নিজস্ব প্রতিবেদক : ১৫ বছর পর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংজ্ঞায় সশস্ত্র বাহিনী যোগ করার সুপারিশ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এতে ভোটে সেনা মোতায়েনের জন্য আর সরকারের মুখাপেক্ষি হতে হবে না। নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব আখতার আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংজ্ঞায় সংশোধন এনে সশস্ত্র বাহিনীকে যুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবকে এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানো হয়েছে। সম্প্রতি নির্বাচনী সংস্কার কার্যক্রম সম্পন্ন করার জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে আশু বাস্তবায়নযোগ্য সুপারিশ পাঠাতে বললে ইসি এমন সুপারিশ করল। সংস্থাটির কর্মকর্তারা বলছেন, স্বাধীনতার পর থেকে ২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনের পূর্ব পর্যন্ত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় সশস্ত্র বাহিনী ছিল না। পরবর্তী নির্বাচনের পর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে ২০০৯ সালে সংজ্ঞা থেকে সশস্ত্র বাহিনীকে বাদ দেওয়া হয়। কর্মকর্তারা বলছেন, এরপর থেকে ফের এই বাহিনীকে ভোটের দায়িত্বে কাজে লাগাতে সরকারের কাছে চাইতে হয়। এরপর সরকার ‘ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’-এর অধীনে সেনা মোতায়েনের অনুমতি দেয়।
‘ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’-এর অধীনে মাঠে নেমে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশনায় দায়িত্ব পালন করে সশস্ত্র বাহিনী। নতুন করে সংশোধনী আনা হলে ইসির নির্দেশনায় রিটার্নিং কর্মকর্তার চাহিদা অনুযায়ী নিয়োজিত করা যাবে। এর আগে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে সংশোধনীটি ফেরানোর দাবি তুললেও আগের তিনটি কমিশন কোনো উদ্যোগ নেয়নি। জুলাইয়ের অভ্যুত্থানের পর নির্বাচন সংস্কার কমিশন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সংজ্ঞায় সশস্ত্র বাহিনীকে অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করলে, বর্তমান এএমএম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন কমিশন বিধানটি অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নেয়। ফলে পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, র্যাব, আনসার, বিজিবি, কোস্ট গার্ডের পাশাপাশি সশস্ত্র বাহিনীও যুক্ত হবে। জানা গেছে, সরকারের কাছে আশু বাস্তবায়নযোগ্য নয়টি সুপারিশ করেছে ইসি। এর মধ্যে চারটি সুপারিশ ইসি নিজেই বাস্তবায়ন করবে। অন্যগুলো ইসি এবং আইন ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ যৌথভাবে বাস্তবায়ন করবে। ইসি সচিব আখতার আহমেদ বলেন, আরপিও সংশোধন, নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ আইন), নির্বাচন পর্যবেক্ষক ও গণমাধ্যম নীতিমালা, রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা, হলফনামা, পোস্টাল ব্যালট, রাজনৈতিক ও নির্বাচনী অর্থায়নে স্বচ্ছতা ও শুদ্ধাচার–সংক্রান্ত বিধি-বিধান সংশোধনের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। আগামী ডিসেম্বর থেকে ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজনের কথা জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। সে লক্ষ্যে সংস্কার কার্যক্রমের অংশ হিসেবে আশু বাস্তবায়নযোগ্য সুপারিশের ওপর সংশোধনী আনতে চায় সরকার। এদিকে নির্বাচন কমিশনও ডিসেম্বরকে লক্ষ্য ধরে সব প্রস্তুতি গুছিয়ে নিচ্ছে।
রোহিঙ্গা চিহ্নিত হলে তাৎক্ষণিক বাতিলের সিদ্ধান্ত
ভোটার তালিকায় রোহিঙ্গা চিহ্নিত হলে তাৎক্ষণিকভাবে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গতকাল বুধবার (৩০ এপ্রিল) চতুর্থ কমিশন সভা শেষে সাংবাদিকদের এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। তিনি বলেন, গত বছর কক্সবাজারের একটি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এক ব্যক্তি রোহিঙ্গা ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার অভিযোগ নিয়ে আদালতে একটি রিট করেছিলেন। তিনি নির্বাচন বন্ধ চেয়েছিলেন। নির্বাচন তো বন্ধ হয়নি। তবে আদালত রোহিঙ্গা ভোটার অন্তর্ভুক্তির বিষয় তদন্ত করতে বলেছিলেন। আমরা বিশেষ এলাকা হিসেবে সংশ্লিষ্ট উপজেলার ভোটার তালিকায় যাতে রোহিঙ্গা ঢুকতে না পারে সেজন্য নিয়মিতভাবে হালনাগাদ করে থাকি। তারপরও প্রতারণা করে কেউ ঢুকে গেলে তাৎক্ষণিকভাবে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত আছে। নির্বাচন কমিশনার আরও বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সংশোধন সংক্রান্ত আবেদন দীর্ঘদিন ঝুলে থাকে, এটাকে কী করে সহজীকরণ করা যায় সে আলোচনা হয়েছে।
আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, কোনো ব্যক্তি বা নাগরিকদের যদি অসৎ উদ্দেশ্যে না থাকে সেগুলোকে সহজভাবে সমাধান করে দেওয়া হবে। অনেকে দ্বৈত কার্ড বা এনআইডি নিয়েছে। এই সংখ্যা খুব বেশি নয়। এদের ক্ষেত্রে ভুলভাবে কেউ দুইবার নিলে প্রথমটা থাকবে, দ্বিতীয়টা বাদ যাবে। এছাড়া বয়স বেশি কিন্তু তা কমিয়ে একটা চাকরি নিয়েছে এমন হলে আমরা নিরুৎসাহিত করবো। এমন হলে সেটা কমিশন পর্যন্ত আসবে। আবার পুরো পরিচয় পরিবর্তন করতে চাইলে আমরা কঠোর হবো। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট আবেদন নিষ্পত্তিতে সময় লাগলেও জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে এটা করতে হবে। ডাটা সেন্টারের স্বচ্ছতার জন্যও এটা করতে হবে। আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, ডাটাবেজে ম্যাচ ফাউন্ড ভোটার আছে দুই লাখ নয় হাজার। যেটা পুরো ডাটাসেন্টারের দশমিক ১৬ শতাংশ। অনেক সময় শ্রমিক ভাই বা মা-বোনদের কারও কারও আঙ্গুলের ছাপ পরিষ্কার থাকে না। অনেক সময় এ কারণে ফলস ম্যাচ আসে। এগুলো যেন দ্রুত করতে পারি সে সিদ্ধান্ত হয়েছে। অনেকেই দুই আইডি নেওয়ায় ম্যাচ হয়েছে। এটা নাইন আউট অব টেন। এছাড়া যারা আমাদের সেবা নিয়ে থাকে, সেই আইনটা সহজ করা, যেন সেবাটা সহজে দেওয়া যায়, এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে।