ঢাকা ০৮:৫৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ০৩ নভেম্বর ২০২৫

সার কারখানা বন্ধ কার স্বার্থে?

  • আপডেট সময় : ০৮:১০:৪৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ নভেম্বর ২০২৫
  • ২৩ বার পড়া হয়েছে

ছবি সংগৃহীত

তারেক অপু

এখন চলছে রবি মৌসুম। আলু, গম, ডাল, তেল বীজ এবং শীতকালীন সবজি চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। কিন্তু সার সঙ্কট তাদের পিছু ছাড়ছে না। সারের জন্য তারা হাহাকার করছেন। ঠিক এই সময় সার কারখানায় উৎপাদন বন্ধ। বিষয়টি ভাবতেই মাথা ভন ভন করে। এক দিকে সার সঙ্কট অন্যদিকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বসিয়ে বসিয়ে বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে হচ্ছে। এতে রাষ্ট্রের বিপুল আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে।

বসে বসে বেতন-ভাতা নেওয়াকে ভালোভাবে দেখছেন না কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও। এ কারণে তারা উৎপাদনে যেতে চান। শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের উদ্যোগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ সার কারখানার সামনে বিক্ষোভ-সমাবেশ করা হয়েছে।

আশুগঞ্জ সার কারখানায় দিনে অন্তত ১ হাজার ১৫০ টন ইউরিয়া উৎপাদনে সক্ষম। এর মূল্য সাড়ে চার কোটি টাকার মতো। এ জন্য প্রতিদিন অন্তত ৪ কোটি ৮০ লাখ ঘনফুট গ্যাস প্রয়োজন। কিন্তু গ্যাস সঙ্কটের অজুহাতে প্রায়ই উৎপাদন বন্ধ থাকছে। গত বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত গ্যাস সরবরাহ করা হয়নি। পরে শ্রমিকরা আন্দোলন শুরু করেন। আন্দোলনের মুখে গত ১৫ নভেম্বর গ্যাস সরবরাহ শুরু করে বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড। ২৩ জানুয়ারি সার উৎপাদন শুরু হয়। ৩৮ দিন পর ১ মার্চ ফের গ্যাস সরবরাহ বন্ধ। একই সঙ্গে বন্ধ হয়ে যায় ইউরিয়া উৎপাদন।

শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি বজলুর রশিদের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন সার কারখানার উপমহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) তাজুল ইসলাম ভূঁইয়া; শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আবু কাউসার; বাংলাদেশে কেমিক্যাল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক হারুনুর রশিদ; সার কারখানা শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক সাদী মো. তানভীর রহমান প্রমুখ।

শ্রমিক নেতাদের ভাষ্য- ‘গুণগত মানসম্পন্ন হওয়ায় আশুগঞ্জ সার কারখানার ইউরিয়ার চাহিদা বেশি। কারখানাটি চালু রাখতে পারলেই সরকার লাভবান হবে। কিন্তু একটি মহল বিদেশ থেকে সার আমদানির মাধ্যমে কমিশন-বাণিজ্য করতে বছরের বেশির ভাগ সময় আশুগঞ্জ সার কারখানায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখে। এতে কারখানাটি দিন দিন অলাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।’

শুধু আশুগঞ্জ সার কারখানা নয়, গ্যাস সংকটে ৬ মাস ১০ দিন বন্ধ থাকার পর ২৯ অক্টোবর উৎপাদনে ফেরার কথা ছিল চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেডের (সিইউএফএল)। তবে গত গতকাল এটা উৎপাদনে ফিরেছে কি না, তা জানা যায়নি। গ্যাস সরবরাহ বন্ধের কারণে চলতি বছরের ১১ এপ্রিল কারখানাটির উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। এখানেই শেষ নয়, গ্যাস সংকটে প্রায় ২১ মাস ধরে উৎপাদন বন্ধ জামালপুরের সরিষাবাড়ীর তারাকান্দিতে অবস্থিত ইউরিয়া উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান যমুনা সার কারখানা। প্রতিদিন লোকসান হচ্ছে সাড়ে ৩ কোটি টাকা। নষ্ট হচ্ছে মূল্যবান যন্ত্রাংশ।

দেশে কারখানা বন্ধ থাকলেও সার আমদানি করা হচ্ছে। গত ২৮ অক্টোবর ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, রাশিয়া, মরক্কো ও কাফকো থেকে দুই লাখ ৫ হাজার টন সার আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এতে ব্যয় হবে ১ হাজার ১৭৮ কোটি ৭৭ লাখ ৪২ হাজার ৬০ টাকা। এর মধ্যে ১ লাখ ১০ হাজার টন ইউরিয়া, ৬০ হাজার টন টিএসপি এবং ৩৫ হাজার টন এমওপি সার রয়েছে। এ ছাড়া ১৯৯ কোটি ২০ লাখ ৬০ হাজার টাকায় ২০ হাজার টন ফসফরিক এসিড আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

শিল্প মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাতের ফার্টিগ্লোব ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেড থেকে প্রথম লটের ৪০ হাজার টন বান্ধ গ্রানুলার ইউরিয়া সার আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকার। আমিরাত থেকে এ সার আমদানিতে ব্যয় হবে ১৯২ কোটি ০৮ লাখ ৪৭ হাজার ৬৮০ টাকা। প্রতি টন সারের দাম পড়বে ৩৯২ দশমিক ৩৩ মার্কিন ডলার।

দেশের কৃষি খাতে ইউরিয়া, টিএসপি, ডিএপি এবং এমওপি- এই চার ধরনের সারের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। সরবরাহ স্বাভাবিক না থাকলে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে উৎপাদনে। দেশে ইউরিয়া সারের চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন সক্ষমতা থাকলেও আমদানির ওপরই নির্ভর করতে হচ্ছে। এতে একদিকে সরকারকে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করতে হচ্ছে, অন্যদিকে ভর্তুকিও দিতে হচ্ছে। ইউরিয়ার চাহিদা অনুযায়ী স্থানীয়ভাবে উৎপাদনের পুরো সক্ষমতা থাকলেও সেটা কাজে লাগানো যাচ্ছে না শুধু গ্যাস সংকটের কারণে। এই সঙ্কট থেকে কীভাবে বের হওয়া যায়Ñ সেটা নিয়ে ভাবতে হবে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বলছে, দেশে এক বছরের ব্যবধানে সার আমদানি বেড়েছে ১৯ শতাংশ। ২০২৪ সালে ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি ও ডিএপি মিলিয়ে ৪৭ লাখ টন সার আমদানি হয়েছে। এ পরিমাণ সারের কাস্টমস শুল্কায়িত মূল্য ২৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১৬ লাখ ২৩ হাজার টন ইউরিয়া আমদানিতেই ব্যয় হয়েছে ৭ হাজার ১৬৯ কোটি টাকা। এছাড়া ৩ হাজার ১৫৫ কোটি টাকায় ৫ লাখ ৬৯ হাজার টন টিএসপি, ৩ হাজার ৯৯৩ কোটি টাকায় ১০ লাখ ২৮ হাজার টন এমওপি এবং ১০ হাজার ৩৭৩ কোটি টাকায় ১৪ লাখ ২৭ হাজার টন ডিএপি সার আমদানি করা হয়েছে। এর আগে ২০২৩ সালে ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি ও ডিএপি মিলিয়ে মোট ৩৮ লাখ টন সার আমদানি করা হয়। এ পরিমাণ সারের কাস্টমস শুল্কায়িত মূল্য ২৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১১ লাখ ৯৭ হাজার টন ইউরিয়া আমদানিতে ব্যয় হয়েছে ৬ হাজার ৫৩২ কোটি টাকা। এছাড়া ২ হাজার ৫৬৯ কোটি টাকায় ৪ লাখ ২০ হাজার টন টিএসপি, ৬ হাজার ৫০২ কোটি টাকায় ১১ লাখ টন এমওপি এবং ৭ হাজার ৮০৩ কোটি টাকায় ১০ লাখ ৬২ হাজার টন ডিএপি সার আমদানি করা হয়।

সার আমদানিতে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি) ও বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি)। এর মধ্যে ইউরিয়া সারের পুরোটাই আমদানি হয় বিসিআইসির মাধ্যমে। সরকারি প্রতিষ্ঠান দুটি চাইলে বছরের যেকোনো সময় সার আমদানি করতে পারে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে বছরের একটা নির্দিষ্ট সময়ে দরপত্রে অংশগ্রহণ করতে হয়। নির্বাচিত আমদানিকারক বিশ্ববাজার থেকে সার আমদানি করেন। তবে বিক্রি করতে হয় সরকার নির্ধারিত মূল্যে। এ ক্ষেত্রে বাড়তি খরচ ভর্তুকি হিসেবে দেয় সরকার।

লেখক: সাংবাদিক
(মতামত লেখকের সম্পূর্ণ নিজস্ব)

আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

সার কারখানা বন্ধ কার স্বার্থে?

আপডেট সময় : ০৮:১০:৪৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ নভেম্বর ২০২৫

তারেক অপু

এখন চলছে রবি মৌসুম। আলু, গম, ডাল, তেল বীজ এবং শীতকালীন সবজি চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। কিন্তু সার সঙ্কট তাদের পিছু ছাড়ছে না। সারের জন্য তারা হাহাকার করছেন। ঠিক এই সময় সার কারখানায় উৎপাদন বন্ধ। বিষয়টি ভাবতেই মাথা ভন ভন করে। এক দিকে সার সঙ্কট অন্যদিকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বসিয়ে বসিয়ে বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে হচ্ছে। এতে রাষ্ট্রের বিপুল আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে।

বসে বসে বেতন-ভাতা নেওয়াকে ভালোভাবে দেখছেন না কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও। এ কারণে তারা উৎপাদনে যেতে চান। শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের উদ্যোগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ সার কারখানার সামনে বিক্ষোভ-সমাবেশ করা হয়েছে।

আশুগঞ্জ সার কারখানায় দিনে অন্তত ১ হাজার ১৫০ টন ইউরিয়া উৎপাদনে সক্ষম। এর মূল্য সাড়ে চার কোটি টাকার মতো। এ জন্য প্রতিদিন অন্তত ৪ কোটি ৮০ লাখ ঘনফুট গ্যাস প্রয়োজন। কিন্তু গ্যাস সঙ্কটের অজুহাতে প্রায়ই উৎপাদন বন্ধ থাকছে। গত বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত গ্যাস সরবরাহ করা হয়নি। পরে শ্রমিকরা আন্দোলন শুরু করেন। আন্দোলনের মুখে গত ১৫ নভেম্বর গ্যাস সরবরাহ শুরু করে বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড। ২৩ জানুয়ারি সার উৎপাদন শুরু হয়। ৩৮ দিন পর ১ মার্চ ফের গ্যাস সরবরাহ বন্ধ। একই সঙ্গে বন্ধ হয়ে যায় ইউরিয়া উৎপাদন।

শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি বজলুর রশিদের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন সার কারখানার উপমহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) তাজুল ইসলাম ভূঁইয়া; শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আবু কাউসার; বাংলাদেশে কেমিক্যাল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক হারুনুর রশিদ; সার কারখানা শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক সাদী মো. তানভীর রহমান প্রমুখ।

শ্রমিক নেতাদের ভাষ্য- ‘গুণগত মানসম্পন্ন হওয়ায় আশুগঞ্জ সার কারখানার ইউরিয়ার চাহিদা বেশি। কারখানাটি চালু রাখতে পারলেই সরকার লাভবান হবে। কিন্তু একটি মহল বিদেশ থেকে সার আমদানির মাধ্যমে কমিশন-বাণিজ্য করতে বছরের বেশির ভাগ সময় আশুগঞ্জ সার কারখানায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখে। এতে কারখানাটি দিন দিন অলাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।’

শুধু আশুগঞ্জ সার কারখানা নয়, গ্যাস সংকটে ৬ মাস ১০ দিন বন্ধ থাকার পর ২৯ অক্টোবর উৎপাদনে ফেরার কথা ছিল চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেডের (সিইউএফএল)। তবে গত গতকাল এটা উৎপাদনে ফিরেছে কি না, তা জানা যায়নি। গ্যাস সরবরাহ বন্ধের কারণে চলতি বছরের ১১ এপ্রিল কারখানাটির উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। এখানেই শেষ নয়, গ্যাস সংকটে প্রায় ২১ মাস ধরে উৎপাদন বন্ধ জামালপুরের সরিষাবাড়ীর তারাকান্দিতে অবস্থিত ইউরিয়া উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান যমুনা সার কারখানা। প্রতিদিন লোকসান হচ্ছে সাড়ে ৩ কোটি টাকা। নষ্ট হচ্ছে মূল্যবান যন্ত্রাংশ।

দেশে কারখানা বন্ধ থাকলেও সার আমদানি করা হচ্ছে। গত ২৮ অক্টোবর ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, রাশিয়া, মরক্কো ও কাফকো থেকে দুই লাখ ৫ হাজার টন সার আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এতে ব্যয় হবে ১ হাজার ১৭৮ কোটি ৭৭ লাখ ৪২ হাজার ৬০ টাকা। এর মধ্যে ১ লাখ ১০ হাজার টন ইউরিয়া, ৬০ হাজার টন টিএসপি এবং ৩৫ হাজার টন এমওপি সার রয়েছে। এ ছাড়া ১৯৯ কোটি ২০ লাখ ৬০ হাজার টাকায় ২০ হাজার টন ফসফরিক এসিড আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

শিল্প মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাতের ফার্টিগ্লোব ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেড থেকে প্রথম লটের ৪০ হাজার টন বান্ধ গ্রানুলার ইউরিয়া সার আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকার। আমিরাত থেকে এ সার আমদানিতে ব্যয় হবে ১৯২ কোটি ০৮ লাখ ৪৭ হাজার ৬৮০ টাকা। প্রতি টন সারের দাম পড়বে ৩৯২ দশমিক ৩৩ মার্কিন ডলার।

দেশের কৃষি খাতে ইউরিয়া, টিএসপি, ডিএপি এবং এমওপি- এই চার ধরনের সারের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। সরবরাহ স্বাভাবিক না থাকলে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে উৎপাদনে। দেশে ইউরিয়া সারের চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন সক্ষমতা থাকলেও আমদানির ওপরই নির্ভর করতে হচ্ছে। এতে একদিকে সরকারকে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করতে হচ্ছে, অন্যদিকে ভর্তুকিও দিতে হচ্ছে। ইউরিয়ার চাহিদা অনুযায়ী স্থানীয়ভাবে উৎপাদনের পুরো সক্ষমতা থাকলেও সেটা কাজে লাগানো যাচ্ছে না শুধু গ্যাস সংকটের কারণে। এই সঙ্কট থেকে কীভাবে বের হওয়া যায়Ñ সেটা নিয়ে ভাবতে হবে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বলছে, দেশে এক বছরের ব্যবধানে সার আমদানি বেড়েছে ১৯ শতাংশ। ২০২৪ সালে ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি ও ডিএপি মিলিয়ে ৪৭ লাখ টন সার আমদানি হয়েছে। এ পরিমাণ সারের কাস্টমস শুল্কায়িত মূল্য ২৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১৬ লাখ ২৩ হাজার টন ইউরিয়া আমদানিতেই ব্যয় হয়েছে ৭ হাজার ১৬৯ কোটি টাকা। এছাড়া ৩ হাজার ১৫৫ কোটি টাকায় ৫ লাখ ৬৯ হাজার টন টিএসপি, ৩ হাজার ৯৯৩ কোটি টাকায় ১০ লাখ ২৮ হাজার টন এমওপি এবং ১০ হাজার ৩৭৩ কোটি টাকায় ১৪ লাখ ২৭ হাজার টন ডিএপি সার আমদানি করা হয়েছে। এর আগে ২০২৩ সালে ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি ও ডিএপি মিলিয়ে মোট ৩৮ লাখ টন সার আমদানি করা হয়। এ পরিমাণ সারের কাস্টমস শুল্কায়িত মূল্য ২৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১১ লাখ ৯৭ হাজার টন ইউরিয়া আমদানিতে ব্যয় হয়েছে ৬ হাজার ৫৩২ কোটি টাকা। এছাড়া ২ হাজার ৫৬৯ কোটি টাকায় ৪ লাখ ২০ হাজার টন টিএসপি, ৬ হাজার ৫০২ কোটি টাকায় ১১ লাখ টন এমওপি এবং ৭ হাজার ৮০৩ কোটি টাকায় ১০ লাখ ৬২ হাজার টন ডিএপি সার আমদানি করা হয়।

সার আমদানিতে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি) ও বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি)। এর মধ্যে ইউরিয়া সারের পুরোটাই আমদানি হয় বিসিআইসির মাধ্যমে। সরকারি প্রতিষ্ঠান দুটি চাইলে বছরের যেকোনো সময় সার আমদানি করতে পারে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে বছরের একটা নির্দিষ্ট সময়ে দরপত্রে অংশগ্রহণ করতে হয়। নির্বাচিত আমদানিকারক বিশ্ববাজার থেকে সার আমদানি করেন। তবে বিক্রি করতে হয় সরকার নির্ধারিত মূল্যে। এ ক্ষেত্রে বাড়তি খরচ ভর্তুকি হিসেবে দেয় সরকার।

লেখক: সাংবাদিক
(মতামত লেখকের সম্পূর্ণ নিজস্ব)

আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ