ণাঢ্য সমারোহ। ভাটি বাংলা বা হাওর বাংলার কণ্ঠ শাহ আবদুল করিম তাই গেয়ে ওঠেন, ‘বসন্ত বাতাসে সই গো/বসন্ত বাতাসে/বন্ধুর বাড়ির ফুলের গন্ধ আমার বাড়ি আসে…।’
প্রাকৃতিক রূপ-রস-গন্ধের মহাসমারোহের কারণেই তাকে প্রেমের ঋতু বলাটা মোটেও অত্যুক্তি নয়। এ ঋতুকে প্রকৃতি নিজেকে অপরূপে সাজিয়ে তোলে। বাগানজুড়ে ফুল-ফল, শাখে-শাখে নতুন পাতা, দিকে দিকে পাখির কলতান, দখিন হাওয়া, নতুন প্রাণ, অনাবিল প্রেম- এমনি এমনি তো আর ঋতুরাজ আখ্যা পায়নি বসন্ত!
বসন্ত মানেই পূর্ণতা। বসন্ত মানেই নতুন প্রাণের কলরব। কচি পাতায় আলোর নাচনের মতোই বাঙালির মনেও লাগবে দোলা। বিপুল তরঙ্গ প্রাণে আন্দোলিত হবে বাঙালি মন। বাঙালি জীবনের বসন্তের আগমন বার্তা নিয়ে আসে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’র। এ বসন্তেই ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়েই রোপিত হয়েছিল বাঙালির স্বাধীনতার বীজ। বসন্তেই বাঙালি শুরু করেছিল মুক্তিযুদ্ধ। তাই কেবল প্রকৃতি আর মনে নয়, বাঙালির জাতীয় ইতিহাসেও বসন্ত আসে এক বিশেষ মাহাত্ম্য নিয়ে। বসন্ত হয়ে ওঠে এক অনন্য উৎসব।
কোথাও ফুটে থাকা অশোক-কিংশুকের কথা ভেবে মনে রং লাগে অকারণ সুখে। বসন্ত বরণে দূর থেকে চেয়ে থাকার মতো তরুণীটি আজ বেরিয়েছে বাসন্তী শাড়িতে। জমাট খোপাটি তার হলুদ গাঁদায় মোড়া। দু’হাত ভর্তি কাঁচের চুড়ি। কাছে যেতে হয় না, সাত সমুদ্র তেরো নদীর এপার থেকেও ঝনঝন শব্দ ঠিক বুকে বাজে। তাকে হাত ধরে রাস্তা পার করে হৃদয়পুরের দিকে নিয়ে যাওয়া তরুণের পরনে লাল, অন্যহাতে তার ফুলভর্তি গোটা বাগান। স্মিত হেসে হঠাৎ হঠাৎ কী যেন বলে, শুনে বাসন্তী হাসি দিগন্ত পেরোয়!
বাঙালি বসন্তকে গান-কবিতা-আনন্দ-উৎসবের মাধ্যমে বরণ করে নেয়। বসন্ত কেবল এই মহাদেশীয় অঞ্চলেই নয়, পশ্চিমেও কম ছুঁয়ে যায় না। যেটি কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী জন ডেনভার বলেছেন, ‘ইউ ফিল আপ মাই সেনসেস, লাইক দ্য মাউন্টেইন্স ইন স্প্রিং টাইম…।’
অর্থাৎ আমাদের বসন্তদিন, তাদের স্প্রিং টাইম। বিশ্বের দিকে দিকে নানাভাবে পালিত হয় বসন্ত বরণ বা বসন্ত উৎসব। জন ডেনভারের চেয়েও গভীরভাবে বলেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ‘ফাগুন নবীন আনন্দে/গানখানি গাঁথিলাম ছন্দে।/দিল তারে বনবীথি/কোকিলের কলগীতি,/ভরি দিল বকুলের গন্ধে।’
এখানে একটি মজার বিষয় হলো, কবি তরুণ প্রাণ যেমন বলেছেন, তেমনই বলেছেন নবীন আনন্দের কথাও। মানে আনন্দকে বয়সে বেঁধে রাখেননি কবি। শীতের পর বৃক্ষরাজি যেমন পুরোনোকে বিদায় দিয়ে কচি পাতার নবীন আনন্দে মেতে ওঠে, ঠিক তেমনই সব প্রাণে নতুনের আগমনই বসন্ত। বসন্ত মানে নতুন, বসন্ত মানে আনন্দ।
বাঙালির জীবনে বসন্তের উপস্থিতি সেই আদি কাল থেকেই। সাহিত্যের প্রাচীন নিদর্শনেও বসন্ত ঠাঁই পেয়েছে নানা অনুপ্রাস, উপমা, উৎপ্রেক্ষা নানাভাবে। আমাদের ঋতুরাজ বসন্তের আবাহন মানুষের মতোই। এ সময় পাখিরাও প্রণয়ী খোঁজে। বাসা বাঁধে। রচনা করে নতুন পৃথিবী।
পরিশেষে বলতে চাই, ‘সুখের বসন্ত সুখে হোক সারা’।
লেখক: সহযোগী সম্পাদক, আজকের সূর্যোদয়, ঢাকা।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

‘সুখের বসন্ত সুখে হোক সারা’

আপডেট সময় : ১১:০৩:১৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২২

সাহিত্য ডেস্ক : ‘আজি দখিন-দুয়ার খোলা-/এসো হে, এসো হে, এসো হে আমার বসন্ত এসো।/দিব হৃদয় দোলায় দোলা/এসো হে, এসো হে, এসো হে আমার বসন্ত এসো।’ কবিকণ্ঠের এ প্রণতির মাহেন্দ্র লগন এলো আজ। বাংলা বর্ষপঞ্জির সর্বশেষ ঋতু বসন্ত। ফাল্গুন ও চৈত্র মাস অর্থাৎ ফ্রেব্রুয়ারির মধ্যভাগ থেকে এপ্রিলের মধ্যভাগ নিয়ে বসন্তকাল হলেও শুধু মার্চ মাসেই ঋতুটির সংক্ষিপ্ত অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায়।
আজ পয়লা ফাল্গুন। বিপুল ঐশ্বর্যধারী ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন। পাগল হাওয়ার উত্তরীয় উড়িয়ে বনফুলের পল্লবে, দখিন-বাতাসে শিহরণ জাগানোর দিন এলো। উড়াল মৌমাছিদের ডানায় ডানায়, নিরাভরণ বৃক্ষে কচি কিশলয় জেগে উঠবার আভাসে আর বনতলে কোকিলের কুহুতানই বলে দেয় ফাগুন তথা বসন্ত হলো বাঙালির প্রেমের ঋতু। ইংরেজি মাসের তারিখ অনুযায়ী আধুনিক ‘ভ্যালেন্টাইন ডে’র দিন হাজির হলো ফাগুনের প্রথম দিনটি।
তবে এই ‘ক্লাইমেট চেঞ্জ’র যুগে ঋতু পরিবর্তন ঠিক ভালোভাবে ঠাহর হয় না বলে এত পালাবদলের মাঝে বসন্তদূত কোকিলের মনে এ নিয়ে বড় দুঃখ থাকলেও ফাগুন এসেছে ধরায়। কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের প্রবাদতুল্য পঙক্তিও সেকথাই সায় দেয়, ‘ফুল ফুটুক না ফুটুক/আজ বসন্ত…। গোলাপের সুবাস আজ না ছড়াক/কুসুমকলি আজ না হোক জীবন, তবু আজ বসন্ত…।’
মাঘের সূর্য উত্তরায়ণে পাশ হয়ে চলে আসে ঋতুশ্রেষ্ঠ বসন্ত, আসে পুষ্পারতির পরম লগ্ন। বঙ্গ-ঋতুনাট্যের অন্তিম রূপ-শিল্পী সে। মৃদু-মন্দ দখিনা বাতােেসর জাদুস্পর্শে বর্ণ-বিরল পৃথিবীর সর্বাঙ্গে লাগে অপূর্ব পুলক-প্রবাহ, বন-বীথির রিক্ত শাখায় জাগে কচি কচি কিশলয়ের অফুরন্ত উল্লাস। বাতাসের মৃদু মর্মর-ধ্বনি এবং দূর বনান্তরাল থেকে ভেসে আসা কোকিলের কুহুগীতি পৃথিবীকে মায়াময় করে তোলে। অশোক-পলাশের রঙিন বিহ্বলতায় ও শিমুল-কৃষ্ণচূড়ার বিপুল উল্লাসে, বিকশিত মধুমালতী ও মাধবী-মঞ্জুরির গন্ধমদির উচ্ছল প্রগলতায়-সারা গগনতলে বর্ণ, গন্ধ ও গানের তুমুল কোলাহলে লেগে যায় এ আশ্চর্য মাতামাতি, ‘মহুয়ার মালা গলে কে তুমি এলে/নয়ন ভুলানো রূপে কে তুমি এলে।’
বসন্তের নৈসর্গিক প্রকৃতি বর্ণচ্ছটায় বাঙ্ময় হয়ে ওঠে। কচি পাতায় আলোর নাচনের মতই বাঙালি তরুণ মনে লাগে দোলা। হৃদয় হয় উচাটন। ফুল ফুটবার পুলকিত দিন বসন্ত। বন-বনান্তে, কাননে কাননে-পরিজাতের রঙের কোলাহল, আর বর্ণাঢ্য সমারোহ। ভাটি বাংলা বা হাওর বাংলার কণ্ঠ শাহ আবদুল করিম তাই গেয়ে ওঠেন, ‘বসন্ত বাতাসে সই গো/বসন্ত বাতাসে/বন্ধুর বাড়ির ফুলের গন্ধ আমার বাড়ি আসে…।’
প্রাকৃতিক রূপ-রস-গন্ধের মহাসমারোহের কারণেই তাকে প্রেমের ঋতু বলাটা মোটেও অত্যুক্তি নয়। এ ঋতুকে প্রকৃতি নিজেকে অপরূপে সাজিয়ে তোলে। বাগানজুড়ে ফুল-ফল, শাখে-শাখে নতুন পাতা, দিকে দিকে পাখির কলতান, দখিন হাওয়া, নতুন প্রাণ, অনাবিল প্রেম- এমনি এমনি তো আর ঋতুরাজ আখ্যা পায়নি বসন্ত!
বসন্ত মানেই পূর্ণতা। বসন্ত মানেই নতুন প্রাণের কলরব। কচি পাতায় আলোর নাচনের মতোই বাঙালির মনেও লাগবে দোলা। বিপুল তরঙ্গ প্রাণে আন্দোলিত হবে বাঙালি মন। বাঙালি জীবনের বসন্তের আগমন বার্তা নিয়ে আসে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’র। এ বসন্তেই ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়েই রোপিত হয়েছিল বাঙালির স্বাধীনতার বীজ। বসন্তেই বাঙালি শুরু করেছিল মুক্তিযুদ্ধ। তাই কেবল প্রকৃতি আর মনে নয়, বাঙালির জাতীয় ইতিহাসেও বসন্ত আসে এক বিশেষ মাহাত্ম্য নিয়ে। বসন্ত হয়ে ওঠে এক অনন্য উৎসব।
কোথাও ফুটে থাকা অশোক-কিংশুকের কথা ভেবে মনে রং লাগে অকারণ সুখে। বসন্ত বরণে দূর থেকে চেয়ে থাকার মতো তরুণীটি আজ বেরিয়েছে বাসন্তী শাড়িতে। জমাট খোপাটি তার হলুদ গাঁদায় মোড়া। দু’হাত ভর্তি কাঁচের চুড়ি। কাছে যেতে হয় না, সাত সমুদ্র তেরো নদীর এপার থেকেও ঝনঝন শব্দ ঠিক বুকে বাজে। তাকে হাত ধরে রাস্তা পার করে হৃদয়পুরের দিকে নিয়ে যাওয়া তরুণের পরনে লাল, অন্যহাতে তার ফুলভর্তি গোটা বাগান। স্মিত হেসে হঠাৎ হঠাৎ কী যেন বলে, শুনে বাসন্তী হাসি দিগন্ত পেরোয়!
বাঙালি বসন্তকে গান-কবিতা-আনন্দ-উৎসবের মাধ্যমে বরণ করে নেয়। বসন্ত কেবল এই মহাদেশীয় অঞ্চলেই নয়, পশ্চিমেও কম ছুঁয়ে যায় না। যেটি কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী জন ডেনভার বলেছেন, ‘ইউ ফিল আপ মাই সেনসেস, লাইক দ্য মাউন্টেইন্স ইন স্প্রিং টাইম…।’
অর্থাৎ আমাদের বসন্তদিন, তাদের স্প্রিং টাইম। বিশ্বের দিকে দিকে নানাভাবে পালিত হয় বসন্ত বরণ বা বসন্ত উৎসব। জন ডেনভারের চেয়েও গভীরভাবে বলেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ‘ফাগুন নবীন আনন্দে/গানখানি গাঁথিলাম ছন্দে।/দিল তারে বনবীথি/কোকিলের কলগীতি,/ভরি দিল বকুলের গন্ধে।’
এখানে একটি মজার বিষয় হলো, কবি তরুণ প্রাণ যেমন বলেছেন, তেমনই বলেছেন নবীন আনন্দের কথাও। মানে আনন্দকে বয়সে বেঁধে রাখেননি কবি। শীতের পর বৃক্ষরাজি যেমন পুরোনোকে বিদায় দিয়ে কচি পাতার নবীন আনন্দে মেতে ওঠে, ঠিক তেমনই সব প্রাণে নতুনের আগমনই বসন্ত। বসন্ত মানে নতুন, বসন্ত মানে আনন্দ।
বাঙালির জীবনে বসন্তের উপস্থিতি সেই আদি কাল থেকেই। সাহিত্যের প্রাচীন নিদর্শনেও বসন্ত ঠাঁই পেয়েছে নানা অনুপ্রাস, উপমা, উৎপ্রেক্ষা নানাভাবে। আমাদের ঋতুরাজ বসন্তের আবাহন মানুষের মতোই। এ সময় পাখিরাও প্রণয়ী খোঁজে। বাসা বাঁধে। রচনা করে নতুন পৃথিবী।
পরিশেষে বলতে চাই, ‘সুখের বসন্ত সুখে হোক সারা’।
লেখক: সহযোগী সম্পাদক, আজকের সূর্যোদয়, ঢাকা।