ঢাকা ১২:০১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

সাবেক ভূমিমন্ত্রীর নিজের বাড়ি যেতে কর্ণফুলী টানেল: প্রেস সচিব

  • আপডেট সময় : ০৮:৪৭:৩৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • ২২ বার পড়া হয়েছে

বুধবার ঢাকার পরিকল্পনা কমিশনে ডেভেলপমেন্ট জার্নালিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ-এর আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন প্রেস সচিব শফিকুল আলম। ছবি সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্টগ্রামে কর্ণফুলীর তলদেশে দেশের প্রথম সড়ক টানেলটি মূলত সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর নিজের বাড়ি যাওয়ার জন্য নির্মাণ করা হয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

তার ভাষ, সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বাড়ি চট্টগ্রামের আনোয়ারায়। সেখানে তেমন কিছু নেই। নিজের এলাকায় যাওয়ার জন্য তিনি কর্ণফুলী টানেল প্রকল্প নেন। আপনারা (সাংবাদিকেরা) খোঁজ নিয়ে দেখেন।

বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) পরিকল্পনা কমিশনে ডেভেলপমেন্ট জার্নালিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ (ডিজেএফবি) আয়োজিত এক আলোচনা সভায় শফিকুল আলম এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, আরও ১০ বছর পরে এই টানেল হলে ভালো হত। তখন হয়ত কর্ণফুলীর ওপারে অনেক কিছু হবে। টানেল এলাকায় ৪৫০ কোটি টাকায় সাত তারকা মানের হোটেল করা হয়েছে এবং ‘এটা অপচয়’ বলেও মন্তব্য করেন প্রেস সচিব।
তার ভাষায়, আমরা চাই গভমেন্টের টাকার যেন শ্রাদ্ধ না হয়। গভমেন্টের যে মানি সেটা যেন এফিশিয়েন্টলি ইউজ হয়। এই জায়গাটাই হচ্ছে কথা। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর টানেলটি উদ্বোধন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরদিন সেটি যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। টানেল কর্তৃপক্ষের হিসেবে, প্রথম বছরে প্রতিদিন গড়ে ১৮ হাজার ৪৮৫টি গাড়ি চালাচল করার প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু বর্তমানে প্রতিদিন গাড়ি চলছে গড়ে ৩৯১০টি।

উদ্বোধনের পর দেড় বছর ধরে প্রতিদিন যত যানবাহন টানেলে চলেছে, সেই টোলের টাকায় রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়ের এক-তৃতীয়াংশও মিটছে না। ফলে নদী তলদেশে দেশের প্রথম টানেল এখন ‘লোকসানি’ প্রকল্পে পরিণত হয়েছে। বিশেষজ্ঞরাও এটি কখনই ‘সাসটেইনেবল’ প্রকল্প ছিল না বলে মত দিয়েছেন। তাদের ভাষায়, ‘অপরিকল্পিত চিন্তার বলি’ এই টানেল।

গণআন্দোলনের মুখে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের পতন ঘটে। সে সরকারের নেওয়া মেগা প্রকল্পগুলো পুনর্বিবেচনার কথা বলছে অন্তর্বর্তী সরকার। বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে প্রতিটি প্রকল্পের খরচ ৭০ শতাংশ বাড়ানো হত বলে মন্তব্য করেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব।

তিনি বলেন, ৭০ শতাংশ, প্রত্যেকটা প্রজেক্টের কস্ট ৭০ শতাংশ বেড়েছে। এই যে ৭০ শতাংশ যে বেশি, এর মূল হচ্ছে আপনি চুরির একটা বন্দোবস্ত করছেন। আপনি গ্রামে একটা প্রজেক্ট নিলে এইখানে যাতে আপনার পলিটিক্যাল অপারেটর, আপনি তাকে হ্যাপি করতে চেষ্টা করছেন।

কালকেই তো দেখলাম, আওয়ামী লীগের এক নেত্রী, জান্নাত আরা হেনরী তার একাউন্টে ২ হাজার কোটি টাকার ট্রাঞ্জেকশন হয়েছে। ক্যান ইউ ইমাজিন? মানে ২ হাজার কোটি টাকা তো ভয়ানক রকমের। উনি তো বড় ইন্ডাস্ট্রিলিয়ালিস্ট না। তাহলে বোঝেন কী পরিমাণ চুরি হয়েছে।

জ্বালানি খাতেও ‘ডাকাতির বন্দোবস্ত’ হয়েছিল বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, এক ধরনের ডাকাতির বন্দোবস্ত করা হয়েছিল। একদম স্টেট স্পন্সরড ডাকাতি। এ জায়গায় ক্যাপাসিটি পেমেন্ট সংক্রান্ত আইন ‘স্ক্রাব’ করা হয়েছে তুলে ধরে তিনি বলেন, “নো ইলেকট্রিসিটি নো পে এই সিস্টেমে যেতে চাচ্ছি। যে এই জায়গায় ইনভেস্টমেন্ট, এমন ইনভেস্টমেন্ট আমরা চাচ্ছি, বৈশ্বিক চেঞ্জের সাথে এটা মেলে।”

বৈশ্বিক পরিবর্তনের বিষয়টি তুলে ধরে শফিকুল আলম বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে মনোযোগটা সবার বেশি। তার ভাষায়, অর্থের অপচয় মোকাবিলার জন্য এখন কর বাড়াতে হচ্ছে।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের ক্ষমতা গ্রহণের বিষয়টি তুলে ধরে প্রেস সচিব বলেন, তখন কর-জিডিপি হার কত ছিল আর এখন কত? আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা ছাড়ার পর কর-জিডিপি হার ছিল ৭ দশমিক ৩। পৃথিবীতে কয়টা দেশে এই হার আছে?

যে সমস্ত দেশ সত্যিকার অর্থে একটা ফেইল কেস, ফেইলিউর হয়ে গেছে, তাদের ক্ষেত্রে হতে পারে। যারা মনে করেন, ভাইব্রেন্ট ইকোনমি, সেখানে ট্যাক্স টু জিডিপি ১২, ১৪, ২০ শতাংশের মত। তিনি বলেন, রাজস্ব না থাকলে, বিনিয়োগ হবে কীভাবে? উন্নয়ন প্রকল্প নেবে কীভাবে?

 

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

উত্তেজনা-হাতাহাতির মধ্য দিয়ে ‘বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ’ গঠিত

সাবেক ভূমিমন্ত্রীর নিজের বাড়ি যেতে কর্ণফুলী টানেল: প্রেস সচিব

আপডেট সময় : ০৮:৪৭:৩৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্টগ্রামে কর্ণফুলীর তলদেশে দেশের প্রথম সড়ক টানেলটি মূলত সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর নিজের বাড়ি যাওয়ার জন্য নির্মাণ করা হয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

তার ভাষ, সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বাড়ি চট্টগ্রামের আনোয়ারায়। সেখানে তেমন কিছু নেই। নিজের এলাকায় যাওয়ার জন্য তিনি কর্ণফুলী টানেল প্রকল্প নেন। আপনারা (সাংবাদিকেরা) খোঁজ নিয়ে দেখেন।

বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) পরিকল্পনা কমিশনে ডেভেলপমেন্ট জার্নালিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ (ডিজেএফবি) আয়োজিত এক আলোচনা সভায় শফিকুল আলম এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, আরও ১০ বছর পরে এই টানেল হলে ভালো হত। তখন হয়ত কর্ণফুলীর ওপারে অনেক কিছু হবে। টানেল এলাকায় ৪৫০ কোটি টাকায় সাত তারকা মানের হোটেল করা হয়েছে এবং ‘এটা অপচয়’ বলেও মন্তব্য করেন প্রেস সচিব।
তার ভাষায়, আমরা চাই গভমেন্টের টাকার যেন শ্রাদ্ধ না হয়। গভমেন্টের যে মানি সেটা যেন এফিশিয়েন্টলি ইউজ হয়। এই জায়গাটাই হচ্ছে কথা। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর টানেলটি উদ্বোধন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরদিন সেটি যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। টানেল কর্তৃপক্ষের হিসেবে, প্রথম বছরে প্রতিদিন গড়ে ১৮ হাজার ৪৮৫টি গাড়ি চালাচল করার প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু বর্তমানে প্রতিদিন গাড়ি চলছে গড়ে ৩৯১০টি।

উদ্বোধনের পর দেড় বছর ধরে প্রতিদিন যত যানবাহন টানেলে চলেছে, সেই টোলের টাকায় রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়ের এক-তৃতীয়াংশও মিটছে না। ফলে নদী তলদেশে দেশের প্রথম টানেল এখন ‘লোকসানি’ প্রকল্পে পরিণত হয়েছে। বিশেষজ্ঞরাও এটি কখনই ‘সাসটেইনেবল’ প্রকল্প ছিল না বলে মত দিয়েছেন। তাদের ভাষায়, ‘অপরিকল্পিত চিন্তার বলি’ এই টানেল।

গণআন্দোলনের মুখে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের পতন ঘটে। সে সরকারের নেওয়া মেগা প্রকল্পগুলো পুনর্বিবেচনার কথা বলছে অন্তর্বর্তী সরকার। বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে প্রতিটি প্রকল্পের খরচ ৭০ শতাংশ বাড়ানো হত বলে মন্তব্য করেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব।

তিনি বলেন, ৭০ শতাংশ, প্রত্যেকটা প্রজেক্টের কস্ট ৭০ শতাংশ বেড়েছে। এই যে ৭০ শতাংশ যে বেশি, এর মূল হচ্ছে আপনি চুরির একটা বন্দোবস্ত করছেন। আপনি গ্রামে একটা প্রজেক্ট নিলে এইখানে যাতে আপনার পলিটিক্যাল অপারেটর, আপনি তাকে হ্যাপি করতে চেষ্টা করছেন।

কালকেই তো দেখলাম, আওয়ামী লীগের এক নেত্রী, জান্নাত আরা হেনরী তার একাউন্টে ২ হাজার কোটি টাকার ট্রাঞ্জেকশন হয়েছে। ক্যান ইউ ইমাজিন? মানে ২ হাজার কোটি টাকা তো ভয়ানক রকমের। উনি তো বড় ইন্ডাস্ট্রিলিয়ালিস্ট না। তাহলে বোঝেন কী পরিমাণ চুরি হয়েছে।

জ্বালানি খাতেও ‘ডাকাতির বন্দোবস্ত’ হয়েছিল বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, এক ধরনের ডাকাতির বন্দোবস্ত করা হয়েছিল। একদম স্টেট স্পন্সরড ডাকাতি। এ জায়গায় ক্যাপাসিটি পেমেন্ট সংক্রান্ত আইন ‘স্ক্রাব’ করা হয়েছে তুলে ধরে তিনি বলেন, “নো ইলেকট্রিসিটি নো পে এই সিস্টেমে যেতে চাচ্ছি। যে এই জায়গায় ইনভেস্টমেন্ট, এমন ইনভেস্টমেন্ট আমরা চাচ্ছি, বৈশ্বিক চেঞ্জের সাথে এটা মেলে।”

বৈশ্বিক পরিবর্তনের বিষয়টি তুলে ধরে শফিকুল আলম বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে মনোযোগটা সবার বেশি। তার ভাষায়, অর্থের অপচয় মোকাবিলার জন্য এখন কর বাড়াতে হচ্ছে।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের ক্ষমতা গ্রহণের বিষয়টি তুলে ধরে প্রেস সচিব বলেন, তখন কর-জিডিপি হার কত ছিল আর এখন কত? আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা ছাড়ার পর কর-জিডিপি হার ছিল ৭ দশমিক ৩। পৃথিবীতে কয়টা দেশে এই হার আছে?

যে সমস্ত দেশ সত্যিকার অর্থে একটা ফেইল কেস, ফেইলিউর হয়ে গেছে, তাদের ক্ষেত্রে হতে পারে। যারা মনে করেন, ভাইব্রেন্ট ইকোনমি, সেখানে ট্যাক্স টু জিডিপি ১২, ১৪, ২০ শতাংশের মত। তিনি বলেন, রাজস্ব না থাকলে, বিনিয়োগ হবে কীভাবে? উন্নয়ন প্রকল্প নেবে কীভাবে?