ঢাকা ০৪:১০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২৫, ১ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সীমান্তে বেড়ার ঘটনায় ভারতীয় হাই কমিশনারকে তলব, ঢাকার প্রতিবাদ

  • আপডেট সময় : ০৮:১৭:০৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ জানুয়ারী ২০২৫
  • ১৫ বার পড়া হয়েছে

পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিন-ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাকে তলব করে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিন। রোববার (১২ জানুয়ারি) বিকেলে ঢাকায় ভারতের শীর্ষ কূটনীতিককে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়।

পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিন রোববার সন্ধ্যায় এ কথা জানান। পররাষ্ট্রসচিব জসীম উদ্দিন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘সীমান্তে এখন যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে, তা একেবারেই অনাকাঙ্ক্ষিত। সম্প্রতি সীমান্তে বাংলাদেশের একজন নাগরিক প্রাণ হারিয়েছেন। সব মিলিয়ে আমরা সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে ভারতীয় হাইকমিশনারের কাছে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছি।’

পররাষ্ট্রসচিব জানান, সীমান্তের বর্তমান পরিস্থিতির উত্তরণে আগামী মাসে (ফেব্রুয়ারি) ভারতের দিল্লিতে বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক (ডিজি) পর্যায়ের বৈঠক আয়োজনের বিষয়ে ভারতীয় হাইকমিশনারের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পররাষ্ট্রসচিব জসীম উদ্দিন হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মার কাছে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) সাম্প্রতিক কার্যকলাপ নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, এ ধরনের কার্যকলাপ, বিশেষ করে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের অননুমোদিত চেষ্টা এবং বিএসএফের সংশ্লিষ্ট অপারেশনাল পদক্ষেপ, সীমান্তে উত্তেজনা ও ঝামেলা সৃষ্টি করেছে।

পররাষ্ট্রসচিব বলেছেন, যথাযথ অনুমোদন ছাড়াই কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সহযোগিতা এবং বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের চেতনাকে ক্ষুণ্ন করে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, আসন্ন বিজিবি-বিএসএফ ডিজি পর্যায়ের আলোচনায় বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা সম্ভব হবে।

সুনামগঞ্জে বিএসএফের হাতে এক বাংলাদেশি নাগরিকের হত্যার কথা উল্লেখ করে পররাষ্ট্রসচিব গভীর উদ্বেগ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন। তিনি এ হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানান এবং ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি বন্ধ করতে ও সব সীমান্ত হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি উল্লেখ করেন, এটিও গুরুতর উদ্বেগের বিষয় যে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ বারবার অপ্রাণঘাতী কৌশল অনুসরণ এবং হত্যা বন্ধ করার দৃঢ় প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরও এ ধরনের হত্যাকাণ্ড অব্যাহত রয়েছে।

পররাষ্ট্রসচিব ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, তারা যেন ভারতের সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষকে এমন কোনো উসকানিমূলক পদক্ষেপ থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেয়, যা সীমান্তে উত্তেজনা বৃদ্ধি করতে পারে।

পররাষ্ট্রসচিব উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ বিশ্বাস করে যে এ ধরনের সমস্যাগুলো গঠনমূলক সংলাপের মাধ্যমে, বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় চুক্তি অনুসারে এবং সীমান্তে শান্তি ও স্থায়িত্ব বজায় রাখার উপায়ে সমাধান করা উচিত।

দুই দেশের মধ্যে বোঝাপড়া রয়েছে: ভারতের হাইকমিশনার: এর আগে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বেরিয়ে ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা সাংবাদিকদের বলেন, সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার ব্যাপারে দুই দেশের মধ্যে বোঝাপড়া রয়েছে। দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী ভারতের বিএসএফ ও বাংলাদেশের বিজিবি সহযোগিতার মাধ্যমে সীমান্তে অপরাধ দমনের বিষয়ে কাজ করবে।

প্রণয় ভার্মা বলেন, ‘আমি পররাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে আলোচনা করেছি। অপরাধমুক্ত সীমান্ত নিশ্চিতের ব্যাপারে ভারতের প্রত্যয় নিয়ে কথা বলেছি। চোরাচালান, অপরাধীদের চলাচল, পাচারের চ্যালেঞ্জ কার্যকরভাবে দমনের বিষয়ে আলোচনা করেছি।’

সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের বিষয়ে ভারতের হাইকমিশনার বলেন, ‘নিরাপত্তার জন্য সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার ব্যাপারে আমাদের মধ্যে বোঝাপড়া রয়েছে। এ ব্যাপারে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ ও বিজিবির মধ্যে যোগাযোগ রয়েছে। আমরা আশা করি, সীমান্তে অপরাধ দমনের বিষয়ে সহযোগিতার মাধ্যমে সেই বোঝাপড়ার বাস্তবায়ন হবে।’

 

 

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

সীমান্তে বেড়ার ঘটনায় ভারতীয় হাই কমিশনারকে তলব, ঢাকার প্রতিবাদ

আপডেট সময় : ০৮:১৭:০৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ জানুয়ারী ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাকে তলব করে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিন। রোববার (১২ জানুয়ারি) বিকেলে ঢাকায় ভারতের শীর্ষ কূটনীতিককে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়।

পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিন রোববার সন্ধ্যায় এ কথা জানান। পররাষ্ট্রসচিব জসীম উদ্দিন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘সীমান্তে এখন যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে, তা একেবারেই অনাকাঙ্ক্ষিত। সম্প্রতি সীমান্তে বাংলাদেশের একজন নাগরিক প্রাণ হারিয়েছেন। সব মিলিয়ে আমরা সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে ভারতীয় হাইকমিশনারের কাছে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছি।’

পররাষ্ট্রসচিব জানান, সীমান্তের বর্তমান পরিস্থিতির উত্তরণে আগামী মাসে (ফেব্রুয়ারি) ভারতের দিল্লিতে বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক (ডিজি) পর্যায়ের বৈঠক আয়োজনের বিষয়ে ভারতীয় হাইকমিশনারের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পররাষ্ট্রসচিব জসীম উদ্দিন হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মার কাছে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) সাম্প্রতিক কার্যকলাপ নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, এ ধরনের কার্যকলাপ, বিশেষ করে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের অননুমোদিত চেষ্টা এবং বিএসএফের সংশ্লিষ্ট অপারেশনাল পদক্ষেপ, সীমান্তে উত্তেজনা ও ঝামেলা সৃষ্টি করেছে।

পররাষ্ট্রসচিব বলেছেন, যথাযথ অনুমোদন ছাড়াই কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সহযোগিতা এবং বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের চেতনাকে ক্ষুণ্ন করে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, আসন্ন বিজিবি-বিএসএফ ডিজি পর্যায়ের আলোচনায় বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা সম্ভব হবে।

সুনামগঞ্জে বিএসএফের হাতে এক বাংলাদেশি নাগরিকের হত্যার কথা উল্লেখ করে পররাষ্ট্রসচিব গভীর উদ্বেগ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন। তিনি এ হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানান এবং ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি বন্ধ করতে ও সব সীমান্ত হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি উল্লেখ করেন, এটিও গুরুতর উদ্বেগের বিষয় যে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ বারবার অপ্রাণঘাতী কৌশল অনুসরণ এবং হত্যা বন্ধ করার দৃঢ় প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরও এ ধরনের হত্যাকাণ্ড অব্যাহত রয়েছে।

পররাষ্ট্রসচিব ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, তারা যেন ভারতের সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষকে এমন কোনো উসকানিমূলক পদক্ষেপ থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেয়, যা সীমান্তে উত্তেজনা বৃদ্ধি করতে পারে।

পররাষ্ট্রসচিব উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ বিশ্বাস করে যে এ ধরনের সমস্যাগুলো গঠনমূলক সংলাপের মাধ্যমে, বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় চুক্তি অনুসারে এবং সীমান্তে শান্তি ও স্থায়িত্ব বজায় রাখার উপায়ে সমাধান করা উচিত।

দুই দেশের মধ্যে বোঝাপড়া রয়েছে: ভারতের হাইকমিশনার: এর আগে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বেরিয়ে ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা সাংবাদিকদের বলেন, সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার ব্যাপারে দুই দেশের মধ্যে বোঝাপড়া রয়েছে। দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী ভারতের বিএসএফ ও বাংলাদেশের বিজিবি সহযোগিতার মাধ্যমে সীমান্তে অপরাধ দমনের বিষয়ে কাজ করবে।

প্রণয় ভার্মা বলেন, ‘আমি পররাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে আলোচনা করেছি। অপরাধমুক্ত সীমান্ত নিশ্চিতের ব্যাপারে ভারতের প্রত্যয় নিয়ে কথা বলেছি। চোরাচালান, অপরাধীদের চলাচল, পাচারের চ্যালেঞ্জ কার্যকরভাবে দমনের বিষয়ে আলোচনা করেছি।’

সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের বিষয়ে ভারতের হাইকমিশনার বলেন, ‘নিরাপত্তার জন্য সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার ব্যাপারে আমাদের মধ্যে বোঝাপড়া রয়েছে। এ ব্যাপারে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ ও বিজিবির মধ্যে যোগাযোগ রয়েছে। আমরা আশা করি, সীমান্তে অপরাধ দমনের বিষয়ে সহযোগিতার মাধ্যমে সেই বোঝাপড়ার বাস্তবায়ন হবে।’