ঢাকা ০৬:০৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সীমার মধ্যেই পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করছে ব্যাংকগুলো

  • আপডেট সময় : ০২:২০:৪৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২১
  • ১১৭ বার পড়া হয়েছে

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক : ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী পুঁজিবাজারে কোনো ব্যাংকের বিনিয়োগ ওই ব্যাংকের আদায়কৃত মূলধন, শেয়ার প্রিমিয়াম, সংবিধিবদ্ধ সঞ্চিতি ও রিটেইন আর্নিংসের ২৫ শতাংশের বেশি হতে পারবে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সীমার মধ্যে থেকেই পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলো বিনিয়োগ করছে বলে জানিয়েছেন ব্যাংকাররা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালে সংশোধিত ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, ব্যাংকগুলো তার মোট মূলধনের ২৫ শতাংশের বেশি শেয়ার ধারণ করতে পারবে না। এখন মোট মূলধন বলতে বোঝায় ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন, সংবিধিবদ্ধ সঞ্চিতি, রিটেইন আর্নিং ও শেয়ার প্রিমিয়াম অ্যাকাউন্টের সমন্বয়ে যে অর্থ থাকবে তাই। এ আইন সংশোধনের আগে তখন ব্যাংকিং খাতে মোট সম্পদ ছিল পাঁচ লাখ কোটি টাকা। এর ১০ শতাংশ হিসেবে ৫০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ ছিল পুঁজিবাজারে। কিন্তু যখন আইন সংশোধন করা হয় তখন মোট মূলধন নেমে আসে ৫০ হাজার কোটি টাকার। এর ২৫ শতাংশ হিসাবে ব্যাংকগুলো শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করার কথা সর্বোচ্চ সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকার। আইন সংশোধনের আগে, বেশির ভাগ ব্যাংকেরই বাড়তি বিনিয়োগ ছিল। এ কারণে বাড়তি বিনিয়োগ সমন্বয়ের জন্য ২০১৬ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় দেয়া হয়।
ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, ব্যাংক কোম্পানি আইনে বেঁধে দেওয়া সীমার মধ্যে থেকেই পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করা হচ্ছে। বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নিয়মানুসারে শেয়ার কেনার তিন কার্যদিবসে শেয়ারটি বিক্রি করার উপযোগী হয়। এসময় কেনা শেয়ারদর বেড়ে গেলে বেঁধে দেওয়া সীমা অতিক্রম করে। তাই বলে আমরা ইচ্ছে করে পুঁজিবাজারে সীমার অতিরিক্ত বিনিয়োগ করি না। এবিষয়টি বিবেচনা না করে সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংক জরিমানা ও সতর্ক করছে।
বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, আমাদের এ বিষয়টি জানা আছে। মার্কেট যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় এবং ব্যাংকগুলো সীমার অতিরিক্ত বিনিয়োগ করলে সেটা যেন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সমন্বয় করতে পারে; সে বিষয়ে আমরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে আগামী সমন্বয় মিটিংয়ে আলোচনা করবো।
বিএসইসির মুখপাত্র বলেন, এ মিটিংয়ে গভর্নর সভাপতিত্ব করেন। আমাদের প্রতিনিধিত্ব করেন কমিশনের একজন সদস্য। তিনি আগামী মিটিংয়ে বিষয়টি সমাধানের জন্য তুলবেন। আশা করি বিষয়টি একটি সন্তোষজনক সমাধান হবে।
তাদের তথ্যানুসারে অধিকাংশ ব্যাংক নির্ধারিত সীমার চেয়ে অনেক কম বিনিয়োগ করেছে উল্লেখ করে রেজাউল করিম বলেন, গত জুলাই মাসে আমরা এ বিষয়ে একটি পর্যালোচনা করেছিলাম। সে রিপোর্টে অধিকাংশ ব্যাংক সীমার নিচে অবস্থান করছিল। দু-একটি ব্যাংকের বিনিয়োগ সীমার কাছাকাছি বা অল্প বেশি ছিল। আগস্টের পর্যালোচনা করা হয়নি। তবে জুলাই মাসের রিপোর্ট পর্যালোচনানুসারে মার্কেট দর বাড়ার কারণে দু-একটা ব্যাংকের বিনিয়োগ সীমা বাড়তে পারে।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে একটি ব্যাংকের এমডি বলেছেন, মনে করেন একটি ব্যাংক তার মোট মূলধন রয়েছে ৫০০ কোটি টাকা। এর ২৫ শতাংশ হিসাবে ১২৫ কোটি টাকার শেয়ার ধারণ করতে পারবে। ওই ব্যাংকটি এ হিসাবে ১২৫ কোটি টাকার শেয়ার কিনল। কিন্তু একদিন পর ধারণকৃত শেয়ারের মূল্য বেড়ে ১৫০ কোটি টাকা হলো। ফলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের নির্ধারিত সীমার চেয়ে শেয়ারের মূল্য ২৫ কোটি বেড়ে গেলো। এখন ব্যাংককে আইনের বাধ্যবাধকতার কারণে দিনের মধ্যেই ২৫ কোটি টাকার বাড়তি শেয়ার বিক্রি করতে হবে। কিন্তু একটি ব্যাংক ইচ্ছে করলেই ওই দিনে শেয়ার বিক্রি করতে পারবে না। এ জন্য পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) নীতিমালা মেনেই শেয়ার বিক্রি করতে হবে। এ কারণে ওই দিনে শেয়ার বিক্রি করতে না পারলে ব্যাংক কোম্পানি আইনের লঙ্ঘন হবে। আর এ জন্য জরিমানা গুনতে হবে আরেক নিয়ন্ত্রক সংস্থা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে।
আইনের এ ফাঁদে পড়ে নতুন প্রজন্মের এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংককে গত ৫ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে জরিমানা গুনতে হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ওই দিন নতুন প্রজন্মের ওই ব্যাংকটিকে সাড়ে ২৩ লাখ টাকা জরিমানা করেছে। আর এ জরিমানার অর্থ পরিশোধ করতে বলা হয়েছে তিন কার্যদিবসের মধ্যে। এছাড়া অতিরিক্ত বিনিয়োগের ব্যাখা চেয়ে আরও ১২টি ব্যাংককে সতর্ক করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এনআরবিসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী গোলাম আউলিয়া বলেন, ‘আমরা ব্যাংক কোম্পানি আইন মেনে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ সীমার চেয়ে কম বিনিয়োগ করেছি। তবে বাজারমূল্য বেড়ে যাওয়ায় বিনিয়োগ সীমা অতিক্রম করেছে।’

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

সীমার মধ্যেই পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করছে ব্যাংকগুলো

আপডেট সময় : ০২:২০:৪৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২১

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক : ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী পুঁজিবাজারে কোনো ব্যাংকের বিনিয়োগ ওই ব্যাংকের আদায়কৃত মূলধন, শেয়ার প্রিমিয়াম, সংবিধিবদ্ধ সঞ্চিতি ও রিটেইন আর্নিংসের ২৫ শতাংশের বেশি হতে পারবে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সীমার মধ্যে থেকেই পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলো বিনিয়োগ করছে বলে জানিয়েছেন ব্যাংকাররা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালে সংশোধিত ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, ব্যাংকগুলো তার মোট মূলধনের ২৫ শতাংশের বেশি শেয়ার ধারণ করতে পারবে না। এখন মোট মূলধন বলতে বোঝায় ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন, সংবিধিবদ্ধ সঞ্চিতি, রিটেইন আর্নিং ও শেয়ার প্রিমিয়াম অ্যাকাউন্টের সমন্বয়ে যে অর্থ থাকবে তাই। এ আইন সংশোধনের আগে তখন ব্যাংকিং খাতে মোট সম্পদ ছিল পাঁচ লাখ কোটি টাকা। এর ১০ শতাংশ হিসেবে ৫০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ ছিল পুঁজিবাজারে। কিন্তু যখন আইন সংশোধন করা হয় তখন মোট মূলধন নেমে আসে ৫০ হাজার কোটি টাকার। এর ২৫ শতাংশ হিসাবে ব্যাংকগুলো শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করার কথা সর্বোচ্চ সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকার। আইন সংশোধনের আগে, বেশির ভাগ ব্যাংকেরই বাড়তি বিনিয়োগ ছিল। এ কারণে বাড়তি বিনিয়োগ সমন্বয়ের জন্য ২০১৬ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় দেয়া হয়।
ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, ব্যাংক কোম্পানি আইনে বেঁধে দেওয়া সীমার মধ্যে থেকেই পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করা হচ্ছে। বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নিয়মানুসারে শেয়ার কেনার তিন কার্যদিবসে শেয়ারটি বিক্রি করার উপযোগী হয়। এসময় কেনা শেয়ারদর বেড়ে গেলে বেঁধে দেওয়া সীমা অতিক্রম করে। তাই বলে আমরা ইচ্ছে করে পুঁজিবাজারে সীমার অতিরিক্ত বিনিয়োগ করি না। এবিষয়টি বিবেচনা না করে সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংক জরিমানা ও সতর্ক করছে।
বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, আমাদের এ বিষয়টি জানা আছে। মার্কেট যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় এবং ব্যাংকগুলো সীমার অতিরিক্ত বিনিয়োগ করলে সেটা যেন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সমন্বয় করতে পারে; সে বিষয়ে আমরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে আগামী সমন্বয় মিটিংয়ে আলোচনা করবো।
বিএসইসির মুখপাত্র বলেন, এ মিটিংয়ে গভর্নর সভাপতিত্ব করেন। আমাদের প্রতিনিধিত্ব করেন কমিশনের একজন সদস্য। তিনি আগামী মিটিংয়ে বিষয়টি সমাধানের জন্য তুলবেন। আশা করি বিষয়টি একটি সন্তোষজনক সমাধান হবে।
তাদের তথ্যানুসারে অধিকাংশ ব্যাংক নির্ধারিত সীমার চেয়ে অনেক কম বিনিয়োগ করেছে উল্লেখ করে রেজাউল করিম বলেন, গত জুলাই মাসে আমরা এ বিষয়ে একটি পর্যালোচনা করেছিলাম। সে রিপোর্টে অধিকাংশ ব্যাংক সীমার নিচে অবস্থান করছিল। দু-একটি ব্যাংকের বিনিয়োগ সীমার কাছাকাছি বা অল্প বেশি ছিল। আগস্টের পর্যালোচনা করা হয়নি। তবে জুলাই মাসের রিপোর্ট পর্যালোচনানুসারে মার্কেট দর বাড়ার কারণে দু-একটা ব্যাংকের বিনিয়োগ সীমা বাড়তে পারে।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে একটি ব্যাংকের এমডি বলেছেন, মনে করেন একটি ব্যাংক তার মোট মূলধন রয়েছে ৫০০ কোটি টাকা। এর ২৫ শতাংশ হিসাবে ১২৫ কোটি টাকার শেয়ার ধারণ করতে পারবে। ওই ব্যাংকটি এ হিসাবে ১২৫ কোটি টাকার শেয়ার কিনল। কিন্তু একদিন পর ধারণকৃত শেয়ারের মূল্য বেড়ে ১৫০ কোটি টাকা হলো। ফলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের নির্ধারিত সীমার চেয়ে শেয়ারের মূল্য ২৫ কোটি বেড়ে গেলো। এখন ব্যাংককে আইনের বাধ্যবাধকতার কারণে দিনের মধ্যেই ২৫ কোটি টাকার বাড়তি শেয়ার বিক্রি করতে হবে। কিন্তু একটি ব্যাংক ইচ্ছে করলেই ওই দিনে শেয়ার বিক্রি করতে পারবে না। এ জন্য পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) নীতিমালা মেনেই শেয়ার বিক্রি করতে হবে। এ কারণে ওই দিনে শেয়ার বিক্রি করতে না পারলে ব্যাংক কোম্পানি আইনের লঙ্ঘন হবে। আর এ জন্য জরিমানা গুনতে হবে আরেক নিয়ন্ত্রক সংস্থা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে।
আইনের এ ফাঁদে পড়ে নতুন প্রজন্মের এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংককে গত ৫ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে জরিমানা গুনতে হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ওই দিন নতুন প্রজন্মের ওই ব্যাংকটিকে সাড়ে ২৩ লাখ টাকা জরিমানা করেছে। আর এ জরিমানার অর্থ পরিশোধ করতে বলা হয়েছে তিন কার্যদিবসের মধ্যে। এছাড়া অতিরিক্ত বিনিয়োগের ব্যাখা চেয়ে আরও ১২টি ব্যাংককে সতর্ক করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এনআরবিসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী গোলাম আউলিয়া বলেন, ‘আমরা ব্যাংক কোম্পানি আইন মেনে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ সীমার চেয়ে কম বিনিয়োগ করেছি। তবে বাজারমূল্য বেড়ে যাওয়ায় বিনিয়োগ সীমা অতিক্রম করেছে।’