নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে সহিংসতার বিষয়টি আলোচনা এলে সরকারপ্রধান এ নির্দেশনা দেন বলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানান। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে মন্ত্রিসভার এই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী।
বৈঠক পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, আজকের কেবিনেট মিটিংয়ে এটা স্পষ্ট বলে দেওয়া হয়েছে, খুব কঠোর অ্যাকশনে যেতে হবে। যারা যারা জড়িত আছে তাদের অবশ্যই ধরতে হবে।
‘পাশাপাশি জনগণকে বলতে হবে যে রিঅ্যাকশন করা যাবে না। কেউ যদি কোরআনের অবমাননা করে, কোরআন আমাকে কোনো অথরিটি দেয়নি যে আমি গিয়ে তার ধর্মের কোনো কিছু গিয়ে ভাঙব। সেটা ঠিক না হোক, আরো বড় অপরাধ হলেও এটা সকলকে খেয়াল রাখতে হবে, ইসলাম ডাস নট গিভ এনি অথরিটি টু এনি মুসলিম।’
দুর্গাপূজার মধ্যে গত ১৩ অক্টোবর কুমিল্লা শহরের একটি মন্দিরে কুরআন অবমাননার কথিত অভিযোগ তুলে কয়েকটি মন্দিরে হামলা-ভাংচুর চালানো হয়। এরপর চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, ফেনী, রংপুরসহ কয়েকটি জেলায় সাম্প্রদায়িক হামলার শিকার হয় হিন্দুদের উপাসনালয়, ঘরবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
বিভিন্ন জেলায় সাম্প্রদায়িক হামলার এসব ঘটনায় মোট ৭১টি মামলা দায়ের হয়েছে এবং ৪৫০ জনকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘আমি প্রতিবাদ করতে পারি, সরকারের কাছে দাবি করতে পারি যে এটা ধরে বিচার করে তাকে শাস্তি দিতে হবে। কিন্তু আমি গিয়ে কোনো ধ্বংসাত্মক কাজ করব- এটা পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য ইসলামে। এটা হলো ফিতনা। ফিতনা হলো সবচেয়ে বড় অপরাধ।’
আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, হোম মিনিস্টিারের সাথে আমরা গত কয়েকদিন ধরে এটা হ্যান্ডেল করছি। আজও হোম মিনিস্টারকে বলেছেন, ইন্সট্রাকশন দেওয়া হয়েছে টু টেইক- অ্যাকশন।
‘যারা এগুলোর সূত্রপাত করল যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাদের ধরতে হবে। পাশাপাশি ধর্মীয় ও রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্ব যারা আছেন, তাদের বলা হয়েছে জনগণের সাথে শেয়ার করার জন্য যে, ছোটখাটো কোনো টুইস্টিং কেউ করলে রিঅ্যাকশন করতে পারবে- এটা ইসলাম অনুমোদন করে না।’
আর যেন সাম্প্রদায়িক ঘটনা না ঘটে: দেশে আর যেন সাম্প্রদায়িক সহিংসতার কোনো ঘটনা না ঘটে সে ব্যাপারে দেশবাসীকে সতর্ক করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, সব ধর্মের মানুষ তার ধর্ম পালন করবে স্বাধীনভাবে। সেটাই আমাদের লক্ষ্য।
গতকাল মঙ্গলবার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠপুত্র শেখ রাসেলের জন্মদিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যুক্ত হন তিনি।
দেশে সম্প্রতি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজায় কোরআন অবমাননার অভিযোগকে কেন্দ্র করে মন্দিরে-ম-পে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনার দিকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এত রক্ত ক্ষয়, এত কিছু বাংলাদেশে ঘটে গেছে যে আর যেন এ ধরনের ঘটনা না ঘটে। বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক চেতনার দেশ। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে সব ধর্মের মানুষ তার ধর্ম পালন করবে স্বাধীনভাবে। সেটাই আমাদের লক্ষ্য।
এসময় পঁচাত্তরের পনেরোই আগস্ট হত্যাকা-ের বিচার প্রক্রিয়া বর্ণনা করে শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়ার খুনিদের প্রতি এই যে পক্ষপাতিত্ব এটার কারণটা কি? কারণ টা খুব স্পষ্ট। কারণ খুনি মোস্তাকের সাথে জিয়াউর রহমান সম্পূর্ণভাবে এই খুনের সঙ্গে জড়িত ছিলো। এই রাসেলকে সর্বশেষে হত্যা করা হয়। বলা হয়েছিলো ওই ছোট্ট টুকু যেন বাঁচে না। এই নির্দেশটা কে দিয়েছিল? কারা দিয়েছিল? সব শেষে, সব থেকে এটাই কষ্টের।
সরকার প্রধান বলেন, যখন বিরোধী দলে ছিলাম তখনও চেষ্টা করেছি এখনো চেষ্টা করি এই দেশের শিশুরা তাদের লেখাপড়া, তাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা, তারা যেন নিয়মিত স্কুলে যেতে পারে। আজকে যেমন আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি সেই ডিজিটাল বাংলাদেশ সেইটা তৈরি করার জন্য তাদেরকে প্রস্তুত করা, তাদেরকে ট্রেনিং দেওয়া, সব রকম ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।
শেখ হাসিনা বলেন, শিশুর নিরাপত্তা, শিশু অধিকার আইন তো জাতির পিতা ১৯৭৪ সালে করে দিয়ে গেছেন। প্রাথমিক শিক্ষাটাকে অবৈতনিক করে দিয়ে গেছেন, বাধ্যতামূলক করে দিয়ে গেছেন। কাজেই আমার বাবার আদর্শ নিয়েই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। আমাদের এই দেশের শিশুরা যেন আর এই নির্মমতার শিকার না হয়।
‘কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের এখনো আমরা দেখি সেই নির্মমতা। এখনো মাঝে মাঝে দেখি। পরবর্তীতেও আমরা দেখেছি। কিন্তু এইটা যেন না হয়। দেখেছি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে কীভাবে হত্যা করা হচ্ছে জ্যান্ত মানুষ গুলিকে, শিশুকে পর্যন্ত। এই খালেদা জিয়া বিরোধী দলে থাকতে অগ্নিসন্ত্রাস করে চলন্ত বাসে আগুন দিয়ে পুড়িয়েছে। বাপ দেখেছে নিজের চোখের সামনে আগুন পুড়ে সন্তান মারা যাচ্ছে। সে রকম নিষ্ঠুর ঘটনা তো বাংলাদেশে ঘটেছে। এটাই হচ্ছে সব থেকে দুর্ভাগ্য এই বাংলাদেশের।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি এইটুকু চাইবো এখানে মানবতার প্রশ্ন যারা তুলে তারা যেন এই ঘটনাগুলো ভালোভাবে দেখে যে বাংলাদেশে কী ঘটলো। কিন্তু আমরা সরকারে আসার পর থেকে আমাদের প্রচেষ্টা যে কোনো শিশু রাস্তায় ঘুরে বেড়াবে না, টোকাই থাকবে না। তাদের যেন একটা ঠিকানা থাকে, তারা যেন একটু ভালোভাবে বসবাস করতে পারে।’
এই দেশের প্রতিটি মানুষ একটা ঘর পাবে সেই লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ সরকার কাজ করছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের লক্ষ্য- এই দেশের প্রতিটি মানুষ একটা ঘর পাবে, প্রতিটি মানুষ শিক্ষা পাবে, চিকিৎসা পাবে, ভালোভাবে বাঁচবে। প্রতিটি শিশু তার যে মেধা, তার যে জ্ঞান, তার যে বুদ্ধি সেটা যেন বিকশিত হতে পারে। বাংলাদেশ কে তারা যেন সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। সেই চেষ্টাই আমি করে যাচ্ছি।
সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ