বিনোদন ডেস্ক: রাজধানীর উত্তরার চার নম্বর সেক্টরের একটি বাড়িতে দীর্ঘদিন ধরে জনপ্রিয় অভিনয় শিল্পীদের নাটক ও সিনেমার শুটিং হয়ে আসছে। হঠাৎ করে ওই বাড়িতে শুটিং বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে উত্তরা চার নম্বর সেক্টরের আবাসিক এলাকা কল্যাণ সমিতি। এমন নির্দেশের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে অভিনয় শিল্পী সংঘের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ মামুন অপু।
অপু বলেন, ‘একটি মহল শিল্প-সংস্কৃতি চর্চা করতে দিতে চাইছে না। তার একটা নমুনা হলো চার নাম্বার সেক্টরের ওই বাড়িটি শুটিং বন্ধের নির্দেশ। আমরা কখন সেটা হতে দেবো। আমরা সংগঠনের সবাই মিলে বসব। বিষয়টি নিয়ে কথা-বার্তা চলছে।’ তিনি বলেন, ‘সোসাইটির লোকজন যে অভিযোগ তুলছে, সেটি ঠিক নয়। আগেও এ ধরনের চেষ্টা হয়েছে। সেগুলো সংশ্লিষ্ট সংগঠন, স্থানীয় সংসদ সদস্য, সিটি কর্পোরেশন এবং পুলিশ প্রশাসন মিলে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা করে সমাধান করেছেন। এবারও আশা করি তাই হবে।’
২০ জুলাই ইস্যুকৃত নোটিশে বলা হয়েছে, ‘শুটিং ঘিরে আবাসিক এলাকায় জনসমাগম বৃদ্ধি ও রাস্তায় যানবাহান চলাচলে বিঘ্ন হচ্ছে। ফলে চার নাম্বার সেক্টরের ওই বাড়িটিতে শুটিং বন্ধ রাখার জন্য বাড়ির মালিককে অনুরোধ করা হয়েছে।’
পাঠকদের জন্য উত্তরা চার নম্বর সেক্টর আবাসিক এলাকা কল্যাণ সমিতির নোটিশটি তুলে দেওয়া হলো-
‘আপনার সদয় অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, উপরোক্ত (বাড়ি নম্বার-৪২, রোড-১২, সেক্টর-৪) বাড়িতে বিগত বহুদিন ধরে শুটিং হাউজ হিসেবে ব্যবহার করে অত্র আবাসিক এলাকায় নিয়মিত শুটিং কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, এ ধরনের শুটিং কার্যক্রমের কারণে রাস্তায় জনসমাগম সৃষ্টি হচ্ছে, যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে এবং সেক্টরের স্থায়ী বাসিন্দারা তাদের স্বাভাবিক ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে বসবাসে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন।’
নোটিশে বলা হয়েছে, ‘আপনার জ্ঞাতার্থে জানানো যাচ্ছে যে, আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে শুটিং হাউস পরিচালনা করা সম্পূর্ণ আবাসিক নীতিমালার পরিপন্থি। ফলে এলাকার স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে এবং সেক্টরবাসীর ন্যায্য অধিকার ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। সেক্টরবাসীর ক্রমবর্ধমান অভিযোগ ও সবার নিরাপত্তা এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশের কথা বিবেচনা করে আপনাকে অনুরোধ করা যাচ্ছে যে, অনতিবিলম্বে এই শুটিং কার্যক্রম বন্ধ রাখবেন এবং শুটিং হাউজ হিসেবে ভাড়া প্রদান থেকে বিরত থাকবেন। সেক্টরের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ পুনরুদ্ধারে আপনার দায়িত্বশীল ভূমিকা অত্যন্ত জরুরি।
নোটিশটিতে সবশেষে বলা হয়েছে, ‘আমরা সবাই জানি উত্তরা চার নম্বর সেক্টর একটি আদর্শ, পরিবেশ বান্ধব ও শান্তিপূর্ণ আবাসিক এলাকা হিসেবে পুরো উত্তরার ভেতর পরিচিতি লাভ করেছে। অতএব এই সুনাম অক্ষুন্ন রাখার জন্য আপনার আন্তরিক সহযোগিতা একান্তকাম্য।’
যেসব অভিনয়শিল্পী ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন, তারা হলেন-
অভিনেতা রওনক হাসান: উত্তরা আবাসিক এলাকা কল্যাণ সমিতির নোটিশের ছবিটি সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ ও শেয়ার করে অভিনেতা রওনক হাসান লিখেছেন, ‘উত্তরা সেক্টর ৪ কল্যান সমিতি থেকে শুটিং বন্ধের নোটিশ এসেছে। আবাসিক এলাকায় নানান রকম অফিস হয়। শতশত স্কুল হয়, মাল্টিটাইপ ব্যাবসা হয়। শুধু শুটিং এ সমস্যা!’ তিনি যোগ করেন, ‘আগেও এ ধরনের চেষ্টা হয়েছে। সেগুলো সংশ্লিষ্ট সংগঠন, স্থানীয় সংসদ সদস্য, সিটি কর্পোরেশন এবং পুলিশ প্রশাসন মিলে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা করে সমাধান করেছেন। এবারও আশা করি তাই হবে। সংশ্লিষ্ট সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’
শুটিং হাউস মালিক আসলাম হোসাইন: উত্তরা সেক্টর ৪-এ তিনটি প্রধান শুটিং হাউস রয়েছে। তা হলো লাবণী-৪, লাবণী-৫, আপনঘর-২। এই হাউসগুলোর একটি লাবণী ৪-এর মালিক আসলাম হোসাইন সংবাদমাধ্যমকে জানিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, ‘২৫ বছর ধরে ব্যবসা করছি, কেউ কখনো অভিযোগ করেনি। এখন হঠাৎ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। ডিরেক্টর গিল্ডকে জানিয়েছি। আশা করি পাশে পাব।’
অভিনেতা শহীদুজ্জামান সেলিম: অভিনেতা ও ডিরেক্টর গিল্ড সভাপতি শহীদুজ্জামান সেলিম বলেন, ‘একটা ধারাবাহিক নাটকের অনেক কন্টিনিউটি থাকে। হঠাৎ করেই বন্ধ বলা যায় না। আমরা প্রতিবাদ জানিয়েছি, আজই চিঠি পাঠাব।’
নির্মাতা মাহমুদ দিদার: নির্মাতা মাহমুদ দিদার বলেন, ‘উত্তরায় অনেক বছর ধরে শুটিং হয়। এখন বলা হচ্ছে বন্ধ করতে। মনে হচ্ছে শুটিং কালচারই উঠে যাবে।’
নির্মাতা তপু খান: নির্মাতা তপু খান বলেন, ‘শিল্প-সংস্কৃতি বিকাশে বাধা এই সিদ্ধান্ত। আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হোক।’
ডিরেক্টর গিল্ড: ডিরেক্টর গিল্ড জানিয়েছে, তারা শুটিং হাউস মালিকদের পাশে থাকবে এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যার সমাধান খুঁজবে। ইতোমধ্যে সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ চিঠি প্রস্তুত করা হয়েছে।
অভিনতা শামীম হাসান সরকার: নিজের ফেসবুকে শামীম লিখেছেন, বাংলাদেশের নাটকের শুটিং দেশের মাটির কোথাও করতে দেওয়া উচিত না। সব শুটিং হোক আমেরিকার লাস ভেগাসে!
কল্যাণ সমিতি বলছে, আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক কার্যক্রম (যেমন শুটিং) নীতিমালা অনুযায়ী অনুমোদন সাপেক্ষ এবং স্থানীয়দের সম্মতি ছাড়া অনুমোদন অগ্রহণযোগ্য। তবে নাট্যজগতের অনেকে বলছেন, বিশেষ আলোচনার মাধ্যমে নিয়মনীতি ঠিক করে শুটিংয়ের সময় ও পদ্ধতি নির্ধারণ করা যেতে পারে। কিন্তু সরাসরি নিষেধাজ্ঞা বাস্তবতাবিরোধী।
আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ