প্রত্যাশা ডেস্ক: ২০২৫ সালের সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন হাঙ্গেরিয়ান লেখক লাস্লো ক্রাসনাহোরকাই। বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) সুইডিশ অ্যাকাডেমি তাকে বিজয়ী হিসেবে ঘোষণা করেছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
লাস্লো ক্রাসনাহোরকাই সম্পর্কে নোবেল কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তিনি এই পুরস্কার পেয়েছেন তার চিত্তাকর্ষক ও দূরদর্শী সৃজনকর্মের জন্য, যা মহাপ্রলয়ের ভয়াবহতার মধ্যেও শিল্পের শক্তিকে পুনর্ব্যক্ত করে।
লেখক ক্রাসনাহোরকাই ১৯৫৪ সালে রোমানিয়ার সীমান্তের কাছে দক্ষিণ-পূর্ব হাঙ্গেরির একটি ছোট শহর গিউলাতে জন্মগ্রহণ করেন। একই রকম প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকা ক্রাসনাহোরকাইয়ের প্রথম উপন্যাস ‘সাটানটাঙ্গো’ (মূল প্রকাশ: ১৯৮৫, ইংরেজি অনুবাদ: ‘Satantango’, ২০১২)-এর পটভূমি। এই উপন্যাসটি হাঙ্গেরিতে এক বিশাল সাহিত্যিক আলোড়ন সৃষ্টি করে এবং এটিই ছিল লেখকের যুগান্তকারী কাজ। উপন্যাসটিতে কমিউনিস্ট ব্যবস্থার পতনের ঠিক আগে হাঙ্গেরির গ্রামাঞ্চলে একটি পরিত্যক্ত সম্মিলিত খামারের দুর্দশাগ্রস্ত বাসিন্দাদের একটি গোষ্ঠীকে শক্তিশালী ব্যঞ্জনার মাধ্যমে চিত্রিত করা হয়েছে। পরিচালক বেলা টারের সহযোগিতায় ১৯৯৪ সালে উপন্যাসটি নিয়ে একটি অত্যন্ত মৌলিক চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হয়।
আমেরিকান সমালোচক সুসান সনট্যাগ ক্রাসনাহোরকাইকে সমসাময়িক সাহিত্যের ‘মহাপ্রলয়ের গুরু’ হিসেবে ভূষিত করেন। লেখকের দ্বিতীয় বই ‘অ্যাজ এলেনাল্লাস মেলানকোলিয়াজা’ (১৯৮৯; ইংরেজি অনুবাদ: ‘The Melancholy of Resistance’, ১৯৯৮) পড়ার পরই তিনি এই সিদ্ধান্তে আসেন। এই উপন্যাসে, কার্পেথিয়ান উপত্যকায় অবস্থিত হাঙ্গেরির একটি ছোট শহরে চিত্রিত একটি ভয়ানক কল্পকাহিনিতে নাটকীয়তা আরও বেড়ে উঠেছে।
উপন্যাস ‘হাবারু এস হাবারু’ (১৯৯৯; ইংরেজি অনুবাদ: War & War, ২০০৬)-এ ক্রাসনাহোরকাই তার মনোযোগ হাঙ্গেরির সীমানার বাইরে সরিয়ে নেন।
গত বছর, ২০২৪ সালে, সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারটি পেয়েছিলেন দক্ষিণ কোরিয়ার খ্যাতিমান লেখক হান ক্যাং।
প্রথা অনুযায়ী অক্টোবরের প্রথম সোমবার চিকিৎসাশাস্ত্রে নোবেল পুরস্কার বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়। সে হিসেবে এবার ৬ অক্টোবর নোবেল পুরস্কার বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করে রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেস। এদিন, চিকিৎসাশাস্ত্র বা ওষুধশাস্ত্রে মেরি ব্রাঙ্কো, ফ্রেড রামসডেল ও শিমন সাকাগুচি যৌথভাবে ‘পেরিফেরাল ইমিউন টলারেন্স’ সংক্রান্ত তাদের যুগান্তকারী আবিষ্কারের জন্য নোবেল প্রাপ্ত হন।
মঙ্গলবার রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্স ম্যাক্রোস্কোপিক কোয়ান্টাম মেকানিক্যাল টানেলিং এবং ইলেকট্রিক সার্কিটে এনার্জি কোয়ান্টাইজেশন গবেষণার জন্য জন ক্লার্ক, মাইকেল ডেভোরেট এবং জন মার্টিনিসকে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানায়।
ধারাবাহিকতা মেনে বুধবার ঘোষণা করা হয় রসায়নে নোবেলজয়ীর নাম। এবার রসায়নে যৌথভাবে নোবেল পেয়েছেন সুসুমু কিতাগাওয়া, রিচার্ড রবসন এবং ওমার এম ইয়াগি। ‘মেটাল অর্গানিক ফ্রেমওয়ার্ক’ ডেভেলপের কারণে তাদের এ বছর রসায়নে নোবেল দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেস।
সুইডিশ বিজ্ঞানী ও ডিনামাইটের উদ্ভাবক আলফ্রেড নোবেলের মৃত্যুর ৫ বছর পর ১৯০১ সাল থেকে প্রতিবছর এই পুরস্কার প্রদান করে রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস। তার নামে ও রেখে যাওয়া অর্থে এই পুরস্কার দেওয়া হয়।
প্রতি বছর আলফ্রেড নোবেলের মৃত্যুর দিবস ডিসেম্বরের ১০ তারিখ বিজয়ীদের হাতে পুরস্কারের অর্থ তুলে দেওয়া হয়। প্রত্যেক বিভাগের বিজয়ীদের একটি স্বর্ণপদক, প্রশংসাপত্রসহ একটি ডিপ্লোমা এবং বর্তমানে ১১ মিলিয়ন সুইডিশ ক্রোনা দেওয়া হয়।
ওআ/আপ্র/০৯/১০/২০২৫