ঢাকা ০৭:৪১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৫ জুন ২০২৫

সীমান্তে ফের রোহিঙ্গা স্রোত, সতর্ক বিজিবি

  • আপডেট সময় : ০১:১৪:৪৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • ৫৩ বার পড়া হয়েছে

প্রত্যাশা ডেস্ক : মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে মংডুতে সামরিক বাহিনীর সঙ্গে দেশটির সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির মধ্য চলমান যুদ্ধে গত শনিবার রাত ১১টায় গোলার বিকট শব্দ গতকাল রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) ভোর পর্যন্ত চলছিল। এতে নতুন করে এপারের সীমান্তে বসবাসকারী মানুষের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
সীমান্তের লোকজন জানান, মিয়ানমারের মংডু টাউনশিফে বিপরীতে টেকনাফ পৌরসভার জালিয়াপাড়া থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এবং সাবরাংয়ের পূর্বে নাফ নদের ওপারে মংডু শহরের অবস্থান। মংডু শহরের নাফ নদ দিয়ে প্রবেশপথ খায়েনখালী খালটি। ওই খালের মোহনায় রোহিঙ্গাদের জড়ো হতে দেখা গেছে। ওই সীমান্ত এলাকায় প্রচণ্ড বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে। মিয়ানমারের জান্তা বাহিনী বিদ্রোহী আরাকান আর্মির দখলে থাকা এলাকা চৌকি উদ্ধারের জন্য এমন গোলাগুলি বলে সীমান্ত এলাকার লোকজন মনে করছেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, মিয়ানমারে এখনও সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বসবাস করছে। এর মধ্য রাখাইনের বুথেডংয়ে আড়াই লাখ, মংডুতে তিন লাখ এবং বাকিরা আকিয়াবসহ অন্য টাউনে রয়েছে। বর্তমানে মংডুতে হামলা হচ্ছে, সেখানে অধিকাংশ রোহিঙ্গা নাগরিকের বসবাস। তাদের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ নাফ নদ অতিক্রম করে বাংলাদেশের টেকনাফে পালিয়ে আসার চেষ্টা চালাচ্ছেন। তবে সীমান্তে আগের তুলনায় রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশের চেষ্টা অনেকটা কমেছে বলে জানিয়েছেন টেকনাফ-২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্ত কাছাকাছি হওয়ার কারণে বিকট শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। সেদেশে চলমান যুদ্ধের কারণে সীমান্তে বিকট শব্দ ভেসে আসছে। সীমান্তে অনুপ্রবেশের চেষ্টা রোহিঙ্গাদের আমরা প্রতিহত করছি। একটি বড় সংখ্যা রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের যে খবর বলা হচ্ছে, সেটি মনগড়া। সীমান্তে অনুপ্রবেশ ঠেকানোর পাশাপাশি যেকোনও পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিজিবি সদস্যরা প্রস্তুত রয়েছেন। এ ছাড়া সীমান্ত পেরিয়ে যাতে কোনও অপরাধী পালিয়ে যেতে না পারে সেজন্যও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।’
এদিকে খারাংখালী, টেকনাফ, পৌরসভা, হ্নীলা, জাদিমুড়া, দমদমিয়া, নাইট্যংপাড়া, পৌরসভার জালিয়াপাড়া, নাজিরপাড়া, সাবরাং, শাহপরীর দ্বীপ, নাফ নদের মোহনা ও নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত থেকে ভেসে আসছে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ। সীমান্তের লোকজন বলছে, দীর্ঘদিন বন্ধের পরে আবার বড় ধরনের মর্টারশেল বিস্ফোরণের বিকট শব্দে কাঁপছে টেকনাফ। সীমান্তে টেকনাফ পৌরসভার চৌধুরীপাড়ার মুহাম্মদ কাদের হোসেন বলেন, ‘রাতভর ওপারের গোলার বিকট শব্দে নির্ঘুম রাত কেটেছে। শনিবার সারা রাত গোলার শব্দ চলেছে ওপারে। তাই আমরা রাত জেগে বসে ছিলাম। বিশেষ করে নারী ও শিশুরা ভয়ে ছিল।’
সীমান্তের বাসিন্দা মো. ইসলাম বলেন, ‘রাতভর মংডুতে তুমুল যুদ্ধে আমরা সীমান্তের মানুষ ঘুমাতে পারেনি। অনেকের ঘরের বাইরে রাত কেটেছে। একটু পরপরই বিকট গুলির শব্দে সীমান্ত কেঁপে ওঠে। এর ভয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ি। রাতের মতো এমন গুলির শব্দ আগে কখনও শুনিনি। এ পরিস্থিতিতে যেকোনও মুহূর্তে সীমান্তে আবারও অনুপ্রবেশ ঘটতে পারে।’
ক্যাম্পের কয়েকজন রোহিঙ্গা নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, দুই পক্ষের গোলাগুলিতে অনেক রোহিঙ্গা মারা যাচ্ছে। এখন পাশের দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ছাড়া তাদের যাওয়ার মতো কোনও জায়গা নেই। তাই যেকোনও সময় তারা বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে ছুটতে পারে। কিন্তু যারা এপারে আসার জন্য আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে, তাদের এখানে না আসতে উৎসাহিত করা হচ্ছে।’
আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের (এআরএসপিএইচ) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জোবায়ের বলেন, ‘মূলত যুদ্ধের নামে রাখাইনে যেসব রোহিঙ্গা রয়েছে তাদের নিশ্চিহ্ন করতে সামরিক বাহিনীর সঙ্গে দেশটির সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির মধ্যে নাটক চলছে। আমি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অনুরোধ করবো, রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে সেফজোন গড়ে তুলে তাদের সেখানে বসবাসের উপযোগী করা হোক। অন্যথায় এসব মানুষ প্রাণে বাচঁতে এদিক-ওদিক পালাতে থাকবে।’
এদিকে, মিয়ানমার মংডুও শহরের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আরাকান আর্মির সঙ্গে দেশটির সেনাবাহিনীর তুমুল সংঘর্ষ চলছে। টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং থেকে শাহপরীরদ্বীপ পর্যন্ত ৫৪ কিলোমিটার নাফ নদে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের সদস্যরা দিনরাত নাফ নদ ও সীমান্ত সড়কে টহল বৃদ্ধি করেছে। সেটি চলমান এবং যেকোনও পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে সব সময় প্রস্তুত বিজিবি ও কোস্টগার্ড। টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, ‘মিয়ানমারে অভ্যন্তরীণ সংঘাতে আবারও বিস্ফোরণের বিকট শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু সীমান্তে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিজিবি ও কোস্টগার্ডের টহল জোরদার রয়েছে।’

 

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

সীমান্তে ফের রোহিঙ্গা স্রোত, সতর্ক বিজিবি

আপডেট সময় : ০১:১৪:৪৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

প্রত্যাশা ডেস্ক : মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে মংডুতে সামরিক বাহিনীর সঙ্গে দেশটির সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির মধ্য চলমান যুদ্ধে গত শনিবার রাত ১১টায় গোলার বিকট শব্দ গতকাল রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) ভোর পর্যন্ত চলছিল। এতে নতুন করে এপারের সীমান্তে বসবাসকারী মানুষের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
সীমান্তের লোকজন জানান, মিয়ানমারের মংডু টাউনশিফে বিপরীতে টেকনাফ পৌরসভার জালিয়াপাড়া থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এবং সাবরাংয়ের পূর্বে নাফ নদের ওপারে মংডু শহরের অবস্থান। মংডু শহরের নাফ নদ দিয়ে প্রবেশপথ খায়েনখালী খালটি। ওই খালের মোহনায় রোহিঙ্গাদের জড়ো হতে দেখা গেছে। ওই সীমান্ত এলাকায় প্রচণ্ড বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে। মিয়ানমারের জান্তা বাহিনী বিদ্রোহী আরাকান আর্মির দখলে থাকা এলাকা চৌকি উদ্ধারের জন্য এমন গোলাগুলি বলে সীমান্ত এলাকার লোকজন মনে করছেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, মিয়ানমারে এখনও সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বসবাস করছে। এর মধ্য রাখাইনের বুথেডংয়ে আড়াই লাখ, মংডুতে তিন লাখ এবং বাকিরা আকিয়াবসহ অন্য টাউনে রয়েছে। বর্তমানে মংডুতে হামলা হচ্ছে, সেখানে অধিকাংশ রোহিঙ্গা নাগরিকের বসবাস। তাদের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ নাফ নদ অতিক্রম করে বাংলাদেশের টেকনাফে পালিয়ে আসার চেষ্টা চালাচ্ছেন। তবে সীমান্তে আগের তুলনায় রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশের চেষ্টা অনেকটা কমেছে বলে জানিয়েছেন টেকনাফ-২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্ত কাছাকাছি হওয়ার কারণে বিকট শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। সেদেশে চলমান যুদ্ধের কারণে সীমান্তে বিকট শব্দ ভেসে আসছে। সীমান্তে অনুপ্রবেশের চেষ্টা রোহিঙ্গাদের আমরা প্রতিহত করছি। একটি বড় সংখ্যা রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের যে খবর বলা হচ্ছে, সেটি মনগড়া। সীমান্তে অনুপ্রবেশ ঠেকানোর পাশাপাশি যেকোনও পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিজিবি সদস্যরা প্রস্তুত রয়েছেন। এ ছাড়া সীমান্ত পেরিয়ে যাতে কোনও অপরাধী পালিয়ে যেতে না পারে সেজন্যও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।’
এদিকে খারাংখালী, টেকনাফ, পৌরসভা, হ্নীলা, জাদিমুড়া, দমদমিয়া, নাইট্যংপাড়া, পৌরসভার জালিয়াপাড়া, নাজিরপাড়া, সাবরাং, শাহপরীর দ্বীপ, নাফ নদের মোহনা ও নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত থেকে ভেসে আসছে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ। সীমান্তের লোকজন বলছে, দীর্ঘদিন বন্ধের পরে আবার বড় ধরনের মর্টারশেল বিস্ফোরণের বিকট শব্দে কাঁপছে টেকনাফ। সীমান্তে টেকনাফ পৌরসভার চৌধুরীপাড়ার মুহাম্মদ কাদের হোসেন বলেন, ‘রাতভর ওপারের গোলার বিকট শব্দে নির্ঘুম রাত কেটেছে। শনিবার সারা রাত গোলার শব্দ চলেছে ওপারে। তাই আমরা রাত জেগে বসে ছিলাম। বিশেষ করে নারী ও শিশুরা ভয়ে ছিল।’
সীমান্তের বাসিন্দা মো. ইসলাম বলেন, ‘রাতভর মংডুতে তুমুল যুদ্ধে আমরা সীমান্তের মানুষ ঘুমাতে পারেনি। অনেকের ঘরের বাইরে রাত কেটেছে। একটু পরপরই বিকট গুলির শব্দে সীমান্ত কেঁপে ওঠে। এর ভয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ি। রাতের মতো এমন গুলির শব্দ আগে কখনও শুনিনি। এ পরিস্থিতিতে যেকোনও মুহূর্তে সীমান্তে আবারও অনুপ্রবেশ ঘটতে পারে।’
ক্যাম্পের কয়েকজন রোহিঙ্গা নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, দুই পক্ষের গোলাগুলিতে অনেক রোহিঙ্গা মারা যাচ্ছে। এখন পাশের দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ছাড়া তাদের যাওয়ার মতো কোনও জায়গা নেই। তাই যেকোনও সময় তারা বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে ছুটতে পারে। কিন্তু যারা এপারে আসার জন্য আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে, তাদের এখানে না আসতে উৎসাহিত করা হচ্ছে।’
আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের (এআরএসপিএইচ) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জোবায়ের বলেন, ‘মূলত যুদ্ধের নামে রাখাইনে যেসব রোহিঙ্গা রয়েছে তাদের নিশ্চিহ্ন করতে সামরিক বাহিনীর সঙ্গে দেশটির সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির মধ্যে নাটক চলছে। আমি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অনুরোধ করবো, রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে সেফজোন গড়ে তুলে তাদের সেখানে বসবাসের উপযোগী করা হোক। অন্যথায় এসব মানুষ প্রাণে বাচঁতে এদিক-ওদিক পালাতে থাকবে।’
এদিকে, মিয়ানমার মংডুও শহরের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আরাকান আর্মির সঙ্গে দেশটির সেনাবাহিনীর তুমুল সংঘর্ষ চলছে। টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং থেকে শাহপরীরদ্বীপ পর্যন্ত ৫৪ কিলোমিটার নাফ নদে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের সদস্যরা দিনরাত নাফ নদ ও সীমান্ত সড়কে টহল বৃদ্ধি করেছে। সেটি চলমান এবং যেকোনও পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে সব সময় প্রস্তুত বিজিবি ও কোস্টগার্ড। টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, ‘মিয়ানমারে অভ্যন্তরীণ সংঘাতে আবারও বিস্ফোরণের বিকট শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু সীমান্তে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিজিবি ও কোস্টগার্ডের টহল জোরদার রয়েছে।’