নিজস্ব প্রতিবেদক : দচৌর্যবৃত্তির’ অভিযোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক সামিয়া রহমানের পদাবনতির আদেশ কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চেয়েছে হাই কোর্ট। পাশাপাশি সামিয়া রহমানের গবেষণা নিবন্ধ নিয়ে তিনটি প্রতিবেদন দেখতে চেয়েছে উচ্চ আদালত।
‘চৌর্যবৃত্তির’ অভিযোগ ওঠা ওই গবেষণা নিবন্ধের পর্যালোচনা, চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ অনুসন্ধানকারী কমিটির প্রতিবেদন এবং চৌর্যবৃত্তির শাস্তি নির্ধারণে গঠিত ট্রাইব্যুনালের সুপারিশ প্রতিবেদন আকারে তিন সপ্তাহের মধ্যে দাখিল করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এ সংক্রান্ত এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের ভার্চুয়াল হাই কোর্ট বেঞ্চ গতকাল রোববার রুলসহ এ আদেশ দেয়।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক সামিয়া রহমানকে সহযোগী অধ্যাপক থেকে এক ধাপ নামিয়ে দুই বছর পর্যন্ত সহকারী অধ্যাপক করার সিদ্ধান্ত কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ও অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এবং গত ২৮ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের নেওয়া এ সিদ্ধান্তের দিন থেকে তাকে আর্থিক সুবিধাসহ সব সাধারণ পরিষেবা দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।
চার সপ্তাহের মধ্যে শিক্ষা সচিব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট ও রেজিস্ট্রার, সমাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ‘সোশ্যাল সায়েন্স রিভিউ’ জার্নালের সম্পদনা পর্ষদের সম্পাদকসহ ১২ বিবাদীকে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। গবেষণা নিবন্ধে চৌর্যবৃত্তির শাস্তি হিসেবে ‘পদাবনতির’ সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে গত ৩১ আগস্ট রিট আবেদনটি করেছিলেন সামিয়া রহমান। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী হাসান এম আজিম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নে জেনারেল বিপুল বাগমার।
আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর এ রিটের রবর্তী শুনানি হবে বলে আইনজীবী হাসান এম আজিম পরে জানান। তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপতির কাছে আপিল করেছিলেন সামিয়া রহমান। ছয় মাস ধরে সেটি বিবেচনাধীন। এর কোনো অগ্রগতি আমাদের জানানো হয়নি। যে কারণে রিট আবেদনটি করা হয়েছে।”
গবেষণা নিবন্ধে চৌর্যবৃত্তির শাস্তি হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক সামিয়া রহমানের পদাবনতি দেওয়া হয়।
গত ২৮ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে সিন্ডিকেটের সভায় ওই সিদ্ধান্ত হয়। সেখানে বলা হয়, সামিয়ার পদাবনতির পাশাপাশি মারজানকে শিক্ষা ছুটি শেষে চাকরিতে যোগদানের পর দুই বছর একই পদে থাকতে হবে।
২০১৬ সালের ডিসেম্বরে সামিয়া রহমান এবং অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক সৈয়দ মাহফুজুল হক মারজানের যৌথভাবে লেখা ‘আ নিউ ডাইমেনশন অব কলোনিয়ালিজম অ্যান্ড পপ কালচার: এ কেইস স্ট্যাডি অব দ্য কালচারাল ইমপেরিয়ালিজম’ শিরোনামের আট পৃষ্ঠার একটি গবেষণা প্রবন্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সোশ্যাল সায়েন্স রিভিউ’ জার্নালে প্রকাশিত হয়। সেটি ১৯৮২ সালের শিকাগো ইউনিভার্সিটির জার্নাল ‘ক্রিটিক্যাল ইনকোয়ারি’তে প্রকাশিত ফরাসি দার্শনিক মিশেল ফুকোর ‘দ্য সাবজেক্ট অ্যান্ড পাওয়ার’ নামের একটি নিবন্ধ থেকে প্রায় পাঁচ পৃষ্ঠার ‘হুবহু নকল’ বলে অভিযোগ ওঠে।
২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে এক লিখিত অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ওই অভিযোগ জানিয়েছিল ইউনিভার্সিটি অব শিকাগো প্রেস। শুধু মিশেল ফুকোই নন, বুদ্ধিজীবী এডওয়ার্ড সাঈদের ‘কালচার অ্যান্ড ইমপেরিয়ালিজম’ বাই থেকেও সামিয়া ‘নকল করেন’ বলে অভিযোগ ওঠে। এই পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৭ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক নাসরিন আহমেদকে প্রধান করে একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট। দীর্ঘদিন অনুসন্ধান শেষে গত বছর ওই কমিটি প্রতিবেদন জমা দেয়।
অভিযোগ ‘প্রমাণিত হওয়ায়’ ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে গত ২৯ অক্টোবর দুই শিক্ষকের বিষয়ে অ্যাকাডেমিক অপরাধের শাস্তির সুপারিশ করতে আইন অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন ও সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক মো. রহমত উল্লাহকে আহ্বায়ক করে একটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। ট্রাইব্যুনাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে শাস্তির বিষয়ে সুপারিশ করলে ২৮ জানুয়ারি সিন্ডিকেটের সভায় পদাবনতির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সামিয়া রহমানের পদাবনতির সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ নয়: হাই কোর্ট
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ