নিজস্ব প্রতিবেদক: সাদা পাথর লুটের ঘটনায় দেশজুড়ে আলোচনার মধ্যে সিলেটের ডিসি মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদকে ঢাকায় ফিরিয়ে আনা হয়েছে। তার জায়গায় দায়িত্ব পেয়েছেন মো. সারওয়ার আলম, যিনি একসময় র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসাবে জনস্বার্থে অনেক অভিযান পরিচালনার জন্য পরিচিতি পেয়েছিলেন।
সোমবার (১৮ আগস্ট) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে সিলেটের জেলাপ্রশাসক পদে রদবদলের কথা জানিয়ে বলা হয়, এ আদেশ তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হবে। শের মাহবুব ও সারওয়ার দুজনই ২৭তম বিসিএসের কর্মকর্তা। সারওয়ার আলম প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (সংযুক্ত) হিসেবে উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের একান্ত সচিবের দায়িত্বে ছিলেন। তাকে সিলেটের ডিসি করে পাঠিয়ে শের মাহবুব মুরাদকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে। গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত বছর আগস্টে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়। এক মাসের মাথায় ১২ সেপ্টেম্বর মাহবুব মুরাদকে ডিসির দায়িত্ব দিয়ে সিলেটে পাঠানো হয়।
গত এক বছরে সিলেটের ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারি থেকে পাথর লুটের ঘটনা নিয়ে গত কয়েক দিন ধরে ব্যাপক আলোচনা চলছে। পাথর লুট ঠেকাতে না পারায় প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। বন ও পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান রোববার (১৭ আগস্ট) সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, পাথর লুটে যে রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে উঠেছে, এর বিপরীতে প্রশাসনের হয় যোগসাজশ করেছে, নতুবা নীরব থেকেছে অথবা দুটোই ঘটেছে। এজন্য প্রশাসনের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেব এবং দ্রুতই নেব।
সিলেটের নতুন ডিসি সারওয়ার আলম ২০০৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর করেন। ২০০৮ সালে বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়ে প্রশাসন ক্যাডারে যোগ দেন তিনি। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে র্যাবে যোগ দিয়ে ভেজালবিরোধী বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা করে আলোচনায় ছিলেন সারওয়ার।
২০১৯ সালে ক্যাসিনো বন্ধে অভিযান চালানোর পর করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে হাসপাতালগুলোতে চলা অভিযানের নেতৃত্বেও ছিলেন তিনি। ২০২০ সালে তখনকার সংসদ সদস্য হাজী মো. সেলিমের বাড়িতে অভিযানেও নেতৃত্ব দেন সারওয়ার আলম। হাজী সেলিমের ছেলে ইরফান সেলিমকে দেড় বছরের সাজাও দেন তিনি। প্রায় ছয় বছর ধরে একই দায়িত্বে থাকার পর ২০২০ সালের নভেম্বরে সারওয়ার আলমকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব হিসেবে বদলি করা হয়। পরে তিনি পদোন্নতি পেয়ে উপসচিব হন।
কোম্পানীগঞ্জের ইউএনও আজিজুন্নাহারকেও বদলি: সাদা পাথর লুটপাটের ঘটনায় সমালোচনার মুখে এবার বদলি হলেন সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আজিজুন্নাহার। সোমবার (১৮ আগস্ট) বিকেলে সিলেটের বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় থেকে এক অফিস আদেশে তাকে কোম্পানীগঞ্জ থেকে ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় বদলি করা হয়েছে। সিলেটের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার দেবজিৎ সিংহ এ তথ্য নিশ্চিত করছেন। এর আগে একই ঘটনায় সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদকে সিলেট থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তার স্থলে নতুন জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগ পেয়েছেন প্রশাসনের আলোচিত ম্যাজিস্ট্রেট মো. সারওয়ার আলম।
উপসচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা সারওয়ার আলম বর্তমানে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের একান্ত সচিব (পিএস) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তাকে সিলেটের ডিসি নিয়োগ দিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর লুটের ঘটনায় ইউএনও আজিজুন্নাহারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। লুটপাট বন্ধে দায়িত্বশীল আচরণ না করে উল্টো লুটপাটে সহযোগিতার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। বিষয়টি নিয়ে বেশ কয়েকদিন ধরে সরব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম।
এসি/সানা/১৮/৮/২০২৫