ঢাকা ০৯:৩৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সিনেমা শিল্প রক্ষায় তদন্ত কমিশন দরকার

  • আপডেট সময় : ১০:০৩:০২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জুন ২০২২
  • ১১৩ বার পড়া হয়েছে

মিজান মালিক : নায়ক নায়িকাদের নিয়ে সাধারণের অন্তহীন আগ্রহ। মিডিয়ার আগ্রহ তাদের ওপর নিউজ করার ওপর। নায়ক হিসেবে ওমর সানিকে আমি তেমন একটা বড় কিছু মনে না করলেও মৌসুমীকে নিয়ে একজন দর্শক হিসেবে আমারও কৌতুহল আছে। সেটি সালমান শাহ’র কারণে। কেয়ামত থেকে কেয়ামত মৌসুমীর সারাজীবনের পিলার। সারাজীবনের পরিচিতি। এরপর আরও শত শত ছবি করলেও তাকে সালমান শাহ’র নায়িকা মৌসুমী হিসেবে সবাই বেশি চেনে। যেমনটি চেনে বেদের মেয়ে জোছনার জন্য ইলিয়াস কাঞ্চন জুটিকে। যদিও হালে নতুন প্রজন্মের কাছে যাহা মৌসুমী তাহাই বুবলি, নূসরাত পূজা বা অন্যরা।
আমি বহুবছর হলে গিয়ে ছবি দেখি না। বাংলা ছবি দেখার মতো মনে হয়নি বলে হয়তো দেখা হয়নি। কোনো গল্প থাকে না। তবে কিছু ছবি হয়েছে কিছুটা ব্যতিক্রম। আয়নাবাজি টাইপের। সম্প্রতি ‘শান’ ছবিটি দেখেছিলাম। মনে হয়েছে তুলনামূলক ভালো একটি ছবি। যদিও নায়িকার মৃত্য দৃশ্যের পর তাকে আবার জীবিত দেখিয়ে নায়কের কল্পনায় একটি গানে টেনে আনাটা বেশ বেমানান মনে হয়েছে। পরে একদিন অভিনেতা নাদের চৌধুরীকে কাছে পেয়ে জিজ্ঞেস করলাম, মৃত নায়িকাকে টেনে এনে গানের অংশটুকু বাদ দিলে ছবিটা আমার কাছে ভালো মনে হয়েছে। মানবপাচারকারীদের অপরাধ তুলে ধরা হয়েছে। তখন ওনি বললেন, কমার্শিয়াল ছবিতে এরকম হয়। আমি বললাম,নায়িকার মৃত্য না দেখিয়ে রক্তাক্ত বা আহত নায়িকাকে হাসপাতালে মুমূর্ষু অবস্থায় নেয়া হয়েছে। আইসিওতে আছেন। এমন একটা সময়ে নায়কের ভালোবাসার স্মৃতি মনে করিয়ে গানে তাকে টেনে আনলে মনে হয় ভালো হতো। যাই হোক। মন্দের ভালো। আমার দুর্ভাগ্য,ওমর সানি বা জায়েদ খানের কোনো ছবি দেখিনি। মাঝে মধ্যে বাসায় কোনো ছবির অংশ বিশেষ ভালো লাগলে ডিস বা ক্যাবলের মাধ্যমে দেখেছি। ওমর সানি দীর্ঘ ত্রিশ বছর অভিনয় করে সিনেমা জগতে একটা জায়গা করে নিলেও জায়েদ খান সেটা পারেননি বলেই মনে হচ্ছে। সাম্প্রতিক কর্মকান্ড দেখে মনে হচ্ছে তাকে নায়কের চেয়ে খল চরিত্রে হয়তো ভালো মানাবে। যদিও মৌসুমী তার পক্ষে কথা বলছেন। সেটা তাদের বন্ধুত্বের কারণেও হতে পারে।
এখন চলচ্চিত্র শিল্পের দুর্দিন যাচ্ছে। খরা যাচ্ছে। এর জন্য শিল্পী ছাড়াও যারা তাদের পেছনে বিনিয়োগ করেন তাদের দায় বেশি বলে আমি মনে করি। কারণ তারা সত্তর আশি বা নব্বইয়ের দশকের রুচিসম্পন্ন ছবির চেয়ে নিজের আধিপত্য বিস্তারকে প্রাধান্য দেন বেশি। সেভাবে ছবির লাইনআপ করেন।তেল বাজির জন্যও করেন। আবার কালো টাকা সাদা করারও একটা সুবর্ণ সুযোগ। অনেকে নায়িকার একটু সান্নিধ্য পেতে লগ্নি করেন। এমন কি নিজের সন্তানকেও এ পথে নামান। নায়ক নায়িকা টাকা পান। বিনিয়োগকারী বা প্রযোজক যেভাবে চান পরিচালক সেভাবে ছবি নামিয়ে দেন। এভাবে বছরের পর বছর চলছে। ফলে বাংলা ছবির ঐতিহ্য ধরে রাখা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। চলছে আকাল। সারাদেশে সিনেমা হলগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। তারপরও কিছু মানুষ সিনেমা বানাতে আসে। শিল্পী সমিতির নির্বাচন নিয়ে যতটা না মাঠ গরম ছিল, ভালো ছবি বা দর্শক টানতে ও বন্ধ সিনেমা হলগুলো কিভাবে দর্শন ফিরে পাবে,কী করণীয় তা নিয়ে তাদের তেমন মাথা ব্যথা দেখি না। এর মাঝে কোন একটা ডিস অপারেটর হিরু আলম সিনেমায় এসে আরো বারোটা বাজাচ্ছে। আর সিনিয়ররা তো কোন ধরনের দ্বন্দ্ব আর ব্যক্তি স্বার্থে ব্যস্ত তা তো সবাই দেখছে। এমন বাস্তবতায়, সিনেমা শিল্পকে রক্ষায় সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরসহ দায়িত্বশীলদের এগিয়ে আসা উচিৎ বলে আমি মনে করি। প্রয়োজনে একটা তদন্ত কমিশনের গঠন করে সুপারিশ নেয়া যেতে পারে। তারা সবার সাথে কথা বলবে। সব কিছু পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করবে। কারা সিনেমা শিল্প ধ্বংসের পেছনে দায়ী তাদের বিষয়ে মতামত দেবে। মেধাবীদের কিভাবে সম্পৃক্ত করা যায় সে বিষয়ে বলবে। তাদের সুপারিশের আলোকে সরকারসহ এর সঙ্গে জড়িতরা পরবর্তী করণীয় ঠিক করবেন।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

সিনেমা শিল্প রক্ষায় তদন্ত কমিশন দরকার

আপডেট সময় : ১০:০৩:০২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জুন ২০২২

মিজান মালিক : নায়ক নায়িকাদের নিয়ে সাধারণের অন্তহীন আগ্রহ। মিডিয়ার আগ্রহ তাদের ওপর নিউজ করার ওপর। নায়ক হিসেবে ওমর সানিকে আমি তেমন একটা বড় কিছু মনে না করলেও মৌসুমীকে নিয়ে একজন দর্শক হিসেবে আমারও কৌতুহল আছে। সেটি সালমান শাহ’র কারণে। কেয়ামত থেকে কেয়ামত মৌসুমীর সারাজীবনের পিলার। সারাজীবনের পরিচিতি। এরপর আরও শত শত ছবি করলেও তাকে সালমান শাহ’র নায়িকা মৌসুমী হিসেবে সবাই বেশি চেনে। যেমনটি চেনে বেদের মেয়ে জোছনার জন্য ইলিয়াস কাঞ্চন জুটিকে। যদিও হালে নতুন প্রজন্মের কাছে যাহা মৌসুমী তাহাই বুবলি, নূসরাত পূজা বা অন্যরা।
আমি বহুবছর হলে গিয়ে ছবি দেখি না। বাংলা ছবি দেখার মতো মনে হয়নি বলে হয়তো দেখা হয়নি। কোনো গল্প থাকে না। তবে কিছু ছবি হয়েছে কিছুটা ব্যতিক্রম। আয়নাবাজি টাইপের। সম্প্রতি ‘শান’ ছবিটি দেখেছিলাম। মনে হয়েছে তুলনামূলক ভালো একটি ছবি। যদিও নায়িকার মৃত্য দৃশ্যের পর তাকে আবার জীবিত দেখিয়ে নায়কের কল্পনায় একটি গানে টেনে আনাটা বেশ বেমানান মনে হয়েছে। পরে একদিন অভিনেতা নাদের চৌধুরীকে কাছে পেয়ে জিজ্ঞেস করলাম, মৃত নায়িকাকে টেনে এনে গানের অংশটুকু বাদ দিলে ছবিটা আমার কাছে ভালো মনে হয়েছে। মানবপাচারকারীদের অপরাধ তুলে ধরা হয়েছে। তখন ওনি বললেন, কমার্শিয়াল ছবিতে এরকম হয়। আমি বললাম,নায়িকার মৃত্য না দেখিয়ে রক্তাক্ত বা আহত নায়িকাকে হাসপাতালে মুমূর্ষু অবস্থায় নেয়া হয়েছে। আইসিওতে আছেন। এমন একটা সময়ে নায়কের ভালোবাসার স্মৃতি মনে করিয়ে গানে তাকে টেনে আনলে মনে হয় ভালো হতো। যাই হোক। মন্দের ভালো। আমার দুর্ভাগ্য,ওমর সানি বা জায়েদ খানের কোনো ছবি দেখিনি। মাঝে মধ্যে বাসায় কোনো ছবির অংশ বিশেষ ভালো লাগলে ডিস বা ক্যাবলের মাধ্যমে দেখেছি। ওমর সানি দীর্ঘ ত্রিশ বছর অভিনয় করে সিনেমা জগতে একটা জায়গা করে নিলেও জায়েদ খান সেটা পারেননি বলেই মনে হচ্ছে। সাম্প্রতিক কর্মকান্ড দেখে মনে হচ্ছে তাকে নায়কের চেয়ে খল চরিত্রে হয়তো ভালো মানাবে। যদিও মৌসুমী তার পক্ষে কথা বলছেন। সেটা তাদের বন্ধুত্বের কারণেও হতে পারে।
এখন চলচ্চিত্র শিল্পের দুর্দিন যাচ্ছে। খরা যাচ্ছে। এর জন্য শিল্পী ছাড়াও যারা তাদের পেছনে বিনিয়োগ করেন তাদের দায় বেশি বলে আমি মনে করি। কারণ তারা সত্তর আশি বা নব্বইয়ের দশকের রুচিসম্পন্ন ছবির চেয়ে নিজের আধিপত্য বিস্তারকে প্রাধান্য দেন বেশি। সেভাবে ছবির লাইনআপ করেন।তেল বাজির জন্যও করেন। আবার কালো টাকা সাদা করারও একটা সুবর্ণ সুযোগ। অনেকে নায়িকার একটু সান্নিধ্য পেতে লগ্নি করেন। এমন কি নিজের সন্তানকেও এ পথে নামান। নায়ক নায়িকা টাকা পান। বিনিয়োগকারী বা প্রযোজক যেভাবে চান পরিচালক সেভাবে ছবি নামিয়ে দেন। এভাবে বছরের পর বছর চলছে। ফলে বাংলা ছবির ঐতিহ্য ধরে রাখা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। চলছে আকাল। সারাদেশে সিনেমা হলগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। তারপরও কিছু মানুষ সিনেমা বানাতে আসে। শিল্পী সমিতির নির্বাচন নিয়ে যতটা না মাঠ গরম ছিল, ভালো ছবি বা দর্শক টানতে ও বন্ধ সিনেমা হলগুলো কিভাবে দর্শন ফিরে পাবে,কী করণীয় তা নিয়ে তাদের তেমন মাথা ব্যথা দেখি না। এর মাঝে কোন একটা ডিস অপারেটর হিরু আলম সিনেমায় এসে আরো বারোটা বাজাচ্ছে। আর সিনিয়ররা তো কোন ধরনের দ্বন্দ্ব আর ব্যক্তি স্বার্থে ব্যস্ত তা তো সবাই দেখছে। এমন বাস্তবতায়, সিনেমা শিল্পকে রক্ষায় সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরসহ দায়িত্বশীলদের এগিয়ে আসা উচিৎ বলে আমি মনে করি। প্রয়োজনে একটা তদন্ত কমিশনের গঠন করে সুপারিশ নেয়া যেতে পারে। তারা সবার সাথে কথা বলবে। সব কিছু পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করবে। কারা সিনেমা শিল্প ধ্বংসের পেছনে দায়ী তাদের বিষয়ে মতামত দেবে। মেধাবীদের কিভাবে সম্পৃক্ত করা যায় সে বিষয়ে বলবে। তাদের সুপারিশের আলোকে সরকারসহ এর সঙ্গে জড়িতরা পরবর্তী করণীয় ঠিক করবেন।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক