ঢাকা ০৭:১৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৭ মে ২০২৫

সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুলের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদের মামলা

  • আপডেট সময় : ০৯:০৩:৫৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ জানুয়ারী ২০২৫
  • ৬১ বার পড়া হয়েছে

সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক- ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক: সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন, দুদক।

মামলায় তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে ১৪৬ কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। এছাড়া ৬৬৫ কোটি টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের অভিযোগ এনেছেন দুদক।

বুধবার (১ জানুয়ারি) দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ এ সংস্থার উপ-পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে মামলাটি করেছেন।

মামলার তথ্য দিয়ে এর বিষয়বস্তু সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেছেন দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন।

আনিসুলের বিরুদ্ধে করা এই মামলায় ২০১৪ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত জানা আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ১৪৬ কোটি ১৯ লাখ ৭০ হাজার ৯৬ টাকার সম্পদ অর্জনের কথা বলা হয়েছে।

এছাড়া তার বিরুদ্ধে নিজের নামে ও তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নামে ২৯টি ব্যাংক হিসাবে ৩৪৯ কোটি ১৫ লাখ ২১ হাজার ৫৮২ টাকা জমা ও ৩১৬ কোটি ৪৮ লাখ ৮১ হাজার ৬০৮ টাকা উত্তোলনের অভিযোগ আনা হয়েছে।

এ বিষয়ে এজাহারে বলা হয়েছে, ৬৬৫ কোটি ৬৪ লাখ ৩ হাজার ১৯০ টাকার এই সন্দেহজনক লেনদেন অর্থ পাচারের সঙ্গে সম্পৃক্ত অপরাধ।

দুদক কর্মকর্তা আক্তার হোসেন বলেছেন, আনিসুল হকর বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪- এর ২৭(১) ধারা, মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ হাতে পেয়ে গত ৭ অক্টোবর অনুসন্ধানে নামার তথ্য দিয়েছিল দুদক।

তার সহযোগী হিসেবে পরিচিত অ্যাডভোকেট তৌফিকা করিমের বিরুদ্ধেও অনুসন্ধান শুরুর কথা বলেছিলেন কমিশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা ও উপপরিচালক আকতারুল ইসলাম।

তিনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “গোয়েন্দা তথ্যানুসন্ধানে তাদের বিরুদ্ধে পাওয়া অভিযোগ প্রাথমিকভাবে সঠিক পরিলক্ষিত হওয়ায় প্রকাশ্য অনুসন্ধানের জন্য কমিশন কর্তৃক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।”

দুদকের দায়ের করা মামলায় আনিসুল হকের সম্পদের বিষয়ে বলা হয়েছে, তিনি নিজের নামে ৯৩ লাখ ১১ হাজার ৮৫৮ টাকার স্থাবর সম্পদ অর্জন করেন। সেগুলো হচ্ছে- রাজধানীর বনানীতে বাড়ি, ময়মনসিংহে এক একর এবং ২২ দশমিক ৫০ শতাংশ জমি, পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ৮ কাঠার প্লট।

তবে সাবেক এই মন্ত্রীর ১৫১ কোটি ৯২ লাখ ৫৬ লাখ ৪৪৬ টাকার অস্থাবর সম্পদ থাকা কথা বলা হয়েছে এজাহারে।

এতে বলা হয়, তার নামে সিটিজেন ব্যাংকের ৪০ কোটি টাকার শেয়ার, এক্সিম ব্যাংকের ১০ লাখ টাকার শেয়ার রয়েছে।

গুলশানে বাড়ির কেনার ৫৫ লাখ টাকা ও বনানীতে আরেকটি বাড়ি কেনার জন্য ২ কোটি টাকা অগ্রিম দিয়েছেন তিনি।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আনিসুল হকের নামে সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা দামের পাঁচটি গাড়ি, ৫০ হাজার টাকার আসবাবপত্র, অগ্রণী ব্যাংকের বনানী শাখায় ৫০ লাখ টাকা জমা, ব্র্যাক ব্যাংকের বনানী শাখায় ৫০ লাখ টাকা জমা, একই ব্যাংকে ২ কোটি টাকা গোল্ডেন ফিক্স ডিপোজিট ছাড়াও ডাচ বাংলা ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্সিয়াল ব্যাংকসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে মোট ৭১ কোটি ৯৬ লাখ ৮৬ হাজার টাকার সম্পদ রয়েছে।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আট দিনের মাথায় ১৩ আগস্ট ঢাকার সদরঘাট থেকে আনিসুল হককে গ্রেপ্তারের তথ্য দেয় পুলিশ।

কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে ১৬ জুলাই ঢাকা কলেজের সামনে হতাহতের ঘটনায় নিউ মার্কেট থানার এক মামলায় ‘ইন্ধনদাতা’ হিসেবে তাকে গ্রেপ্তারের কথা বলা হয়।

তার সঙ্গে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা ও বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমানকেও গ্রেপ্তারের তথ্য দেওয়া হয় ওইদিন।

২০১৪ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (কসবা-আখাউড়া) আসনে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আনিসুল হক। সে সময় তাকে আইনমন্ত্রী করা হয়।

২০১৮ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ওই আসনে তিনি আবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর তাকে একই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়।

সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও একই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আনিসুল হক। তৃতীয়বারের মত তাকে আইনমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুলের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদের মামলা

আপডেট সময় : ০৯:০৩:৫৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ জানুয়ারী ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক: সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন, দুদক।

মামলায় তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে ১৪৬ কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। এছাড়া ৬৬৫ কোটি টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের অভিযোগ এনেছেন দুদক।

বুধবার (১ জানুয়ারি) দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ এ সংস্থার উপ-পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে মামলাটি করেছেন।

মামলার তথ্য দিয়ে এর বিষয়বস্তু সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেছেন দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন।

আনিসুলের বিরুদ্ধে করা এই মামলায় ২০১৪ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত জানা আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ১৪৬ কোটি ১৯ লাখ ৭০ হাজার ৯৬ টাকার সম্পদ অর্জনের কথা বলা হয়েছে।

এছাড়া তার বিরুদ্ধে নিজের নামে ও তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নামে ২৯টি ব্যাংক হিসাবে ৩৪৯ কোটি ১৫ লাখ ২১ হাজার ৫৮২ টাকা জমা ও ৩১৬ কোটি ৪৮ লাখ ৮১ হাজার ৬০৮ টাকা উত্তোলনের অভিযোগ আনা হয়েছে।

এ বিষয়ে এজাহারে বলা হয়েছে, ৬৬৫ কোটি ৬৪ লাখ ৩ হাজার ১৯০ টাকার এই সন্দেহজনক লেনদেন অর্থ পাচারের সঙ্গে সম্পৃক্ত অপরাধ।

দুদক কর্মকর্তা আক্তার হোসেন বলেছেন, আনিসুল হকর বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪- এর ২৭(১) ধারা, মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ হাতে পেয়ে গত ৭ অক্টোবর অনুসন্ধানে নামার তথ্য দিয়েছিল দুদক।

তার সহযোগী হিসেবে পরিচিত অ্যাডভোকেট তৌফিকা করিমের বিরুদ্ধেও অনুসন্ধান শুরুর কথা বলেছিলেন কমিশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা ও উপপরিচালক আকতারুল ইসলাম।

তিনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “গোয়েন্দা তথ্যানুসন্ধানে তাদের বিরুদ্ধে পাওয়া অভিযোগ প্রাথমিকভাবে সঠিক পরিলক্ষিত হওয়ায় প্রকাশ্য অনুসন্ধানের জন্য কমিশন কর্তৃক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।”

দুদকের দায়ের করা মামলায় আনিসুল হকের সম্পদের বিষয়ে বলা হয়েছে, তিনি নিজের নামে ৯৩ লাখ ১১ হাজার ৮৫৮ টাকার স্থাবর সম্পদ অর্জন করেন। সেগুলো হচ্ছে- রাজধানীর বনানীতে বাড়ি, ময়মনসিংহে এক একর এবং ২২ দশমিক ৫০ শতাংশ জমি, পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ৮ কাঠার প্লট।

তবে সাবেক এই মন্ত্রীর ১৫১ কোটি ৯২ লাখ ৫৬ লাখ ৪৪৬ টাকার অস্থাবর সম্পদ থাকা কথা বলা হয়েছে এজাহারে।

এতে বলা হয়, তার নামে সিটিজেন ব্যাংকের ৪০ কোটি টাকার শেয়ার, এক্সিম ব্যাংকের ১০ লাখ টাকার শেয়ার রয়েছে।

গুলশানে বাড়ির কেনার ৫৫ লাখ টাকা ও বনানীতে আরেকটি বাড়ি কেনার জন্য ২ কোটি টাকা অগ্রিম দিয়েছেন তিনি।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আনিসুল হকের নামে সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা দামের পাঁচটি গাড়ি, ৫০ হাজার টাকার আসবাবপত্র, অগ্রণী ব্যাংকের বনানী শাখায় ৫০ লাখ টাকা জমা, ব্র্যাক ব্যাংকের বনানী শাখায় ৫০ লাখ টাকা জমা, একই ব্যাংকে ২ কোটি টাকা গোল্ডেন ফিক্স ডিপোজিট ছাড়াও ডাচ বাংলা ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্সিয়াল ব্যাংকসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে মোট ৭১ কোটি ৯৬ লাখ ৮৬ হাজার টাকার সম্পদ রয়েছে।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আট দিনের মাথায় ১৩ আগস্ট ঢাকার সদরঘাট থেকে আনিসুল হককে গ্রেপ্তারের তথ্য দেয় পুলিশ।

কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে ১৬ জুলাই ঢাকা কলেজের সামনে হতাহতের ঘটনায় নিউ মার্কেট থানার এক মামলায় ‘ইন্ধনদাতা’ হিসেবে তাকে গ্রেপ্তারের কথা বলা হয়।

তার সঙ্গে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা ও বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমানকেও গ্রেপ্তারের তথ্য দেওয়া হয় ওইদিন।

২০১৪ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (কসবা-আখাউড়া) আসনে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আনিসুল হক। সে সময় তাকে আইনমন্ত্রী করা হয়।

২০১৮ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ওই আসনে তিনি আবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর তাকে একই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়।

সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও একই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আনিসুল হক। তৃতীয়বারের মত তাকে আইনমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়।