নিজস্ব প্রতিবেদক : সাবেক রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদকে বিনম্র শ্রদ্ধায় শেষ বিদায় জানাল তার সাবেক সহকর্মী এবং বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ।
গতকাল রোববার সকালে দীর্ঘদিনের কর্মস্থল সুপ্রিম কোর্টের পাশে জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের জানাজা হয়। সুপ্রিমে কোর্টের বিচারক, আইনজীবী আর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পাশাপাশি নব্বইয়ের ছাত্রনেতারাও তাতে অংশ নেন।
নব্বইয়ের দশকে সামরিক শাসন থেকে গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের গণতন্ত্রে ফেরার প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক সমঝোতায় অন্তর্বতীকালীন সরকারের গুরুদায়িত্ব নিয়েছিলেন যে মানুষটি, তাকে বিদায় জানাতে প্রখর রোদ উপেক্ষা করে ঈদগাহ মাঠে কয়েকশ মানুষের সমাবেশ ঘটে। সকাল ১০টার আগে তার জাতীয় পতাকা মোড়া কফিন জাতীয় ঈদগাহে প্যান্ডেলের নিচে অস্থায়ী মঞ্চে এনে রাখা হয়।
জানাজা শেষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের পক্ষে তার সহকারী সামরিক সচিব ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রাজু আহমেদ সাবেক এই রাষ্ট্রপতির কফিনে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এরপর প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীসহ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা সাবেক প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানান। পরে কিছু সময় নিরবে দাঁড়িয়ে থাকেন তারা।
গত শনিবার সকালে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সাবেক রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ। তার বয়স হয়েছিলো ৯২ বছর।
বিমান বাহিনীর একটি হেলিকপ্টারে করে শনিবারই তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় তার গ্রামের বাড়ি নেত্রকোণার কেন্দুয়ার পাইকুরা ইউনিয়নের পেমই গ্রামে। সেখানে বাড়ির প্রাঙ্গণে তার জানাজা হয়। পরে আবার ঢাকায় নিয়ে আসা হয় কফিন। রাতে সিএমএইচের হিমঘরে ও রাখা হয় মরদেহ।
সকাল সাড়ে ১০টায় সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণের পাশে জাতীয় ঈদগাহে হয় আরেক দফা জানাজা। প্রধান বিচারপতি ছাড়াও সাবেক প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, সাবেক ভারপ্রাপ্ত বিচারপতি আবদুল ওহাব মিয়া, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাই কোর্ট বিভাগের বিচারপতি, আইনজীবী এবং সুপ্রিম কোর্টের সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অংশ নেন।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপি, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির পক্ষ থেকেও কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয় সেখানে। আওয়ামী লীগের পক্ষে অ্যাডভোকেট মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, বিএনপির পক্ষে জয়নাল আবেদীন, আহমেদ আজম খান, আমান উল্লাহ আমান, মাহবুব উদ্দিন খোকন, খায়রুল কবির খোকন এসেছিলেন শ্রদ্ধা জানাতে।
এছাড়া নব্বইযের সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের পক্ষে আমান উল্লাহ আমান, ফজলুল হক মিলন, খায়রুল কবির খোকন, নাজিম উদ্দিন আলম, জহির উদ্দিন স্বপন, সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি, আসাদুর রহমান খান পুষ্পস্তবক অর্পন করেন।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম, জাগপাসহ (তাসমিয়া প্রধান) বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকেও সাহাবুদ্দীন আহমদের কফিনে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস কাজল জানাজা শুরুর আগে প্রয়াত সাহাবুদ্দীন আহমদের জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। এরপর বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের জানাজা হয়। তাতে ইমামতি করেন সুপ্রিম কোর্ট জামে মসজিদের খতিব মাওলানা আবু সালেহ মো. সলিমুল্লাহ।
বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের ছোট ছেলে সোহেল আহমদ জানাজার আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তার বাবার জন্য সবার কাছে দোয়া চান। জানাজা শেষে সাবেক রাষ্ট্রপতির কফিন নিয়ে যাওয়া হয় বনানী কবরস্থানে, সেখানেই তাকে সমাহিত করা হয়।
বনানীতে স্ত্রী-কন্যার পাশে চিরনিদ্রায় সাহাবুদ্দীন আহমদ : রোববার দুপুরের দিকে তাকে রাজধানীর বনানী কবরস্থানে স্ত্রী-কন্যার কবরের পাশে দাফন করা হয়। সাহাবুদ্দীন আহমদের স্ত্রী আনোয়ারা আহমদ দীর্ঘদিন বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগে ২০১৮ সালে ৮০ বছর বয়সে মারা যান। তাকে এই কবরস্থানেই দাফন করা হয়েছে। আর তাদের পাঁচ সন্তানের মধ্যে সবার বড় ড. সিতারা পারভীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক ছিলেন। তিনি ২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোতে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। তাকেও এখানেই সমাহিত করা হয়েছে। এবার তাদের পাশেই চিরনিদ্রায় শায়িত হলে সাবেক এই রাষ্ট্রপ্রধান।
সাহাবুদ্দীন আহমদকে বিনম্র শ্রদ্ধায় শেষ বিদায়
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ