প্রত্যাশা ডেস্ক : প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন সাইবার স্পেস ব্যবহার করে ঘটছে নানা অপরাধ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল ইস্যু, সাইবার বুলিংয়ে অনেকের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবন বিপন্ন হচ্ছে। অনেকে চাপ সইতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন। ভিকটিম যে কেবল নারী তা নয়, শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে পুরুষরাও এ থেকে রেহাই পাচ্ছেন না। কারও ব্যক্তিগত অনুভ’তি-বিষয় মুখরোচক করে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়ার কোনো প্রতিরোধ-প্রতিকার নেই? রাষ্ট্রের দায়িত্বশীলদেরও এ ব্যাপারে অসহায়ত্ব প্রকাশ করতে দেখা যায়।
সর্বশেষ একটি ঘটনা দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছে। নাটোরে কলেজশিক্ষিকা খায়রুন্নাহার প্রেম করে বিয়ে করেছিলেন কলেজছাত্র মামুনকে। বয়সের ব্যবধান, অসম বিয়ে প্রভৃতি বিষয়ে অতি উৎসাহী কিছু মানুষ খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে তাদের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনকে প্রকাশ্যে নিয়ে আসে। সামাজিক, প্রাতিষ্ঠানিক ও পারিপার্শি^ক চাপ সইতে না পেরে খায়রুন্নাহার আত্মহত্যার মধ্য দিয়ে তা শোধ করেন। বিষয়টি এরই মধ্যে জানাজানি হয়ে গেছে। নাটোরের পুলিশ সুপার (এসপি) লিটন কুমার সাহা শুক্রবার একটি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, খায়রুন্নাহারের ময়নাতদন্ত রিপোর্ট এখনো আসেনি। তবে প্রাথমিকভাবে তারা যা মনে করেছিলেন- এটি আত্মহত্যা, এখনো তাই মনে হচ্ছে তাদের কাছে।
মূলত, খায়রুন্নাহারের আত্মহত্যার পরেই মানুষের ব্যক্তিগত জীবন কেড়ে নেয়ার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের কেন আইনের মুখোমুখি করা হবে না, এ প্রশ্ন জোরেশোরে আলোচিত হচ্ছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে অন্যের অনিষ্ট কিংবা কাউকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়ার প্রতিকার সম্পর্কে প্রশ্ন ছিল প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের কাছে। তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কনটেন্ট ফিল্টারিং (পরিশোধন) করে ভাইরাল বা বুলিংকেন্দ্রিক মৃত্যু ঠেকানো অসম্ভব। এর কারণ হিসেবে মন্ত্রী বলেন, ‘দেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ৫ কোটি ব্যবহারকারী। মিনিটেই ১৫-২০ কোটি কনটেন্ট চলে আসে, যা ফিল্টারিং করা সম্ভব নয়। আমাদের কিছু করার নেই। নিজ সুরক্ষা ব্যবহারকারীকেই নিশ্চিত করতে হবে।’
‘দ্বিতীয়ত, এসব স্যোশাল মিডিয়া অন্য দেশ থেকে পরিচালিত হয়। তাদের ওপর আমাদের নিয়ন্ত্রণ নেই। কেউ কোনো অভিযোগ করলে ওই সোশ্যাল মিডিয়া কর্তৃপক্ষকে রিপোর্ট পাঠাই, কনটেন্ট সরানোর অনুরোধ জানাই। তাদের কাছে দরকার মনে হলে সরায়, নইলে সরায় না।’
আত্মহত্যার পরও মুক্তি মেলেনি কলেজছাত্রীর : একমাত্র মেয়েকে নিয়ে রংপুর বদরগঞ্জের কানাবাড়ি গ্রামে স্বামীর ভিটায় বাস করছিলেন একজন বিধবা। এর মধ্যেই হাফিজুর নামে স্থানীয় এক যুবকের প্রেমে পড়েন তার নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ে। তাদের অন্তরঙ্গ কিছু ছবি চলে যায় হাফিজুরের এক বন্ধুর হাতে। ছবিগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করে দেয়ার হুমকি দিয়ে অনৈতিক প্রস্তাব দেয়া হয় ছাত্রীটিকে। একপর্যায়ে বিষপানে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় সে। তরুণীর প্রেমিক হাফিজুরকে গ্র্রেপ্তারের পর এক সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির ডিআইজি নাজমুল আলম শেখ জানান, ‘পরিবারের মর্যাদাহানির কথা চিন্তা করে ওই ছাত্রী আত্মহত্যা করেন। ব্যক্তিগত ওই ছবিগুলো ভাইরাল হওয়ার আতঙ্কই তরুণীর মৃত্যুর কারণ।’ আত্মহত্যার পরও রেহাই মেলেনি ওই কলেজছাত্রীর। মৃত্যুর দেড় মাস পর সেই ছবিগুলো ছড়িয়ে দেয়া হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। পরদিন বাড়ি ছেড়ে নিরুদ্দেশ হন ওই ছাত্রীর বিধবা মা। এভাবেই ভাইরাল ইস্যুতে ঝরে যাচ্ছে অনেক প্রাণ। আশপাশের চাপ যে কত ভয়ংকর, আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের বনশ্রী শাখার দশম শ্রেণীর ছাত্র সামিন আত্মহত্যা করে প্রমাণ রেখে গেছে। সহপাঠীরাই বুলিং বা বডি শেমিংয়ের মতো আচরণ করে তার সঙ্গে। অপরাধ- স্বাভাবিকের চেয়ে তার ওজন একটু বেশি। তার সার্কেলের বিদ্বেষমূলক আচরণ সইতে না পেরে অসুস্থ হয়ে পড়ে। ২০২১ সালের ৮ জুলাই মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়ে সে।
বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন : সমাজবিজ্ঞানী ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘একজন মানুষের গোপনীয়তা কীভাবে নিশ্চিত করা যায়, সে বিষয়ে রাষ্ট্রের চিন্তা করা উচিত। এটা হ্যান্ডেল করতে না পারলে ধারাবাহিকভাবে তা ঘটতে থাকবে। কারণ আমরা সামাজিকভাবে আমাদের স্বাধীন সত্তা বা স্বাধীন আইডেন্টিটিকে প্রটেক্ট করতে পারছি না। এর মূলে হাইব্রিড সমাজ।’
পলিসি রিফর্ম করতে হবে জানিয়ে ড. আনোয়ার বলেন, ‘সামাজিক দায়বদ্ধতাহীনতার কারণে এভাবে মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া যাবে না। যদিও অবনতি এক দিনে হয়নি, আবার এক দিনেই রিকভারি সম্ভব নয়। এতে সময় লাগবে।’
সাইবার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনেক ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীর পোশাক, দৈনন্দিন জীবনযাপনের ধরন ইত্যাদি বিবেচনায় তার নীতি-নৈতিকতা, মূল্যবোধ নিয়ে বিরূপ মন্তব্যের মাধ্যমে ভাইরাল করা হয়। ফলে ভিকটিমই ব্লেমিংয়ের শিকার হচ্ছেন। কখনো কখনো মিডিয়া ট্রায়ালের শিকার হন অনেক নিরপরাধ ব্যক্তি। আবার অপরাধীকে ভাইরাল করার প্রবণতাও আছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাইবার বুলিং, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ট্রলিংসহ সংশ্লিষ্ট কিছু কারণে সামাজিক, পারিবারিক ও আত্মসম্মান সংকটে পড়ে কেউ কেউ মৃত্যুকে বেছে নেন। আবার কেউ কেউ সমাজ কিংবা পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। সাইবার স্পেসে কোনো কনটেন্ট ফিল্টারিং করার জন্য নির্্িদষ্ট কর্তৃপক্ষ না থাকায় সাইবার বুলিং আশঙ্কাজনকহারে বাড়ছে। এসব ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীদের বেশির ভাগই নারী। তারা আইনি ব্যবস্থা না নিয়ে আড়ালেই থাকেন মূলত সমাজের তীর্যক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে। সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে সরকার ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে একযোগে সচেতনতামূলক কার্যক্রম বাস্তবায়নের পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।
বাড়ছে সাইবার বুলিং : ইউনিসেফের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মোট জনসংখ্যার ৫১ শতাংশ কোনো না কোনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে থাকেন। তাদের মধ্যে ৬০ শতাংশ সাইবার বুলিংয়ের শিকার হয়ে থাকেন। সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস (সিসিএ) ফাউন্ডেশনের ‘বাংলাদেশে প্রযুক্তির ব্যবহার মাধ্যমে যৌন নিপীড়ন’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, সাইবার বুলিংয়ের বা সাইবার বিষয়ক ভুক্তভোগীদের ৩.২৫ শতাংশ আত্মহত্যা করেছেন, আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন ১.৯৫ শতাংশ, হয়রানির শিকার ৬২.৯৯ শতাংশ, অন্তরঙ্গ ভিডিও ছড়ানোর ভয় দেখিয়ে ধর্ষণ করা হয় ১৫.৫৮ শতাংশকে, টাকা হাতানো হয় ১৩.৬৪ শতাংশের কাছ থেকে। ভুক্তভোগীদের ৯২.২০ শতাংশ নারী এবং ৭.৮ শতাংশ পুরুষ। সংস্থাটির ২০২২ সালের জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়, সাইবার বুলিংয়ের শিকার হওয়া ভুক্তভোগী ৫০.২৭ শতাংশ। ২০২১ সালের প্রতিবেদনে এই সংখ্যা ছিল ৫০.১৬ শতাংশ। সে হিসাবে একবছরে ভুক্তভোগীর মাত্রা বেড়েছে ০.১১ শতাংশ। ২০২১ সালের প্রতিবেদনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচারের ঘটনা ছিল ১৬.৩১ শতাংশ। ২০২২ সালের প্রতিবেদনে এ সংখ্যা ১৮.৬৭ শতাংশ। এক বছরে বেড়েছে ২.৩৬ শতাংশ। যৌন হয়রানিমূলক একান্ত ব্যক্তিগত মুহূর্তের ছবি-ভিডিও (পর্ণোগ্রাফি) ব্যবহার করে হয়রানি এবং ফটোশপে ভুক্তভোগীর ছবি বিকৃত করে হয়রানির ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। ২০২১ সালের প্রতিবেদনে এই দুই অপরাধ ছিল যথাক্রমে ৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ ও ৫ দশমিক ৮৫ শতাংশ। আর ২০২২ সালে তা দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ ও ৬.৯৩ শতাংশ। ভুক্তভোগীদের মধ্যে বেশির ভাগের বয়স ১৮-৩০ বছর। হার ৮০ দশমিক ৯০ শতাংশ। প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিষয়টিকে গোপন রাখতে আইনি ব্যবস্থা নেয়নি সর্বোচ্চ ২১ শতাংশ ভুক্তভোগী। এছাড়া ১৭ শতাংশ ভুক্তভোগী সামাজিক ভাবমূর্তি রক্ষার জন্য, ১৭ শতাংশ আইনি ব্যবস্থা নিয়ে উল্টো হয়রানি পোহাতে হবে, ১৭ শতাংশ অভিযোগ করেও কোনো লাভ হবে না ভেবে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। অভিযুক্ত ব্যক্তি প্রভাবশালী হওয়ায় কোনো পদক্ষেপ নেয়নি ৭ শতাংশ ভুক্তভোগী। ৩৯.৬৪ শতাংশ ভুক্তভোগী মনে করেন অপরাধীদের তাৎক্ষণিক শাস্তি দেওয়াই হতে পারে সবচেয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ। অপরদিকে, সচেতনতা তৈরি করতে পারলে দেশে সাইবার অপরাধ হ্রাস পেতে পারে বলে মনে করেন ৩১.৪১ শতাংশ ভুক্তভোগী। বাকি ২৮.৯৫ শতাংশ ভুক্তভোগীরা মনে করেন আইনের প্রয়োগ বাড়ানো হতে পারে সাইবার অপরাধের প্রবণতা কমানোর একটি ভালো মাধ্যম। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারস্থ হয়ে ফল পাওয়ার হার কম বলে জরিপে উঠে এসেছে। অভিযোগকারীদের মধ্যে মাত্র ৭.০৪ শতাংশ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারস্থ হয়ে আশানুরূপ ফল পেয়েছেন এবং ৫৫.২৭ শতাংশ ভুক্তভোগী অভিযোগের পর প্রত্যাশা অনুযায়ী ফল পাননি। আর ২০২১ এর পরিসংখানে বলা হয়, অভিযোগের পর আশানুরূপ ফল পেয়েছেন মোট ভুক্তভোগীর ২২.২২ মতাংশ। সে হিসাবে ২০২১ সালের চেয়ে ২০২২ সালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছ থেকে আশানুরুপ ফলাফল ১৫.১৮ শতাংশ কম।
সিসিএ ফাউন্ডেশনের ‘বাংলাদেশে প্রযুক্তির ব্যবহার মাধ্যমে যৌন নিপীড়ন’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, সাইবার বুলিংয়ের বা সাইবার বিষয়ক ভুক্তভোগীদের ৩.২৫ শতাংশ আত্মহত্যা করেছে, আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে ১.৯৫ শতাংশ। হয়রানির শিকার ৬২.৯৯ শতাংশ, অন্তরঙ্গ ভিডিও ছড়ানোর ভয় দেখিয়ে ধর্ষণ করা হয় ১৫.৫৮ শতাংশকে, টাকা হাতানো হয় ১৩.৬৪ শতাংশের কাছ থেকে। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভুক্তভোগীদের ৩৫.৭১ শতাংশ পূর্বপরিচিত। ৩৩.৭৭ শতাংশ প্রেমঘটিত। বন্ধুর মাধ্যমে বুলিংয়ের শিকার হন ৩.২৫ শতাংশ।
সাইবার বুলিং কী : সাইবার বুলিং হচ্ছে এক ধরনের সাইবার অপরাধ। সাধারণ অর্থে বুলিং বলতে ইন্টারনেট কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কাউকে উদ্দেশ্য করে কটূক্তি বা মানহানিকর বক্তব্য ছড়িয়ে হেয় প্রতিপন্ন করা। এছাড়া মানহানিকরভাবে ছবি বা ভিডিও উপস্থাপন ও তা সাইবার স্পেসে ছড়িয়ে দেওয়াও বুলিংয়ের অন্তর্ভুক্ত। সম্প্রতি প্রকাশিত সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের এক জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাইবার অপরাধের শিকার ভুক্তভোগীদের বেশির ভাগই সাইবার বুলিংয়ের শিকার। এর মধ্যে রয়েছে ছবি বিকৃত করে অপপ্রচার, পর্নোগ্রাফি কনটেন্ট, সামাজিক মাধ্যমে অপপ্রচার এবং অনলাইনে-ফোনে মেসেজ পাঠিয়ে হুমকি দিয়ে মানসিক হয়রানি। এ প্রসঙ্গে মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘এ ধরনের পরিস্থিতি (মানসিক অসুস্থতা) তৈরি হওয়ার আগেই ভিকটিমের চিকিৎসা (মোটিভেশন) দরকার। মানুষ বাড়ছে অপরাধও বাড়ছে। আগে অপরাধ ফিজিক্যালি হতো, এখন অপরাধের কিছু অংশ সাইবার স্পেসে হয়।’
আইনে কী আছে : ডিজিটাল মাধ্যমে অপরাধ প্রতিরোধে ২০১৮ সালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণীত হয়। সাইবার নিরাপত্তা আইনের ১৪ ধারাতে উল্লেখ আছে, ‘যদি কোনো ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে অন্য কোনো ব্যক্তির অনুমতি ছাড়া তার ব্যক্তিগত (অন্তরঙ্গ) ছবি তোলে ও প্রকাশ করে তাহলে তিনি ১০ বছরের কারাদ-ে বা অনধিক ১০ লাখ টাকা অর্থদ- বা উভয়দ-ে দ-িত হবেন।’
বাংলাদেশ টেলিরেগুলেটরি কমিশনের (বিটিআরসি) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১২ কোটি ৪২ লাখ। সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজের (সিজিএস) প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ সালের জানুয়ারি মাস থেকে ২০২২ পর্যন্ত ২৬ মাসে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ৮৯০টি মামলা হয়। প্রথম ১৫ মাসে গড়ে ৬০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। পরবর্তী ৯ মাসে গড়ে ১৪৭ জনের বিরুদ্ধে। এই সময়ের মধ্যে আসামিদের মধ্যে প্রতি মাসে গড়ে ৩২ জন করে ৮৪২ জনকে আটক করা হয়। এসব মামলার মধ্যে প্র্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী ও রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ে কটূক্তি ও অবমাননায় দুই শতাধিক মামলা হয়েছে। বেশির ভাগ মামলা করেন ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে প্রথম মামলা হয় ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে। মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় ৫ জনের বিরুদ্ধে এই মামলা দায়ের হয়। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রথম রায় হয় ২০১৯ সালের নভম্বের মাসে। রায়ে সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেমকে ৮ বছর কারাদ- দেয়া হয়। এছাড়া ভোলায় ধর্মীয়-দাঙ্গা ছড়ানোর পর সংঘর্ষে চারজন নিহতের ঘটনায় চলতি বছরের ২৪ এপ্রিল বরিশাল সাইবার ট্রাইব্যুনাল একজনকে আট বছরের কারাদ- দেন।
সাইবার জগতে ব্যক্তিজীবন তছনছ
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ