নিজস্ব প্রতিবেদক : আলী আকবর হীরা ও শেরে আলী জিতু। হীরার বয়স ৫০ বছর। জিতুর বয়স ২০। তারা পিতা-পুত্র। তাদের পরিচয় তুলে ধরার কারণ হলো এই পিতা-পুত্রের পেশার ধরন। দুজনে মিলে গড়ে তুলেছেন অভিনব প্রতারণার এক ফাঁদ। পুত্র শেরে আলী জিতু কাজ করতেন সংগ্রাহকের ভূমিকায়। আর বাবা আলী আকবর হীরা নারীকণ্ঠে সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতেন।
গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারের পর বেরিয়ে এসেছে পিতা-পুত্রের ভয়ংকর প্রতারণার চিত্র। জিতু ভিআইপি বা বিশেষ সিরিজের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে অভিনব কায়দায় সেই নম্বর ব্যবহারকারীর নাম পরিচয় বের করে তুলে দেন বাবা হীরার কাছে। এরপর হীরা মোবাইলের ম্যাজিক ভয়েস অপশন ব্যবহার করে নারীকণ্ঠে আত্মীয় পরিচয়ে ফোন করেন ব্যবহারকারীদের। সাধারণ কিছু আলাচারিতার পরে দূর সম্পর্কের আত্মীয়কে জরুরি হাসপাতালে ভর্তি করাসহ বিভিন্ন সমস্যার কথা বলে ৫ হাজার টাকা পাঠাতে বলতেন। এভাবে প্রতারণার প্রাথমিক ফাঁদে কেউ পা দিলেই শুরু হতো ধাপে ধাপে টাকা আদায়।
স্বজনকে সহযোগিতার কথা বলে ৫ হাজার টাকা নেওয়ার পরে আবার কল দিয়ে বলা হতো ভুল করে ৫ হাজার চেয়েছি, আসলে ১০ হাজার টাকা প্রয়োজন। ১০ হাজার টাকা পাঠানোর পরে আবার ভিন্ন কৌশলে আরো টাকা আদায় করা হতো। যতক্ষণ না ভুক্তভোগীরা বুঝতে পারছেন যে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন ততক্ষণ পর্যন্ত প্রতারণার মাধ্যমে টাকা আদায় চলতো বাবা-ছেলের। এমন অভিনব প্রতারণার বিষয়টি ঢাকা টাইমসকে জানিয়েছেন, ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের (সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম) অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) জুনায়েদ আলম সরকার। তিনি বলেন, সম্প্রতি এক নারী এই চক্রের হাতে প্রতারণার শিকার হয়েছেন। দূর সম্পর্কের এক আত্মীয়কে হাসপাতালে ভর্তির কথা বলে তার কাছ থেকে চার ধাপে ২০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় চক্রটি। টাকা নিয়ে মোবাইল বন্ধ করে দেয়ার পর ওই নারী বুঝতে পারেন যে তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন। এরপর ওই নারী রাজধানীর কাফরুল থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করেন। পরে গোয়েন্দা পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে পিতা-পুত্রের কুকীর্তি।
জুনায়েদ আলম সরকার বলেন, পিতা-পুত্র মিলে একটি চক্র তৈরি করেছে। প্রতারণার মাধ্যমে আয় করা টাকা তাদের বাসার আশেপাশে থাকা বিকাশের এজেন্ট নম্বরে আনতেন। পরে জিতু সুযোগ বুঝে টাকা তুলে আনতেন। আবার কখনো কখনো নিজেদের নগদ অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করে সুবিধা মতো ব্যবহার করতেন তারা। গোয়েন্দা পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, বাবা-ছেলে মিলে সাত বছর ধরে এই প্রতারণা চালিয়ে আসছিল। এই প্রতারণাই তাদের একমাত্র পেশা। প্রতারণার মাধ্যমে মানুষের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
একটি নথিতে দেখা গেছে, ০১৭১১১, ০১৬১১১, ০১৯১১১* সিরিয়ালের নম্বর সংগ্রহ করে বিশেষ একটি অ্যাপ দিয়ে ব্যবহারকারীর নাম জেনে নিতো জিতু। এরপর হীরা সেই নম্বরে কল দিয়ে নানা সমস্যার কথা বলে আত্মীয়ের পরিচয়ে টাকা আদায় করতো। নথিতে উল্লেখ থাকা ১৭ টি নম্বর থেকে বাবা-ছেলে মিলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে জানিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ। দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণা করে এলেও জিতুর বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। কিন্তু হীরার বিরুদ্ধে শাহবাগ ও ডিএমপির কোতোয়ালি থানায় দুটি মামলা রয়েছে বলে জানান গোয়েন্দা পুলিশের এ কর্মকর্তা। তিনি আরো জানান, রাজধানীর পুরান ঢাকার কোতোয়ালি থানা এলাকা থেকে পিতা-পুত্রকে গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় তাদের কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ৩ টি মোবাইল ফোন সেট ও ৪ টি সিম উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া প্রতারণার মাধ্যমে আয় করা টাকার অস্বাভাকি লেনদেনের প্রমাণ পেয়েছে গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা।
সাত বছর ধরে বাবা-ছেলের প্রতারণা বাণিজ্য
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ