কক্সবাজার প্রতিনিধি : অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলায় বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপসহ ১৫ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত। একইসঙ্গে একইসঙ্গে আদালত ওসি প্রদীপসহ ছয় আসামির জামিন নামঞ্জুর করেছেন।
গতকাল রোববার আলোচিত এই মামলার শুনানি শেষে বিচারক মোহাম্মদ ইসমাঈল এ চার্জ গঠন করেন। এর মধ্য দিয়ে সিনহা হত্যা মামলায় বিচারকাজ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। মামলায় বাদীপক্ষের সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ২৬, ২৭ ও ২৮ জুলাই দিন ধার্য্য করেছেন আদালত। বাদী পক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ মোস্তফা বলেন, প্রমাণ করতে পেরেছি যে ওইদিন চেকপোস্টে পরিদর্শক লিয়াকত ও ওসি প্রদীপসহ আসামিরা অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহাকে পরিকল্পিত হত্যা করেছে। তাই জামিন চাওয়া হলেও ছয় আসামির জামিন নামঞ্জুর করা হয়েছে। একই সঙ্গে সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য্য করেছে। আসামিপক্ষের আইনজীবী রানা দাশ গুপ্ত বলেন, আমরা আদালতকে বলেছি এজাহার এবং চার্জশিটে গড়মিল রয়েছে। তাই জামিন আবেদন করেছিলাম। আগামী ধার্য্য তারিখে শুনানি, নয়তো উচ্চ আদালতে যাওয়ার পরিকল্পনার কথাও জানান তিনি। আলোচিত মেজর সিনহা হত্যা মামলায় ২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর ওসি প্রদীপ কুমার দাসসহ ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা র্যাব-১৫ এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. খায়রুল ইসলাম। ওই বছরের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে গাড়ি তল্লাশির সময় অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানকে গুলি করা হয়। এ ঘটনায় গত ৫ আগস্ট নিহত সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়েছে বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সাবেক ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে প্রধান আসামি করে টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ নয় জন পুলিশ সদস্যকে আসামি করা হয়। আদালত মামলাটির তদন্ত করার আদেশ দেন র্যাবকে। এরপর গত ৬ আগস্ট প্রধান আসামি লিয়াকত আলী ও টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ৭ পুলিশ সদস্য আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। পরবর্তীতে সিনহা হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার সংশ্লিষ্টতা পাওয়ার অভিযোগে পুলিশের দায়ের মামলার তিনজন স্বাক্ষী এবং শামলাপুর চেকপোস্টের দায়িত্বরত আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ানের (এপিবিএন) তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। এছাড়া একই অভিযোগে পরে গ্রেপ্তার করা হয় টেকনাফ থানা পুলিশের সাবেক সদস্য কনস্টেবল রুবেল শর্মাকেও। মামলায় গ্রেপ্তার ১৪ আসামিকে র্যাবের তদন্তকারী কর্মকর্তা বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এদের মধ্যে টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও কনস্টেবল রুবেল শর্মা ছাড়া ১২ জন আসামি আদালতে ঘটনার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
এদিকে সিনহা হত্যার মামলাটি বেআইনি ও অবৈধ দাবি করে ২০২০ সালের ৪ অক্টোবর কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে প্রধান আসামি লিয়াকতের আইনজীবী মাসুদ সালাহ উদ্দিন একটি মামলা দায়ের করেন। ওই দিন আদালত মামলাটির পূর্ণাঙ্গ শুনানির জন্য ২০ অক্টোবর দিন ধার্য করেন। কিন্তু শুনানির ওই নির্ধারিত দিনে সিনহা হত্যার মামলার বাদী শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস অসুস্থাতার কারণে আদালতে উপস্থিত থাকতে না পারায় পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য্য করেন ১০ নভেম্বর।
অন্যদিকে মামলাটি শুনানির ওই নির্ধারিত দিনে (১০নভেম্বর) সিনহা হত্যার মামলাটি বে-আইনি ও অবৈধ ঘোষণা চেয়ে আবেদনকারী পক্ষের আইনজীবী মাসুদ সালাহ উদ্দিন অসুস্থ হয়ে পড়েন। এতে মামলাটির পূর্ণাঙ্গ শুনানির দিন আবারো পিছিয়ে যায়। ওই দিন (১০ নভেম্বর) আদালত মামলাটির পূর্ণাঙ্গ শুনানির জন্য ১৩ ডিসেম্বর দিন ধার্য্য করেন। এ মামলায় অভিযুক্ত হওয়ার পর দুদকের একটি দুর্নীতি মামলায় চট্টগ্রাম আদালতে হাজির হতে হচ্ছিল ওসি প্রদীপকে। সে সুবাধে তাকে ২০২০ সালের নভেম্বরে চট্টগ্রাম কারাগারে প্রেরণ করা হয়। সেখানে দীর্ঘ ৭ মাস রাখার পর গেল ১০ জুন তাকে কক্সবাজার কারাগারে স্থানান্তর করা হয়।
সিনহা হত্যার বিচার শুরু
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ