নিজস্ব প্রতিবেদক : সারাবিশ্ব বদলে যাওয়া বাংলাদেশের প্রশংসা করলেও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলরা করেন না বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সম্পাদক ফোরামের আহ্বায়ক দৈনিক স্বদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রতনের নেতৃত্বে সংগঠনের সদস্যরা তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন। এ সময় তথ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। তিনি বলেন, সার্চ কমিটির মাধ্যমে গত নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছিল। সে নির্বাচন কমিশনে বিএনপির ঘোর সমর্থন একজন নিয়োগ পেয়েছেন। সার্চ কমিটি যে সঠিকভাবে কাজ করে সেটা এ নির্বাচন কমিশন দেখলেই বোঝা যায়। এবারও সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে। বিএনপি মহাসচিব বলেছেন, দেশের মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে গেছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার করে দেখান আওয়ামী শাসন থেকে মুক্তি পেতে মানুষ বিএনপিকে ভোট দেবে- এ বিষয়ে মতামত জানতে চাইলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব প্রতিদিনই কথা বলেন। প্রতিদিন তিনি একই ধরনের কথা বলেন। কথার মধ্যে কোনো ভিন্নতা নেই। আওয়ামী লীগের শাসনামলে দেশের মানুষের যে উন্নয়ন অগ্রগতি হয়েছে সেটা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব শিক্ষিত মানুষ হিসেবে না জানার কথা নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ৬০০ ডলারের মাথাপিছু আয় প্রায় ৪ গুণ বেড়ে ২২২৭ ডলারে উন্নীত হয়েছে। এখন বাংলাদেশে খালি পায়ে, ছেড়া কাপড় পরা মানুষ দেখা যায় না। কুঁড়ে ঘর সহজে খুঁজে পাওয়া যায় না। এটিই বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। গ্রামের মেঠোপথ এখন অনেকটা হারিয়ে গেছে। তিনি বলেন, আগে আমরা স্লোগান দিতাম শ্রমিকের মজুরি হবে সাড়ে ৩ কেজি চালের দামের সমান। এখন শ্রমিকের মজুরি কমপক্ষে ১২ কেজি চালের দামের সমান। ৫০০ টাকা একজন শ্রমিকের মজুরি হলে প্রতিদিন সে ১২ কেজি চাল কিনতে পারে। কোনো কোনো স্থানে ৮০০ টাকাতেও শ্রমিক পাওয়া যায় না। উত্তরবঙ্গে ৫০০ টাকায় মজুরি পাওয়া যেতে পারে। চট্টগ্রামসহ বড় বড় শহরে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায় শ্রমিক পাওয়া যায় না। তাহলে ১৫ কেজির চাল কিনতে পারে। আমি কম করে ধরেছি। এই যে বদলে যাওয়া বাংলাদেশ; যার প্রশংসা সারাপৃথিবী করে। অথচ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেবরা প্রশংসা করতে পারে না। এটি হচ্ছে দুর্ভাগ্যজনক। তথ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী যথার্থ বলেছেন, কোন দুঃখে মানুষ বিএনপিকে ভোট দেবে। আবার কি পেট্রোল বোমা মারার জন্য, ৫০০ জায়গায় এক সঙ্গে বোমা বিস্ফোরণের জন্য, আদালতে বোমা বিস্ফোরণের জন্য, বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে গ্রেনেড হামলার জন্য, কিবরিয়া, আহসানুল হক মাস্টারের মতো লোকের মৃত্যু হওয়ার জন্য। বাংলা ভাই, শেখ আবদুর রহমানের উৎপত্তি হওয়ার জন্য। এজন্য মানুষ তাদের ভোট দেবে? এগুলো আসলে খালি কলসি যেমন বেশি বাজে মির্জা ফখরুল ইসলাম সাহেবও প্রতিদিন বেশি বাজে। কারণ তারা সমর্থনহীন এজন্য তারা বেশি বাজে। তথ্যমন্ত্রী আরও বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাংলাদেশে কোনোদিন হবে না। সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সরকারই নির্বাচনকালীন সরকারের দায়িত্ব পালন করবে। রুটিন কাজ করবে। আর নির্বাচন হবে নির্বাচন কমিশনের অধীনে। সরকারের অধীনে নির্বাচন হয় না। সব উন্নত দেশে তাই হয়। আমাদের দেশেও তাই হবে। এদিকে বিদেশি চ্যানেলের ক্লিনফিড বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত থেকে সরকার এক চুলও নড়বে না বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ক্লিনফিড বাস্তবায়ন সহজ কাজ ছিল না। ১৫ বছরে এটি বাস্তবায়িত হয়নি। এর আগেও একবার আমরা উদ্যোগ নিয়েছিলাম। নানা অজুহাতে সেটি সম্ভব হয়নি। এবার স্থির সিদ্ধান্ত নিয়ে আগেভাগে গ্রাউন্ড ওয়ার্ক করে এবং যেসব জায়গা থেকে কথা উঠতে পারে তাদের অবহিত করে আমরা সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেছি। সুতরাং এ সিদ্ধান্ত থেকে আমরা একচুলও নড়বো না। তথ্যমন্ত্রী বলেন, আপনারা জানেন, সার্বিকভাবে গণমাধ্যমে শৃঙ্খলা আনার জন্য সম্প্রচার, প্রিন্ট ও অনলাইন মাধ্যমে আমরা এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিয়েছি। সে উদ্যোগের অংশ হিসেবে এরইমধ্যে অনেকগুলো কাজ করেছি। ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আপনাদের যে প্রস্তাব সেটার জন্য ধন্যবাদ জানাই। অন্তত প্রথমে ৫০টি পত্রিকা সম্ভব হলে ১০০টি পত্রিকার ক্ষেত্রে রিয়েলিস্টিক সার্কুলেশনের ভিত্তিতে ক্রম করা। আমি মনে করি, এটা অনেক ভালো প্রস্তাব। আমি এটা করতে চাই। আপনারা বলাতে আমার সুবিধা হলো। বিজ্ঞাপনের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে ই-টেন্ডারিংয়ের জন্য বিজ্ঞাপন যাচ্ছে না, এটি আসলে কিছুটা জানতাম। তবে চিত্রটা যে এত ভয়াবহ সেটা জানা ছিলো না। এ বিষয়ে আমরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলবো। ই-টেন্ডারিং হলেও যেন বিজ্ঞাপন যায়। তিনি বলেন, আপনারা যে বকেয়ার কথা বলেছেন সেটা আমি জানি। অনেক পত্রিকার কয়েক কোটি টাকা করে বাকি আছে। কোর্টেও যে পড়ে আছে সেটা অবশ্য জানতাম না। এগুলা আমি জানলাম। দেশের মানুষ জানলেও মনে হয় ভালো হতো। কারণ এ বাকিটা তো থাকার কথা ছিলো না। বিজ্ঞাপনের টাকা প্রজেক্টের মধ্যে ধরা থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ধরা থাকে। কেন বাকি পড়ছে, এটা আসলে বিষয়। হাছান মাহমুদ আরও বলেন, এ বিষয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এর আগে সব মন্ত্রণালয়কে তাগাদা দিয়েছিলাম। চিঠি দিয়ে তাগাদা দিয়েছিলাম। আমরা পুনরায় তাগাদা দিতে পারি। বকেয়ার বিষয়গুলো আপনারাও বড় বড় মন্ত্রণালয়, বিচারপতির নজরে আনেন। এটা করলে পড়ে আমার মনে হয়, প্রধান বিচারপতি একটা নির্দেশনা দেবেন। তথ্যমন্ত্রী বলেন, ন্যায় ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে কাজগুলো করার চেষ্টা করছি। এখন পর্যন্ত সেভাবে করার চেষ্টা করছি, সেটাই আমার কাজ। নিয়মনীতি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছি। দীর্ঘদিন ধরে নিয়মনীতিহীনভাবে এ মাধ্যমটা চলতে পারে না। অনেক নিয়মনীতি আছে, কিন্তু যেগুলো নেই সেগুলোও প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন। এসময় সম্পাদক ফোরামের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য নাঈমুল ইসলাম খান বলেন, ডিএফপির তালিকার উপরে থাকা ইংরেজি ও বাংলা মিলিয়ে ৫০টি পত্রিকার ক্ষেত্রে একটা দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে। আপনার (তথ্যমন্ত্রী) চিন্তায় যারা ভালো পত্রিকা, যারা জেনুইন টপ অর্ডারের পত্রিকা, আমরা আপনাকে বিনীতভাবে অনুরোধ করি, টপে থাকা বাংলা-ইংরেজি পত্রিকাকে যার যার ন্যায্য অবস্থানে তালিকার মধ্যে আনার ব্যবস্থা করেন। টপ অর্ডারের ৫০টি পত্রিকা ঠিক করে দেন। মাথার যে পচন ওই জায়গাটা থেকে রক্ষা পাই। আমাদের ইজ্জত রক্ষা করুন। পত্রিকায় বিপজ্জনকভাবে সরকারি বিজ্ঞাপন কমে যাচ্ছে জানিয়ে নাঈমুল ইসলাম বলেন, ই-টেন্ডারিং চালু হওয়ায় তারা এখন আর পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিচ্ছে না। ই-টেন্ডারিং হলে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে হবে। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ওয়েজবোর্ড মেনে বিজ্ঞাপন বিল দিচ্ছে না। সরকারি বিজ্ঞাপনের সঙ্গে এজেন্সি জড়িয়ে গেছে, তারা কমিশন নেয়। অনেক ক্ষেত্রে ৪০-৬০ শতাংশ কমিশন নেয়। অনেক সময় কাগজে লিখে কমিশন নেয়। আমাদের প্রফেশনে অমর্যাদাকর অবস্থানের চেয়ে চলে যাওয়ার সময় চলে এসেছে হয়তো। তিনি বলেন, নিয়মিত যে বিজ্ঞাপন পাই সেখানেও এখন কমিশন দিতে হয়। এটা আসলে ঘুষ, আমরা বলি কমিশন। সরকারি অফিসে বিজ্ঞাপনের বিল বকেয়া আছে। বিশেষ করে কোর্টে। এসব জায়গায় অতিরিক্ত বরাদ্দ না দিলে টাকা পাওয়া যাচ্ছে না।
সারাবিশ্ব বদলে যাওয়া বাংলাদেশের প্রশংসা করে, ফখরুলরা করেন না : তথ্যমন্ত্রী
জনপ্রিয় সংবাদ