নিজস্ব প্রতিবেদক : সাংবাদিকদের দাবিতেই রেডিও, টেলিভিশন ও অনলাইনের জন্য ‘গণমাধ্যম কর্মী আইন’ হচ্ছে এবং তাদের চাওয়া অনুযায়ীই এর সংশোধন হবে বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
গতকাল শনিবার দুপুরে বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্য-বিশারদ মিলনায়তনে ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টারের (বিজেসি) তৃতীয় সম্প্রচার সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, “সাংবাদিকদের দাবির প্রেক্ষিতে এই আইন। তারা যেভাবে চাইবে সেভাবেই হবে। তারা না চাইলে এই আইন হবে না। এটা নিয়ে কোনো বিতর্কের সুযোগ নাই।”
দেশের সংবাদপত্রের সাংবাদিকদের চাকরির সুরক্ষা, সংশ্লিষ্ট সুবিধাদি ও অধিকার নিয়ে আইন থাকলেও টেলিভিশন, রেডিও ও অনলাইন সাংবাদিকদের জন্য কোনো আইন নেই।
তাদের জন্য ২০১৮ সালে একটি সুরক্ষা আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। পরে গত ১ এপ্রিল সংসদে ‘গণমাধ্যম কর্মী (চাকরির শর্তাবলি) বিল-২০২২’ উপস্থাপন করেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। বিলটি পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটিতে আছে। তবে এ আইনের নামসহ বিভিন্ন ধারা নিয়ে সাংবাদিকদের মধ্যে আপত্তি রয়েছে।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, “আমি দেখেছি সেখানে কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি আছে। সেগুলো আসলে যখন বিভিন্ন মন্ত্রনালয়ে ঘুরেছে, তখন সেখানে কিছু কিছু ঢুকেছে। সেগুলো সমীচিন হয়নি বলে আমি ব্যক্তিগতভাবেও মনে করি।”
সেসব নিয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, প্রেস কাউন্সিল, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নসহ যারা আইন প্রণয়নে পূর্বে কাজ করেছে, তাদের সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনা হয়েছে।
“সেই আলোচনায় ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ত্রুটি বিচ্যুতিগুলো চিহ্নিত করে প্রস্তাবনাগুলো দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখনও আমরা সেই প্রস্তাবনা পাইনি। “আমরা যদি প্রস্তাবনাগুলো পাই, কমিটির মাধ্যমে সেগুলো পরিবর্তন পরিমার্জন করা হবে।”
তথ্যমন্ত্রী বলেন, “এই আইনের দাবি কিন্তু সাংবাদিকরা করেছে। মালিকপক্ষ কিন্তু এই আইন চাচ্ছে না। মালিকপক্ষের একটি অংশ ইতোমধ্যে বিবৃতিও দিয়েছে। “এখন যে সমস্ত আইন দেশে বলবৎ আছে, পুরোটা না পারলেও কিছুটা সুরক্ষা দিতে পারছে। সংবাদপত্রে যারা কাজ করেন তাদের সুরক্ষা দিতে পারছে।”
ইলেক্ট্রনিক বা অনলাইন মিডিয়ার কর্মীদের সুরক্ষা দেওয়ার জন্য কোনো আইন নাই উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, “এ আইনের ত্রুটি, বিচ্যুতি, পরিবর্তন ও পরিমার্জন করা হবে, সেটা নিয়ে আমরা একমত।
“আপনারা প্রস্তাবনা দিলে সেগুলো ইনকর্পোরেট করা হবে, এটা নিয়ে বেশি কথা বললে জল ঘোলা হবে। জল ঘোলা করার তো কোনো দরকার নেই।”
সাংবাদিক সংগঠনগুলোকে প্রস্তাবিত আইনটি নিয়ে দ্রুত সংশোধন প্রস্তাব দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “আপনারা যত দ্রুত প্রস্তাবনাগুলো দেবেন, তত দ্রুত সেটা পরিপূর্ণ আইনে পরিণত করা সম্ভব হবে। “এই আইন হলে ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় যারা যুক্ত আছেন এবং অনলাইন মিডিয়ার সঙ্গে যারা যুক্ত আছেন, রেডিওর সঙ্গে যারা যুক্ত আছেন, তাদের জন্য এই আইন সুরক্ষা হবে।”
প্রস্তাবিত আইনের বিষয়ে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ওমর ফারুক বলেন, আইনটি একেক সময় একেক রূপ ধারণ করেছে। প্রথম যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছিল, মাঝখানে সেটি থাকেনি। “পরবর্তী সময়ে আরেক রূপ, চূড়ান্ত পর্বে দেখলাম একটা বীভৎস রূপ ধারণ করেছে।”
এ বিষয়ে তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার উল্লেখ করে তিনি বলেন, “যতগুলো সাংবাদিক সংগঠন আছে, সবার সঙ্গে আলোচনা করে আমরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি, সংশোধিত আকারে এটা আমরা আবার তৈরি করেছি, দু-চার দিনের মধ্যেই আমরা জাতীয় সংসদের স্থায়ী কমিটিতে এটা পাঠাব।”
এর আগে জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বিজেসি আয়োজিত ‘জনস্বার্থ, সাংবাদিকতা-সংবাদকর্মীর সুরক্ষা’ শীর্ষক এই সম্মেলনের উদ্বোধন করেন।
সাংবাদিকদের চাওয়া অনুযায়ী হবে ‘গণমাধ্যম কর্মী আইন’: তথ্যমন্ত্রী
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ