ঢাকা ০২:৪৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২১ নভেম্বর ২০২৫

সামাজিক অপরাধ: রাষ্ট্র-ব্যক্তির দায় ও প্রতিকার

  • আপডেট সময় : ১০:৪৮:১৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২২
  • ১২৫ বার পড়া হয়েছে

ওয়াহিদুজ্জামান নান্নু : শান্তিপুর্ণ ও উন্নত জাতি গড়তে পরিবার ও সমাজের দায়িত্ব অপরিহার্য। না হলে সমাজ অসহিষ্ণু ও অপরাধপ্রবণ, অনিয়ন্ত্রিত, ভয়ঙ্কর হয়ে উঠে। বেড়েই চলেছে পারিবারিক সহিংসতার ঘটনা। আশঙ্কাজনকভাবে অস্থির হয়ে উঠছে সামাজিক পরিবেশ। ঘটছে নৃশংস হত্যার মতো ঘটনা। মেয়েরাও অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে! তার বাবা মা বোনকে নৃশংস হত্যা করছে। বাবার হাতে সন্তান কিংবা ভাইয়ের কাছে বোনও নিরাপত্তাহীনতায়। মা-শাশুড়ির সাথে ছেলে/বৌয়ের দ্বন্দ্বও প্রকট থেকে প্রকটতর হচ্ছে; নৃশংস হয়ে উঠছে। পরিবারের সভ্যতা সহিষ্ণুতা ভালবাসা সহমর্মিতা সব কি হারাতে বসেছি?

কিন্তু কেন? সমাধানও কি? কিছু কারণের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, ধর্মীয় অনুশাসন থেকে দূরে সরে যাওয়া এবং পারস্পরিক অবিশ্বাস ও আস্থাহীনতা। অযাচিত আকাশ সংস্কৃতি নৈতিক স্খলনের ক্ষেত্রে নেতিবাচক ভূমিকা রাখছে। দিচ্ছে অপরাধ ও হত্যার উসকানি, নরকে রূপান্তরিত হচ্ছে পরিবার। বিরূপ প্রভাব পড়ছে সমাজে। লোভী ও ভোগবাদী চিন্তা, অতিমাত্রায় দুশ্চিন্তা, মানসিক চাপ, অর্থনৈতিক অসচ্ছলতা আস্থার অভাব ও অবিশ্বাস তৈরি করছে। ঠকানোর প্রবণতায় অত্যাচারিত হতে হতে মানুষ কখনও কখনও প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে অপরাধমুলক কাজে জড়িয়ে পড়ছে। সামাজিক মূল্যবোধের অভাব এবং নৈতিকতার অবক্ষয়ও এ জন্য অনেকাংশে দায়ী।
মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নৈতিকতা, ধর্ম বা নীতি আদর্শের কথা বললেই আমরা সেটাকে গুরুত্বহীনভাবে দেখছি; এমনকি কটাক্ষ করছি। আবার বিভিন্ন ধর্মের ধর্মযাজকদের জীবনাচারের নেতিবাচক বিষয়গুলোকে সামনে এনে তাদের কচলিয়ে নোনা বস্তুতে রুপান্তরিত করে ঘৃণা ও অপদস্তসহ নানান উপায়ে অভিযুক্ত করে ছাড়ছি। অথচ সমাজের শান্তি-শৃংখলা সভ্যতা জনসচেতনতায় ধর্ম যাজকদের ব্যাপক ভুমিকা থাকতে পারে।
বর্তমান সময়ে শিশু থেকে অভিভাবকরা পর্যন্ত ইন্টারনেটে বুঁদ হয়ে থাকছেন। এতে বাবা-ছেলে, ভাই-বোন কিংবা মা-ছেলের আত্মিক সম্পর্কও চাপা পড়ে যাচ্ছে প্রযুক্তির কাছে। স্পর্শ করছে না ভালবাসার দরদী মন। শিশু-কিশোররা হাম বড় ভাব দেখাতে গিয়ে ভয়ঙ্কর গ্যাং কালচারে জড়িয়ে পড়ছে। যাকে বলা হচ্ছে ‘কিশোর গ্যাং’। যৌথ পরিবার থেকে বেপরোয়া এককেন্দ্রিক পরিবারের দিকে ঝুঁকে পড়াও এমন অস্থিরতার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখছে।
নারী-পুরুষ মর্যাদায় সমভাবে সমাজে মাথা উঁচু করে শান্তিপূর্ণ জীবন চালাক। কিন্তু ইদানিং, মা-বোনদের আচরণ বদলের অনেক উগ্র ও সহিংস ঘটনা দেখছি। নারীবাদীরা অধিকার সচেতন করতে গিয়ে কাউকে কাউকে বেপরোয়া ও উশৃংখল মানসিকতার করে তুলছে না তো? সমাজে অহিংস মানসিকতার মূল্যবোধ সৃষ্টি আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় বাধ্যতামূলক রাখা উচিত। সামাজিক অস্থিরতার ওপর আইন প্রয়োগকারী সংস্থার খুব একটা ভূমিকা রাখার সুযোগ নেই।

সামগ্রিক সামাজিক অবক্ষয় উত্তরণে অভিভাবকদের যেমন দায়িত্ববোধ সম্পর্কে আরও সচেতন হওয়া দরকার, তেমনি রাষ্ট্রকে সাম্য ও ন্যায়ভিত্তিক বিচারের মাধ্যমে অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। সচেতনতামূলক এবং নৈতিক শিক্ষার ওপর বিভিন্ন প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নিতে হবে। স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা-বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক সচেতনতামূলক এবং নৈতিক শিক্ষার ওপর বিভিন্ন প্রোগ্রাম চলমান রাখতে হবে। দেশীয় সংস্কৃতি ও শিক্ষায় পুঁজিবাদী দৃষ্টিভঙ্গির বাইরে নৈতিক ও মানবিক বিষয়গুলোকে শেখাতে হবে। না হলে সামনে রাষ্ট্র ও সমাজের আরো নৃশংস ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির জন্য কেউ দায় এড়াতে পারবো কী আমরা?

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

সামাজিক অপরাধ: রাষ্ট্র-ব্যক্তির দায় ও প্রতিকার

আপডেট সময় : ১০:৪৮:১৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২২

ওয়াহিদুজ্জামান নান্নু : শান্তিপুর্ণ ও উন্নত জাতি গড়তে পরিবার ও সমাজের দায়িত্ব অপরিহার্য। না হলে সমাজ অসহিষ্ণু ও অপরাধপ্রবণ, অনিয়ন্ত্রিত, ভয়ঙ্কর হয়ে উঠে। বেড়েই চলেছে পারিবারিক সহিংসতার ঘটনা। আশঙ্কাজনকভাবে অস্থির হয়ে উঠছে সামাজিক পরিবেশ। ঘটছে নৃশংস হত্যার মতো ঘটনা। মেয়েরাও অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে! তার বাবা মা বোনকে নৃশংস হত্যা করছে। বাবার হাতে সন্তান কিংবা ভাইয়ের কাছে বোনও নিরাপত্তাহীনতায়। মা-শাশুড়ির সাথে ছেলে/বৌয়ের দ্বন্দ্বও প্রকট থেকে প্রকটতর হচ্ছে; নৃশংস হয়ে উঠছে। পরিবারের সভ্যতা সহিষ্ণুতা ভালবাসা সহমর্মিতা সব কি হারাতে বসেছি?

কিন্তু কেন? সমাধানও কি? কিছু কারণের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, ধর্মীয় অনুশাসন থেকে দূরে সরে যাওয়া এবং পারস্পরিক অবিশ্বাস ও আস্থাহীনতা। অযাচিত আকাশ সংস্কৃতি নৈতিক স্খলনের ক্ষেত্রে নেতিবাচক ভূমিকা রাখছে। দিচ্ছে অপরাধ ও হত্যার উসকানি, নরকে রূপান্তরিত হচ্ছে পরিবার। বিরূপ প্রভাব পড়ছে সমাজে। লোভী ও ভোগবাদী চিন্তা, অতিমাত্রায় দুশ্চিন্তা, মানসিক চাপ, অর্থনৈতিক অসচ্ছলতা আস্থার অভাব ও অবিশ্বাস তৈরি করছে। ঠকানোর প্রবণতায় অত্যাচারিত হতে হতে মানুষ কখনও কখনও প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে অপরাধমুলক কাজে জড়িয়ে পড়ছে। সামাজিক মূল্যবোধের অভাব এবং নৈতিকতার অবক্ষয়ও এ জন্য অনেকাংশে দায়ী।
মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নৈতিকতা, ধর্ম বা নীতি আদর্শের কথা বললেই আমরা সেটাকে গুরুত্বহীনভাবে দেখছি; এমনকি কটাক্ষ করছি। আবার বিভিন্ন ধর্মের ধর্মযাজকদের জীবনাচারের নেতিবাচক বিষয়গুলোকে সামনে এনে তাদের কচলিয়ে নোনা বস্তুতে রুপান্তরিত করে ঘৃণা ও অপদস্তসহ নানান উপায়ে অভিযুক্ত করে ছাড়ছি। অথচ সমাজের শান্তি-শৃংখলা সভ্যতা জনসচেতনতায় ধর্ম যাজকদের ব্যাপক ভুমিকা থাকতে পারে।
বর্তমান সময়ে শিশু থেকে অভিভাবকরা পর্যন্ত ইন্টারনেটে বুঁদ হয়ে থাকছেন। এতে বাবা-ছেলে, ভাই-বোন কিংবা মা-ছেলের আত্মিক সম্পর্কও চাপা পড়ে যাচ্ছে প্রযুক্তির কাছে। স্পর্শ করছে না ভালবাসার দরদী মন। শিশু-কিশোররা হাম বড় ভাব দেখাতে গিয়ে ভয়ঙ্কর গ্যাং কালচারে জড়িয়ে পড়ছে। যাকে বলা হচ্ছে ‘কিশোর গ্যাং’। যৌথ পরিবার থেকে বেপরোয়া এককেন্দ্রিক পরিবারের দিকে ঝুঁকে পড়াও এমন অস্থিরতার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখছে।
নারী-পুরুষ মর্যাদায় সমভাবে সমাজে মাথা উঁচু করে শান্তিপূর্ণ জীবন চালাক। কিন্তু ইদানিং, মা-বোনদের আচরণ বদলের অনেক উগ্র ও সহিংস ঘটনা দেখছি। নারীবাদীরা অধিকার সচেতন করতে গিয়ে কাউকে কাউকে বেপরোয়া ও উশৃংখল মানসিকতার করে তুলছে না তো? সমাজে অহিংস মানসিকতার মূল্যবোধ সৃষ্টি আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় বাধ্যতামূলক রাখা উচিত। সামাজিক অস্থিরতার ওপর আইন প্রয়োগকারী সংস্থার খুব একটা ভূমিকা রাখার সুযোগ নেই।

সামগ্রিক সামাজিক অবক্ষয় উত্তরণে অভিভাবকদের যেমন দায়িত্ববোধ সম্পর্কে আরও সচেতন হওয়া দরকার, তেমনি রাষ্ট্রকে সাম্য ও ন্যায়ভিত্তিক বিচারের মাধ্যমে অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। সচেতনতামূলক এবং নৈতিক শিক্ষার ওপর বিভিন্ন প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নিতে হবে। স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা-বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক সচেতনতামূলক এবং নৈতিক শিক্ষার ওপর বিভিন্ন প্রোগ্রাম চলমান রাখতে হবে। দেশীয় সংস্কৃতি ও শিক্ষায় পুঁজিবাদী দৃষ্টিভঙ্গির বাইরে নৈতিক ও মানবিক বিষয়গুলোকে শেখাতে হবে। না হলে সামনে রাষ্ট্র ও সমাজের আরো নৃশংস ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির জন্য কেউ দায় এড়াতে পারবো কী আমরা?