নারী ও শিশু ডেস্ক: সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদের শাসনের অবসান ঘটার প্রায় পাঁচ মাস অতিবাহিত হয়েছে। এক দুই করে গুনলে এটি দাঁড়ায় ১৬৩ দিনে। দেশটিতে একটা দীর্ঘ সময় যুদ্ধের কারণে অনেক পুরুষ নিহত, নিখোঁজ অথবা সেনাবাহিনীতে জোর করে নিযুক্ত হওয়ায় নারীরা পরিবার ও অর্থনৈতিক দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিতে বাধ্য হয়েছেন। তারা ব্যবসা, শিক্ষা, সাংবাদিকতা ও নাগরিক সমাজে মুখ্য ভূমিকা নিতে শুরু করেছেন। তবে দেশটির রক্ষণশীল সমাজে কর্মজীবী নারীদের বিরুদ্ধে সামাজিক বাধা ও হয়রানি এখনো চলমান রয়েছে।
২০২৪ সালের উইমেন’স পাওয়ার ইনডেক্সের তথ্য অনুযায়ী সরকারে নারীদের অংশ ছিল মাত্র ১২ শতাংশ এবং সংসদে ১০ শতাংশ। ২০১৬ সালে হাদিয়া খালাফ আব্বাস সিরিয়ার সংসদের প্রথম নারী স্পিকার হিসেবে নিযুক্ত হন। কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যে তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়। নারী উপদেষ্টা বৌথাইনা শাবানকে প্রভাবশালী মনে করা হলেও তিনি অনেকের চোখে ছিলেন কেবল সরকারপন্থী প্রচারণার মুখপাত্র। সে সময় সর্বাধিক ক্ষমতাধর নারী ছিলেন ফার্স্ট লেডি আসমা আল-আসাদ। তিনি সিরিয়ার অর্থনীতি, মানবিক সহায়তা ও দাতব্য খাতে ব্যাপক প্রভাব রেখেছিলেন। তবে বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে তিনি সরকারপন্থী দুর্নীতিতে জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ আছে।
বাশার আল-আসাদের পতনের পর আইন, রাজনীতি ও সংস্কৃতিতে নারীদের সক্রিয় একটা অংশ দেখা দিয়েছে। আইশা আল-দিবস নারীবিষয়ক দপ্তরের প্রধান হয়েছেন এবং মাশেয়া সাবরিন সিরিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে নিযুক্ত হয়ে আরব বিশ্বে প্রথম নারী গভর্নর হয়েছেন। নতুন প্রশাসনে হিন্দ কাবাওয়াত ও হুদা আতাসিকে জাতীয় সংলাপ কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সংবিধান খসড়া কমিটিতেও রয়েছেন দুই নারী আইন বিশেষজ্ঞ, রায়ান কাহিলান ও বাহিয়া মারদিনি। তবে নারীর সামগ্রিক প্রতিনিধিত্ব এখনো সীমিত। নারীদের অধিকার বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি থাকলেও তার গতি ধীর। অন্য রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক অগ্রাধিকারের আড়ালে নারীর বিষয়গুলো চাপা পড়ছে বলে মনে করছেন অনেকে।
সিরিয়ার সংস্কৃতি ও শিল্প নারীদের জন্য এক শক্তিশালী কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছে। প্রতিকূলতার মধ্যেও সিরিয়ার নারীরা তাদের দেশ পুনর্গঠনের কাজে সাহায্য করছেন। বাশার আল-আসাদের পতনের পর সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড নতুনভাবে শুরু হয়েছে। নারীদের অধিকতর রাজনৈতিক অংশগ্রহণ এবং আইনি অধিকার বৃদ্ধির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। তবে রক্ষণশীল সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি, আইনের অস্পষ্টতা, অর্থনৈতিক দুরবস্থা ও নিরাপত্তাহীনতা নারীদের পথ কঠিন করে তুলছে।
এখনো সিরিয়ার অনেকাংশের নারীরা পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার কারণে পিছিয়ে আছেন। অঞ্চলগুলোতে পুরুষের সংখ্যা কমে গেলেও অনেক নারী এখনো এমন এক সামাজিক ব্যবস্থার ফাঁদে আটকে আছেন; যেখানে পুরুষ অভিভাবক ছাড়া তাদের দৈনন্দিন জীবনের ওপর নিজস্ব নিয়ন্ত্রণের অধিকার নেই। পুরোনো সামাজিক নিয়ম ও বৈষম্যের প্রাচীর এখনো তাদের আটকে রেখেছে। সেই সঙ্গে যোগ হয়েছে পুরো পরিবারের দায়িত্ব, অর্থ উপার্জন, ঘর সামলানো এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার। নিজের পায়ে দাঁড়ানোর মতো পর্যাপ্ত উপায়, প্রশিক্ষণ বা সম্পদ তাদের নেই। সিরিয়ার নতুন সংবিধানে নারীর অধিকার নিয়ে কী বলা হবে, তা এখনো পরিষ্কার নয়। ফলে সম্ভাবনা তৈরি হলেও তা বাস্তবায়নে বর্তমানের মতোই যে ধীর হবে, সেটা বলা যায়। সূত্র: ফার্ম ফর ইন্টারন্যাশনাল কালচারাল রিলেশনস, ভিউজ অ্যান্ড ভয়েজেস।
আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ