ঢাকা ০২:২৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫

সার ডিলারদের কাছে জিম্মি কৃষক

  • আপডেট সময় : ০১:০৯:১৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২২
  • ১৩০ বার পড়া হয়েছে

চুয়াডাঙ্গা সংবাদদাতা : চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে সার বিক্রেতাদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। বিসিআইসি, বিএডিসি এবং খুচরা সার ডিলাররা সরকার নির্ধারিত দামের তোয়াক্কা না করে বেশি দামে সার বিক্রি করছেন। ন্যায্যমূল্যে সার না পেয়ে প্রতিনিয়ত বেশি টাকা গুনতে হচ্ছে কৃষকদের। উপজেলা কৃষি অফিসে অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার মিলছে না বলে দাবি কৃষকদের। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, খুচরা সার ব্যবসায়ী মো. আয়নাল হক ১১০০ টাকা মূল্যের প্রতিবস্তা ইউরিয়া সার ১২৫০ টাকা দরে এবং ৭৫০ টাকা মূল্যের প্রতিবস্তা পটাশ সার ১৫০০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। এছাড়া একই বাজারের খুচরা সার ব্যবসায়ী কলম হোসেন, ফারুক হোসেন, ইমরান হোসেন এবং তালেব হোসেন ১১০০ টাকা মূল্যের প্রতিবস্তা ইউরিয়া ১৩৫০ টাকা দরে এবং ৭৫০ টাকা মূল্যের প্রতিবস্তা পটাশ সার ১৫০০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। মিনাজপুর বাজার এবং বাড়ান্দি বাজার ঘুরে দেখা গেছে অধিকাংশ সার ব্যবসায়ী সরকারের বেধে দেওয়া মূল্যে সার বিক্রি করছেন না। কোনো অপরিচিত মানুষ সারের দোকানে ইউরিয়া এবং পটাশ সার কিনতে গেলে তাকে বলা হচ্ছে সার নেই। পরক্ষণেই পরিচিত কৃষক গেলে তাদের কাছে অধিক মূল্যে সার বিক্রি করা হচ্ছে। এদিকে বিসিআইসি (বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন) অনুমোদিত জীবননগর উপজেলার আন্দুলবাড়ীয়া ইউনিয়নের জন্য ট্যাগ করা হক ট্রেডার্সে সন্ধ্যা ৬টার সময় গিয়ে দোকান বন্ধ পাওয়া গেছে। ওই সময় সার কিনতে আসা দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা কৃষকরা জানান, অধিকাংশ সময় দোকান বন্ধ থাকে। কৃষকদের অভিযোগ, হক ট্রেডার্স বেশিরভাগ সার রাতের আঁধারে অধিক মূল্যে খুচরা দোকানদারদের কাছে বিক্রি করে দেয়। কৃষকরা যাতে সময়মতো জমিতে সার দিতে পারেন সেটা নিশ্চিত করতে সরকারের বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) এবং বাংলাদেশ কেমিকেল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন (বিসিআইসি) সারাদেশে ডিলার নিয়োগের মাধ্যমে কৃষকদের কাছে সার বিপণনের কাজটি করে থাকে। সরকারি নিয়ম মোতাবেক প্রতিটি ইউনিয়নে একজন করে ডিলার নিয়োগ দেওয়া আছে। ওইসব ডিলারের স্ব স্ব ইউনিয়নেই ব্যবসা পরিচালনা করার শর্তে তাদের ডিলারশিপ দেওয়া হয়েছে। অথচ পৌরসভার মধ্যেই অধিকাংশ সার ব্যবাসয়ীদের গোডাউন। জানা গেছে, জীবননগর উপজেলা শহরের দত্তনগর সড়কের দু’পাশে একাধিক ইউনিয়নের সারের ডিলার রয়েছে। অথচ ওই ডিলারদের ইউনিয়নে গোডাউন রেখে প্রান্তিক কৃষকদের কাছে সার বিক্রির নিয়ম রয়েছে। কৃষকদের দাবি, ডিলাররা অতিরিক্ত অর্থ উপার্জনে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সারের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে কৃষকদের বেশি দামে সার কিনতে বাধ্য করছে। সার ডিলারদের ক্যাশ মেমোর মাধ্যমে চাষিদের কাছে সার বিক্রির নিয়ম থাকলেও বেশি দামে বিক্রির কারণে তা করছেন না ডিলাররা। এছাড়া বিএডিসি ও বিসিআইসির ডিলারদের পাশাপাশি খুচরা সার ব্যবসায়ীরা অধিক দামে সার বিক্রি করলেও কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, কৃষকদের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ নেই। তারা দোকানের বিক্রি রশিদ বা প্রমাণপত্র চান।
অভিযোগ রয়েছে, সার ডিলারদের কাছে ক্রেতাদের কেউ রসিদ চাইলে তাদেরকে সরকার নির্ধারিত দাম উল্লেখ করেই রশিদ দেওয়া হচ্ছে। কেউ প্রতিবাদ করলে তার কাছে সার বিক্রি করছেন না তারা। বলছেন, বরাদ্দের সার শেষ, এখন যা আছে বাইরে থেকে অতিরিক্ত দামে কিনতে হয়েছে। রায়পুর ইউনিয়নের পশ্চিম বাড়ান্দি গ্রামের কৃষক সুফি আলম বলেন, আমরা শহরের গোডাউন থেকে অধিক দামে সার কিনতে বাধ্য হচ্ছি। একই কথা জানান আন্দুলবাড়ীয়া ইউনিয়নের অনন্তপুর গ্রামের কৃষক গোলাম রহমান। তিনি বলেন, আমরা প্রতি কেজি ইউরিয়া ২৭ টাকা এবং পটাশ ৩০ টাকা দরে কিনছি। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি আমন মৌসুমে জীবননগর উপজেলায় ৬ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ করা হয়েছে। আর এর বিপরীতে সেপ্টেম্বর মাসে টিএসপি সার ২০০ মেট্রিক টন, পটাশ সার ২২৫ মেট্রিক টন, ডিএপি ৫১১ মেট্রিক টন এবং ইউরিয়া সার ৯২০ মেট্রিক টন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন আক্তার বলেন, বেশি দামে সার বিক্রি করার অভিযোগ পেলে ওই সার ব্যবসায়ীর লাইসেন্স বাতিল করা হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, সার ব্যবসায়ীরা যদি কৃষকদের জিম্মি করে বেশি দামে সার বিক্রি করে তাহলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অধিক মূল্যে সার বিক্রিকারীর বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতে জেল-জরিমানা করা হবে। কোনোভাবেই কৃষিখাতকে বাধাগ্রস্ত করা যাবে না।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

সার ডিলারদের কাছে জিম্মি কৃষক

আপডেট সময় : ০১:০৯:১৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২২

চুয়াডাঙ্গা সংবাদদাতা : চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে সার বিক্রেতাদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। বিসিআইসি, বিএডিসি এবং খুচরা সার ডিলাররা সরকার নির্ধারিত দামের তোয়াক্কা না করে বেশি দামে সার বিক্রি করছেন। ন্যায্যমূল্যে সার না পেয়ে প্রতিনিয়ত বেশি টাকা গুনতে হচ্ছে কৃষকদের। উপজেলা কৃষি অফিসে অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার মিলছে না বলে দাবি কৃষকদের। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, খুচরা সার ব্যবসায়ী মো. আয়নাল হক ১১০০ টাকা মূল্যের প্রতিবস্তা ইউরিয়া সার ১২৫০ টাকা দরে এবং ৭৫০ টাকা মূল্যের প্রতিবস্তা পটাশ সার ১৫০০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। এছাড়া একই বাজারের খুচরা সার ব্যবসায়ী কলম হোসেন, ফারুক হোসেন, ইমরান হোসেন এবং তালেব হোসেন ১১০০ টাকা মূল্যের প্রতিবস্তা ইউরিয়া ১৩৫০ টাকা দরে এবং ৭৫০ টাকা মূল্যের প্রতিবস্তা পটাশ সার ১৫০০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। মিনাজপুর বাজার এবং বাড়ান্দি বাজার ঘুরে দেখা গেছে অধিকাংশ সার ব্যবসায়ী সরকারের বেধে দেওয়া মূল্যে সার বিক্রি করছেন না। কোনো অপরিচিত মানুষ সারের দোকানে ইউরিয়া এবং পটাশ সার কিনতে গেলে তাকে বলা হচ্ছে সার নেই। পরক্ষণেই পরিচিত কৃষক গেলে তাদের কাছে অধিক মূল্যে সার বিক্রি করা হচ্ছে। এদিকে বিসিআইসি (বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন) অনুমোদিত জীবননগর উপজেলার আন্দুলবাড়ীয়া ইউনিয়নের জন্য ট্যাগ করা হক ট্রেডার্সে সন্ধ্যা ৬টার সময় গিয়ে দোকান বন্ধ পাওয়া গেছে। ওই সময় সার কিনতে আসা দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা কৃষকরা জানান, অধিকাংশ সময় দোকান বন্ধ থাকে। কৃষকদের অভিযোগ, হক ট্রেডার্স বেশিরভাগ সার রাতের আঁধারে অধিক মূল্যে খুচরা দোকানদারদের কাছে বিক্রি করে দেয়। কৃষকরা যাতে সময়মতো জমিতে সার দিতে পারেন সেটা নিশ্চিত করতে সরকারের বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) এবং বাংলাদেশ কেমিকেল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন (বিসিআইসি) সারাদেশে ডিলার নিয়োগের মাধ্যমে কৃষকদের কাছে সার বিপণনের কাজটি করে থাকে। সরকারি নিয়ম মোতাবেক প্রতিটি ইউনিয়নে একজন করে ডিলার নিয়োগ দেওয়া আছে। ওইসব ডিলারের স্ব স্ব ইউনিয়নেই ব্যবসা পরিচালনা করার শর্তে তাদের ডিলারশিপ দেওয়া হয়েছে। অথচ পৌরসভার মধ্যেই অধিকাংশ সার ব্যবাসয়ীদের গোডাউন। জানা গেছে, জীবননগর উপজেলা শহরের দত্তনগর সড়কের দু’পাশে একাধিক ইউনিয়নের সারের ডিলার রয়েছে। অথচ ওই ডিলারদের ইউনিয়নে গোডাউন রেখে প্রান্তিক কৃষকদের কাছে সার বিক্রির নিয়ম রয়েছে। কৃষকদের দাবি, ডিলাররা অতিরিক্ত অর্থ উপার্জনে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সারের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে কৃষকদের বেশি দামে সার কিনতে বাধ্য করছে। সার ডিলারদের ক্যাশ মেমোর মাধ্যমে চাষিদের কাছে সার বিক্রির নিয়ম থাকলেও বেশি দামে বিক্রির কারণে তা করছেন না ডিলাররা। এছাড়া বিএডিসি ও বিসিআইসির ডিলারদের পাশাপাশি খুচরা সার ব্যবসায়ীরা অধিক দামে সার বিক্রি করলেও কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, কৃষকদের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ নেই। তারা দোকানের বিক্রি রশিদ বা প্রমাণপত্র চান।
অভিযোগ রয়েছে, সার ডিলারদের কাছে ক্রেতাদের কেউ রসিদ চাইলে তাদেরকে সরকার নির্ধারিত দাম উল্লেখ করেই রশিদ দেওয়া হচ্ছে। কেউ প্রতিবাদ করলে তার কাছে সার বিক্রি করছেন না তারা। বলছেন, বরাদ্দের সার শেষ, এখন যা আছে বাইরে থেকে অতিরিক্ত দামে কিনতে হয়েছে। রায়পুর ইউনিয়নের পশ্চিম বাড়ান্দি গ্রামের কৃষক সুফি আলম বলেন, আমরা শহরের গোডাউন থেকে অধিক দামে সার কিনতে বাধ্য হচ্ছি। একই কথা জানান আন্দুলবাড়ীয়া ইউনিয়নের অনন্তপুর গ্রামের কৃষক গোলাম রহমান। তিনি বলেন, আমরা প্রতি কেজি ইউরিয়া ২৭ টাকা এবং পটাশ ৩০ টাকা দরে কিনছি। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি আমন মৌসুমে জীবননগর উপজেলায় ৬ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ করা হয়েছে। আর এর বিপরীতে সেপ্টেম্বর মাসে টিএসপি সার ২০০ মেট্রিক টন, পটাশ সার ২২৫ মেট্রিক টন, ডিএপি ৫১১ মেট্রিক টন এবং ইউরিয়া সার ৯২০ মেট্রিক টন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন আক্তার বলেন, বেশি দামে সার বিক্রি করার অভিযোগ পেলে ওই সার ব্যবসায়ীর লাইসেন্স বাতিল করা হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, সার ব্যবসায়ীরা যদি কৃষকদের জিম্মি করে বেশি দামে সার বিক্রি করে তাহলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অধিক মূল্যে সার বিক্রিকারীর বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতে জেল-জরিমানা করা হবে। কোনোভাবেই কৃষিখাতকে বাধাগ্রস্ত করা যাবে না।