নিজস্ব প্রতিবেদক : ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারা দেশকে বিকলাঙ্গ একটি রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর সাদেক হোসেন খোকা মাঠ নারিন্দায় আমরা বিএনপি পরিবারের উদ্যোগে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে চক্ষু ক্ষতিগ্রস্তদের এবং নিম্নবিত্ত মানুষের জন্য বিনামূল্যে চক্ষু সেবা এবং ডাক্তারদের সমন্বয়ে বিনামূল্যে ঔষধ বিতরণ ও চক্ষু সেবা ক্যাম্পের উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই মন্তব্য করেন। রিজভী বলেন, ‘শেখ হাসিনা এমন বন্য আইন এমন শাসন ব্যবস্থা কায়েম করেছিল। তার শাসনকালে একজন মানুষ আরেকজন মানুষকে দেখলে ভয় পেত। একজন বন্ধু আরেকজন বন্ধুকে দেখলে ভয় পেত। যুবলীগ-ছাত্রলীগ ছিল মূর্তিমান আতঙ্ক। তারা যেদিক দিয়ে হেঁটে যেত মানুষ সেদিক দিয়ে যেতে ভয় পেত। মানুষ ফিসফিস করে কথা বলতো, নীরবে কথা বলতো। ভাবতো, আমাদের কথা যদি ছাত্রলীগ-যুবলীগ জেনে যায়, তাহলে আমাদের বাড়িঘরে আক্রমণ করবে অথবা পুলিশ-র্যা ব এসে তাকে তুলে নিয়ে চিরদিনের জন্য নিরুদ্দেশ করে দেবে।’ তিনি বলেন, ‘হাসিনার শাসনামলে সারাদেশেই শুধু রক্ত ঝরেছে। সারাদেশে বিএনপি নেতাকর্মীরা পঙ্গুত্ব বরণ করেছে। হাসপাতালে হাসপাতালে কাতরিয়েছে। অনেকে হাসপাতালে যেতেও ভয় পেত। কারণ হাসপাতালে এসেও আক্রমণ করেছে শেখ হাসিনার ক্যাডাররা।’ বিএনপির মুখপাত্র বলেন, ‘অন্যায় এবং পাপ যে বেশিদিন টিকতে পারে না, এটার যে পতন হয়, ইতিহাস থেকে শেখ হাসিনা এই শিক্ষা গ্রহণ করেনি বলেই তাকে আজকে বাংলাদেশ থেকে চলে যেতে হয়েছে, পালাতে হয়েছে। তার মধ্যে যদি সত্যিকারের দেশপ্রেম থাকতো, তিনি যদি ভাবতেন আমি যদি বাড়াবাড়ি করি, আমি যদি টাকা পাচার করি, মানুষের টাকা আত্মসাৎ করি, তাহলে এক দিন না এক দিন আমাকে জনগণের মুখোমুখি হতে হবে। আমার অবস্থা অত্যন্ত খারাপ হবে, নিজ দেশে আমি টিকে থাকতে পারবো না, তাহলে আজকে শেখ হাসিনার এই পরিণতি হত না।’ রিজভী বলেন, ‘সোনালী ব্যাংক, বেসিক ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংকে যারা লুটপাটের সঙ্গে জড়িত, তারাই শেখ হাসিনার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ লোক। এস আলম নামে একজন ব্যক্তিকে বাংলাদেশের নয়টি ব্যাংক দিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং তিনি নিজেই সেই ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এই ছিল বাংলাদেশের পরিস্থিতি। এইভাবে ১৫-১৬ বছর শেখ হাসিনা রাজত্ব করেছে। তিনি ভেবেছিলেন তাকে কেউ বাংলাদেশ থেকে বের করতে পারবে না, তিনি আজীবনের জন্য এখানে ক্ষমতায় থাকবেন। তিনি তার পুত্র জয়, কন্যা পুতুল, বোন রেহানা- তারা যেন বাংলাদেশের একটা রাজপরিবার হয়ে দাঁড়িয়েছিল।’
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, ‘জুলাই আগস্টে যে বিপ্লব সংঘটিত হয়েছে, শেখ হাসিনা কল্পনাই করতে পারেনি তাকে এত প্রতিরোধের মুখোমুখি হতে হবে। তিনি চিন্তাও করতে পারেননি। ভেবেছিলেন, তার পাশে আছে ভারত এবং বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী র্যা ব, পুলিশ। এখানে বেনজীর আছে, মামুন আছে, আরও তার কত পুলিশ অফিসার যারা নির্দেশ দেওয়ার আগেই নিরীহ মানুষদের উপর গুলি চালাতেন, ক্রসফায়ারে মানুষ হত্যা করতেন, বিএনপি-ছাত্রদলের কত ছেলে যে ক্রসফায়ারে মারা গেছেন, কত ছেলে যে গুম হয়েছেন, ইলিয়াস আলীর মতো চৌধুরী আলমের মতো, সাইফুল ইসলাম হিরুর মতো যারা অনেকেই এমপি ছিলেন, তাদেরকেও নিরুদ্দেশ করা হয়েছে।’ এসময় বিএনপির স্বাস্থ্যবিয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, সাংবাদিক আতিকুর রহমান রহমান রুমন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব তানভির আহমেদ রবিন, বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার ইসরাক হোসেন, ডা. এম এ মুহিত, মোকছেদুল মোমিন মিথুন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সারা দেশকে বিকলাঙ্গ রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল শেখ হাসিনা: রিজভী
জনপ্রিয় সংবাদ