ঢাকা ০৬:২৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১২ মে ২০২৫

সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশি প্রকৌশলীর বানানো হোমটাউন অ্যাপ

  • আপডেট সময় : ০৫:৫৭:১৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৫
  • ২১ বার পড়া হয়েছে

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি: নেত্রকোনার মাহবুব আলম কাজ করেন সিঙ্গাপুরের পেইন্টিং ঠিকাদারের সঙ্গে। একদিন কাজ শেষে ট্রেনে করে বাসায় ফেরার সময় টের পেলেন বাসা থেকে অনেকবার ফোন এসেছে। সঙ্গে সঙ্গে ফোন করে জানতে পারেন বাড়িতে মা অসুস্থ। অস্থির মাহবুব ভাবলেন বাড়ি যাওয়া দরকার। কিন্তু ততক্ষণে রাত হয়ে গেছে। কোনো ট্রাভেল এজেন্টের অফিস খোলা পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। বন্ধুরা তাকে ‘হোমটাউন’ অ্যাপ ইনস্টল করতে বললেন। বন্ধুদের পরামর্শে ট্রেনেই অ্যাপটি ডাউনলোড করে নিজের আইডি দিয়ে অ্যাকাউন্ট ভেরিফিকেশন করেন মাহবুব। তারপর টিকিট কাটার চেষ্টা করতে গিয়ে দেখেন, পরদিন ভোরবেলায় ঢাকায় যাওয়া যাবে। কিন্তু এটা কীভাবে সম্ভব! অবাক হয়ে মাহবুব হোমটাউনের হটলাইনে ফোন করেন এবং নিজ ভাষায় কথা বলতে পেরে সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যান। তখনই নিশ্চিন্তে অ্যাপে টিকিট কেটে পরদিনই নেত্রকোনায় অসুস্থ মায়ের কাছে পৌঁছে যান।

বাংলাদেশি উদ্যোক্তা প্রকৌশলী রিদওয়ান হাফিজ তার উদ্যোগ গো জায়ান (এড় তধুধহ) এই অ্যাপ তৈরি করেছে। গো যায়ান দেশি স্টার্টআপগুলোর মধ্যে বেশ সফল। সাশ্রয়ী মূল্যে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক গন্তব্যে বিমানের টিকিট কাটা যায় গো যায়ান থেকে। বাংলাদেশ ছাড়িয়ে পাকিস্তানেও তাদের টিকিটিং সেবা চালু রয়েছে।
দেখা গেছে, ৩২ শতাংশ অভিবাসী শ্রমিক টিকিট কাটার ক্ষেত্রে কমপক্ষে একবার প্রতারণার শিকার হয়েছেন এবং প্রায়ই তারা বাজারমূল্যের চেয়ে ২০ শতাংশ বেশি পরিশোধ করেন টিকিটের জন্য। আবার প্রায় সব প্রবাসীর স্মার্টফোন থাকলেও তারা অনলাইন পেমেন্ট করতে চান না। কারণ, অভিবাসীদের কাছে এটি জটিল মনে হয়। ভাষার বাধা তো আছেই। এই দুই সমস্যার সমাধানের জন্য রিদওয়ান তৈরি করলেন ‘হোমটাউন অ্যাপ’।

২০২২ সালের ডিসেম্বরে এটি চালু হয় শুধু সিঙ্গাপুর প্রবাসীদের জন্য। ইংরেজির পাশাপাশি বাংলা ইন্টারফেস, ব্যবহারকারীর চাহিদা বুঝে গাইড করা, যেন গন্তব্যের টিকিট কাটতে পারে। যেমন সিঙ্গাপুর থেকে কেউ টিকিট কাটতে চাইলে বোঝা যায়, তিনি দেশে যেতে চান। ফলে শুধু তারিখ জেনে তাকে টিকিটের অপশন দেখানো যায়। ব্যবহারকারীর পাসপোর্ট, ছবি ইত্যাদি হোমটাউন অ্যাকাউন্ট খোলার সময় নেওয়া হয়ে থাকে। এ জন্য টিকিট কাটার জন্য আর কোনো বাড়তি তথ্যের প্রয়োজন হয় না। আবার হোমটাউন অ্যাকাউন্ট ব্যবহারকারী সিঙ্গাপুরের ব্যাংক হিসাবের সঙ্গে যুক্ত থাকেন। ফলে টিকিট নিশ্চিত হয়ে ব্যবহারকারী ব্যাংকে লেনদেন করতে পারেন। এ জন্য সিঙ্গাপুরের আইন অনুসারে হোমটাউন অ্যাপ ব্যবহারকারীকে একটি কিউআর কোড দেয়। ব্যবহারকারী মুঠোফোনে সেটি সেইভ করেন এবং ব্যাংকের অ্যাপে সেটি আপলোড করলেই টিকিটের টাকা স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিশোধ হয়ে যায়। টিকিটও কাটা হয়ে যায়।

অল্পদিনের মধ্যেই প্রবাসীরা বলতে থাকেন, টিকিট করার মতোই দেশে টাকা পাঠানোর একটা সহজ অ্যাপ তৈরি করা যায় কি না। কারণ, কম খরচে টাকা পাঠাতে হলে ব্যাংকের মাধ্যমে পাঠাতে হয় এবং সেটার জন্য কর্মদিবসে ব্যাংকে যেতে হয়। আবার মোবাইল ব্যাংকিংয়ে বেশি টাকা পাঠালে বাড়িতে সেই টাকা তুলতে বাড়তি খরচ হয়। যে কয়টা অ্যাপে টাকা পাঠানো যায়, সেগুলোর সার্ভিস চার্জও বেশি। আবার হুন্ডি করে টাকা পাঠালে নিরাপত্তার শঙ্কা থাকে এবং প্রণোদনাও পাওয়া যায় না। এসব ভেবে ‘হোমটাউন রেমিট্যান্স সেবা’ চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়। রেমিট্যান্স লেনদেনের জন্য সিঙ্গাপুর ও বাংলাদেশে অনেক আর্থিক নিয়ম মানতে হয়। বিশেষ করে হিসাবধারীর কেওয়াইসি (কণঈ), দেশে কোনো একটি ব্যাংকের সঙ্গে সিঙ্গাপুর থেকে ডিজিটালি টাকা পাঠানোর ব্যবস্থা করা, সেখান থেকে অন্য ব্যাংক বা মোবাইল আর্থিক সেবায় স্থানান্তরের সুযোগ থাকা ইত্যাদির ব্যবস্থা করতে হয়। অবশেষে সব চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করে ২০২৩ সালের নভেম্বরে হোমটাউন তাদের অ্যাপে টাকা পাঠানোর ব্যবস্থা যোগ করতে সক্ষম হয়।

বর্তমানে সিঙ্গাপুর-বাংলাদেশ ফ্লাইটের ৩৮ শতাংশ বাজার শেয়ার এবং মাসে ৮ মিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স প্রসেসিং করে হোমটাউন। এ জন্য মার্কেটিংয়ের পেছনে কোনো অর্থ ব্যয় হয়নি।

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

বজ্রপাতে একদিনে ১০ জনের মৃত্যু

সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশি প্রকৌশলীর বানানো হোমটাউন অ্যাপ

আপডেট সময় : ০৫:৫৭:১৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৫

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি: নেত্রকোনার মাহবুব আলম কাজ করেন সিঙ্গাপুরের পেইন্টিং ঠিকাদারের সঙ্গে। একদিন কাজ শেষে ট্রেনে করে বাসায় ফেরার সময় টের পেলেন বাসা থেকে অনেকবার ফোন এসেছে। সঙ্গে সঙ্গে ফোন করে জানতে পারেন বাড়িতে মা অসুস্থ। অস্থির মাহবুব ভাবলেন বাড়ি যাওয়া দরকার। কিন্তু ততক্ষণে রাত হয়ে গেছে। কোনো ট্রাভেল এজেন্টের অফিস খোলা পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। বন্ধুরা তাকে ‘হোমটাউন’ অ্যাপ ইনস্টল করতে বললেন। বন্ধুদের পরামর্শে ট্রেনেই অ্যাপটি ডাউনলোড করে নিজের আইডি দিয়ে অ্যাকাউন্ট ভেরিফিকেশন করেন মাহবুব। তারপর টিকিট কাটার চেষ্টা করতে গিয়ে দেখেন, পরদিন ভোরবেলায় ঢাকায় যাওয়া যাবে। কিন্তু এটা কীভাবে সম্ভব! অবাক হয়ে মাহবুব হোমটাউনের হটলাইনে ফোন করেন এবং নিজ ভাষায় কথা বলতে পেরে সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যান। তখনই নিশ্চিন্তে অ্যাপে টিকিট কেটে পরদিনই নেত্রকোনায় অসুস্থ মায়ের কাছে পৌঁছে যান।

বাংলাদেশি উদ্যোক্তা প্রকৌশলী রিদওয়ান হাফিজ তার উদ্যোগ গো জায়ান (এড় তধুধহ) এই অ্যাপ তৈরি করেছে। গো যায়ান দেশি স্টার্টআপগুলোর মধ্যে বেশ সফল। সাশ্রয়ী মূল্যে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক গন্তব্যে বিমানের টিকিট কাটা যায় গো যায়ান থেকে। বাংলাদেশ ছাড়িয়ে পাকিস্তানেও তাদের টিকিটিং সেবা চালু রয়েছে।
দেখা গেছে, ৩২ শতাংশ অভিবাসী শ্রমিক টিকিট কাটার ক্ষেত্রে কমপক্ষে একবার প্রতারণার শিকার হয়েছেন এবং প্রায়ই তারা বাজারমূল্যের চেয়ে ২০ শতাংশ বেশি পরিশোধ করেন টিকিটের জন্য। আবার প্রায় সব প্রবাসীর স্মার্টফোন থাকলেও তারা অনলাইন পেমেন্ট করতে চান না। কারণ, অভিবাসীদের কাছে এটি জটিল মনে হয়। ভাষার বাধা তো আছেই। এই দুই সমস্যার সমাধানের জন্য রিদওয়ান তৈরি করলেন ‘হোমটাউন অ্যাপ’।

২০২২ সালের ডিসেম্বরে এটি চালু হয় শুধু সিঙ্গাপুর প্রবাসীদের জন্য। ইংরেজির পাশাপাশি বাংলা ইন্টারফেস, ব্যবহারকারীর চাহিদা বুঝে গাইড করা, যেন গন্তব্যের টিকিট কাটতে পারে। যেমন সিঙ্গাপুর থেকে কেউ টিকিট কাটতে চাইলে বোঝা যায়, তিনি দেশে যেতে চান। ফলে শুধু তারিখ জেনে তাকে টিকিটের অপশন দেখানো যায়। ব্যবহারকারীর পাসপোর্ট, ছবি ইত্যাদি হোমটাউন অ্যাকাউন্ট খোলার সময় নেওয়া হয়ে থাকে। এ জন্য টিকিট কাটার জন্য আর কোনো বাড়তি তথ্যের প্রয়োজন হয় না। আবার হোমটাউন অ্যাকাউন্ট ব্যবহারকারী সিঙ্গাপুরের ব্যাংক হিসাবের সঙ্গে যুক্ত থাকেন। ফলে টিকিট নিশ্চিত হয়ে ব্যবহারকারী ব্যাংকে লেনদেন করতে পারেন। এ জন্য সিঙ্গাপুরের আইন অনুসারে হোমটাউন অ্যাপ ব্যবহারকারীকে একটি কিউআর কোড দেয়। ব্যবহারকারী মুঠোফোনে সেটি সেইভ করেন এবং ব্যাংকের অ্যাপে সেটি আপলোড করলেই টিকিটের টাকা স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিশোধ হয়ে যায়। টিকিটও কাটা হয়ে যায়।

অল্পদিনের মধ্যেই প্রবাসীরা বলতে থাকেন, টিকিট করার মতোই দেশে টাকা পাঠানোর একটা সহজ অ্যাপ তৈরি করা যায় কি না। কারণ, কম খরচে টাকা পাঠাতে হলে ব্যাংকের মাধ্যমে পাঠাতে হয় এবং সেটার জন্য কর্মদিবসে ব্যাংকে যেতে হয়। আবার মোবাইল ব্যাংকিংয়ে বেশি টাকা পাঠালে বাড়িতে সেই টাকা তুলতে বাড়তি খরচ হয়। যে কয়টা অ্যাপে টাকা পাঠানো যায়, সেগুলোর সার্ভিস চার্জও বেশি। আবার হুন্ডি করে টাকা পাঠালে নিরাপত্তার শঙ্কা থাকে এবং প্রণোদনাও পাওয়া যায় না। এসব ভেবে ‘হোমটাউন রেমিট্যান্স সেবা’ চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়। রেমিট্যান্স লেনদেনের জন্য সিঙ্গাপুর ও বাংলাদেশে অনেক আর্থিক নিয়ম মানতে হয়। বিশেষ করে হিসাবধারীর কেওয়াইসি (কণঈ), দেশে কোনো একটি ব্যাংকের সঙ্গে সিঙ্গাপুর থেকে ডিজিটালি টাকা পাঠানোর ব্যবস্থা করা, সেখান থেকে অন্য ব্যাংক বা মোবাইল আর্থিক সেবায় স্থানান্তরের সুযোগ থাকা ইত্যাদির ব্যবস্থা করতে হয়। অবশেষে সব চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করে ২০২৩ সালের নভেম্বরে হোমটাউন তাদের অ্যাপে টাকা পাঠানোর ব্যবস্থা যোগ করতে সক্ষম হয়।

বর্তমানে সিঙ্গাপুর-বাংলাদেশ ফ্লাইটের ৩৮ শতাংশ বাজার শেয়ার এবং মাসে ৮ মিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স প্রসেসিং করে হোমটাউন। এ জন্য মার্কেটিংয়ের পেছনে কোনো অর্থ ব্যয় হয়নি।