নিজস্ব প্রতিবেদক : সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদের বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্যে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচারসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ তদন্তে মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
গতকাল রোববার (১৮ আগস্ট) দুপুরে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমিন। তিনি বলেন, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদের যুক্তরাজ্যে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচারসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, যুক্তরাজ্যে অন্তত ২৬০টি বাড়ি এবং ফ্ল্যাট ও প্লট রয়েছে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর। এসবের জন্য তিনি খরচ করেছেন প্রায় ১৩৪ দশমিক ৭৬ মিলিয়ন পাউন্ড বা ১ হাজার ৮৮৮ কোটি টাকা। এর ১৫৫টির অবস্থান লন্ডনে এবং ৩০টি লিভারপুলে অবস্থিত। এছাড়াও বাকিগুলো স্লফ, সালফোর্ড, গিলিংহাম, ব্রমলি, ক্যাম্বারলে, শেফিল্ড, ম্যানচেস্টার, লিডস, ওয়েম্বলি, টুনব্রিজ ওয়েলস, ডার্টফোর্ড, অক্সব্রিজ, স্টিভেনজ, সেভেনোয়াকস, রমফোর্ড, আইলিংটন, চেমসফোর্ড, বার্মিংহাম, আপমিনিস্টার, রিডিং, হ্যারো, ফ্লিট ও বারনেটে অবস্থিত।
এদিকে যুক্তরাজ্যে তার যে সম্পত্তি রয়েছে, সেগুলো আটটি কোম্পানির মাধ্যমে ক্রয় করেছেন। এগুলোর প্রতিটিতেই সাবেক এই মন্ত্রীর উল্লেখযোগ্য অংশীদারত্ব রয়েছে। কোম্পানিগুলো হলো— আরামিট প্রপার্টিজ, রুখমিলা প্রপার্টিজ, সাদাকাত প্রপার্টিজ, নিউ ভেঞ্চারস (লন্ডন) লিমিটেড, জিটিএস প্রপার্টিজ, জেবা প্রপার্টিজ, জিটিজি প্রপার্টি ভেঞ্চারস লিমিটেড ও জারিয়া প্রপার্টিজ। এসব কোম্পানি ২০১০ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে যুক্তরাজ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এসব সম্পদের বিপরীতে প্রায় ৫৩৭টি সম্পদ মর্টগেজ রেখেছেন, যেগুলোর বেশিরভাগই লন্ডনে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের বিশেষ এক প্রতিবেদনে বলা হয় , বাংলাদেশের সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদ ২০১৬ সাল থেকে তার মালিকানাধীন কোম্পানিগুলো যুক্তরাজ্যে প্রায় ২০০ মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের ৩৫০টিরও বেশি সম্পত্তি নিয়ে তিনি গড়ে তুলেছেন রিয়েল এস্টেট সাম্রাজ্য। যুক্তরাষ্ট্রের ম্যানহাটনেও সাইফুজ্জামান চৌধুরীর অন্তত পাঁচটি প্রোপার্টির সন্ধান পেয়েছে ব্লুমবার্গ। সেখানকার মিউনিসিপ্যাল প্রোপার্টির রেকর্ডস অনুযায়ী, ২০১৮ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে প্রায় ছয় মিলিয়ন ডলারে কেনা হয়েছে এসব সম্পত্তি। ব্রিটেনের ২০১৭ সালের অ্যান্টি-মানি লন্ডারিং আইনে সংজ্ঞায়িত পলিটিক্যালি এক্সপোজড পারসন (পিইপি) ক্যাটাগরিতে পড়েন সাইফুজ্জামান চৌধুরী, যা যুক্তরাজ্যে ব্যবসায়িক লেনদেনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সম্পত্তির এজেন্ট, ঋণদাতা, প্রোপার্টির আইনজীবী এবং অন্যদের ওপর পিইপি শনাক্ত করার পদ্ধতি হিসেবে কাজ করে। এছাড়াও সাইফুজ্জামান চৌধুরীর কেবল যুক্তরাজ্যে থাকা রিয়েল এস্টেট সম্পদ বাংলাদেশের মোট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের অন্তত এক শতাংশের সমান বলে দাবি ব্লুমবার্গের।
অন্যদিকে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশাল বাংলাদেশ (টিআইবি) সূত্র জানায়, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদের যুক্তরাজ্যে ২ হাজার ৩১২ কোটি টাকার ব্যবসা রয়েছে। সূত্র আরো জানায়, সাইফুজ্জামান চৌধুরী ২০১০ সালে প্রথমে একটি কোম্পানি খোলেন, যার বর্তমান সম্পদ মূল্য ১ দশমিক ৭৩ কোটি পাউন্ড। এরপর ২০১৬ সালে আরেকটি কোম্পানি খোলেন, যার বর্তমান সম্পদ মূল্য ৭ দশমিক ৩১ কোটি পাউন্ড। ২০১৯ সালে তৃতীয় কোম্পানি খোলেন, যার বর্তমান সম্পদ মূল্য শূন্য দশমিক ৭৯ কোটি পাউন্ড। তিনি ২০২০ সালে চতুর্থ কোম্পানি চালু করেন, যার সম্পদ মূল্য ২ দশমিক ১৫ কোটি পাউন্ড এবং ২০২১ সালে পঞ্চম ও ষষ্ঠ কোম্পানি খোলেন, যেগুলোর বর্তমান সম্পদ মূল্য ৩ দশমিক ২২ কোটি পাউন্ড।
উল্লেখ্য, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদ ২০১৩ সালে তার প্রয়াত বাবা আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর স্থলাভিষিক্ত হয়ে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। এ সময় তিনি নির্মাণ কোম্পানি আরামিট পিএলসি এবং ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক পিএলসির চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। এর এক বছর পর তিনি ভূমি প্রতিমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হন। মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়ার পর নির্মাণ কোম্পানি আরামিট পিএলসি এবং ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক পিএলসি থেকে পদত্যাগ করেন তিনি।২০১৯ সালে ভূমিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান সাইফুজ্জামান চৌধুরী।