ঢাকা ০৫:৫১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ জুন ২০২৫

সুখী হওয়ার পাঁচ অভ্যাস

  • আপডেট সময় : ১০:৫৮:০৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৯ জুলাই ২০২৪
  • ৯৪ বার পড়া হয়েছে

লাইফস্টাইল ডেস্ক : মনের মধ্যে সবসময় সুখ বিরাজ করানো সম্ভব না। তবে কিছু মানুষ আছে যারা কোনো না কোনোভাবে নিজেদের সুখী রাখতে পারে। সেজন্য কোনো কষ্টই যেন তাদেরে করতে হয় না। এই বিষয়ে সিএনএন ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে মার্কিন মনোবিজ্ঞানি সোনিয়া লুবোমিরস্কি বলেন, “কিছু মানুষ অন্যদের থেকে সুখী থাকে বেশি। তারা ওই রকমই। যেমন কেউ কেউ এমনিতেই হালকা পাতলা থাকে। ওজন বাড়ে না। সেরকম আরকি।”
প্রায় ৩৫ বছর ধরে মানুষের সুখী হওয়া বিষয়ে ওপর গবেষণা চালাচ্ছেন ‘ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া’র এই সম্মানিত অধ্যাপক। তিনি বলেন, “দুটি উপাদানের ওপর সুখ নির্ভর করে। একটি হল ইতিবাচক অনুভূতি লালন করা। যারা অন্যদের থেকে বেশি সুখী তারা সাধারণ আনন্দ, শান্তভাব, কৌতুহল, স্নেহ, গর্ববোধের অভিজ্ঞতায় পূর্ণ থাকে। দ্বিতীয়টি হল- নিজের জীবন নিয়ে তৃপ্ত থাকা। যা আছে তাই যথেষ্ট এমন আর কি।” এই উপাদানগুলো নির্ণয় করার জন্য গবেষকরা মানুষের কাছে নানান ধরনের প্রশ্ন রাখেন। যেমন- কতটা ঘন ঘন তারা মনে আনন্দ, শান্তভাব, কৌতুহল অনুভব করেন। আর জীবন নিয়ে তারা কতটা সন্তুষ্ট। পাশাপাশি তাদের মস্তিষ্কের গঠন, মুখের ভঙ্গি এমনকি কণ্ঠের ওঠানামার মাত্রাও পর্যবেক্ষণ করা হয়। লুবোমিরস্কি বলেন, “কোনো নির্দিষ্ট বিষয় নয় বরং তারা সুখের জন্য একটা সারিতে জীবন সাজায়।” যদিও বংশগতি পরিবর্তন করা যায় না। তবে নির্দিষ্ট মাত্রায় জীবনের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের মাধ্যমে সুখে থাকার চেষ্টা করা যায়।
উদাহরণ হিসেবে এই মনোবিজ্ঞানি বলেন, “যেমন- নতুন চাকরি পাওয়া বা নতুন সম্পর্ক শুরু করা মানে- নিজেকে ভালো থাকার দিকে ধাবিত করছেন। সুখে থাকার জন্য যেমন কিছু অভ্যাস পরিবর্তন করতে হয় তেমনি নতুন অভ্যাস গড়ারও প্রয়োজন পড়ে।” লুবোমিরস্কি মনে করেন সুখের মাত্রা বাড়াতে পাঁচ ধরনের অভ্যাস রপ্ত করার প্রয়োজন।
স্রোতের সাথে তাল মেলানো: যা করছেন সেটা ভালো মতো গ্রহণ করতে হবে। “যে কাজ করছেন সেটাতে ডুবে গিয়ে যদি সময়ক্ষণ ভুলে যান-সেটাই হল ‘স্রোতের সাথে’ বয়ে চলা। আর এরসাথে আনন্দের সম্পর্ক রয়েছে”-বলেন লুবোমিরস্কি। যে কাজগুলো করতে ভালোলাগে সেগুলোতে ডুবে গিয়ে নিজেকে হারিয়ে ফেলতে হবে প্রতিদিন। এক্ষেত্রে কোনো খেলা রপ্ত করতে হবে বা এভারেস্ট জয় করার মতো কাজ করতে এমন কিছু নয়। বরং সহজ সরল কাজে নিজেকে নিয়োজিত করা যেতে পারে। যেমন- সন্তানের সাথে খেলা করা বা বন্ধূ কিংবা সঙ্গীর সঙ্গে কোনো সখ পূরণ করা। আর এগুলো নিয়মিত করতে হবে।
প্রতিনিয়ত সদয় হওয়ার অভ্যাস রপ্ত করা: সারাদিনে অন্তত একটিবার হলেও অন্যের জন্য কিছু করা চেষ্টা করুন। লুবোমিরস্কি বলেন, “অন্যের প্রতি সদয় হলে নিজের মধ্যেই ইতিবাচক সাড়া কাজ করে। উদার এবং সক্ষম বোধ করায়, নিজের পরিস্থিতির জন্য কৃতজ্ঞ বোধ জাগে আর বিশ্বের সাথে সংযুক্ত হওয়ার একটি বৃহত্তর অনুভূতি দেয়।” এরফলে আপনি অন্যের কাছে জনপ্রিয় উঠতে থাকবেন, যা নিজের মধ্যে আত্মসম্মান বাড়াবে। এক্ষেত্রে প্রতিবেশিকে সাহায্য করা, বয়স্কদের সঙ্গ দেওয়া, কোনো প্রাণী উদ্ধার করা, অপরিচিতে কোনো মানুষের মালামাল বহনে সাহায্য করা, কোনো নার্সিং হোম পরিদর্শন করে সাহায্য করা এমনকি অন্যকে হাসি দিয়ে কুশল বিনিময় করাও সদয় অনুভূতির প্রকাশ ঘটায়।
সম্পর্কগুলোর যত্ন নেওয়া: যখন ব্যক্তিগত সুখের বিষয় আসে তখন চাকরি, টাকা-পয়সার চাইতে ব্যক্তিগত সম্পর্কগুলো বড় প্রভাব ফেলে। “সঙ্গী, সন্তান, বাবা-মা, আত্মীয়, পুরানো বন্ধুদের সাথে ভালো সময় কাটালে দুপক্ষেরই সার্বিকভাবে আনন্দ অনুভূত হয়”-বলেন লুবোমিরস্কি। কাজের মাঝে প্রতি সপ্তাহে এরকম সম্পর্কগুলোর সাথে ভালো সময় কাটানোর অভ্যাস গড়া সুখ অনুভূত করায়।
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ: ইতিবাচক জীবন গড়তে আশীর্বাদের কোনো তুলনা হয় না। আর এরজন্য প্রয়োজন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। লুবোমিরস্কি বলেন “সপ্তাহের শেষে চিন্তা করে বের করতে হবে কোন তিনটা বা পাঁচটা জিনিসের জন্য নিজেকে ভাগ্যবান মনে হয়।” আরেকটি কাজ হল- এমন কাউকে খুঁজে বের করা যে হয়ত আপনার জীবনে প্রভাব রেখেছে অথচ তাকে কখনও ধন্যবাদ দেওয়া হয়নি। তারপর তার কাছে নিজের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন। এই মনোবিজ্ঞানি পরমর্শ দেন, “এই কাজ নিয়মিত করুন। তবে ঘন ঘন করার প্রয়োজন নেই। বেশি বেশি করলে গুরুত্ব হারাবে।” কৃতজ্ঞতা প্রকাশের মাধ্যমে নিজের ভালো ভাগ্যের প্রতিও প্রশংসা করা হয়, যা সারা দিন বা সপ্তাহ ধরে ভালো অনুভব করায়।
ভালো খবর উদযাপন করা: অন্যের সাথে নিজের সাফল্য ও কৃতিত্বভাগ করে নেওয়ার সাথে আনন্দের মাত্রা বাড়ানোর সম্পর্ক রয়েছে। তাই পরিচিত কাছের মানুষ যদি কোনো সাফল্য অর্জন করে তবে সেটা উদযাপন করুন- পরামর্শ দেন লুবোমিরস্কি। এই ক্ষেত্রে নিজের সাফল্যে প্রচারে লজ্জাবোধ করলে চলবে না। সেই কাজের জন্য কতটা কষ্ট করেছেন সেটা প্রকাশ করা উচিত। তারপর ভালো খাওয়া দাওয়ার মাধ্যমে সেই খবর উদযাপন করুন কাছের মানুষদের সাথে।

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

সুখী হওয়ার পাঁচ অভ্যাস

আপডেট সময় : ১০:৫৮:০৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৯ জুলাই ২০২৪

লাইফস্টাইল ডেস্ক : মনের মধ্যে সবসময় সুখ বিরাজ করানো সম্ভব না। তবে কিছু মানুষ আছে যারা কোনো না কোনোভাবে নিজেদের সুখী রাখতে পারে। সেজন্য কোনো কষ্টই যেন তাদেরে করতে হয় না। এই বিষয়ে সিএনএন ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে মার্কিন মনোবিজ্ঞানি সোনিয়া লুবোমিরস্কি বলেন, “কিছু মানুষ অন্যদের থেকে সুখী থাকে বেশি। তারা ওই রকমই। যেমন কেউ কেউ এমনিতেই হালকা পাতলা থাকে। ওজন বাড়ে না। সেরকম আরকি।”
প্রায় ৩৫ বছর ধরে মানুষের সুখী হওয়া বিষয়ে ওপর গবেষণা চালাচ্ছেন ‘ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া’র এই সম্মানিত অধ্যাপক। তিনি বলেন, “দুটি উপাদানের ওপর সুখ নির্ভর করে। একটি হল ইতিবাচক অনুভূতি লালন করা। যারা অন্যদের থেকে বেশি সুখী তারা সাধারণ আনন্দ, শান্তভাব, কৌতুহল, স্নেহ, গর্ববোধের অভিজ্ঞতায় পূর্ণ থাকে। দ্বিতীয়টি হল- নিজের জীবন নিয়ে তৃপ্ত থাকা। যা আছে তাই যথেষ্ট এমন আর কি।” এই উপাদানগুলো নির্ণয় করার জন্য গবেষকরা মানুষের কাছে নানান ধরনের প্রশ্ন রাখেন। যেমন- কতটা ঘন ঘন তারা মনে আনন্দ, শান্তভাব, কৌতুহল অনুভব করেন। আর জীবন নিয়ে তারা কতটা সন্তুষ্ট। পাশাপাশি তাদের মস্তিষ্কের গঠন, মুখের ভঙ্গি এমনকি কণ্ঠের ওঠানামার মাত্রাও পর্যবেক্ষণ করা হয়। লুবোমিরস্কি বলেন, “কোনো নির্দিষ্ট বিষয় নয় বরং তারা সুখের জন্য একটা সারিতে জীবন সাজায়।” যদিও বংশগতি পরিবর্তন করা যায় না। তবে নির্দিষ্ট মাত্রায় জীবনের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের মাধ্যমে সুখে থাকার চেষ্টা করা যায়।
উদাহরণ হিসেবে এই মনোবিজ্ঞানি বলেন, “যেমন- নতুন চাকরি পাওয়া বা নতুন সম্পর্ক শুরু করা মানে- নিজেকে ভালো থাকার দিকে ধাবিত করছেন। সুখে থাকার জন্য যেমন কিছু অভ্যাস পরিবর্তন করতে হয় তেমনি নতুন অভ্যাস গড়ারও প্রয়োজন পড়ে।” লুবোমিরস্কি মনে করেন সুখের মাত্রা বাড়াতে পাঁচ ধরনের অভ্যাস রপ্ত করার প্রয়োজন।
স্রোতের সাথে তাল মেলানো: যা করছেন সেটা ভালো মতো গ্রহণ করতে হবে। “যে কাজ করছেন সেটাতে ডুবে গিয়ে যদি সময়ক্ষণ ভুলে যান-সেটাই হল ‘স্রোতের সাথে’ বয়ে চলা। আর এরসাথে আনন্দের সম্পর্ক রয়েছে”-বলেন লুবোমিরস্কি। যে কাজগুলো করতে ভালোলাগে সেগুলোতে ডুবে গিয়ে নিজেকে হারিয়ে ফেলতে হবে প্রতিদিন। এক্ষেত্রে কোনো খেলা রপ্ত করতে হবে বা এভারেস্ট জয় করার মতো কাজ করতে এমন কিছু নয়। বরং সহজ সরল কাজে নিজেকে নিয়োজিত করা যেতে পারে। যেমন- সন্তানের সাথে খেলা করা বা বন্ধূ কিংবা সঙ্গীর সঙ্গে কোনো সখ পূরণ করা। আর এগুলো নিয়মিত করতে হবে।
প্রতিনিয়ত সদয় হওয়ার অভ্যাস রপ্ত করা: সারাদিনে অন্তত একটিবার হলেও অন্যের জন্য কিছু করা চেষ্টা করুন। লুবোমিরস্কি বলেন, “অন্যের প্রতি সদয় হলে নিজের মধ্যেই ইতিবাচক সাড়া কাজ করে। উদার এবং সক্ষম বোধ করায়, নিজের পরিস্থিতির জন্য কৃতজ্ঞ বোধ জাগে আর বিশ্বের সাথে সংযুক্ত হওয়ার একটি বৃহত্তর অনুভূতি দেয়।” এরফলে আপনি অন্যের কাছে জনপ্রিয় উঠতে থাকবেন, যা নিজের মধ্যে আত্মসম্মান বাড়াবে। এক্ষেত্রে প্রতিবেশিকে সাহায্য করা, বয়স্কদের সঙ্গ দেওয়া, কোনো প্রাণী উদ্ধার করা, অপরিচিতে কোনো মানুষের মালামাল বহনে সাহায্য করা, কোনো নার্সিং হোম পরিদর্শন করে সাহায্য করা এমনকি অন্যকে হাসি দিয়ে কুশল বিনিময় করাও সদয় অনুভূতির প্রকাশ ঘটায়।
সম্পর্কগুলোর যত্ন নেওয়া: যখন ব্যক্তিগত সুখের বিষয় আসে তখন চাকরি, টাকা-পয়সার চাইতে ব্যক্তিগত সম্পর্কগুলো বড় প্রভাব ফেলে। “সঙ্গী, সন্তান, বাবা-মা, আত্মীয়, পুরানো বন্ধুদের সাথে ভালো সময় কাটালে দুপক্ষেরই সার্বিকভাবে আনন্দ অনুভূত হয়”-বলেন লুবোমিরস্কি। কাজের মাঝে প্রতি সপ্তাহে এরকম সম্পর্কগুলোর সাথে ভালো সময় কাটানোর অভ্যাস গড়া সুখ অনুভূত করায়।
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ: ইতিবাচক জীবন গড়তে আশীর্বাদের কোনো তুলনা হয় না। আর এরজন্য প্রয়োজন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। লুবোমিরস্কি বলেন “সপ্তাহের শেষে চিন্তা করে বের করতে হবে কোন তিনটা বা পাঁচটা জিনিসের জন্য নিজেকে ভাগ্যবান মনে হয়।” আরেকটি কাজ হল- এমন কাউকে খুঁজে বের করা যে হয়ত আপনার জীবনে প্রভাব রেখেছে অথচ তাকে কখনও ধন্যবাদ দেওয়া হয়নি। তারপর তার কাছে নিজের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন। এই মনোবিজ্ঞানি পরমর্শ দেন, “এই কাজ নিয়মিত করুন। তবে ঘন ঘন করার প্রয়োজন নেই। বেশি বেশি করলে গুরুত্ব হারাবে।” কৃতজ্ঞতা প্রকাশের মাধ্যমে নিজের ভালো ভাগ্যের প্রতিও প্রশংসা করা হয়, যা সারা দিন বা সপ্তাহ ধরে ভালো অনুভব করায়।
ভালো খবর উদযাপন করা: অন্যের সাথে নিজের সাফল্য ও কৃতিত্বভাগ করে নেওয়ার সাথে আনন্দের মাত্রা বাড়ানোর সম্পর্ক রয়েছে। তাই পরিচিত কাছের মানুষ যদি কোনো সাফল্য অর্জন করে তবে সেটা উদযাপন করুন- পরামর্শ দেন লুবোমিরস্কি। এই ক্ষেত্রে নিজের সাফল্যে প্রচারে লজ্জাবোধ করলে চলবে না। সেই কাজের জন্য কতটা কষ্ট করেছেন সেটা প্রকাশ করা উচিত। তারপর ভালো খাওয়া দাওয়ার মাধ্যমে সেই খবর উদযাপন করুন কাছের মানুষদের সাথে।