ঢাকা ০৬:২৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫

সামাজিক শালীনতা এবং গোপনীয়তার প্রতি হুমকি ‘আপত্তিকর ছবি’

  • আপডেট সময় : ০৫:৪৫:৪২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪
  • ৫১ বার পড়া হয়েছে

CREATOR: gd-jpeg v1.0 (using IJG JPEG v62), quality = 100

তন্ময় রহমান : আজকের ডিজিটাল যুগে যেখানে ছবি এবং ভিডিও সামাজিক যোগাযোগের এক গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম, সেখানে ‘আপত্তিকর ছবি’ বা ‘আপত্তিকর ভিডিও’ শব্দগুলো বেশ আলোচিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেসব ছবি বা ভিডিও মানুষের সম্মান বা গোপনীয়তা লঙ্ঘন করে বা শিষ্টাচার ও সামাজিক মূল্যবোধের বিপরীতে, সেগুলিকে সাধারণত আপত্তিকর বলা হয়। এগুলি মানুষের সম্মান বা গোপনীয়তা লঙ্ঘন করতে পারে, অন্যকে অস্বস্তিতে ফেলতে পারে অথবা আইনগত বা নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নয়।
যে কারণে আপত্তিকর বলা হয়: আপত্তিকর ছবি বা ভিডিও বলতে এমন ধরনের উপকরণকে বোঝানো হয়, যা শিষ্টাচার, সামাজিক মূল্যবোধ বা ব্যক্তিগত গোপনীয়তার পরিপন্থী।
এগুলো সাধারণত সমাজের শালীনতা বা নৈতিকতার বিরুদ্ধে গিয়ে তৈরি করা হয় এবং মানুষের সম্মান বা গোপনীয়তা লঙ্ঘন করে। এই ধরনের ছবি বা ভিডিও সাধারণত নিম্নলিখিত কারণে আপত্তিকর বলে বিবেচিত হয়Ñ
অশ্লীলতা বা অশালীনতা: এই ধরনের ছবি বা ভিডিওতে প্রায়ই যৌন বিষয়বস্তুর প্রকাশ থাকে, যা সমাজের অধিকাংশ মানুষের জন্য অশালীন বা অগ্রহণযোগ্য হতে পারে।
গোপনীয়তার লঙ্ঘন: কিছু ছবি বা ভিডিও ব্যক্তিগত মুহূর্তে নেওয়া হতে পারে, যা ব্যক্তিগত গোপনীয়তার উপর আক্রমণ হতে পারে। এই ধরনের ছবি বা ভিডিও শেয়ার করা অপরাধের মধ্যে পড়ে।
মানসিক বা শারীরিক নির্যাতন: এমন ছবি বা ভিডিও যেখানে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে মানসিক বা শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বা অপমানিত করা হয়, তাও আপত্তিকর হিসেবে গণ্য হয়।
বিদ্বেষ বা ঘৃণামূলক ভাষা ও আচরণ: কোনো গোষ্ঠী বা ব্যক্তির বিরুদ্ধে ঘৃণা বা বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্য বা আচরণ প্রকাশিত ছবি বা ভিডিওও আপত্তিকর হতে পারে।
সমাজে এর প্রভাব: আপত্তিকর ছবি বা ভিডিও সামাজিক ও মনস্তাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে অনেক নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। ব্যক্তির সম্মান, মর্যাদা, এবং গোপনীয়তা লঙ্ঘন করলে, তার শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্ষতি হতে পারে।
বিশেষ করে যুব সমাজের মধ্যে এই ধরনের উপকরণ সহজেই ছড়িয়ে পড়তে পারে, যা তাদের মানসিকতাকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে এবং স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডও একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়, কারণ অনলাইনে গোপনে তোলা ছবি বা ভিডিও প্রকাশ করা অনেক ক্ষেত্রেই অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়। এক্ষেত্রে, অনেক দেশে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয় এবং শাস্তি দেওয়া হয় কিন্তু এসব কর্মকাণ্ড যদি বেড়ে যায়, তা সমাজে অস্থিরতা তৈরি করতে পারে।
প্রতিকার: এই ধরনের সমস্যার প্রতিকার হতে পারে যদি আমাদের শালীনতা, আইনি সচেতনতা এবং সমাজের প্রতি দায়িত্বশীলতা বৃদ্ধি পায়। ছবির বা ভিডিওর শেয়ারিংয়ের ক্ষেত্রে অনুমতি নেওয়ার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
সামাজিক মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোকে আরও সক্রিয়ভাবে ব্যবহারকারীদের জন্য নীতিমালা তৈরি করতে হবে এবং তাদের প্রতি সঠিক শিক্ষাদান নিশ্চিত করতে হবে।
সর্বোপরি এটি আমাদের সকলের দায়িত্ব, যাতে আমরা নিজেদের সংস্কৃতি, শালীনতা এবং নৈতিকতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে পারি। ইন্টারনেট এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে একে অপরকে সম্মান জানিয়ে চলতে পারলে, সমাজে অশ্লীলতা বা অপরাধমূলক ছবি ও ভিডিও কমিয়ে আনা সম্ভব।
শেষ কথা: আপত্তিকর ছবি বা ভিডিও শেয়ার করা, তৈরি করা কিংবা প্রকাশ করা শুধু আইনত অপরাধ নয়, এটি সামাজিক শালীনতা এবং নৈতিকতার জন্যও ক্ষতিকর। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সঠিক ব্যবহার এবং নিজেদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করার মাধ্যমে আমরা এই ধরনের সমস্যার মোকাবেলা করতে পারি এবং একটি সুরক্ষিত, সম্মানজনক এবং স্বাস্থ্যকর ডিজিটাল পরিবেশ গড়ে তুলতে সক্ষম হব।

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

সামাজিক শালীনতা এবং গোপনীয়তার প্রতি হুমকি ‘আপত্তিকর ছবি’

আপডেট সময় : ০৫:৪৫:৪২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪

তন্ময় রহমান : আজকের ডিজিটাল যুগে যেখানে ছবি এবং ভিডিও সামাজিক যোগাযোগের এক গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম, সেখানে ‘আপত্তিকর ছবি’ বা ‘আপত্তিকর ভিডিও’ শব্দগুলো বেশ আলোচিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেসব ছবি বা ভিডিও মানুষের সম্মান বা গোপনীয়তা লঙ্ঘন করে বা শিষ্টাচার ও সামাজিক মূল্যবোধের বিপরীতে, সেগুলিকে সাধারণত আপত্তিকর বলা হয়। এগুলি মানুষের সম্মান বা গোপনীয়তা লঙ্ঘন করতে পারে, অন্যকে অস্বস্তিতে ফেলতে পারে অথবা আইনগত বা নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নয়।
যে কারণে আপত্তিকর বলা হয়: আপত্তিকর ছবি বা ভিডিও বলতে এমন ধরনের উপকরণকে বোঝানো হয়, যা শিষ্টাচার, সামাজিক মূল্যবোধ বা ব্যক্তিগত গোপনীয়তার পরিপন্থী।
এগুলো সাধারণত সমাজের শালীনতা বা নৈতিকতার বিরুদ্ধে গিয়ে তৈরি করা হয় এবং মানুষের সম্মান বা গোপনীয়তা লঙ্ঘন করে। এই ধরনের ছবি বা ভিডিও সাধারণত নিম্নলিখিত কারণে আপত্তিকর বলে বিবেচিত হয়Ñ
অশ্লীলতা বা অশালীনতা: এই ধরনের ছবি বা ভিডিওতে প্রায়ই যৌন বিষয়বস্তুর প্রকাশ থাকে, যা সমাজের অধিকাংশ মানুষের জন্য অশালীন বা অগ্রহণযোগ্য হতে পারে।
গোপনীয়তার লঙ্ঘন: কিছু ছবি বা ভিডিও ব্যক্তিগত মুহূর্তে নেওয়া হতে পারে, যা ব্যক্তিগত গোপনীয়তার উপর আক্রমণ হতে পারে। এই ধরনের ছবি বা ভিডিও শেয়ার করা অপরাধের মধ্যে পড়ে।
মানসিক বা শারীরিক নির্যাতন: এমন ছবি বা ভিডিও যেখানে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে মানসিক বা শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বা অপমানিত করা হয়, তাও আপত্তিকর হিসেবে গণ্য হয়।
বিদ্বেষ বা ঘৃণামূলক ভাষা ও আচরণ: কোনো গোষ্ঠী বা ব্যক্তির বিরুদ্ধে ঘৃণা বা বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্য বা আচরণ প্রকাশিত ছবি বা ভিডিওও আপত্তিকর হতে পারে।
সমাজে এর প্রভাব: আপত্তিকর ছবি বা ভিডিও সামাজিক ও মনস্তাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে অনেক নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। ব্যক্তির সম্মান, মর্যাদা, এবং গোপনীয়তা লঙ্ঘন করলে, তার শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্ষতি হতে পারে।
বিশেষ করে যুব সমাজের মধ্যে এই ধরনের উপকরণ সহজেই ছড়িয়ে পড়তে পারে, যা তাদের মানসিকতাকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে এবং স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডও একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়, কারণ অনলাইনে গোপনে তোলা ছবি বা ভিডিও প্রকাশ করা অনেক ক্ষেত্রেই অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়। এক্ষেত্রে, অনেক দেশে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয় এবং শাস্তি দেওয়া হয় কিন্তু এসব কর্মকাণ্ড যদি বেড়ে যায়, তা সমাজে অস্থিরতা তৈরি করতে পারে।
প্রতিকার: এই ধরনের সমস্যার প্রতিকার হতে পারে যদি আমাদের শালীনতা, আইনি সচেতনতা এবং সমাজের প্রতি দায়িত্বশীলতা বৃদ্ধি পায়। ছবির বা ভিডিওর শেয়ারিংয়ের ক্ষেত্রে অনুমতি নেওয়ার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
সামাজিক মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোকে আরও সক্রিয়ভাবে ব্যবহারকারীদের জন্য নীতিমালা তৈরি করতে হবে এবং তাদের প্রতি সঠিক শিক্ষাদান নিশ্চিত করতে হবে।
সর্বোপরি এটি আমাদের সকলের দায়িত্ব, যাতে আমরা নিজেদের সংস্কৃতি, শালীনতা এবং নৈতিকতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে পারি। ইন্টারনেট এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে একে অপরকে সম্মান জানিয়ে চলতে পারলে, সমাজে অশ্লীলতা বা অপরাধমূলক ছবি ও ভিডিও কমিয়ে আনা সম্ভব।
শেষ কথা: আপত্তিকর ছবি বা ভিডিও শেয়ার করা, তৈরি করা কিংবা প্রকাশ করা শুধু আইনত অপরাধ নয়, এটি সামাজিক শালীনতা এবং নৈতিকতার জন্যও ক্ষতিকর। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সঠিক ব্যবহার এবং নিজেদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করার মাধ্যমে আমরা এই ধরনের সমস্যার মোকাবেলা করতে পারি এবং একটি সুরক্ষিত, সম্মানজনক এবং স্বাস্থ্যকর ডিজিটাল পরিবেশ গড়ে তুলতে সক্ষম হব।