মাওলানা ইলিয়াস মশহুদ
হজ ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ ও রোকন। আর্থিক ও দৈহিকভাবে সামর্থ্যবান নারী-পুরুষের ওপর জীবনে একবার হজ করা ফরজ। কোরআনে এরশাদ হয়েছে, প্রত্যেক সামর্থ্যবান মানুষের ওপর আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য বাইতুল্লাহর হজ করা ফরজ (সুরা আলে ইমরান: ৯৭)। হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, লোকসকল! আল্লাহতায়ালা তোমাদের ওপর হজ ফরজ করেছেন।
আকরা ইবনে হাবিস (রা.) দাঁড়িয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! এটা কি প্রত্যেক বছর ফরজ? কিছুক্ষণ চুপ থেকে রাসুল (সা.) বললেন, আমি যদি হ্যাঁ বলতাম, তাহলে ফরজ হয়ে যেত। আর প্রতি বছর হজ করা ফরজ হলে তা তোমরা করতে সক্ষম হতে না। এ জন্য হজ জীবনে একবারই ফরজ। কেউ যদি একাধিকবার করে, তবে তা হবে নফল হজ (সহিহ বোখারি: ৭২৮৮)। এ ছাড়া বিভিন্ন হাদিসে হজের সওয়াব ও ফজিলত বর্ণিত হয়েছে।
যাদের ওপর হজ ফরজ-
পাঁচটি শর্তসাপেক্ষে হজ ফরজ হয়: ১. মুসলমান হওয়া, ২. আকল থাকা বা বিবেকবান হওয়া অর্থাৎ পাগল না হওয়া, ৩. বালেগ বা প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া, ৪. স্বাধীন হওয়া, অর্থাৎ কারও গোলাম না হওয়া এবং ৫. দৈহিক ও আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান হওয়া। তবে নারীদের ক্ষেত্রে আরেকটি শর্ত যুক্ত হবে, সেটি হলো- সঙ্গে ‘মাহরাম’ (যেসব পুরুষের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ বৈধ) থাকা।
স্মরণ রাখতে হবে, জাকাত ফরজ না হয়েও কারো ওপর হজ ফরজ হতে পারে। কেননা হজ ও জাকাতের মধ্যে বিশেষ পার্থক্য রয়েছে। যেমন- জাকাতের সম্পর্ক নির্ধারিত নেসাবের সঙ্গে।
হজের সম্পর্ক মক্কায় আসা-যাওয়ার খরচের সঙ্গে। তাই স্থাবর সম্পত্তির কিছু অংশ বিক্রি করে কেউ যদি হজ আদায় করতে সক্ষম হয় এবং হজ থেকে ফিরে এসে বাকি সম্পত্তি দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে পারে, তাহলে তার ওপর হজ ফরজ (আহসানুল ফাতাওয়া: ৪/৫১৬)। একইভাবে ব্যবসায়ীর দোকানে যে পরিমাণ পণ্য আছে, তার কিছু অংশ বিক্রি করলে যদি হজ করা সম্ভব হয় এবং ফিরে এসে যদি বাকি পণ্য দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করা যায়, তাহলে তার ওপরও হজ ফরজ (ইমদাদুল আহকাম : ২/১৫৩)।
আমাদের সমাজে একটি ভুল ধারণা প্রচলিত আছে, তা হলো আগে মাতা-পিতাকে হজ করাবে, পরে নিজের কথা চিন্তা করবে। এটি সঠিক নয়; বরং সামর্থ্য থাকলে তাদের নিয়ে একসঙ্গে হজ করবে। অন্যথায় আগে নিজের ফরজ আদায় করবে (ফাতওয়ায়ে রহিমিয়া: ৮/২৮২)।
আবার অনেকে মনে করেন, সন্তানের বিয়ে দেয়ার পর হজ আদায় করতে হয়। অথচ এ কথা ইসলাম সমর্থিত নয়। ইসলামের দৃষ্টিতে সন্তানের বিয়ের জন্য হজে বিলম্ব করা যাবে না (ফাতওয়ায়ে রহিমিয়া: ৮/২৭৬)।
যাদের ওপর হজ ফরজ, যত দ্রুত সম্ভব হজ আদায় করা উত্তম। যেখানে মানুষের জীবন-মরণের এক সেকেন্ডের নিশ্চয়তা নেই, সেখানে এক বছর অনেক দীর্ঘ সময়। তাই রাসুল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি হজ করার ইচ্ছে করেছে, সে যেন তাড়াতাড়ি তা করে নেয় (সুনানে আবি দাউদ: ১৭৩২)।
হজ না করার পরিণাম: সামর্থ্য থাকার পরও হজ না করার পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ। ফরজ হজ ত্যাগ করলে ইহুদি-নাসারার মতো মৃত্যু হবে বলে হাদিসে সতর্ক করা হয়েছে।
ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) বলেন, যে ব্যক্তি হজ করার সামর্থ্য রাখে; তবু হজ করে না, সে ইহুদি না খ্রিস্টান হয়ে মৃত্যুবরণ করল, তার কোনো পরোয়া আল্লাহর নেই (তাফসিরে ইবনে কাসির: ১/৫৭৮)। আর কেউ যদি হজ অস্বীকার করে বা কোনো ধরনের অবহেলা প্রদর্শন করে, তাহলে সে আল্লাহর জিম্মার বাইরে বলে বিবেচিত হবে।
আল্লাহতাআলা বলেন, মানুষের মধ্যে যারা সেখানে (বাইতুল্লাহ) পৌঁছার সামর্থ্য রাখে; তাদের ওপর আল্লাহর উদ্দেশে সেই ঘরের হজ করা ফরজ। আর কেউ যদি অস্বীকার করে, তাহলে জেনে রাখা উচিত, আল্লাহতাআলা সৃষ্টিজগতের প্রতি মুখাপেক্ষী নন (সুরা আলে ইমরান: ৯৭)।
অন্যদিকে হাদিসে কুদসিতে মহান আল্লাহ হজ না করার পরিণতি সম্পর্কে বলেছেন, যে বান্দাকে আমি দৈহিক সুস্থতা দিয়েছি এবং আর্থিক প্রাচুর্য দান করেছি, অতঃপর (গড়িমসি করে) তার পাঁচ বছর অতিবাহিত হয়ে যায়। অথচ আমার দিকে (হজব্রত পালন করতে) আগমন করে না, সে অবশ্যই বঞ্চিত (সহিহ ইবনে হিব্বান: ৩৭০৩)।
লেখক: ইসলামি লেখক
আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ