নিজস্ব প্রতিবেদক: সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার নামে কার্যত ঘৃণা, বিভ্রান্তি ও মিথ্যাকে অর্থায়ন করা হয় বলেছেন ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম।
পরিবর্তিত বাস্তবতায় একে ‘মিথ্যার বিপদ’ আখ্যা দিয়ে রক্ষা পেতে দেশের নীতিনির্ধারক ও নেতৃত্বস্থানীয়দের প্রতি আহ্বান তিনি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রসঙ্গ তুলে মাহফুজ আনাম বলেছেন, ‘যত বেশি ঘৃণাপূর্ণ মন্তব্য, যত বেশি তথ্যবিচ্যুতি, যত বেশি মিথ্যা, যত বেশি কারও বিরুদ্ধে উসকানিমূলক লেখা-তত বেশি ক্লিক, আর তত বেশি আয়।’ ‘বে অব বেঙ্গল কনভারসেশনে’র একটি পর্বে দেওয়া একক বক্তব্যে এ কথাগুলো বলেন মাহফুজ আনাম। শনিবার (২২ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর একটি হোটেলে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস)। আলোচনায় অংশ নিয়ে ‘যুদ্ধ, ভঙ্গুর রাষ্ট্র ও বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার সমাপ্তি’ এবং ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ভুয়া তথ্যের হুমকি’ প্রসঙ্গে নিজের বক্তব্য তুলে ধরেন ডেইলি স্টার সম্পাদক।
মাহফুজ আনাম বলেন, ‘সোশ্যাল মিডিয়া তথ্যপ্রবাহের গণতন্ত্রীকরণ করেছে-এটা সত্য; এখন প্রতিটি মানুষ তার মতামত জানাতে পারে। কিন্তু এর নেতিবাচক দিক হলো এগুলো বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তথ্যভিত্তিক নয়, জ্ঞাননির্ভর নয়, যুক্তিশীলও নয়। আলোচনায় ‘যুদ্ধ, ভঙ্গুর রাষ্ট্র ও বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার সমাপ্তি’ বিষয়ে নিজের বক্তব্য তুলে ধরেন মাহফুজ আনাম। তিনি বলেন, ‘আমাদের মতো ছোট দেশগুলোর জন্য বৈশ্বিক স্থিতিশীলতা অত্যন্ত জরুরি। বিশেষ করে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে।’
‘জ্ঞান, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ’ উল্লেখ করে মাহফুজ আনাম বলেন, ‘আমরা অর্থ বা সামরিক শক্তিতে বিশ্বের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে পারব না; আমাদের একমাত্র প্রতিযোগিতামূলক ক্ষেত্র হলো জ্ঞান ও দক্ষতা। কিন্তু পপুলিজমের যুগে আমরা এক ভয়াবহ বাস্তবতার দিকে দ্রুত এগোচ্ছি।’
বৈশ্বিক বাণিজ্য যুদ্ধ ও বাণিজ্যিক ওঠানামার প্রসঙ্গ তুলে ডেইলি স্টার সম্পাদক বলেন, এটি একটি স্পষ্ট সতর্কবার্তা যে ভবিষ্যতের বিশ্ব অনেক বেশি নাটকীয় এবং অস্থিতিশীল হতে যাচ্ছে। সে জন্য আমাদের উচিত নিজেদের ভূরাজনৈতিক অবস্থান, অর্থনৈতিক সক্ষমতা এবং সংশ্লিষ্ট বাস্তবতাগুলো গভীরভাবে উপলব্ধি করা। কোনো সরকারের সময়েই কেন বাংলাদেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার মান উন্নত হয় না, এমন প্রশ্ন তোলেন ডেইলি স্টার সম্পাদক। তিনি বলেন, ‘প্রশ্ন তোলার দরকার আছে-আমাদের স্নাতক ও স্নাতকোত্তরদের মান কোথায়? সবচেয়ে বড় ক্ষতি আমরা নিজেরাই করছি পর্যাপ্ত গবেষণায় বিনিয়োগ না করে।’ উদাহরণ হিসেবে তিনি চীনের শিক্ষা ও গবেষণায় বড় বিনিয়োগের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন।
মাহফুজ আনাম বলেন, বাংলাদেশে আমরা এখনো পুরোপুরি অনুধাবন করতে পারিনি জ্ঞানের গুরুত্ব কতখানি এবং এটি কীভাবে আমাদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে। আমরা জ্ঞানে বিনিয়োগ করছি না। তাঁর মতে, বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা পর্যাপ্ত মানসম্পন্ন নয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিযোগিতামূলকও নয়।
দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মান ভালো হলেও গবেষণা খাতে বিনিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এই সম্পাদক। তিনি বলেন, ‘আমি বলতে চাই, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতির ওপর।’ এখনই এই খাতকে গুরুত্ব না দিলে ভবিষ্যতে ‘মানসিক উপনিবেশবাদের’ শিকার হওয়ার শঙ্কার কথাও জানান তিনি।
সানা/আপ্র/২২/১১/২০২৫



















