নিজস্ব প্রতিবেদক : সাবেক প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসির পুত্র মুজিবুর রহমান। দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তা শরীফ উদ্দিন কা-ে যার নাম এসেছে। তাকে নিয়ে অতীতেও আছে নানা বিতর্ক। প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। মগবাজারের জনৈক জনশক্তি ব্যবসায়ী সাইদুর রহমানের দুর্নীতি নিয়ে দুদক অনুসন্ধানকালে বারবার তার সাথে তৎকালীন মন্ত্রীপুত্র মুজিবের নাম এসেছে।
গত বছরের ২৯ এপ্রিল চট্টগ্রামের চান্দগাঁও গোলাম আলী নাজির বাড়ির এক নারী চাঁদাবাজি এবং ভিটাসহ বাড়ি দখলের অভিযোগ তোলেন মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে। অবৈধ গ্যাস সংযোগের দায়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলাও হয় তার বিরুদ্ধে। ফের আলোচনায় এলেন সদ্য চাকরিচ্যুত দুদক কর্মকর্তা শরীফ উদ্দিনের ঘটনাতে।
নানা সময় বিতর্কিত কর্মকা-ের অভিযোগ রয়েছে মন্ত্রীপুত্র মুজিবুরের নামে। সবশেষ আলোচনায় এলেন অবৈধ গ্যাস সংযোগ নেয়ার ঘটনায় মামলা হওয়া নিয়ে। দুদকের দায়ের করা মামলার বাদি ছিলেন দুদকের চট্টগ্রাম জেলা সমন্বিত কার্যালয়-১–এর উপসহকারী পরিচালক শরীফ উদ্দিন। সম্প্রতি নানা অভিযোগ তুলে তাকে দুদক থেকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।
জানা যায়, ২০২১ জুনে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলার পর সাবেক মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসির ছেলের প্রতিষ্ঠানের ২২টি অবৈধ গ্যাস–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল)।
দুদকের কাছে অভিযোগ ছিল- সাবেক প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসির ছেলে মুজিবুর রহমান অবৈধভাবে গ্যাস–সংযোগ স্থানান্তর ও নতুন সংযোগ নিয়েছেন পরে অভিযান চালিয়ে অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। পরে চট্টগ্রামে দুদক একটি মামলা করে। এই মামলায় মন্ত্রীপুত্রকেও আসামি করা হয়।
এরআগে গতবছরের এপ্রিলে নুরুল ইসলাম বিএসসির ছেলে মুজিবুর রহমান মুজিবের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও জমি দখলের অভিযোগ ওঠে। চট্টগ্রামের চান্দগাঁওয়ের এক ভুক্তভোগী পরিবার সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশ্যে তার বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ করেছিলেন। পরে ওই ঘটনায় মামলাও করেছিলেন ভুক্তভোগী। অবশ্য মন্ত্রীপুত্রের পক্ষ থেকেও পাল্টা মামলা করা হয় সে সময়।
দুদকের মামলায় বলা হয়, চট্টগ্রাম মহানগরের হালিশহর এলাকার বাসিন্দা এম এ সালাম নামের এক গ্রাহকের নামে বরাদ্দকৃত ১৮টি অব্যবহৃত দ্বৈত চুলার সংযোগ ছিল। তারমধ্যে ১২টি দ্বৈত চুলা নগরের চান্দগাঁও সানোয়ারা আবাসিক এলাকার সাবেক মন্ত্রীপুত্র মুজিবুর রহমানের নামে স্থানান্তর করা হয়। এ জন্য মৃত সালামের স্ত্রী নুরজাহান সালামের নামে ভুয়া চুক্তিনামা তৈরি করা হয়েছিল। যদিও এভাবে সংযোগ স্থানান্তরের কোনো আইনগত বৈধতা নেই।
এদিকে অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পর দুদকের ওই কর্মকর্তাকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (কেজিডিসিএল) সাবেক এমডি আইয়ুব খান চৌধুরীর বিরুদ্ধে।
পরে এই ঘটনায় ‘হত্যা ও চাকরি খাওয়ার হুমকি’ পাওয়ার কথা জানিয়ে চট্টগ্রামের খুলশী থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছিলেন দুদকের অপসারণ হওয়া কর্মকর্তা শরীফ। অভিযোগ করা হচ্ছে-সাবেক মন্ত্রী পুত্রসহ প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেওয়ার কারণে প্রথমে বদলি পরে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে শরীফকে। অবশ্য দুদকের সচিবের বিষয়টি উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, সুনির্দিষ্ট কারণে এবং প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি রক্ষায় আইন অনুযায়ী তাকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়েছে।
২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনে মেয়র পদে বাবা নুরুল ইসলাম বিএসসির সঙ্গে ছেলে মুজিবুর রহমানও মনোনয়ন চেয়ে দলীয় ফরম সংগ্রহ করেছিলেন। এরআগে মহাজোটের শরীক দলের নেতা মঈন উদ্দিন খান বাদলের মৃত্যুর পর চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপ-নির্বাচনেও অংশ নিতে আগ্রহী ছিলেন মুজিবুর রহমান। মুজিবুরের বাবা আওয়ামী লীগ নেতা নুরুল ইসলাম বিএসসি ২০০৮ সালে চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালি) আসন থেকে নির্বাচন করে বিপুল ভোটে জয়ী হন। ওই নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী শামসুল আলমকে ৩৫ হাজারেরও বেশি ভোটে হারিয়ে তিনি জয়লাভ করেন। প্রবীণ এই আওয়ামী লীগ নেতাকে তখন মন্ত্রিসভায় রাখা হবে- এমন আলোচনায় থাকলেও শেষ পর্যন্ত রাখা হয়নি। এদিকে ২০১৪ সালে মহাজোটের স্বার্থে কেন্দ্রের অনুরোধে এ আসনটি জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়াউদ্দীন আহমেদ বাবলুকে ছেড়ে দিয়েছিলেন তিনি। যার পুরস্কার হিসেবে ওই মেয়াদের মাঝামাঝিতে এসে নুরুল ইসলাম বিএসসিকে টেকনোক্রেট কোটায় প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার।
সাবেক মন্ত্রীপুত্র মুজিব হঠাৎ আলোচনায়, দুদকের মামলার আসামিও তিনি…
জনপ্রিয় সংবাদ