ঢাকা ০২:৫৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৮ মে ২০২৫

সাত বছরে নৌপথে ৪৭৯১ দুর্ঘটনা, ৪২৩৮ প্রাণহানি

  • আপডেট সময় : ১২:৫৭:৩৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ৪ এপ্রিল ২০২২
  • ৬৮ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশে গত সাত বছরে চার হাজার ৭৯১টি নৌ দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় চার হাজার ২৩৮ জনের প্রাণহানি হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও দুই হাজার ৭১৪ জন। নৌপথে দুর্ঘটনাগুলোর প্রায় ৫৪ শতাংশই অন্য নৌযানের সঙ্গে সংঘর্ষ ও ধাক্কা লেগে হয়েছে। বাকি দুর্ঘটনার কারণ বৈরী আবহাওয়া, অতিরিক্ত যাত্রী বহন, লঞ্চের তলা ফেটে, যান্ত্রিক ত্রুটি, আগুন ও বিস্ফোরণ। সবচেয়ে বেশি নৌ দুর্ঘটনা ঘটেছে ঢাকা বিভাগে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
তথ্য মতে, গত ২০ মার্চ নারায়ণগঞ্জ সদরের সৈয়দপুর এলাকায় কার্গো জাহাজের ধাক্কায় শীতলক্ষ্যা নদীতে এমভি রুপসী-৯ নামে একটি লঞ্চ ডুবে যায়। এতে ১১ জনের প্রাণহানি হয়।
২০২১ সালের জুন মাসে বুড়িগঙ্গা নদীতে একটি ছোট লঞ্চের ওপর এমভি ময়ূর-২ নামে জাহাজ উঠে গেলে লঞ্চটির ৩৪ যাত্রীর প্রাণহানি হয়। একই বছরের ডিসেম্বরের শেষে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে মধ্যরাতে যাত্রীবাহী লঞ্চ এমভি অভিযান-১০-এ ভয়াবহ অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটে। এতে ৪৪ জনের মৃত্যু হয়। আহত হন আরও শতাধিক যাত্রী।
নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০১৬ সাল থেকে যেসব লঞ্চ দুর্ঘটনা ঘটেছে তার প্রায় ৫৪ শতাংশই অন্য নৌযানের সঙ্গে সংঘর্ষ ও ধাক্কা লেগে। বৈরী আবহাওয়ার কারণে ২৩ শতাংশ, বাকি ২৩ শতাংশ দুর্ঘটনা অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন, লঞ্চের তলা ফেটে, যান্ত্রিক ত্রুটি, আগুন ও বিস্ফোরণের কারণে।
এ বিষয়ে নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের প্রধান পরিদর্শক মো. শফিকুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘নৌ দুর্ঘটনা রোধে লঞ্চচালক ও যাত্রী সবাইকেই সচেতন হতে হবে। চালকরা সাবধানে লঞ্চ চালালে অনেক দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব। আমরা লঞ্চ দুর্ঘটনার যে কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করেছি, তার মধ্যে অন্য নৌযানের সঙ্গে ধাক্কা, অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন, বৈরী আবহাওয়ায় লঞ্চ চালনা দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। এছাড়া আগুন ও বিস্ফোরণ, মানবসৃষ্ট ভুল, নৌরুট ও বন্দরের দুর্বল ব্যবস্থাপনাও রয়েছে৷’
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ লঞ্চে সার্ভে সনদ ও রুট পারমিট প্রদান, অতিরিক্ত যাত্রী ও অদক্ষ চালকসহ নানা কারণে নৌপথে দুর্ঘটনা ঘটে। বাসের মতো লঞ্চেও মনিটরিং ব্যবস্থা না থাকায় ঝুঁকিপূর্ণ ইঞ্জিন বা বডি নিয়ে অসংখ্য যাত্রীর জীবন নিয়ে খেলছেন লঞ্চমালিক ও চালকরা।
প্রতিটি তদন্ত কমিটি দুর্ঘটনার কারণ, দায়ী ব্যক্তি চিহ্নিতকরণ, ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা রোধের উপায় বা প্রতিকার এবং কিছু সুপারিশ করলেও সেগুলো আলোর মুখ দেখে না।’
জানা গেছে, ‘অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল আইন, ২০২১’ নামে একটি খসড়া আইন প্রণয়নের মধ্যেই তা আটকে রয়েছে। এই খসড়া আইনটির ৭৩ ধারায় অপরাধ ও দ-ের বিষয়ে সর্বোচ্চ শাস্তি পাঁচ বছর পর্যন্ত কারাদ- বা তিন লাখ টাকা অর্থদ- বা উভয় দ-ের বিধান রাখা হয়েছে। আইনের ৮০ ধারায় কোম্পানির পরিচালকদেরও সংশ্লিষ্ট দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে দায়ী করে শাস্তি দেওয়ার বিধান রয়েছে। তবে এখনো চূড়ান্ত হয়নি আইনটি।

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

সাত বছরে নৌপথে ৪৭৯১ দুর্ঘটনা, ৪২৩৮ প্রাণহানি

আপডেট সময় : ১২:৫৭:৩৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ৪ এপ্রিল ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশে গত সাত বছরে চার হাজার ৭৯১টি নৌ দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় চার হাজার ২৩৮ জনের প্রাণহানি হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও দুই হাজার ৭১৪ জন। নৌপথে দুর্ঘটনাগুলোর প্রায় ৫৪ শতাংশই অন্য নৌযানের সঙ্গে সংঘর্ষ ও ধাক্কা লেগে হয়েছে। বাকি দুর্ঘটনার কারণ বৈরী আবহাওয়া, অতিরিক্ত যাত্রী বহন, লঞ্চের তলা ফেটে, যান্ত্রিক ত্রুটি, আগুন ও বিস্ফোরণ। সবচেয়ে বেশি নৌ দুর্ঘটনা ঘটেছে ঢাকা বিভাগে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
তথ্য মতে, গত ২০ মার্চ নারায়ণগঞ্জ সদরের সৈয়দপুর এলাকায় কার্গো জাহাজের ধাক্কায় শীতলক্ষ্যা নদীতে এমভি রুপসী-৯ নামে একটি লঞ্চ ডুবে যায়। এতে ১১ জনের প্রাণহানি হয়।
২০২১ সালের জুন মাসে বুড়িগঙ্গা নদীতে একটি ছোট লঞ্চের ওপর এমভি ময়ূর-২ নামে জাহাজ উঠে গেলে লঞ্চটির ৩৪ যাত্রীর প্রাণহানি হয়। একই বছরের ডিসেম্বরের শেষে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে মধ্যরাতে যাত্রীবাহী লঞ্চ এমভি অভিযান-১০-এ ভয়াবহ অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটে। এতে ৪৪ জনের মৃত্যু হয়। আহত হন আরও শতাধিক যাত্রী।
নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০১৬ সাল থেকে যেসব লঞ্চ দুর্ঘটনা ঘটেছে তার প্রায় ৫৪ শতাংশই অন্য নৌযানের সঙ্গে সংঘর্ষ ও ধাক্কা লেগে। বৈরী আবহাওয়ার কারণে ২৩ শতাংশ, বাকি ২৩ শতাংশ দুর্ঘটনা অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন, লঞ্চের তলা ফেটে, যান্ত্রিক ত্রুটি, আগুন ও বিস্ফোরণের কারণে।
এ বিষয়ে নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের প্রধান পরিদর্শক মো. শফিকুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘নৌ দুর্ঘটনা রোধে লঞ্চচালক ও যাত্রী সবাইকেই সচেতন হতে হবে। চালকরা সাবধানে লঞ্চ চালালে অনেক দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব। আমরা লঞ্চ দুর্ঘটনার যে কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করেছি, তার মধ্যে অন্য নৌযানের সঙ্গে ধাক্কা, অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন, বৈরী আবহাওয়ায় লঞ্চ চালনা দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। এছাড়া আগুন ও বিস্ফোরণ, মানবসৃষ্ট ভুল, নৌরুট ও বন্দরের দুর্বল ব্যবস্থাপনাও রয়েছে৷’
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ লঞ্চে সার্ভে সনদ ও রুট পারমিট প্রদান, অতিরিক্ত যাত্রী ও অদক্ষ চালকসহ নানা কারণে নৌপথে দুর্ঘটনা ঘটে। বাসের মতো লঞ্চেও মনিটরিং ব্যবস্থা না থাকায় ঝুঁকিপূর্ণ ইঞ্জিন বা বডি নিয়ে অসংখ্য যাত্রীর জীবন নিয়ে খেলছেন লঞ্চমালিক ও চালকরা।
প্রতিটি তদন্ত কমিটি দুর্ঘটনার কারণ, দায়ী ব্যক্তি চিহ্নিতকরণ, ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা রোধের উপায় বা প্রতিকার এবং কিছু সুপারিশ করলেও সেগুলো আলোর মুখ দেখে না।’
জানা গেছে, ‘অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল আইন, ২০২১’ নামে একটি খসড়া আইন প্রণয়নের মধ্যেই তা আটকে রয়েছে। এই খসড়া আইনটির ৭৩ ধারায় অপরাধ ও দ-ের বিষয়ে সর্বোচ্চ শাস্তি পাঁচ বছর পর্যন্ত কারাদ- বা তিন লাখ টাকা অর্থদ- বা উভয় দ-ের বিধান রাখা হয়েছে। আইনের ৮০ ধারায় কোম্পানির পরিচালকদেরও সংশ্লিষ্ট দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে দায়ী করে শাস্তি দেওয়ার বিধান রয়েছে। তবে এখনো চূড়ান্ত হয়নি আইনটি।