নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর সীমান্ত স্কয়ারের ‘ক্রাউন ডায়মন্ড অ্যান্ড জুয়েলার্স’ থেকে ১৬৯ ভরি স্বর্ণালংকার চুরির ঘটনায় ৫০ ভরি স্বর্ণ উদ্ধার করে তিনজনকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে পুলিশ।
রুবেল (২৮), সফিক ওরফে সোহেল (৩৫) ও সাদ্দাম হোসেনকে (৩১) কুমিল্লার কোম্পানীগঞ্জ ও মুরাগনগর এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এই চোরেরা চাদর দিয়ে শেড তৈরি করে তালা কেটে দোকানে ঢোকে।
রোববার (১২) ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এ বিষয়ে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান ডিবি দক্ষিণের যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) থেকে শনিবার (১১ জানুয়ারি) পর্যন্ত ধারাবাহিক
ডিবির যুগ্ম কমিশনার (দক্ষিণ) মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম রোববার (১২ জানুয়ারি) জানিয়েছেন, চুরির ঘটনায় জড়িতদের ধরতে লালবাগ বিভাগের গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার পর্যন্ত ধারাবাহিক অভিযান চালিয়েছেন।
তদন্তে মাত্র ৮ মিনিটে অভিনব পন্থায় করা ওই চুরির ঘটনায় ৮ থেকে ৯ জনের ‘জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে’ বলে ভাষ্য ডিবির যুগ্ম কমিশনারের।
বাকিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।
ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসে যুগ্ম কমিশনার নাসিরুল ইসলাম বলেন, ডিবি পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে শুধুমাত্র একটি সিসিটিভির ভিডিও সংগ্রহ করে। ভিডিও পর্যালোচনায় দেখা যায়, এক অভিনব পদ্ধতিতে শো রুমের শাটার কেঁটে ভিতরে প্রবেশ করে মাত্র আট মিনিটের মধ্যে স্বর্ণালংকারসহ সংঘবদ্ধ চোরচক্র পালিয়ে যায়।
চক্রের একজন একটি চাদর দিয়ে দোকানের সামনে শেড তৈরি করে এবং অপর একজন দ্রুত সাটারের তালা কাটে। তৃতীয় এক ব্যক্তি দোকানে ঢুকে ‘আনলক ডিসপ্লে’ থেকে স্বর্ণালঙ্কার বের করে একটি হ্যাভারসেক ব্যাগে ভরে দ্রুত বের হয়ে আসে। এ সময় আরও কয়েকজনকে দোকানের চারপাশে ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়।
গত ৩ জানুয়ারি বেলা একটার দিকে সীমান্ত স্কয়ার শপিং কমপ্লেক্সের নিচতলায় ‘ক্রাউন ডায়মন্ড অ্যান্ড জুয়েলার্সে’ ওই চুরির ঘটনা ঘটে। দোকানের তিন কর্মচারি জুমার নামাজ পড়তে গেলে চোর চক্রের সদস্যরা শাটারের তালা ভেঙে দোকানে ঢুকে স্বর্ণালঙ্কার চুরি করে সটকে পড়ে।
প্রায় দুই কোটি ৫০ লাখ ২৮ হাজার ৮০০ টাকার ১৬৯ ভরি স্বর্ণালঙ্কার চুরির এই ঘটনায় দোকানের মালিক কাজী আকাশ ধানমন্ডি মডেল থানায় একটি মামলা করেন। এরপর থানা পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশও এই ঘটনার তদন্ত শুরু করে।
যুগ্ম কমিশনার নাসিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, ডিবি পুলিশের অভিযানে ওই তিনজনকে গ্রেফতারসহ কোম্পানীগঞ্জ বাজারের একটি জুয়েলারি দোকান থেকে চুরি যাওয়া ২৮ ভরি ১৪ আনা স্বর্ণালঙ্কার এবং ২১ ভরি ১০ আনা চুরি যাওয়া স্বর্ণালঙ্কারের গলিত স্বর্ণ উদ্ধার করা হয়।
তিনি বলেন, ক্লোজড সার্কিটের ভিডিও থেকে ছবি নিয়ে এর সঙ্গে প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণ এবং অন্যান্য গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এসব উদ্ধার করা হয়। উদ্ধাররা স্বর্ণের আনুমানিক মূল্য ৭০ লাখ টাকা।
এই চুরির সঙ্গে মার্কেটের কেউ জড়িত কী না প্রশ্নে ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, আমাদের তদন্ত চলছে। আপাতত যে চক্রটির জড়িত থাকার তথ্য পেয়েছি তারা অভ্যাসগতভাবেই চুরির সাথে জড়িত। গ্রেফতাররা ইতোপূর্বে বিভিন্ন স্বর্ণ ও মোবাইলের দোকানে চুরি করেছে। এর বাইরে কারও সংশ্লিষ্টতা আছে কী না সেটি তদন্ত সাপেক্ষ বিষয়।
গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগে বিভিন্ন থানায় এর আগে মামলা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন নাসিরুল ইসলাম ।
সংবাদ সম্মলনে রাজধানীতে চুরি ছিনতাই বেড়ে যাওয়া নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ছিনতাইয়ের ক্ষেত্রে আমাদের ইতোমধ্যে বিভিন্ন জায়গায় চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। টহল ও গোয়েন্দা কার্যক্রম বাড়ানো হয়েছে এবং আমাদের ক্রিমনিাল ডাটাবেজ বিশ্লেষণ করে চক্রের নাম শনাক্ত করে অভিযান চলমান রয়েছে। এছাড়া, অপরাধপ্রবণ এলাকায় সোর্সের মাধ্যমে ডিবি ও থানাপুলিশ যৌথভাবে অভিযান পরিচালনা করছি।
গেল বছরের গত অক্টোবরে ৯৮ জন ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে জানিয়ে নাসিরুল ইসলাম বলেছেন, নভেম্বরে ১৪৮ জন, ডিসেম্বরে ৫৬৪ জন এবং জানুয়ারিতে এ পর্যন্ত ৩৭৪ জন ‘ছিনতাইকারী’কে বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
আশা করছি ছিনতাইকারীর সংখ্যা কমে আসলে আমরা এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাবো।
এলিফ্যান্ট রোডে দুই ব্যবসায়ীকে প্রকাশ্যে কোপানোর বিষয়ে জানতে চাইলে সম্মেলনে উপস্থিত পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার মো. মাসুদ আলম বলেছেন, এ ঘটনায় শনিবার থানায় মামলা হয়েছে।
সিসিটিভি ভিডিও এনালাইসিস করে সম্পৃক্তকে শনাক্তের চেষ্টা অব্যাহত আছে। এর পেছনে সম্প্রতি তাদের ব্যবসা সমিতির নির্বাচন সংশ্লিষ্ট বিরোধ বা অন্য কারণও হতে পারে। তদন্ত না করা পর্যন্ত এটা বলতে পারবো না। তদন্তে সঠিক বিষয়টা উঠে আসবে, এরসঙ্গে যারই সংশ্লিষ্টতা থাকুক আইনের আওতায় নিয়ে আসবো।
ডিবির যুগ্ম কমিশনার নাসিরুল ইসলাম বলেন, আমরা পুরো বিষয়গুলো দেখছি, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে কাজ করছি। এরসঙ্গে ‘আন্ডারওয়ার্ল্ডই’ হোক আর ‘ওপেন’ যারা আছে তারাই থাকুক। আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নিব।