নিজস্ব প্রতিবেদক: দুদকের দায়ের করা অবৈধ সম্পদের মামলায় জুবাইদা রহমানের সঙ্গে তার স্বামী বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাজার রায় বাতিল করে তাদের খালাস দিয়েছে হাই কোর্ট।
জুবাইদার করা আপিল মঞ্জুর করে বিচারপতি খসরুজ্জামানের একক হাই কোর্ট বেঞ্চ বুধবার (২৮ মে) এ রায় দেয়।
জজ আদালত এ মামলায় তারেক রহমানকে ৯ বছর এবং জুবাইদা রহমানকে তিন বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিল। আদালত বলেছে, আইন অনুযায়ী জুবাইদা রহমানকে নোটিস না দিয়েই এ মামলা দায়ের করেছিল দুদক, যা ‘আইনসম্মত হয়নি’। অভিযোগ দায়ের থেকে এ মামলার পুরো প্রক্রিয়াকে ‘বিদ্বেষপূর্ণ’ বলেছে হাই কোর্ট। সে কারণে আপিল না করলেও তারেক রহমানের সাজার রায় বাতিল করে তাকেও খালাস দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ আমলে যেসব মামলায় তারেক রহমানের সাজার রায় এসেছিল, এর মধ্য দিয়ে তার সবগুলোতেই খালাস পেলেন তিনি। ২০০৮ সালে কারামুক্তির পর তারেক রহমান উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান। স্ত্রী জুবাইদা রহমান এবং মেয়ে জায়মা রহমানও তার সঙ্গে ছিলেন। এরপর আওয়ামী লীগের সময়ে তাদের আর দেশে ফেরা হয়নি।
গতবছর ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তারেক রহমান এবং তার মা খালেদা জিয়াকে কয়েকটি মামলা থেকে রেহাই দেয় আদালত। গত বছরের ২ অক্টোবর অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় জুবাইদার দণ্ডাদেশ এক বছরের জন্য স্থগিত করা হয়। সেই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছিল, ‘সাজা স্থগিতের আবেদনে ঢাকার সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে আত্মসমর্পণপূর্বক আপিল দায়েরের শর্তে দণ্ডাদেশ স্থগিতের ওই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
১৭ বছর পর গত ৬ মে শাশুড়ির সঙ্গে লন্ডন থেকে দেশে ফেরেন জুবাইদা। পরে তার আইনজীবীরা হাই কোর্টে আপিলের আবেদন করেন। মামলার এজাহার, অভিযোগপত্র, সাক্ষীদের সাক্ষ্য ও রায় পাঠের মধ্য দিয়ে গত ২২ মে এ মামলার আপিল শুনানি শুরু হয়। আপিল শুনানিতে জুবাইদা রহমানের সঙ্গে তারেক রহমানের খালাস চেয়ে আর্জি জানান তাদের আইনজীবীরা। জুবাইদার পক্ষে আদালতে শুনানি করেন আইনজীবী এস এম শাহজাহান ও ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আসিফ হাসান। তত্ত্বাবধায়ক সরকার সময়ে ২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর কাফরুল থানায় তারেক রহমান, তার স্ত্রী জুবাইদা রহমান ও শাশুড়ি সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানুর বিরুদ্ধে এ মামলা করেছিল দুদক।
মামলায় ৪ কোটি ৮১ লাখ ৫৩ হাজার ৫৬১ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন এবং মিথ্যা তথ্য দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়। তারেক রহমানকে সহায়তা ও তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয় জুবাইদা ও তার মায়ের বিরুদ্ধে। পরে একই বছর তারেক ও জুবাইদা রহমান মামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে পৃথক রিট আবেদন করেন। ২০০৮ সালের ৩১ মার্চ এ মামলায় অভিযোগপত্র দেয় দুদক। পরবর্তীতে ২০২৩ সালে ২ আগস্ট ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালত ও মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আছাদুজ্জামান এ মামলায় তারেক রহমানকে ৯ বছর ও জুবাইদা রহমানকে তিন বছর কারাদণ্ডের আদেশ দেন। সেই সঙ্গে তাদের জরিমানাও করা হয়। জুবাইদার তিন বছরের সাজার রায়ের বিরুদ্ধে তার আপিল- শুনানির জন্য গ্রহণ করে গত ১৪ মে তাকে জামিন দেয় হাই কোর্ট। তার আগের দিন ৫৮৭ দিনের বিলম্ব মার্জনার দরখাস্ত হাই কোর্ট মঞ্জুরের পর ওই আপিল করেছিলেন তারেকপত্নী।