ঢাকা ১২:৫৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৮ অগাস্ট ২০২৫
নতুন রাজনৈতিক দল

সাইনবোর্ড থাকলেও অফিস ও নেতাকর্মীর হদিস পাওয়া কঠিন

  • আপডেট সময় : ০৯:২৭:০৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ অগাস্ট ২০২৫
  • ২২ বার পড়া হয়েছে

ছবি সংগৃহীত

প্রত্যাশা ডেস্ক: দলের নাম বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক পার্টি (বিজিপি)। সম্প্রতি এই দলের মতো নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রাথমিক যাচাই-বাছাইয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে বাংলাদেশ সংস্কারবাদী পার্টি, ভাসানী জনশক্তি পার্টি, বাংলাদেশ বেকার মুক্তি পরিষদসহ ২২টি দল। তবে দলগুলোর মধ্যে এই চারটি দলের ঠিকঠাক কিছুই পাওয়া যায়নি। সাইনবোর্ড থাকলেও নেই অফিস, চোখে পড়েনি নেতা-কর্মী ও সমর্থকের আনাগোনা।

একটি সংবাদসংস্থা সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, দুটি দলের অফিসে গিয়ে কোনো কর্মীর দেখা মেলেনি। চারটি দলের প্রধানই আবার ব্যবসায়ী। কোনোটার জন্ম হয়েছে গত বছরের সরকারবিরোধী গণ-আন্দোলনের আগে। দলের নেতাকর্মীর সংখ্যা কত, কী উদ্দেশ্যে রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা হয়েছে তাও বলতে পারেননি কেউ কেউ।

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে ইসির কাছে নতুন দল নিবন্ধনের হিড়িক পড়েছিল। সবশেষ গত ১১ আগস্ট আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, নতুন দল নিবন্ধনের জন্য মোট ১৪৩টি আবেদন জমা পড়েছিল। এর মধ্যে ২২টি দলকে প্রাথমিকভাবে যোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। এই ২২ দলকে নিয়ে মাঠপর্যায়ে যাচাই-বাছাই করা হবে। বাকি ১২১টি দলকে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে।

ভাই এইটা ছাপাইয়েন না: ইসির খাতায় বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক পার্টির কার্যালয়ের ঠিকানা ঢাকার উত্তরার ১২ নম্বর সেক্টরের ১২ নম্বর রোডের ৪৭ নম্বর বাসা। গত মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) ওই ঠিকানায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে একটি নির্মাণাধীন ভবন। ভবনে লাগানো হয়েছে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক পার্টির (বিজিপি) ব্যানার। বাসার সামনে গিয়ে ফোন দেওয়া হয় পার্টির চেয়ারম্যান এসএম শাহাদাতকে। তিনি ওই রোডের ৫০ নম্বর বাসায় নিয়ে যান। এসএম শাহাদাত বলেন, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) হয়ে ঢাকা-১৮ আসনে নির্বাচন করেছি। জাগপার গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলাম। জাগপার মহাসচিব ছিলাম ৫ বছর। শাহাদাত জানান, ১২৫ উপজেলা ও ২৫ জেলায় বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক পার্টির কমিটি দেওয়া হয়েছে। পরে তিনি কয়েকশ গজ দূরে ৪৭ নম্বর ভবনে নিয়ে যান। এই ঠিকানা তিনি দলের কার্যালয় হিসেবে ইসিকে দিয়েছেন।
সেখানে গিয়ে দেখা যায়, ভবনটির নির্মাণকাজ চলছে। ভবনটির সামনে একটি ঢালাই মেশিন দেখা যায়। চতুর্থ তলার ছাদ ঢালাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে। দোতলায় ইটের দেওয়াল বসলেও কোনো আস্তর দেওয়া হয়নি। নিচতলায় চলছে ফ্লোর ঢালাইয়ের কাজ। নিচতলা থেকে শুরু করে বাকি তলাগুলোর চারপাশ খোলা। কয়েকজন নির্মাণ শ্রমিক কাজ করছেন। নিচতলার এক কোনায় ইটে ঘেরা একটি কক্ষ গড়ে তোলা হয়েছে। রঙের কাজ করা হলেও কক্ষের আনুষঙ্গিক কাজগুলো এখনো অসম্পূর্ণ। কার্যালয়ে কোনো নেতাকর্মীর দেখা মেলেনি।
ইন্টারনেটে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক পার্টির কোনো ওয়েবসাইটও খুঁজে পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে এসএম শাহাদাত বলেন, ‘নিউজ এটা ছাপাইয়েন না। শনিবার অফিস রেডি হবে। সব সাংবাদিককে ডাকবো। নিচতলায় এখন অফিস হবে। তবে এটা দোতলায় নেবো। এখানে ডেকোরেশনের কাজ চলছে।’ শাহাদাত আরো জানান, তার জন্মস্থান বাগেরহাট। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সঙ্গে ব্যবসা করছেন তিনি।

দলের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য জানেন না ভাইস চেয়ারম্যান: ঢাকার ৪২/১ সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ সংস্কারবাদী পার্টির অফিস। নিচতলায় ফার্নিচারের একাধিক দোকান। তিন তলায় দলটির কার্যালয়। তবে তিন তলায় যাওয়ার সিঁড়ি খুঁজে পেতে বেগ পেতে হয় প্রতিবেদককে। পরে একজন দোকানির সাহায্য নিয়ে একটা দোকানের ভেতর দিয়ে হেঁটে সিঁড়ি খুঁজে পাওয়া যায়। বাংলাদেশ সংস্কারবাদী পার্টির অফিসে প্রবেশ করতেই দেখা হয় দলটির ভাইস চেয়ারম্যান মেহেদি হাসানের সঙ্গে। তিনি তখন একাই ছিলেন। মেহেদি হাসান সংবাদমাধ্যটিকে বলেন, ‘২০২৪ সালে এই দল প্রতিষ্ঠা হয়েছে। প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় কমিটি দেওয়া হয়েছে। ৫৭০ জনের কেন্দ্রীয় কমিটি দেওয়া হয়েছে।’
দলের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য জানতে চাইলে তিনি দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. নুরুল হকের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। বলেন, ‘ওই (চেয়ারম্যানের) নম্বরে হোয়াটসঅ্যাপে ফোন দেবেন, ডিটেইলস জানতে পারবেন।’
মেহেদি হাসান ও দলটির চেয়ারম্যান ব্যবসায়িক অংশীদার। তবে কী ব্যবসা করছেন তা জানাননি মেহেদি হাসান। তিনি বলেন, ‘আমি ১০ বছর ধরে ব্যবসা করছি। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে ব্যবসায়িক সূত্রে পরিচয়। ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই এই দলের প্রতিষ্ঠা হয়েছে।’
এদিকে, নুরুল হক বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য আমাদের ওয়েবসাইটে দেওয়া আছে। আমাদের গঠনতন্ত্রটা একটু দেখবেন।’
বাংলাদেশ সংস্কারবাদী পার্টির ওয়েবসাইট বিআরপিবিডি ডট ওআরজি ঘুরে দলটি গঠনতন্ত্রের দুটি লিংক খুঁজে পাওয়া যায়। সংবিধান প্রথম অংশ ও দ্বিতীয় অংশে ক্লিক করে কিছুই পাওয়া যায়নি। ওয়েবসাইটটিতে দলটির বিভিন্ন কার্যক্রমের সংবাদ ও ৫৭০ জনের কেন্দ্রীয় কমিটির তালিকা দেওয়া আছে।

ভাসানী জনশক্তি পার্টি: ঢাকার ১১ পুরানা পল্টনের ইব্রাহীম ম্যানসনে গিয়ে কথা হয় ভাসানী জনশক্তি পার্টির চেয়ারম্যান শেখ মো. রফিকুল ইসলামের সঙ্গে। ভবনের বাইরে দলের কোনো ব্যানার চোখে পড়েনি। রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ব্যবসায়ী। তবে সদস্যদের চাঁদায় দল পরিচালিত হয়। প্রেসিডিয়াম সদস্যরা পাঁচ হাজার টাকা চাঁদা দেয়।’ ভাসানীর নামে ১৮টি দল থাকলেও তার দল ছাড়া আর কেউ ক্রিয়াশীল নয় বলে দাবি তার। তিনি বলেন, ২৭ জেলা ও ১০১টি উপজেলায় কমিটি দেওয়া হয়েছে। আর দলটির কেন্দ্রীয় কমিটি ১২১ জনের। ৩৩ শতাংশ নারী কোটা পূরণ না হলেও ইসির দেওয়া সময়সীমা ২০৩০ সালের মধ্যে তা পূরণ হবে বলে আশা তার।

বাংলাদেশ বেকার মুক্তি পরিষদ: বেকার সমস্যা দূরীকরণে কাজ করতে চায় বাংলাদেশ বেকার মুক্তি পরিষদ। দলটির অফিস ঢাকার ৩৪ পুরানা পল্টনের শরীফ প্লাজার ৮ তলায়। ভবনের বাইরে দলের কোনো ব্যানার চোখে পড়েনি। দলটির ফেসবুক পেজ পাওয়া গেলেও পাওয়া যায়নি কোনো ওয়েবসাইট। দলটির সভাপতি আতিকুর রহমান রাজা বলেন, ‘আমাদের ১৩৮টি উপজেলা কমিটি ও ২৪টি জেলা কমিটি আছে। ৭১ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটি আছে।’ তিনি বলেন, ‘আমার বাবা ব্যবসা করতেন। আমিও ব্যবসা করি। কৃষিপণ্য, গরুর খামারসহ নানা ব্যবসা আছে।’

ইসির নিবন্ধন পেতে যে সক্ষমতা দরকার: আইন অনুযায়ী, ইসির নিবন্ধন পেতে ইচ্ছুক দলের একটি কেন্দ্রীয় কমিটি, এক-তৃতীয়াংশ জেলা ও ১০০টি উপজেলা কমিটি এবং প্রতিটি কমিটিতে ২০০ ভোটারের সমর্থনের প্রমাণ থাকতে হয়। এছাড়া কোনো দলের কেউ আগে সংসদ সদস্য থাকলে বা আগের নির্বাচনের পাঁচ শতাংশ ভোট পেলেও নিবন্ধন পাওয়ার যোগ্যতা হিসেবে ধরা হয়। এই প্রধান শর্তগুলো ছাড়াও বেশকিছু নিয়মকানুন মেনে আবেদন করতে হয়।

সঠিক কাগজপত্র জমা দিয়েছে ২২টি দল: নিবন্ধন পেতে গত ২২ জুন পর্যন্ত ইসিতে আবেদন করে রাজনৈতিক দলগুলো। তখন প্রাথমিক বাছাইয়ে কোনো দলই শর্ত পূরণ করতে পারেনি। এরপর সবগুলো দলকে প্রয়োজনীয় ঘাটতি পূরণে ১৫ দিন সময় দেয় ইসি। ৩ আগস্ট শেষ সময় পর্যন্ত জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) ৮৪টি রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের শর্ত পূরণের তথ্য ইসিতে জমা দেয়। এরপর যাচাইয়ে ২২টি দল প্রাথমিকভাবে উত্তীর্ণ হয়।

ইসি জানিয়েছে, রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধনের জন্য যাচাই-বাছাইয়ে ২২টি দল সঠিক কাগজপত্র জমা দিয়েছে। সেগুলো হলো ফরওয়ার্ড পার্টি, আমজনতার দল, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক পার্টি (বিজিপি), বাংলাদেশ সংস্কারবাদী পার্টি (বিআরপি), বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (মার্ক্সবাদী), মৌলিক বাংলা, বাংলাদেশ জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি, জাতীয় জনতা পার্টি, জনতার দল, জনতা পার্টি বাংলাদেশ, বাংলাদেশ আম জনগণ পার্টি, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), বাংলাদেশ জাতীয় লীগ, ভাসানী জনশক্তি পার্টি, বাংলাদেশ বেকার মুক্তি পরিষদ, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী)–সিপিবি (এম), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ–শাহজাহান সিরাজ), জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ বেকার সমাজ (বাবেস), বাংলাদেশ সলুশন পার্টি এবং নতুন বাংলাদেশ পার্টি।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

নতুন রাজনৈতিক দল

সাইনবোর্ড থাকলেও অফিস ও নেতাকর্মীর হদিস পাওয়া কঠিন

আপডেট সময় : ০৯:২৭:০৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ অগাস্ট ২০২৫

প্রত্যাশা ডেস্ক: দলের নাম বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক পার্টি (বিজিপি)। সম্প্রতি এই দলের মতো নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রাথমিক যাচাই-বাছাইয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে বাংলাদেশ সংস্কারবাদী পার্টি, ভাসানী জনশক্তি পার্টি, বাংলাদেশ বেকার মুক্তি পরিষদসহ ২২টি দল। তবে দলগুলোর মধ্যে এই চারটি দলের ঠিকঠাক কিছুই পাওয়া যায়নি। সাইনবোর্ড থাকলেও নেই অফিস, চোখে পড়েনি নেতা-কর্মী ও সমর্থকের আনাগোনা।

একটি সংবাদসংস্থা সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, দুটি দলের অফিসে গিয়ে কোনো কর্মীর দেখা মেলেনি। চারটি দলের প্রধানই আবার ব্যবসায়ী। কোনোটার জন্ম হয়েছে গত বছরের সরকারবিরোধী গণ-আন্দোলনের আগে। দলের নেতাকর্মীর সংখ্যা কত, কী উদ্দেশ্যে রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা হয়েছে তাও বলতে পারেননি কেউ কেউ।

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে ইসির কাছে নতুন দল নিবন্ধনের হিড়িক পড়েছিল। সবশেষ গত ১১ আগস্ট আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, নতুন দল নিবন্ধনের জন্য মোট ১৪৩টি আবেদন জমা পড়েছিল। এর মধ্যে ২২টি দলকে প্রাথমিকভাবে যোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। এই ২২ দলকে নিয়ে মাঠপর্যায়ে যাচাই-বাছাই করা হবে। বাকি ১২১টি দলকে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে।

ভাই এইটা ছাপাইয়েন না: ইসির খাতায় বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক পার্টির কার্যালয়ের ঠিকানা ঢাকার উত্তরার ১২ নম্বর সেক্টরের ১২ নম্বর রোডের ৪৭ নম্বর বাসা। গত মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) ওই ঠিকানায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে একটি নির্মাণাধীন ভবন। ভবনে লাগানো হয়েছে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক পার্টির (বিজিপি) ব্যানার। বাসার সামনে গিয়ে ফোন দেওয়া হয় পার্টির চেয়ারম্যান এসএম শাহাদাতকে। তিনি ওই রোডের ৫০ নম্বর বাসায় নিয়ে যান। এসএম শাহাদাত বলেন, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) হয়ে ঢাকা-১৮ আসনে নির্বাচন করেছি। জাগপার গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলাম। জাগপার মহাসচিব ছিলাম ৫ বছর। শাহাদাত জানান, ১২৫ উপজেলা ও ২৫ জেলায় বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক পার্টির কমিটি দেওয়া হয়েছে। পরে তিনি কয়েকশ গজ দূরে ৪৭ নম্বর ভবনে নিয়ে যান। এই ঠিকানা তিনি দলের কার্যালয় হিসেবে ইসিকে দিয়েছেন।
সেখানে গিয়ে দেখা যায়, ভবনটির নির্মাণকাজ চলছে। ভবনটির সামনে একটি ঢালাই মেশিন দেখা যায়। চতুর্থ তলার ছাদ ঢালাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে। দোতলায় ইটের দেওয়াল বসলেও কোনো আস্তর দেওয়া হয়নি। নিচতলায় চলছে ফ্লোর ঢালাইয়ের কাজ। নিচতলা থেকে শুরু করে বাকি তলাগুলোর চারপাশ খোলা। কয়েকজন নির্মাণ শ্রমিক কাজ করছেন। নিচতলার এক কোনায় ইটে ঘেরা একটি কক্ষ গড়ে তোলা হয়েছে। রঙের কাজ করা হলেও কক্ষের আনুষঙ্গিক কাজগুলো এখনো অসম্পূর্ণ। কার্যালয়ে কোনো নেতাকর্মীর দেখা মেলেনি।
ইন্টারনেটে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক পার্টির কোনো ওয়েবসাইটও খুঁজে পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে এসএম শাহাদাত বলেন, ‘নিউজ এটা ছাপাইয়েন না। শনিবার অফিস রেডি হবে। সব সাংবাদিককে ডাকবো। নিচতলায় এখন অফিস হবে। তবে এটা দোতলায় নেবো। এখানে ডেকোরেশনের কাজ চলছে।’ শাহাদাত আরো জানান, তার জন্মস্থান বাগেরহাট। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সঙ্গে ব্যবসা করছেন তিনি।

দলের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য জানেন না ভাইস চেয়ারম্যান: ঢাকার ৪২/১ সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ সংস্কারবাদী পার্টির অফিস। নিচতলায় ফার্নিচারের একাধিক দোকান। তিন তলায় দলটির কার্যালয়। তবে তিন তলায় যাওয়ার সিঁড়ি খুঁজে পেতে বেগ পেতে হয় প্রতিবেদককে। পরে একজন দোকানির সাহায্য নিয়ে একটা দোকানের ভেতর দিয়ে হেঁটে সিঁড়ি খুঁজে পাওয়া যায়। বাংলাদেশ সংস্কারবাদী পার্টির অফিসে প্রবেশ করতেই দেখা হয় দলটির ভাইস চেয়ারম্যান মেহেদি হাসানের সঙ্গে। তিনি তখন একাই ছিলেন। মেহেদি হাসান সংবাদমাধ্যটিকে বলেন, ‘২০২৪ সালে এই দল প্রতিষ্ঠা হয়েছে। প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় কমিটি দেওয়া হয়েছে। ৫৭০ জনের কেন্দ্রীয় কমিটি দেওয়া হয়েছে।’
দলের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য জানতে চাইলে তিনি দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. নুরুল হকের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। বলেন, ‘ওই (চেয়ারম্যানের) নম্বরে হোয়াটসঅ্যাপে ফোন দেবেন, ডিটেইলস জানতে পারবেন।’
মেহেদি হাসান ও দলটির চেয়ারম্যান ব্যবসায়িক অংশীদার। তবে কী ব্যবসা করছেন তা জানাননি মেহেদি হাসান। তিনি বলেন, ‘আমি ১০ বছর ধরে ব্যবসা করছি। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে ব্যবসায়িক সূত্রে পরিচয়। ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই এই দলের প্রতিষ্ঠা হয়েছে।’
এদিকে, নুরুল হক বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য আমাদের ওয়েবসাইটে দেওয়া আছে। আমাদের গঠনতন্ত্রটা একটু দেখবেন।’
বাংলাদেশ সংস্কারবাদী পার্টির ওয়েবসাইট বিআরপিবিডি ডট ওআরজি ঘুরে দলটি গঠনতন্ত্রের দুটি লিংক খুঁজে পাওয়া যায়। সংবিধান প্রথম অংশ ও দ্বিতীয় অংশে ক্লিক করে কিছুই পাওয়া যায়নি। ওয়েবসাইটটিতে দলটির বিভিন্ন কার্যক্রমের সংবাদ ও ৫৭০ জনের কেন্দ্রীয় কমিটির তালিকা দেওয়া আছে।

ভাসানী জনশক্তি পার্টি: ঢাকার ১১ পুরানা পল্টনের ইব্রাহীম ম্যানসনে গিয়ে কথা হয় ভাসানী জনশক্তি পার্টির চেয়ারম্যান শেখ মো. রফিকুল ইসলামের সঙ্গে। ভবনের বাইরে দলের কোনো ব্যানার চোখে পড়েনি। রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ব্যবসায়ী। তবে সদস্যদের চাঁদায় দল পরিচালিত হয়। প্রেসিডিয়াম সদস্যরা পাঁচ হাজার টাকা চাঁদা দেয়।’ ভাসানীর নামে ১৮টি দল থাকলেও তার দল ছাড়া আর কেউ ক্রিয়াশীল নয় বলে দাবি তার। তিনি বলেন, ২৭ জেলা ও ১০১টি উপজেলায় কমিটি দেওয়া হয়েছে। আর দলটির কেন্দ্রীয় কমিটি ১২১ জনের। ৩৩ শতাংশ নারী কোটা পূরণ না হলেও ইসির দেওয়া সময়সীমা ২০৩০ সালের মধ্যে তা পূরণ হবে বলে আশা তার।

বাংলাদেশ বেকার মুক্তি পরিষদ: বেকার সমস্যা দূরীকরণে কাজ করতে চায় বাংলাদেশ বেকার মুক্তি পরিষদ। দলটির অফিস ঢাকার ৩৪ পুরানা পল্টনের শরীফ প্লাজার ৮ তলায়। ভবনের বাইরে দলের কোনো ব্যানার চোখে পড়েনি। দলটির ফেসবুক পেজ পাওয়া গেলেও পাওয়া যায়নি কোনো ওয়েবসাইট। দলটির সভাপতি আতিকুর রহমান রাজা বলেন, ‘আমাদের ১৩৮টি উপজেলা কমিটি ও ২৪টি জেলা কমিটি আছে। ৭১ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটি আছে।’ তিনি বলেন, ‘আমার বাবা ব্যবসা করতেন। আমিও ব্যবসা করি। কৃষিপণ্য, গরুর খামারসহ নানা ব্যবসা আছে।’

ইসির নিবন্ধন পেতে যে সক্ষমতা দরকার: আইন অনুযায়ী, ইসির নিবন্ধন পেতে ইচ্ছুক দলের একটি কেন্দ্রীয় কমিটি, এক-তৃতীয়াংশ জেলা ও ১০০টি উপজেলা কমিটি এবং প্রতিটি কমিটিতে ২০০ ভোটারের সমর্থনের প্রমাণ থাকতে হয়। এছাড়া কোনো দলের কেউ আগে সংসদ সদস্য থাকলে বা আগের নির্বাচনের পাঁচ শতাংশ ভোট পেলেও নিবন্ধন পাওয়ার যোগ্যতা হিসেবে ধরা হয়। এই প্রধান শর্তগুলো ছাড়াও বেশকিছু নিয়মকানুন মেনে আবেদন করতে হয়।

সঠিক কাগজপত্র জমা দিয়েছে ২২টি দল: নিবন্ধন পেতে গত ২২ জুন পর্যন্ত ইসিতে আবেদন করে রাজনৈতিক দলগুলো। তখন প্রাথমিক বাছাইয়ে কোনো দলই শর্ত পূরণ করতে পারেনি। এরপর সবগুলো দলকে প্রয়োজনীয় ঘাটতি পূরণে ১৫ দিন সময় দেয় ইসি। ৩ আগস্ট শেষ সময় পর্যন্ত জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) ৮৪টি রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের শর্ত পূরণের তথ্য ইসিতে জমা দেয়। এরপর যাচাইয়ে ২২টি দল প্রাথমিকভাবে উত্তীর্ণ হয়।

ইসি জানিয়েছে, রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধনের জন্য যাচাই-বাছাইয়ে ২২টি দল সঠিক কাগজপত্র জমা দিয়েছে। সেগুলো হলো ফরওয়ার্ড পার্টি, আমজনতার দল, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক পার্টি (বিজিপি), বাংলাদেশ সংস্কারবাদী পার্টি (বিআরপি), বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (মার্ক্সবাদী), মৌলিক বাংলা, বাংলাদেশ জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি, জাতীয় জনতা পার্টি, জনতার দল, জনতা পার্টি বাংলাদেশ, বাংলাদেশ আম জনগণ পার্টি, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), বাংলাদেশ জাতীয় লীগ, ভাসানী জনশক্তি পার্টি, বাংলাদেশ বেকার মুক্তি পরিষদ, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী)–সিপিবি (এম), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ–শাহজাহান সিরাজ), জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ বেকার সমাজ (বাবেস), বাংলাদেশ সলুশন পার্টি এবং নতুন বাংলাদেশ পার্টি।