ঢাকা ০৬:০৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

সাহিত্যের আড়ালের করুণ জীবন চিত্র

  • আপডেট সময় : ১১:৩৯:২২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ মে ২০২৩
  • ২৩১ বার পড়া হয়েছে

ফারজানা কাশেমী : জহির রায়হানের একুশের গল্পে তপু কোন এক কাক ডাকা ভোরে ছাত্রাবাস থেকে বের হয় মিছিলের উদ্দেশ্যে। গুলিবিদ্ধ মরদেহে অবসান হয় তপুর জীবনের হিসেব। তারপর থেকে খুব সকালে উঠে তপু শব্দ করে পড়তে বসেনি। অবেলায় হারিয়ে যায় তপুর জীবনের গল্প। জীবনের বেনি সুতোর মালায় বাধা পরলে ও নিমিষেই সেই বাধন ফুরিয়ে যায়। তপুর প্রিয়তমার চোখের শুন্য দৃষ্টি শুধুই হাহাকার ছড়ায়। সঙ্গীহীনতার এক দুর্ভেদ্যতায় জীবন শ্লথ বহমান হয়। তপু বিহীন তার সময় বিপন্ন নিষ্ঠুরতায় আচ্ছন্ন। যে জীবনের হিসেব ভয়াল নিশ্চহ্নতার কঠিনবাস্তবতা।সময়ের সাথে তপু নামের পান্ডিত্য মৌলিক স্বত্তা আর স্বাধিকার আন্দোলনে অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে হারিয়ে যায়। তপু’ রা শুধু হারায় জীবন থেকে, প্রিয়তা থেকে, সুখের আলাপন থেকে। তপু’রা ছেড়ে যায়, হিসেবে সমাদৃত হয় না তাদের জীবন। তপুর জীবন আংশিক। তপুর জীবনের পুনাঙ্গ অধ্যায় শুধুই রুপকথা। শ্রেয়সীর অপেক্ষা তপু’ রা বুঝতে পারে না। তপু ‘রা তার নীলবীথির ছায়া হয়, ছায়া সঙ্গী হবার ক্ষমতা তপুদের থাকে না। দিকহীন পথে তপু’রা নিশ্চহ্ন হয়। অনুভূতির পদচারণায় তপু’রা স্তব্ধ হয় কালের বিবর্তনে।
‘কোথাও কেউ নেই’ জনপ্রিয় কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ এর এক অনবদ্য সৃষ্টি। যেখানে পরিলক্ষিত হয় মুনা নামের নারী দিনের শেষ বেলা বড্ড একা। একাকিত্ব জীবনের এক কঠিন বাস্তবতা। মুনা তার দায়িত্ব বোধে সকল সম্পর্ক কে আগলে রাখতে চেষ্টা করেছিল। মুনার চেষ্টায় কাপন্য আর ত্রুটি বিচ্যুতি ছিল না। হিসেবের খোর খাতায়, আর অদিষ্টের পরিহাসে মুনার জীবন একাকিত্বে অসহায়। মুনা ভালবাসার বাঁধনে মামুন কে বাধতে পারেননি। মামুন কিন্তু সময়ের প্রয়োজনে মুনা কে ছেড়ে যেতে ভাবে নি। গম্ভীর মুখের মুনা আজীবন বেহিসেবী তাই হিসেবের সুবিধার্থে বাস্তববাদী মামুন সচলায়তনে ফিরে যায়। মুনা একাই শুনতায় ঘর বাধে। সম্পর্কের রুপের নিপুণ সুতোয় মুনাকে ছেড়ে যায় বকুল। নিয়তির ডাকে মুনার মামি পারি জমায় অচিনলোকে। বিনা দোষে শাস্তি ভোগ করে মুনার মামা ফিরে আসে তবুও বাস্তবতার নামান্তর সে মুনাকে একা ফেলে চলে যায়। কেউ মুনার সঙ্গী হয় না। দিন শেষে বাকের ভাই ও মুনার পথ যাত্রায় সহযাত্রী হতে পারেনি। প্রলয়ের দেবতা বাকের ভাইকে অন্যত্র নিয়ে যায়। অথচ মুনা কারো ক্ষতি করেনি। প্রকৃতির নিমজ্জিত ঢেউ শুধু মুনাকে বিপন্নতার জনশূন্যতায় সহচর করে।
কেউ হয়তো হারিয়ে যায়। আবার কেউ হেরে যায়। কেউ শত চেষ্টায় সম্পর্ক আকড়ে ধরতে পারে না। কেউ আবার সময়ের নিয়মে নতুন সম্পর্কে রুপরেখায় মেতে উঠে।
লেখক: আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট অব বাংলাদেশ

 

 

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার লার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

সাহিত্যের আড়ালের করুণ জীবন চিত্র

আপডেট সময় : ১১:৩৯:২২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ মে ২০২৩

ফারজানা কাশেমী : জহির রায়হানের একুশের গল্পে তপু কোন এক কাক ডাকা ভোরে ছাত্রাবাস থেকে বের হয় মিছিলের উদ্দেশ্যে। গুলিবিদ্ধ মরদেহে অবসান হয় তপুর জীবনের হিসেব। তারপর থেকে খুব সকালে উঠে তপু শব্দ করে পড়তে বসেনি। অবেলায় হারিয়ে যায় তপুর জীবনের গল্প। জীবনের বেনি সুতোর মালায় বাধা পরলে ও নিমিষেই সেই বাধন ফুরিয়ে যায়। তপুর প্রিয়তমার চোখের শুন্য দৃষ্টি শুধুই হাহাকার ছড়ায়। সঙ্গীহীনতার এক দুর্ভেদ্যতায় জীবন শ্লথ বহমান হয়। তপু বিহীন তার সময় বিপন্ন নিষ্ঠুরতায় আচ্ছন্ন। যে জীবনের হিসেব ভয়াল নিশ্চহ্নতার কঠিনবাস্তবতা।সময়ের সাথে তপু নামের পান্ডিত্য মৌলিক স্বত্তা আর স্বাধিকার আন্দোলনে অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে হারিয়ে যায়। তপু’ রা শুধু হারায় জীবন থেকে, প্রিয়তা থেকে, সুখের আলাপন থেকে। তপু’রা ছেড়ে যায়, হিসেবে সমাদৃত হয় না তাদের জীবন। তপুর জীবন আংশিক। তপুর জীবনের পুনাঙ্গ অধ্যায় শুধুই রুপকথা। শ্রেয়সীর অপেক্ষা তপু’ রা বুঝতে পারে না। তপু ‘রা তার নীলবীথির ছায়া হয়, ছায়া সঙ্গী হবার ক্ষমতা তপুদের থাকে না। দিকহীন পথে তপু’রা নিশ্চহ্ন হয়। অনুভূতির পদচারণায় তপু’রা স্তব্ধ হয় কালের বিবর্তনে।
‘কোথাও কেউ নেই’ জনপ্রিয় কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ এর এক অনবদ্য সৃষ্টি। যেখানে পরিলক্ষিত হয় মুনা নামের নারী দিনের শেষ বেলা বড্ড একা। একাকিত্ব জীবনের এক কঠিন বাস্তবতা। মুনা তার দায়িত্ব বোধে সকল সম্পর্ক কে আগলে রাখতে চেষ্টা করেছিল। মুনার চেষ্টায় কাপন্য আর ত্রুটি বিচ্যুতি ছিল না। হিসেবের খোর খাতায়, আর অদিষ্টের পরিহাসে মুনার জীবন একাকিত্বে অসহায়। মুনা ভালবাসার বাঁধনে মামুন কে বাধতে পারেননি। মামুন কিন্তু সময়ের প্রয়োজনে মুনা কে ছেড়ে যেতে ভাবে নি। গম্ভীর মুখের মুনা আজীবন বেহিসেবী তাই হিসেবের সুবিধার্থে বাস্তববাদী মামুন সচলায়তনে ফিরে যায়। মুনা একাই শুনতায় ঘর বাধে। সম্পর্কের রুপের নিপুণ সুতোয় মুনাকে ছেড়ে যায় বকুল। নিয়তির ডাকে মুনার মামি পারি জমায় অচিনলোকে। বিনা দোষে শাস্তি ভোগ করে মুনার মামা ফিরে আসে তবুও বাস্তবতার নামান্তর সে মুনাকে একা ফেলে চলে যায়। কেউ মুনার সঙ্গী হয় না। দিন শেষে বাকের ভাই ও মুনার পথ যাত্রায় সহযাত্রী হতে পারেনি। প্রলয়ের দেবতা বাকের ভাইকে অন্যত্র নিয়ে যায়। অথচ মুনা কারো ক্ষতি করেনি। প্রকৃতির নিমজ্জিত ঢেউ শুধু মুনাকে বিপন্নতার জনশূন্যতায় সহচর করে।
কেউ হয়তো হারিয়ে যায়। আবার কেউ হেরে যায়। কেউ শত চেষ্টায় সম্পর্ক আকড়ে ধরতে পারে না। কেউ আবার সময়ের নিয়মে নতুন সম্পর্কে রুপরেখায় মেতে উঠে।
লেখক: আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট অব বাংলাদেশ