ইলিশ মাছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালোরি রয়েছে। এছাড়া পটাশিয়াম, আয়রন, ফসফরাস, সোডিয়াম, জিংক, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন এ, ভিটামিন ডি পাওয়া যায় এই মাছ থেকে। রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড। আমাদের শরীরের প্রয়োজনীয় সবটুকু ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড আমরা এই মাছটি থেকেই পেতে পারি। ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যসিড আলসার, কোলাইটিসের হাত থেকে রক্ষা করে। ব্রেন- মস্তিষ্কের ৬০% তৈরি ফ্যাট দিয়ে, যার অধিকাংশই ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড। যারা নিয়মিত মাছ খান তাদের মধ্যে বয়স কালে ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা অনেক কম দেখা যায়। শিশুদের মস্তিষ্কের গঠনেও সাহায্য করে ডিএইচএ। স্মৃতিশক্তি, পড়াশোনায় মনযোগ বাড়ায় ইলিশ মাছ। অনেকেইরই পছন্দ ইলিশ মাছের ডিম। ইলিশ মাছ সারা বছর ডিম দিলেও প্রধানত অক্টোবর এবং জানুয়ারি ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম। বিশেষজ্ঞদের মতে, আশ্বিনের পূর্ণিমার সময়ে বেশিরভাগ ইলিশ ডিম ছাড়ে। ইলিশ মাছ সাগরবাসী হলেও এ সময় প্রচুর মা ইলিশ ডিম ছাড়তে নদীতে ছুটে আসে। এ সময় মা ইলিশ ধরা সম্পূর্ণ নিষেধ। যেহেতু ইলিশ মাছ সারা বছরই ডিম দেয় সেজন্য বাজারে ইলিশ মাছে প্রচুর ডিম পাওয়া যায়। কিন্তু এই ইলিশ মাছের ডিমের গুণাগুণ সম্পর্কে আপনার কোনও ধারণা আছে? ইলিশ মাছের ডিম পুষ্টিগুণে ভরপুর বলে দাবি বিশেষজ্ঞদের। ডিমের বিভিন্ন উপাদান শরীরের বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে পারে।
ইলিশের ডিমে থাকা ইপিএ, ডিএইচ এবং ডিপিএ মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের উন্নতিসাধনে উপকারী। ইলিশ মাছ ও ডিমে রয়েছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড। এটি রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের উপসর্গ দূর করতে সাহায্য করে। পুষ্টিবিদরা ইলিশ মাছের চর্বিকে ভাল চর্বি হিসেবেই বিবেচনা করেন। ১০০ গ্রামের ইলিশ মাছে প্রায় ২১.৮ গ্রাম প্রোটিনের পাশাপাশি রয়েছে উচ্চ পরিমাণ ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, নায়সিন, ট্রিপ্টোফ্যান, ভিটামিন, বি ১২, সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়ামসহ অন্যান্য ভিটামিন ও মিনারেলস। এছাড়াও রয়েছে অনেক ভিটামিন এবং মিনারেলস। জেনে নিন মাছের ডিমের উপকারিতা।
হার্টের অসুখ প্রতিরোধ করে: ইলিশ মাছের ডিমে থাকা ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ভিটামিন ডি হার্টের অসুখ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে: ইলিশ মাছের ডিমের ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড দেহের ভেতরে রক্ত জমাট বাঁধতে না দেওয়া এবং প্রদাহ হ্রাস করতে সহায়তা করে, যা উচ্চ রক্তচাপের হাত থেকে দেহকে রক্ষা করে।
মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য উন্নতি করে: ইলিশ মাছের ডিমের মধ্যে থাকা ইপিএ, ডিএইচ এবং ডিপিএ (এক ধরনের ফ্যাটি অ্যাসিড) মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য উন্নতি করতে সহায়তা করে।
রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস হ্রাস করে: গবেষকদের মতে, ইলিশ মাছের ডিমে থাকা ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিসের লক্ষণগুলো হ্রাস করতে সহায়তা করে।
চোখ ভালো রাখে: ইলিশ মাছের ডিমের মধ্যে থাকা ভিটামিন-এ চোখ ভালো রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া ডিএইচএ এবং ইপিএ শিশুদের চোখের জ্যোতি বৃদ্ধি করতে ও রেটিনার কার্যকারিতাকে উন্নত করতে গুরুত্বপূর্ণ।
অ্যানিমিয়া থেকে মুক্তি: ইলিশ মাছের ডিমে থাকা স্বাস্থ্যকর উপাদানগুলো রক্ত পরিষ্কার করে এবং হিমোগ্লোবিন বাড়িয়ে তোলে, যা অ্যানিমিয়া থেকে মুক্তি পেতে খুবই সহায়ক।
হাড় শক্ত করতে: ইলিশ মাছের ডিমের মধ্যে থাকে ভিটামিন ডি, যা হাড়কে শক্ত করতে সাহায্য করে। পাশাপাশি দাঁতকে মজবুত ও ভালো রাখতে সাহায্য করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে: ইলিশ মাছের পাশাপাশি মাছের ডিমে থাকা প্রয়োজনীয় উপাদান শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
স্বাদ অটুট রাখতে ইলিশ রান্নার আগের ৬ টিপস: স্বাদে ও গন্ধে অতুলনীয় ইলিশ মাছ। তবে রান্নার ভুলে এই স্বাদ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। কিছু কৌশল মনে রেখে রান্না করুন ইলিশ মাছ। দুর্দান্ত হবে খেতে।
১। ইলিশ মাছ অতিরিক্ত ধোবেন না বা পানিতে ভিজিয়ে রাখবেন না। ২। মসলা নিয়ে বেশি পরীক্ষানিরীক্ষার প্রয়োজন নেই। কড়া উপাদানে ইলিশের সুবাস চলে যায়। তবে সর্ষে ব্যতিক্রমী। ইলিশ ও সর্ষের মিশেল স্বাদ আরও বাড়ায়। ৩। ইলিশ মাছ বেশি ভাজবেননা। যদি শুধু ভাজাই খেতে চান তবে ভেজে নিন কড়া করে। ঝোল, ভাপা বা অন্য কোনও পদ করলে ইলিশ ভাজুন সামান্য। না ভেজে রান্না করলেও চমৎকার লাগবে খেতে। ৪। খুব বেশিক্ষণ আগুনের আঁচে রাখবেন না ইলিশ। অর্থাৎ খুব বেশি সময় ধরে রান্না করবেন না। এতে মাছের স্বাদ ও গন্ধ কমে যায়। ৫। আসল স্বাদ পেতে চাইলে টাটকা ইলিশ রান্না করুন। বেশিদিন ফ্রিজে রেখে দিলে স্বাদ ও গন্ধে প্রভাব পড়ে। ৬। না ভেজে পেঁয়াজ দিয়ে ইলিশ মাছের পাতলা ঝোল রান্না করতে পারেন। পদটি খেতে খুবই সুস্বাদু।
বেগুন দিয়ে ইলিশের ঝোল রান্না: ইলিশ সুস্বাদু মাছ। এটি যেকোনো সবজির সঙ্গেই খেতে চমৎকার লাগে। বিশেষ করে ইলিশ মাছের সঙ্গে বেগুন দিয়ে ঝোল রান্না করলে খেতে অপূর্ব হয়। তবে যেকোনোভাবে তৈরি করলেই হবে না। বেগুন দিয়ে ইলিশের ঝোল রান্না করার জন্য রেসিপি জানা থাকা চাই। নয়তো ভুলভাল রেসিপিতে রান্না করলে এর স্বাদ নষ্ট হতে পারে। চলুন জেনে নেওয়া যাক রেসিপি-
তৈরি করতে যা লাগবে: ইলিশ মাছ- ৬ টুকরা, বেগুন- পরিমাণমতো, মরিচ গুঁড়া- ১-২ চা চামচ, হলুদ গুঁড়া- ১/২ চা চামচ, ধনিয়া গুঁড়া- ১/২ চা চামচ, জিরা গুঁড়া- ১/২ চা চামচ, কালো জিরা- ১/২ চা চামচ, লবণ- স্বাদ মতো, সরিষার তেল- পরিমাণমতো, ভাজা জিরা গুঁড়া- ১/২ চা চামচ, গোল মরিচ গুঁড়া- ১/২ চা চামচ, কাঁচা মরিচ- স্বাদ মতো, গোল মরিচ- ৩-৪ টি।
যেভাবে তৈরি করবেন: কড়াইতে সরিষার তেল গরম করে বেগুন হালকা করে ভেজে নিন। ভাজা বেগুনগুলো আলাদা করে তুলে রাখুন। এবার তেলে মরিচ ও কালো জিরা ফোড়ন দিয়ে একে একে গোল মরিচ, হলুদ গুঁড়া, ধনিয়া ও জিরা গুঁড়া, লবণ দিয়ে কষিয়ে পরিমাণমতো পানি দিন। এবার ঢিমে আঁচে ফুটতে দিন। ঝোল ফুটে এলে তাতে ইলিশ মাছের টুকরা দিন। যোগ করুন ভেজে রাখা বেগুন। সব সেদ্ধ হয়ে এলে ভাজা জিরা গুঁড়া ও গোল মরিচ গুঁড়া ছড়িয়ে নামিয়ে নিলেই প্রস্তুত বেগুন দিয়ে ইলিশের ঝোল।