প্রত্যাশা ডেস্ক : নিউ ইয়র্কের এক অনুষ্ঠানের মঞ্চে ছুরিকাঘাতে আহত হওয়ার পর লেখক সালমান রুশদির ‘খবর ভালো নয়’ বলে জানিয়েছেন তার এজেন্ট অ্যান্ড্রু উইলি। এক বিবৃতিতে তিনি জানান, এই লেখক বর্তমানে ভেন্টিলেশনে রয়েছেন এবং কথা বলতে পারছেন না। এছাড়া লেখক তার একটি চোখের দৃষ্টি হারাতে পারেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
১৯৮৮ সালে প্রকাশিত ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ বই লেখার কারণে বহু বছর ধরেই মৃত্যুর হুমকির মুখে রয়েছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত লেখক সালমান রুশদি। তার ওপর হামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে হাদি মাতার (২৪) নামে নিউ জার্সির এক বাসিন্দাকে আটক করেছে পুলিশ। খবর বিবিসির।
নিউ ইয়র্ক পুলিশ জানিয়েছে, বুকার পুরস্কার জয়ী এই লেখক চাওটাওকুয়া ইনস্টিটিউটে এক অনুষ্ঠানে কথা বলছিলেন। এক পুরুষকে দৌড়ে মঞ্চে উঠে রুশদি এবং সাক্ষাৎকার গ্রহীতার ওপর হামলা চালাতে দেখেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। পরে অনুষ্ঠানে উপস্থিত অন্যরা এগিয়ে গিয়ে হামলাকারীকে নিবৃত্ত করে।
এজেন্ট অ্যান্ড্রু উইলি বলেন, ‘সালমান রুশদি সম্ভবত এক চোখ হারাতে যাচ্ছেন, হাতের স্নায়ু মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আর তার লিভারে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে এবং সেটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে’।
হামলাকারীর উদ্দেশ্য কিংবা তার বিরুদ্ধে অভিযোগ এখনও নিশ্চিত করেনি পুলিশ। ঘটনাস্থলে পাওয়া একটি ব্যাকপ্যাক এবং ইলেক্ট্রনিক্স পরীক্ষার জন্য সার্চ ওয়ারেন্ট পাওয়ার অপেক্ষা করছে তারা। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সালমান রুশদির ঘাড়ে এবং পেটে অন্তত একবার করে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে। তাকে হেলিকপ্টারে করে পেনসিলভানিয়ার এরির একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়।
মঞ্চে সালমান রুশদির সঙ্গে থাকা সাক্ষাৎকার গ্রহীতা হেনরি রেসি মাথায় সামান্য আঘাত পান। তাকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। নিপীড়নের হুমকির মুখে থাকা নির্বাসিত লেখকদের আশ্রয় দেওয়া একটি অলাভজনক সংস্থার সহ-প্রতিষ্ঠাতা হেনরি রেসি।
রুশদির হামলাকারী হাদি সম্পর্কে যে তথ্য জানা গেল : বুকারজয়ী ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক সালমান রুশদিকে হামলার ঘটনায় ইতিমধ্যে হাদি মাতার নামের এক সন্দেহভাজন তরুণকে আটক করেছে পুলিশ। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সি অঙ্গরাজ্যের বাসিন্দা। বয়স ২৪ বছর। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে হাদি মাতার সম্পর্কে কিছু তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হাদি মাতারের তৎপরতা পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে প্রতিবেদনে বলা হয়, এই তরুণ কট্টরপন্থী শিয়াদের প্রতি সংবেদনশীল। ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ডের (আইআরজিসি) নীতিমালার প্রতিও সহানুভূতিশীল তিনি। আইআরজিসি ও হাদি মাতারের মধ্যে সরাসরি কোনো সংযোগ না থাকলেও তদন্তকারীরা হাদি মাতারের একটি সেলফোনের ম্যাসেজিং অ্যাপে ইরানি কমান্ডার কাসেম সোলাইমানির ছবি খুঁজে পেয়েছেন। ২০২০ সালে হত্যার শিকার হন কাসেম সোলাইমানি। পুলিশের ধারণা, হাদি মাতার একাই হামলা চালিয়েছেন। কর্তৃপক্ষ অবশ্য এখনো বিভিন্ন বিষয়ে তল্লাশি চালানোর অনুমতির অপেক্ষায় আছে। ঘটনাস্থলে একটি ব্যাকপ্যাক শনাক্ত হয়েছে। সেখানে ইলেকট্রনিক ডিভাইসও ছিল।
২০ সেকেন্ডে ১০-১৫ বার আঘাত করা হয় রুশদিকে : হাদি মাতার নিউ জার্সির ফেয়ারভিউ এলাকার বাসিন্দা। তাঁর জাতীয়তা কী, অতীতে তাঁর অপরাধের কোনো রেকর্ড আছে কি না, তাও জানার চেষ্টা করছে কর্তৃপক্ষ। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে শিটোকোয়া ইনস্টিটিউটের মঞ্চে সালমান রুশদির ভাষণ শুরুর আগমুহূর্তে তাঁর ওপর হামলা হয়। মার্কিন একটি বার্তা সংস্থার প্রতিবেদকের বরাতে এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, সালমান রুশদিকে ছুরি দিয়ে ১০ থেকে ১৫ বার আঘাত করা হয়েছে। শিটোকোয়া ইনস্টিটিউটের মঞ্চে সালমান রুশদির ভাষণ শুরুর আগমুহূর্তে তাঁর ওপর হামলা হয়। অনুষ্ঠানস্থলে তখন উপস্থিত ছিলেন প্রায় আড়াই হাজার দর্শক। হামলার সময় তাৎক্ষণিকভাবে অনেকে ঠিক কী ঘটছে, তা বুঝতে পারছিলেন না। সালমান রুশদি মেঝেতে গড়িয়ে পড়ার পর দর্শকদের কেউ কেউ তাঁর কাছে ছুটে গেছেন। ঘটনার সময় দর্শকসারিতে ছিলেন রাব্বি চার্লস সাভেনর নামের এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, ‘ওই ব্যক্তি (হামলাকারী) দৌড়ে মঞ্চে উঠে যান এবং রুশদিকে আঘাত করতে শুরু করেন। মার্কিন একটি বার্তা সংস্থার প্রতিবেদকের বরাতে এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, সালমান রুশদিকে ১০ থেকে ১৫ বার আঘাত করা হয়েছে।
একটি সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সাভেনর বলেন, ‘প্রথমে ভাবছিলাম কী চলছে? এরপর কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে পুরোপুরি স্পষ্ট হয় যে তাঁকে পেটানো হচ্ছে।’ সাভেনরের মতে, প্রায় ২০ সেকেন্ড ধরে হামলা চলেছে। কাথলিন জোন্স নামের আরেক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, হামলাকারী কালো রঙের পোশাক পরা ছিলেন। তাঁর মুখে কালো মুখোশ ছিল। ঘটনার সময় দর্শকসারিতে ছিলেন কাথলিন। তিনি বলেন, ‘আমরা ভাবছিলাম এটি হয়তো অভিনয়। এ লেখককে ঘিরে যে এখনো অনেক বিতর্ক আছে, সেটাই হয়তো দেখানোর চেষ্টা চলছে। তবে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই প্রমাণিত হয়, যা ভাবছি তা ঠিক নয়।’
একটি মার্কিন বার্তা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়, হামলার কিছুক্ষণের মধ্যেই সালমান রুশদি মেঝেতে গড়িয়ে পড়েন। হামলাকারী তখন থেমে যান। কয়েকজন লোক তখন সালমান রুশদিকে ঘিরে ফেলেন এবং তাঁর পা ওপরের দিকে তুলে ধরেন। ধারণা করা হচ্ছে, রুশদির বুকে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখার চেষ্টায় তাঁরা এমনটা করেছেন।
ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক সালমান রুশদি ২০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন। ১৯৮১ সালে ‘মিডনাইট’স চিলড্রেন’ নামক বইয়ের জন্য বুকার পুরস্কার জেতেন তিনি। তবে ১৯৮৮ সালে তাঁর চতুর্থ বই ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’-এর জন্য তাঁকে ৯ বছর লুকিয়ে থাকতে হয়েছিল। যুক্তরাজ্যে বসবাসকালে বেশির ভাগ সময় তাঁকে সরকারের সুরক্ষা নিয়ে থাকতে হয়েছে। ‘স্যাটানিক ভার্সেস’ উপন্যাসে ইসলাম ধর্মকে অবমাননা করা হয়েছে বলে মনে করেন মুসলিমরা। এটি প্রকাশের পর থেকে সালমান রুশদি হত্যার হুমকি পেয়ে আসছিলেন। বইটি প্রকাশের এক বছর পর ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লা আলী খামেনি সালমান রুশদির মৃত্যুদ-ের ফতোয়া জারি করেন। সেই সঙ্গে তাঁর মাথার দাম হিসেবে ৩ মিলিয়ন (৩০ লাখ) ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেন। সাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ২০০৭ সালে সালমান রুশদিকে নাইট উপাধি দেন ব্রিটিশ রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ।
সালমান রুশদিকে ছুরিকাঘাত, অবস্থা সংকটাপন্ন
ট্যাগস :
সালমান রুশদিকে ছুরিকাঘাত
জনপ্রিয় সংবাদ