ঢাকা ০৩:২৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৯ মে ২০২৫

সীমানা পিলার-কয়েন দিয়ে কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন তারা

  • আপডেট সময় : ০১:২২:১০ অপরাহ্ন, সোমবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২৩
  • ১২০ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : শিল্পপতি ও অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের টার্গেট করে কথিত সীমানা পিলার ও প্রাচীন কয়েন কেনাবেচায় প্রলুব্ধ করে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি চক্র। এ চক্রের ৪ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা-রমনা বিভাগের একটি টিম।
তারা হলেন- মো. মিজানুর রহমান মজনু, মো. আক্তারুজ্জামান ওরফে তাহেরুল ইসলাম, মো. জসিম ও ইব্রাহিম ব্যাপারী।
গতকাল সোমবার (৪ ডিসেম্বর) ডিএমপির ডিবি কম্পাউন্ডে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে ব্রিফিংকালে এ তথ্য জানান ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। হারুন অর রশীদ বলেন, রমনা মডেল থানায় এক ভুক্তভোগীর করা মামলার তদন্তে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। মামলাটি তদন্তকালে দেখা যায়, প্রতারক চক্রটির মূল টার্গেট হচ্ছে শিল্পপতি ও অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা। তাদের কথিত প্রাচীন প্রতœতাত্ত্বিক নিদর্শন সীমানা পিলার ও প্রাচীন কয়েন কেনাবেচার লোভে ফেলে কোটি টাকা হাতিয়ে নিতো চক্রটি।
অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, ভুক্তভোগীর সঙ্গে গ্রেফতার তাহেরুল ইসলামের একটি অনুষ্ঠানে পরিচয় হয়। তিনি নিজেকে আমেরিকার হেরিটেজ অকশন নামে একটি কোম্পানির বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর হিসেবে পরিচয় দেন। তাহেরুলের শারিরীক গঠন, পোশাক, দামি গাড়ি ও স্মার্টনেস দেখে ভুক্তভোগী তাকে বিশ্বাস করেন এবং তাদের মধ্যে একটা সম্পর্ক তৈরি হয়। সেই পরিচয়ের সুবাদে তাহেরুল ভুক্তভোগীকে বলে তার গ্রামের একজন কৃষক মিজানুর বাড়ির পাশে কৃষিজমি খনন করার সময় একটি সীমানা পিলার পেয়েছেন। তাহেরুল ভুক্তভোগীকে বলেন, তিনি যেহেতু আমেরিকার একটি কোম্পানির কান্ট্রি ডিরেক্টর এ পিলারটি দুইশত কোটি টাকার বিনিময়ে বিক্রি করতে পারবেন। গ্রেফতার তাহেরুল ভুক্তভোগীকে শেয়ারে থাকার জন্য অফার দেন। তার প্রস্তাবে রাজি হন এবং তাহেরুলের সঙ্গে সেই কৃষকের বাড়ি পিলারটি দেখতে যান। এদিকে তাহেরুল তার সহকারী জসিমকে কেমিস্ট সাজিয়ে নিয়ে যায় এবং তাকে দিয়ে পিলারটির রাসায়নিক পরীক্ষা করায়। জসিম সবকিছু দেখে পিলারটি খাঁটি বলে জানায়। এর ফলে তাহেরুলের কথা ভুক্তভোগীর আরও বিশ্বাস হয়। হারুন অর রশীদ বলেন, ভুক্তভোগী তখন মিজানুর রহমানের সঙ্গে সীমানা পিলারটি ৩৫ কোটি টাকার বিনিময়ে কেনার চুক্তি করেন। চুক্তি মোতাবেক নগদ ৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা এবং ৩১ কোটি ৫০ লাখ টাকার চেক দেন। কিন্তু প্রতারকদের পূর্বপরিকলম্পনা অনুযায়ী কথিত সীমানা পিলারটি ভুক্তভোগীর কাছে হস্তান্তর করার কিছুক্ষণ পরেই তাদের লোকজন ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে জোরপূর্বক কেড়ে নিয়ে যায়। গ্রেফতারদের জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে অতিরিক্ত কমিশনার হারুন বলেন, এ চক্রে ২০ থেকে ২৫ জন লোক কাজ করেন। প্রত্যেকের ভিন্ন ভিন্ন ভূমিকা রয়েছে। রোববার অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও মাদক নিয়ন্ত্রণ টিমের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার নাজিয়া ইসলামের নেতৃত্বে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে চক্রের ৪ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রতারক চক্রের অন্যান্য সদস্যদের গ্রেফতারে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। তিনি বলেন, এসময় তাদের কাচজ থেকে প্রতারণায় ব্যবহৃত একটি কথিত ব্রিটিশ সীমানা পিলার, ৪টি কথিত প্রাচীন কয়েন, নগদ ১০ লাখ ৫৫ হাজার টাকা, চারটি মোবাইল ফোন, একটি চুক্তিপত্র, ৩২টি চেক, ভুয়া ভিজিটিং কার্ড ও একটি মাইক্রোবাস উদ্ধার করা হয়। লোভে পড়ে এ ধরনের প্রতারণার ফাঁদে পা না দেওয়ার জন্য সবাইকে অনুরোধ করেন মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। তিনি বলেন, তবে কেউ যদি এ ধরনের প্রতারণার শিকার হন তাহলে সঙ্গে সঙ্গে থানাকে অবহিত করুন।

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

সীমানা পিলার-কয়েন দিয়ে কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন তারা

আপডেট সময় : ০১:২২:১০ অপরাহ্ন, সোমবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : শিল্পপতি ও অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের টার্গেট করে কথিত সীমানা পিলার ও প্রাচীন কয়েন কেনাবেচায় প্রলুব্ধ করে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি চক্র। এ চক্রের ৪ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা-রমনা বিভাগের একটি টিম।
তারা হলেন- মো. মিজানুর রহমান মজনু, মো. আক্তারুজ্জামান ওরফে তাহেরুল ইসলাম, মো. জসিম ও ইব্রাহিম ব্যাপারী।
গতকাল সোমবার (৪ ডিসেম্বর) ডিএমপির ডিবি কম্পাউন্ডে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে ব্রিফিংকালে এ তথ্য জানান ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। হারুন অর রশীদ বলেন, রমনা মডেল থানায় এক ভুক্তভোগীর করা মামলার তদন্তে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। মামলাটি তদন্তকালে দেখা যায়, প্রতারক চক্রটির মূল টার্গেট হচ্ছে শিল্পপতি ও অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা। তাদের কথিত প্রাচীন প্রতœতাত্ত্বিক নিদর্শন সীমানা পিলার ও প্রাচীন কয়েন কেনাবেচার লোভে ফেলে কোটি টাকা হাতিয়ে নিতো চক্রটি।
অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, ভুক্তভোগীর সঙ্গে গ্রেফতার তাহেরুল ইসলামের একটি অনুষ্ঠানে পরিচয় হয়। তিনি নিজেকে আমেরিকার হেরিটেজ অকশন নামে একটি কোম্পানির বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর হিসেবে পরিচয় দেন। তাহেরুলের শারিরীক গঠন, পোশাক, দামি গাড়ি ও স্মার্টনেস দেখে ভুক্তভোগী তাকে বিশ্বাস করেন এবং তাদের মধ্যে একটা সম্পর্ক তৈরি হয়। সেই পরিচয়ের সুবাদে তাহেরুল ভুক্তভোগীকে বলে তার গ্রামের একজন কৃষক মিজানুর বাড়ির পাশে কৃষিজমি খনন করার সময় একটি সীমানা পিলার পেয়েছেন। তাহেরুল ভুক্তভোগীকে বলেন, তিনি যেহেতু আমেরিকার একটি কোম্পানির কান্ট্রি ডিরেক্টর এ পিলারটি দুইশত কোটি টাকার বিনিময়ে বিক্রি করতে পারবেন। গ্রেফতার তাহেরুল ভুক্তভোগীকে শেয়ারে থাকার জন্য অফার দেন। তার প্রস্তাবে রাজি হন এবং তাহেরুলের সঙ্গে সেই কৃষকের বাড়ি পিলারটি দেখতে যান। এদিকে তাহেরুল তার সহকারী জসিমকে কেমিস্ট সাজিয়ে নিয়ে যায় এবং তাকে দিয়ে পিলারটির রাসায়নিক পরীক্ষা করায়। জসিম সবকিছু দেখে পিলারটি খাঁটি বলে জানায়। এর ফলে তাহেরুলের কথা ভুক্তভোগীর আরও বিশ্বাস হয়। হারুন অর রশীদ বলেন, ভুক্তভোগী তখন মিজানুর রহমানের সঙ্গে সীমানা পিলারটি ৩৫ কোটি টাকার বিনিময়ে কেনার চুক্তি করেন। চুক্তি মোতাবেক নগদ ৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা এবং ৩১ কোটি ৫০ লাখ টাকার চেক দেন। কিন্তু প্রতারকদের পূর্বপরিকলম্পনা অনুযায়ী কথিত সীমানা পিলারটি ভুক্তভোগীর কাছে হস্তান্তর করার কিছুক্ষণ পরেই তাদের লোকজন ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে জোরপূর্বক কেড়ে নিয়ে যায়। গ্রেফতারদের জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে অতিরিক্ত কমিশনার হারুন বলেন, এ চক্রে ২০ থেকে ২৫ জন লোক কাজ করেন। প্রত্যেকের ভিন্ন ভিন্ন ভূমিকা রয়েছে। রোববার অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও মাদক নিয়ন্ত্রণ টিমের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার নাজিয়া ইসলামের নেতৃত্বে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে চক্রের ৪ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রতারক চক্রের অন্যান্য সদস্যদের গ্রেফতারে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। তিনি বলেন, এসময় তাদের কাচজ থেকে প্রতারণায় ব্যবহৃত একটি কথিত ব্রিটিশ সীমানা পিলার, ৪টি কথিত প্রাচীন কয়েন, নগদ ১০ লাখ ৫৫ হাজার টাকা, চারটি মোবাইল ফোন, একটি চুক্তিপত্র, ৩২টি চেক, ভুয়া ভিজিটিং কার্ড ও একটি মাইক্রোবাস উদ্ধার করা হয়। লোভে পড়ে এ ধরনের প্রতারণার ফাঁদে পা না দেওয়ার জন্য সবাইকে অনুরোধ করেন মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। তিনি বলেন, তবে কেউ যদি এ ধরনের প্রতারণার শিকার হন তাহলে সঙ্গে সঙ্গে থানাকে অবহিত করুন।